চাকরিজীবীদের জন্য ১০টি গুরত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য টিপস!
আমরা যারা সারাদিন অফিস করি, তারা সব সময় কাজে এতোই ব্যস্ত থাকি যে, ঠিকমতো নিজের যত্ন নিতে পারি না। সেক্ষেত্রে নিজের খেয়াল রাখার জন্য আমাদের হাতে সময়ই থাকে না, ফলে পরবর্তীতে অসুস্থ হয়ে পড়ি। আসুন ১০টি গুরত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য টিপস জেনে নিই, যাতে আপনি শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ এবং কর্মক্ষম থাকবেন।

একটু ঘোরাঘুরি করুন
অফিসে একটানা বসে না থেকে কিছুক্ষণ পর পর একটু নড়ে-চড়ে বসুন। দীর্ঘক্ষণ ধরে চেয়ারে বসে থাকলে মেরুদণ্ডের ক্ষতি হয়। সব সময় চেয়ারে সোজা থেকে হেলান দিয়ে বসার চেষ্টা করুন। পারলে কিছু সময় বিরতি দিয়ে একটু আশে-পাশে ঘুরেও আসুন। এছাড়াও চেয়ারে বসে থেকেও কিছু ব্যায়াম অনুশীলন করতে পারেন।
চোখের যত্ন নিন
সারাদিন অফিসে কম্পিউটারের সামনে প্রচুর সময় ব্যয় করা হয়। ফলে তাতে চোখের সমস্যা, মাথা ব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি ইত্যাদি হতে পারে। তাই, প্রতি এক ঘণ্টা কাজ করার পর এক-দুই মিনিট চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নেওয়া দরকার। এছাড়াও উঠে গিয়ে চোখেমুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিতে পারেন। তবে কম্পিউটারের সামনে কাজ করতে চোখের বেশি সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
প্রত্যেক মানুষেরই নিয়মিত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। এর চেয়ে কম ঘুমানো হলে তাতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। মূলত ঘুম কম হলে তা আপনার অফিসের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং এতে আপনার প্যারফমেন্সও খারাপ হতে পারে। রাতে যদি চা, কফি, কোমল পানীয় ইত্যাদি পান করেন, তবে তা ঘুমের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এগুলো পরিহার করা উচিত। আর অফিসে গিয়ে ঘুম জনিত ক্লান্তি দূর করতে আদা চা, লেবু চা কিংবা গ্রিন টি পান করতে পারেন।
বাইরের খাবার খাবেন না
আমরা অনেক সময় তাড়াহুড়া করে নাস্তা না করেই অফিস যাত্রা করি। ফলে দেখা যায় নাস্তা, লাঞ্চ বাইরেই করা হয়, ফলে এতে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে এ্যাসিডিটি থেকে শুরু করে ফুড পয়জনিং পর্যন্তও হতে পারে। তাই, সুস্থ থাকতে যতটা সম্ভব পারেন বাইরের খাবার পরিহার করুন। এতে আপনি অনেক বেশি সুস্থ এবং কর্মক্ষম থাকতে পারবেন।
বেশি করে পানি পান করুন
কাজের চাপে অনেকেই ঠিকমতো পানি পান করতে ভুলে যান। সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পানি পান না করার ফলে, পানি শূন্যতা থেকে শুরু করে ইউরিন ইনফেকশন পর্যন্তও হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন বেশি করে ফুটানো পানি, জুস, ডাবের পানি ইত্যাদি পান করতে। এছাড়াও আপনার টেবিলে সব সময় একটি পানির পট রাখুন এবং মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে পানি পান করুন।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
অফিসে চেয়ারে বসে থাকার কারণে সব থেকে বেশি মেদ জমে পেটে এবং কোমরে। আর এটা শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। তাই, অফিসের শেষে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন কিংবা ব্যয়াম করুন। এক্ষেত্রে ভালো কোন জিমে ভর্তি হতে পারেন। এছাড়াও সাইকেল চালানো, সাতার কাঁটা, ইয়োগা এবং মেডিটেশনও করতে পারেন। ব্যায়াম করলে আপনার শরীর ও মন দুটো’ই সুস্থ থাকবে।
সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে আপনি সুস্থ-সবল থাকবেন। অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার খাবেন না। সেক্ষেত্রে ঘরে তৈরি কম ক্যালরি যুক্ত খাবার খান। আপনি সালাদ খেতে পারেন, কেননা সালাদে ক্যালরি যেমন কম থাকে, তেমনি এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনার খাদ্য তালিকায় তাজা ফল-ফলালি রাখতে পারেন।
সিঁড়ি ব্যবহার করুন
আপনি লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারেন। কেননা সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা করা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। আপনার বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব কম হলে, বরং রিকশা না নিয়ে হেঁটে চলুন। এছাড়াও রাতের খাবারের পর বাসার বারান্দায় একটু হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। এই সব করলে আপনার শরীরের ক্যালরি যেমন কমবে, তেমনি আপনিও সুস্থ-সাবলীল থাকবেন।
ইতিবাচক থাকুন
সব ধরনের পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতে ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন। কাজের জায়গায় সহকর্মীদের সাথে পরনিন্দায়, পরচর্চায় কিংবা ব্যক্তিগত কোন ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করবেন না। কেননা নিজের ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করলে, পরবর্তীতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে পারেন। তাই, পেশাদারিত্ব বজায় রেখে চলতে এবং সততার সাথে নিজের কাজ করতে চেষ্টা করুন।
অবসরে ঘুরে বেড়াতে পারেন
নাগরিক শহুরে জীবনে আমরা মাঝে মধ্যে হাঁপিয়ে উঠি। আর তাই, লম্বা ছুটি পেলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দূরে কোথাও বেড়িয়ে আসতে পারেন। এছাড়াও সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, কোন পার্কে, পিকনিকে কিংবা সিনেমা দেখতেও যেতে পারেন। কেননা টানা কাজের মাঝে একটু অবসর ও বিনোদন আপনাকে নতুন উদ্যমে কাজ করার শক্তি এনে দিবে।
এই যান্ত্রিকতার যুগে আমরা ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে, যন্ত্রের মতো কাজের মধ্যে ডুবে থাকি। আর যার ফলে একঘেয়েমিপূর্ণ রোজকার জীবনে মাঝে মাঝে বিতৃষ্ণা এসে যায়। এতে আমাদের শরীরে নানা রোগ ব্যধি বাসা বাঁধে এবং আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাই, ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে নিজের ক্ষতি না করে, শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ-সবল থাকতে কিছু নিয়ম-কানুন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে চেষ্টা করুন।