মুখের যত্নঃ কিভাবে দাঁত পরিষ্কার করবেন?

আপনি হয়ত ভাবছেন দাঁত তো সবসময়ই মাজা হয়ে থাকে, এ আর নতুন কি? তবে আপনি জানেন কি সঠিক নিয়মে দাঁত না মাজলে দাঁতের বরং আরো ক্ষতি হয়? আজ আমরা দাঁত মাজা এবং দাঁতের মাঝখানের ফাঁকা জায়গা পরিষ্কার অর্থাৎ ফ্লসিং এর সঠিক নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব।

আপনার মুখের সুন্দর হাসি এবং শরীরের সার্বিক সুস্বাস্থ্যের অনেকটাই প্রতিনিয়ত সঠিক নিয়মে দাঁতের যত্ন নেয়ার উপরেই নির্ভর করে। এছাড়া একটা কথা তো সবসময়ই আমরা শুনে থাকি যে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দেয়া উচিৎ। এটা আদতেই সত্য একটি কথা, কেননা দাঁত নষ্ট হয়ে গেলে আমরা আরেকটি দাঁত কখনই পাব না। আর তাই সঠিক নিয়মে দাঁতের যত্ন নিন এবং মন খুলে হাসুন ও সুস্থ থাকুন। আসুন জেনে নেই সঠিক পদ্ধতিতে দাঁতের যত্ন নেয়ার কিছু পদ্ধতি। 

সঠিক নিয়মে দাঁত মাজুন 

মুখের যত্ন নেয়ার একদম শুরুটা হয় কিন্তু এই দাঁত মাজা দিয়েই। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখলে, দাঁত ও মাড়ি উভয়ই ভালো থাকে এবং অনেক ধরণের রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। তবে দাঁত ব্রাশ করা নিয়ে যে বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে সেগুলো হল—

প্রতিদিন দুইবেলা করে দাঁত ব্রাশ করুন 

দাঁত ব্রাশ করার সময় কখনই তাড়াহুড়ো করবেন না। দুই থেকে তিন মিনিট সময় নিন এবং ধীরে সুস্থে দাঁত ব্রাশ করুন। এছাড়া মনে রাখবেন আপনি যদি এসিডিক বা অম্ল জাতীয় কোন খাবার যেমন জাম্বুরা, লেবু অথবা সোডা ইত্যাদি খেয়ে থাকেন, তাহলে তাৎক্ষনিক ভাবে দাঁত ব্রাশ করতে যাবেন না। আর দাঁত ব্রাশ করার সময় আপনার জিহ্বা পরিষ্কার করতেও ভুলবেন না, কেননা জিহ্বাতে প্রচুর পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া থাকে। 

সঠিক টুথপেস্ট এবং টুথব্রাশ ব্যবহার করুন 

সবসময় ফ্লোরাইড টুথপেস্ট  এবং আপনার মুখের আকৃতির সাথে মানানসই নরম ব্রাশ ব্যবহার করবেন। যদি সম্ভব হয় তাহলে অটোমেটিক ভালো মানের বৈদ্যুতিক ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন, এটা সাধারণ ব্রাশ থেকে অনেক বেশি কার্যকর। 

সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করুন 

দাঁত মাজার সময় কখনই এলোপাতাড়ি দাঁত মাজবেন না। সবসময় আলতো করে ব্রাশকে একটি নির্দিষ্ট এঙ্গেলে ধরে রেখে উপর নীচ করে ধীরে ধীরে দাঁত মাজবেন। খুব বেশি জোর দিয়ে ব্রাশ করলে আপনার মাড়ি আঘাত পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 

দুই মিনিটের মত সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে দাঁত মাজুন এবং মনে রাখবেন দাঁতের আশেপাশের জায়গা সহ জিহ্বাও ভালো করে পরিষ্কার করে রাখতে হবে। 

দাঁত ব্রাশের সরঞ্জাম পরিষ্কার রাখুন 

ব্রাশ করা শেষ হয়ে গেলে আপনার টুথব্রাশটি সবসময় পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে রাখবেন। এছাড়া সবসময় ব্রাশটি লম্বালম্বি অবস্থায় অর্থাৎ খাড়া করে রাখুন এবং এটাকে বাতাসে শুকাতে দিন। 

পরিবারের সবার ব্রাশ একইসাথে রাখবেন না, প্রত্যেকের ব্রাশ আলাদা আলাদা স্থানে রাখুন। এছাড়া ঢাকনা বন্ধ কোন পাত্রে টুথব্রাশ সংরক্ষণ করবেন না, কেননা এতে করে ব্রাশের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে।

সময়মত ব্রাশ পরিবর্তন করুন 

প্রতি তিন মাস পরপর টুথব্রাশ অথবা ইলেকট্রিক ব্রাশ হলে তার মাথা পরিবর্তন করে নিন। তবে তার আগেই যদি ব্রাশ নষ্ট হয়ে যায় এবং ব্রাশ ক্ষয় হয়ে যায় তাহলে তা পরিবর্তন করে নিন। 

দাঁতের মাঝের ফাঁকা অংশ ফ্লসিং-এর মাধ্যমে পরিষ্কার রাখুন 

ব্রাশের মাধ্যমে দুই দাঁতের মাঝের ফাঁকা জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয় না এর জন্য আপনার ফ্লসিং করার প্রয়োজন হবে। দুই হাতের আঙুল দিয়ে ফ্লসের দুই পাশ শক্ত করে ধরে রাখুন। দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ফ্লসের মধ্যে প্রেশার দিন এবং খুব আলতো ভাবে দুই দাঁতের মাঝের অংশে ফ্লস করুন। 

ফ্লস টেনে ধরে দাঁতের ভিতরের দিকের সাইডের অংশগুলো পরিষ্কার করুন। একবারে একটি দাঁত পরিষ্কার করুন এবং সেটা শেষ হলে আরেকটি দাঁত পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন। দুই দাঁতের মাঝের অংশটি পরিষ্কার করার পর অন্য দুই দাঁতের অংশ পরিষ্কার করার আগে ফ্লস পরিবর্তন করে নিন। 

প্রতিনিয়ত ব্রাশ এবং ফ্লসিং করার পাশাপাশি সবসময় চেষ্টা করবেন ফ্লুরাইডযুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে। এছাড়া টুথপিক বা এই ধরণের জিনিস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, কেননা এগুলো দাঁতের মাড়িকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেয়। যার ফলে বিভিন্ন ধরণের রোগের সৃষ্টি হতে পারে। 

কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন? 

দাঁতের ডাক্তারের সাথে আলাপ করে রেগুলার চেকআপের সময় নির্ধারণ করে নিন। এছাড়া আপনার মুখের মধ্যে যদি নিম্নোক্ত কোন ধরণের লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে তাৎক্ষনিক ভাবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হনঃ

  • মাড়ি যদি লাল হয়ে যায় অথবা ফুলে যায় 

  • দাঁত ব্রাশ এবং ফ্লসিং করার সময় যদি রক্ত ক্ষরণ হয়।

  • দাঁত থেকে যদি মাড়ি আলগা হয়ে যায়

  • গরম অথবা ঠাণ্ডা কিছু খেলে যদি দাঁতে ব্যথা অথবা বেশি শিরশির করে

  • মুখ থেকে যদি দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়

  • খাবার চিবানোর সময় যদি দাঁতে ব্যথা করে

 

মনে রাখবেন যে কোন সমস্যার প্রাথমিক চিকিৎসা আপনাকে বড় ধরণের যে কোন রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। তাই কোন সমস্যায় খুব বেশি অপেক্ষা করবেন না বরং দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

Default user image

ইকবাল মাহমুদ ইকু, লেখক, আস্থা লাইফ

দীর্ঘদিন ধরেই লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ততার সুবাদে বেশ কিছু স্বনামধন্য অনলাইন পোর্টালে লেখালেখি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই লেখার প্রতি রয়েছে অদম্য অনুরাগ। এই লেখালেখিকেই নেশা এবং পেশা হিসেবে নেয়া আমার ইতোমধ্যেই চারটি উপন্যাস এবং একটি ছোট গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। জন্ম থেকেই ঢাকায় বসবাসরত আমি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেও পথ শিশুদের জীবন যাপনের মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে আসছি প্রায় ১২ বছর ধরে। বর্তমানে আস্থা লাইফের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে জন সাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়ার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছি। বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি এবং অবসর সময়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর মুভি নিয়েই কাটে।

Related Articles