দাঁতের মাড়ির যত্ন নিন, রোগ মুক্ত থাকুন!
আপনার মুখের ভিতরের অংশ অর্থাৎ দাঁত-মাড়ি’র সুস্বাস্থ্য ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ এটা আমরা হয়ত অনেকেই অনুধাবন করতে পারি না। আমরা অনেকেই জানিনা যে মুখের ভেতরের সুস্বাস্থ্যের সাথে আমাদের পুরো শরীরের স্বাস্থ্য জড়িত রয়েছে। আসুন জেনে নেই মুখের অভ্যন্তরীণ দাঁত ও মাড়ি কীভাবে আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যের উপর কীভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
আপনি জানেন কি আপনার শরীরে কোন বড় ধরণের সমস্যা হলে সেটা আপনার মুখের ভেতরের অংশই তার জানান দিতে পারে? আবার একই সাথে মুখের ভেতরের যে কোন ধরণের সমস্যা আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরেও প্রভাব বিস্তার করে থাকে। আপনার একটু সচেতনতাই বড় ধরণের কোন সমস্যা থেকে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। আপনি যদি মুখের ভেতরের অংশের সুস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন না হন তাহলে আপনার মুখের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে এবং দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি করবে।
মুখের অবস্থার সাথে আপনার শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক কী?
সাধারণত আপনার মুখের মধ্যে যে ব্যাকটেরিয়াগুলো দেখা যায় সেগুলো তেমন একটা ক্ষতি করে না। তবে আপনার শরীরের মধ্যে যে কোন ধরণের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের একটি অন্যতম স্থান হল এই মুখ।
আদতে শরীরের এন্টিবডি এবং নিয়মিত দাঁত মাজা ও ফ্লসিং করার মত মুখের যত্ন আমাদের শরীরের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আর আপনি যদি মুখের যত্ন না নেন এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলেন তাহলে প্রাথমিক ভাবেই আপনার মুখের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। এতে করে আপনি দাঁত ক্ষয় সহ মাড়ির বিভিন্ন রোগে ভুগতে পারেন।
এক্ষেত্রে মুখের লালা আপনার গ্রহণ করা খাবারগুলোকে শোধিত করতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকারক জীবাণু থেকে আপনাকে রক্ষা করে থাকে। বেশ কিছু গবেষণায় এটা দেখা গেছে যে মাড়ির বেশ কিছু জটিল ধরণের রোগের কারণে হওয়া জ্বালাপোড়া আরো জটিল ধরণের শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অপরদিকে ডায়াবেটিস এবং এইআইভি এইডসের মত কিছু রোগ আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় যার ফলে মুখের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যগত অবস্থাও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে মুখের স্বাস্থ্যের সাথে সার্বিক স্বাস্থ্যগত অবস্থা আদতে ওতপ্রোত ভাবেই জড়িত আছে।
শারীরিক যে অবস্থাগুলো সরাসরি মুখের স্বাস্থ্যগত অবস্থার সঙ্গে সরাসরি জড়িত
আপনার মুখের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যগত অবস্থা শারীরিক বেশ কিছু রোগের উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যেমন-
এন্ডোকার্ডাইটিসঃ এটা আপনার হার্টের চ্যাম্বার অথবা ভালভের আস্তরণের সংক্রমিত হওয়া এক ধরণের ইনফেকশন। এটা সাধারণত ঘটে থাকে যখন আপনার মুখ অথবা শরীরের অন্যান্য অংশের ব্যাকটেরিয়া রক্তের মধ্যে মিশ্রিত হয়ে যায় এবং আপনার হৃদপিণ্ডকে আক্রমণ করে।
হৃদরোগঃ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মুখের বিভিন্ন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থেকে সংক্রমণের কারণে হৃদরোগ, ধমনীর মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে এমনকি স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
গর্ভাবস্থা এবং জটিলতাঃ পিরিওডোন্টাইটিস নামক মাড়ির এক ধরণের জটিল রোগের কারণে প্রিম্যাচিউর অবস্থায় শিশুর জন্ম হতে পারে, এমনকি এই ইনফেকশনের কারণে কম ওজনেও নবজাতক জন্ম গ্রহণ করতে দেখা যায়।
নিউমোনিয়াঃ এটা দেখা গেছে যে আপনার মুখের কিছু ব্যাকটেরিয়া শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে আপনার ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে এবং সেটা নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্ট জনিত বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এতক্ষণ দেখলাম মুখের স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণে শরীরে যে রোগগুলো হতে পারে। এখন আসুন দেখে নেই শারীরিক যে রোগগুলো মুখের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি করতে পারেঃ
ডায়াবেটিসঃ এই রোগের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে ইতোপূর্বে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মুখের যে ব্যাকটেরিয়াগুলো থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিত সেটা আর করতে পারে না। আর তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের বিভিন্ন ধরণের মাড়ির রোগে ভুগতে দেখা যায়।
এছাড়াও একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিভিন্ন ধরণের মাড়ির রোগে ভুগে থাকেন, তাদের শরীরের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করতে একটু বেশি সমস্যা হতে দেখা যায়। তবে মাড়ির নিয়মিত যত্ন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এইচআইভি এইডসঃ ডায়াবেটিসের মত এই রোগের কারণেও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় আর বিভিন্ন ধরণের মাড়ির ইনফেকশন দেখা যায়।
অস্টিওপোরোসিসঃ এটি মূলত হাড় ক্ষয় জনিত এক ধরণের জটিল রোগ। তবে এই রোগ হলে হাড়ের পাশাপাশি আপনার দাঁতও ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও এই রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হওয়া বেশ কয়েকটি ওষুধ চোয়ালের হাড়ের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে থাকে।
আলঝেইমারঃ এই রোগটি যত বাড়তে থাকে তখন অন্যান্য অবস্থার সাথে সাথে আপনার মুখের স্বাস্থ্যগত ব্যাপক অবনতি হয়।
বুঝতেই পারছেন মুখের স্বাস্থ্য এবং শরীরের স্বাস্থ্য একে অপরের সাথে জড়িত। আর তাই যে কোন সমস্যার ক্ষেত্রেই সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া খুবই জরুরী। আপনার তাৎক্ষনিক এই সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে অনেক গুরুতর রোগ থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে।
আপনি যেভাবে মুখের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারেন
-
মুখের সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য সবার প্রথমে মুখের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা প্রয়োজন। প্রতিদিন কমপক্ষে দুবার ফ্লোরাইড তুথপেস্ট ও নরম ব্রাশ দিয়ে দাঁত-ব্রাশ করুন।
-
প্রতিনিয়ত ফ্লসের মাধ্যমে দুই দাঁতের অভ্যন্তরীণ ফাঁকা জায়গা পরিষ্কার রাখুন।
-
ব্রাশ এবং ফ্লসিং করার পর মুখে থাকা খাবার কণাগুলো পরিষ্কার করার জন্য মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুন।
-
স্বাস্থ্যগত খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করুন।
-
নিয়মিত দাঁতের চেকআপ করুন এবং দাঁত পরিষ্কার রাখুন।
-
মাদক সেবন থেকে বিরত থাকুন।
পরিশেষে, আপনি যদি কোন ধরণের মুখের স্বাস্থ্যগত সমস্যা অনুভব করে থাকেন তাহলে এটা অবহেলা করবেন না। তাৎক্ষনিক ভাবে দাঁতের ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। মনে রাখবেন আপনি মুখের যত্ন নিচ্ছেন মানেই কিন্তু পুরো শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিচ্ছেন।