করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করার সহজ ৭ টি উপায়
প্রতিদিন কোভিড-১৯ এ মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে, তা সত্ত্বেও, কর্মক্ষেত্রেও মানুষের পরিধি বাড়ছে। যেহেতু ভাইরাসটি অলক্ষিতভাবে ছড়িয়ে পড়ে তাই, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার সাথে সাথে আমাদের সাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী।
বিশ্বব্যাপী কোভিড -১৯ ছড়িয়ে পরেছে। বাংলাদেশ সহ গোটা পৃথিবীর ২১৫ টি দেশে এই ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। নিয়মিত নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নতুন মৃত্যুর সংখ্যা সাধারণ মানুষের মনে উদ্বেগ তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার অর্থনৈতিক অবস্থা সচলের লক্ষ্যে লকডাউন শিথিল করেছে। তাই গণপরিবহনে, কর্মক্ষেত্রে বা বাজারে করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে প্রতিরক্ষার জন্যে কিছু নিয়ন্ত্রিত সাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
যেহেতু প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে যেতে হবে, সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এই পরামর্শগুলি বিবেচনা করুন-
১) আপনার ব্যক্তিগত ডিভাইস গুলিকে জীবাণুমুক্ত করুন
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে গড়ে আমরা দৈনিক পঞ্চাশ বার আমাদের ফোন চেক করি। আর আমাদের ফোনগুলি বাথরুম কমোডের তুলনায় ১০ গুণ বেশি জীবাণু বহন করে। সুতরাং আমরা ক্রমাগত আমাদের ফোন থেকে আমাদের হাত, মুখ এবং জিহবায় জীবাণু ছড়িয়ে দিচ্ছি।
যেহেতু মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের একটি আংশে পরিণত হয়েছে, তাই যেভাবে আমরা আমাদের হাত সুরক্ষিত রাখি সেভাবে মোবাইল ফোনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত। তাই বাইরে থেকে এসে আপনার হাত ধোঁয়ার পর ফোনটিকে ভালো কোন ডিসইনফেক্টেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
-
প্রথমেই ডিভাইসটি সুইচঅফ করে নিন।
-
এরপর ডিভাইসের খোলা অংশ গুলো বন্ধ করে নিন, যাতে ফোনের ভিতরে আদ্রতা প্রবেশ করতে না পারে।
-
নরম কাপড় সামান্য ভিজিয়ে তারপর ডিভাইসটি ভালো করে মুছে নিন।
-
ডিসইনফেক্টিং ওয়াইপস দিয়ে ডিভাইসের বাইরের অংশগুলো পরিষ্কার করে নিন।
-
ব্লিচ জাতীয় কোনও কিছু ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
২) ব্যবহৃত চশমা এবং সানগ্লাস জীবাণু মুক্ত করুন
চশমা পরা অবস্থায় আমরা প্রায়শই চশমা এবং মুখ স্পর্শ করে থাকি। কোভিড-১৯ চোখে প্রবেশের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটতে পারে কিনা তা জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন থাকলেও, আমেরিকান রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (সিডিসি) মুখ, নাক এবং চোখের মতো অংগগুলোকে স্পর্শ করার আগে হাত জীবাণুমুক্ত করা উচিৎ।
-
চশমা এবং সানগ্লাসে থাকা অতিরিক্ত ময়লা, তেল এবং জীবাণু লেন্স ক্লিনার দিয়ে নিয়মিত পরিস্কার করুন।
-
লেন্স ক্লিনারের মধ্যে সারফ্যাক্ট্যান্ট জাতীয় পদার্থ রয়েছে, যা ভাইরাসের কার্যক্রম বিঘ্নিত করে দিয়ে চশমাকে জীবাণু মুক্ত রাখে।
-
আপনি যদি অন্যদের সাথে সময় ব্যয় করেন তবে আপনার চশমা এবং সানগ্লাস পরিস্কার রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করুন
৩) দরজার হাতলগুলি মুছুন এবং পরে আপনার হাত পরিষ্কার করুন
আপনার বাড়ির ভেতরে, গাড়ীতে এবং বাড়ির বাইরে আপনি যেখানেই যান না কেন সন্দেহ নেই যে আপনি দরজার হাতলগুলি স্পর্শ করছেন।
-
যদি আপনি হাতলগুলোর দূষণের মাত্রা সম্পর্কে অনিশ্চিত হন তবে হাতে স্যানিটাইজার ব্যাবহার করুন।
-
বাসা-বাড়ির দরজার হাতলগুলো নিয়মিত জীবাণু নাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন।
-
কাশি বা হাঁচি দেওয়ার পরে, কোন স্থান থেকে ফিরে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে ধুয়ে হাত সুরক্ষিত করুন।
-
যদি সাবান এবং পানি না পাওয়া যায় তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। আপনার হাতের এপিঠ-ওপিঠ শুষ্ক বোধ না হওয়া পর্যন্ত একসাথে ভালোভাবে ঘষুন।
৪) আপনার পার্স এবং মানিব্যাগটি জীবাণুমুক্ত করুন
আপনি যেখানেই যান আপনার পার্স বা ওয়ালেট সম্ভবত আপনার সাথেই ভ্রমণ করে। তবে, পার্স এবং ওয়ালেটের বহিরাংশ অতিরিক্ত জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত নাও হতে পারে। সাধারণত বাইরের চেয়ে ভিতরের অংশে জীবাণু বেশি থাকার সম্ভাবনা থাকে। তাই পার্সের ভিতরে ও বাইরে ডিসিনফেক্টেন্ট দিয়ে পরিষ্কার রাখতে পারেন।
৫) মাস্ক ধৌত করুন
সিডিসি'র পরামর্শ অনুযায়ী মাস্ক প্রতিবার ব্যাবহারের পর নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে ব্লিচ দ্রবণে ৫ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখা জরুরি। (জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ব্লিচ ব্যাবহার করুন)
-
৫ টেবিল চামচ (১/৩ কাপ) ব্লিচ প্রতি গ্যালন পানিতে ব্যবহার করুন৷
-
মাস্ক টি ভালোভাবে ভিজিয়ে রাখুন।
-
ভিজানোর পরে, ঠান্ডা পানিতে মাস্কটি ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন।
এছাড়াও প্রায় ১০ মিনিটের জন্য সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে গরম পানিতে মাস্ক গুলি ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এটি ভাইরাসকে ধ্বংস করতে এবং কাপড় থেকে যেকোন ময়লা, কালি এবং তেল মুছে ফেলতে সহায়তা করবে।
-
কাপড়ের ধরণ অনুযায়ী আপনি ড্রায়ারও ব্যবহার করতে পারেন। অথবা ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে পারেন।
-
শুকিয়ে যাওয়ার পর মাস্কটি ইস্ত্রি করুন।
-
ভেজা মাস্ক ব্যাবহার এড়িয়ে চলুন।
ব্রণ গঠনে অতিরিক্ত মাস্ক ব্যাবহারের কিছু ভূমিকা রয়েছে। একনি মেকানিকা এক ধরণের ব্রণ যা ত্বকে দীর্ঘস্থায়ী ঘষা বা ঘর্ষণ দ্বারা সৃষ্ট এবং হেলমেট বা টুপি ব্যবহারের সাথে সাধারণত জড়িত। দীর্ঘকালীন মুখোশ ব্যবহারের ফলে এই ধরণের ব্রণ হতে পারে। যদি মুখের মাস্কটি না ধুয়ে পুনরায় ব্যবহার করা হয় তবে তেল এবং জিবাণু বাড়তে পারে। যা মুখের মাস্কের অভ্যন্তরের আর্দ্র পরিবেশের কারণে ব্রণের ছিদ্র গুলো বন্ধ করে ব্লাক হেড তৈরি করে। তাই মাস্ক পরিষ্কার করার সাথে সাথে ফেস ওয়াশ ব্যবহার করে নিয়মিত মুখ ধুতে হবে।
৬) গণপরিবহনে চলাচলের সময় ফেস কভার ব্যবহার করুন
কাজে বা অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য যদি আপনাকে গণপরিবহণ ব্যবহার করতে হয়, তবে সাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, মাস্ক পরুন এবং ফেস কভার ব্যবহার করুন।
আমরা জানি যে মাস্ক কিংবা ফেস কভার সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধ করতে সহায়তা করে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও একই কথা। এটি সর্বদা আপনার সাথে থাকার মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হয়ে উঠতে পারেন যে আপনার জন্য ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
সর্বদা আপনার সুরক্ষা সামগ্রী হাতের নাগালে রাখুন।
৭) সঠিক জীবাণুনাশক নির্বাচন করুন
জীবাণুনাশক ক্রয় এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা প্রায়শই ভুল করে। তারা পণ্যের গায়ে লেখা ব্যবহারবিধি বা দিকনির্দেশিকা না দেখেই তা ব্যবহার শুরু করে।
পরিবেশ সংরক্ষণ এজেন্সির (ইপিএ) নির্দেশিত, হ্যান্ড রাব বা হ্যান্ড সেনিটাইজার হাতের পৃষ্ঠে যে পরিমাণ সময় রাখা উচিত তা উপেক্ষা করা অন্যতম একটি ভুল।
লকল এবং মানহীন জীবাণুনাশক কেনা থেকে বিরত থাকুন।
পরিশেষে, সবসময় ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করুন এবং উপরে বর্ণিত টিপস অনুসরণ করে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর জোর দিন। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এটি এমন একটি রোগ যা তারা কাটিয়ে উঠতে পারে। নিজেকে, প্রিয়জনদেরকে এবং দূর্বলদের সুরক্ষিত রাখতে আমরা সকলেই এমন সহজ কিছু পদক্ষেপ নিতেই পারি।