রোজায় ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য চিকিৎসকের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
বর্তমানে দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ! আর রমজান এলেই ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু প্রশ্ন থাকে যে তারা কিভাবে রোজা রাখবেন? সমাধান সহ উত্তর দিচ্ছেন ডাঃ মোহাম্মাদ ওমর ফারুক। যিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে(পি,জি, হাসপাতাল) ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিষয়ে পোষ্টগ্রাজুয়েশান (এম,ডি) করছেন।

রমজান মাস আমাদের মুসলমানদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মাস। শত ব্যস্ততা বা শারীরিক অবস্থা উপেক্ষা করে আমরা এই সময়টা আল্লাহ্র জন্য নিবেদিত হয়ে যাই। কিন্তু আপনার যদি ডায়াবেটিস হয় তবে আপনাকে রমজানের জন্য যথাযথ প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ দীর্ঘ সময়ের জন্য রোজা রাখা আপনার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
এই সময়ে ডায়াবেটিস রোগীরা কিছুটা দ্বিধায় পরে যান যে তারা কীভাবে রোজা রাখবেন, নাকি রাখবেন না! আসুন আপনাদের সেই সব প্রশ্নগুলির উত্তর জেনে নেই।
প্রশ্নঃ রমজান মাসে আমরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যাবতীয় খাবার ও পানাহার থেকে বিরত থাকি। এই লম্বা সময়ে আমাদের দেহে আসলে কী ঘটে?
উত্তরঃ আমরা যখন রমজান মাসে রোজা রাখি তখন আমাদের শেষ খাবার অর্থাৎ সেহরির প্রায় ৮ ঘন্টা পরে আমাদের দেহ রক্তের গ্লুকোজ (চিনি) স্তর স্বাভাবিক রাখতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে জমে থাকা শক্তি ব্যবহার করতে শুরু করে। বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে এটি ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু আপনার যদি ডায়াবেটিস হয় তবে আপনার শরীর গ্লুকোজ ঠিকমত ব্যবহার করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে আপনি আপনার নিয়মিত ডোজে ট্যাবলেট বা ইনসুলিন গ্রহণ করলেও হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা "হাইপোস" (রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া) এর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সাম্প্রতিক বছর গুলিতে রোজা দীর্ঘ হওয়ার কারণে ডায়াবেটিক রোগীদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া এবং পানিশূণ্যতা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
আবার অনেক সময় ডায়াবেটিক রোগীরা যদি ইফতার এবং সেহরিতে বেশী খেয়ে ফেলে তবে হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া) হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
প্রশ্নঃ তাহলে তো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রোজা রাখা খুব কষ্টের! এক্ষেত্রে তারা রোজা রাখতে পারবেন অথবা কিভাবে রাখবেন?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে সবার আগে রোগীর অবস্থা আগে জানতে হবে। অবস্থাভেদে রোজা রাখার ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। সাধারণত ডায়াবেটিক রোগীদের ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন কম ঝুঁকি, মাঝারি ঝুঁকি ও উচ্চ ঝুঁকির রোগী। আগে দেখতে হবে রোগী কোন পর্যায়ে পড়ে,
কম ঝুঁকিসম্পন্ন ডায়াবেটিক রোগী
-
খাদ্যাভাস এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
-
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হয় না।
মাঝারি ঝুঁকিসম্পন্ন ডায়াবেটিক রোগী
-
খাদ্যাভ্যাস এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ডায়াবেটিস যদি মাঝারি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
-
ডায়াবেটিসের বড় ধরণের কোন জটিলতা থাকে না।
-
নির্দিষ্ট ওষুধে ডায়াবেটিস সু-নিয়ন্ত্রিত থাকে।
উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন ডায়াবেটিক রোগী
-
টাইপ ১ ডায়াবেটিস হলে।
-
যদি দিনে ২ বারের বেশি ইনসুলিন ইনজেকশন ব্যবহার করে।
-
ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ কম থাক।
-
যদি ঘন ঘন রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়।
-
যদি গত ছয় মাসের মধ্যে উচ্চ রক্ত শর্করার জন্য কোন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকে।
-
যদি রক্তের শর্করার মাত্রা কম থাকে কিন্তু কোন লক্ষণ থাকে না।
-
কিডনি, লিভার, হার্টের সমস্যা থাকলে অথবা চোখের দৃষ্টি দুর্বল হলে।
-
যদি তীব্র অসুস্থতা থাকে যেমন, ডায়াবেটিক পায়ের সংক্রমণ বা পায়ের আলসার।
-
যদি গর্ভবতী হয়।
অতএব আপনি যদি কম ঝুঁকি সম্পন্ন হন, তবে আপনি রোজা রাখতে পারবেন।
আর যদি আপনি যদি মাঝারি ঝুঁকি সম্পন্ন হন তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক রোজা রাখতে পারবেন। অবশ্যই নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে।
যারা উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা নাও রাখতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনি যদি এই রমজান রোজা রাখতে নাও পারেন তবে আপনি পরবর্তী সময়ে রোজা রাখতে পারবেন। আল্লাহ তায়ালা সেই সুযোগ আমাদের জন্য রেখছেন।
প্রশ্নঃ আচ্ছা যারা গর্ভবতী এবং ডায়াবেটিস আছে, তাদের আসলে কি করা উচিৎ রোজা রাখার ব্যাপারে?
উত্তরঃ আপনি যদি গর্ভবতী হন এবং ডায়াবেটিস রোগী হন তবে আপনার রোজা না রাখাটাই উত্তম। অনেকক্ষেত্রে এই সময় রোজা রাখলে আপনি নিজের এবং আপনার অনাগত শিশুকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারেন। তবে আপনার চিকিতসক যদি মনে করেন আপনার এবং আপনার শিশুর কোন সমস্যা হবে না, তবেই আপনি রোজা রাখবেন।
প্রশ্নঃ যাদের নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়, তারা কি করবেন? ওষুধ চালিয়ে যাওয়া উচিত?
উত্তরঃ হ্যাঁ, রমজানে আপনার ওষুধ খাওয়া অবিরত রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে আপনার ওষুধের ডোজ এবং সময়সূচির পরিবর্তন করা প্রয়োজন হতে পারে।
আপনি যদি খাবারের ধরণ এবং খাওয়ার সময় পরিবর্তনের কারণে রমজান মাসে ওষুধ না খান তবে, আপনি উচ্চ রক্ত শর্করার মাত্রা ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন।
তাই অবশ্যই ডাক্তারের সাথে ওষুধের ব্যাপারে কথা বলে নেওয়া উচিৎ।
প্রশ্নঃ উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম যে কম ও মাঝারি ঝুঁকি যাদের তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিয়াম পালন করতে পারবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রোজা থাকাকালিন সময়ে উক্ত ডায়াবেটিস রোগীরা কোন সমস্যায় বা জটিলতায় পরতে পারে কিনা?
উত্তরঃ ডায়াবেটিস হলে রমজানে তিনটি প্রধান সমস্যা দেখা দিতে পারে-
-
রক্তে শর্করার পরিমাণ কম যা হাইপোগ্লাইকাইমিয়া বা হাইপোস হিসাবেও পরিচিত,
-
রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা যা হাইপারগ্লাইসেমিয়া নামে পরিচিত, এবং
-
পানিশূণ্যতা।
দীর্ঘ সময় রোজা থাকার ফলে আপনি রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে। আবার পানিশূণ্যতার উচ্চ ঝুঁকিতে পরতে পারেন। আবহাওয়া গরম থাকলেও আপনি পানিশূণ্য হয়ে পরবেন কিংবা অনেক ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস এর কারণেও, যা আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। এছাড়া আপনি যদি সেহরি না খেয়ে রোজা রাখেন তাহলে হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন তেমনি সেহরী ও ইফতারে অতিরিক্ত পরিমাণে খান তবে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
প্রশ্নঃ আচ্ছা আপনার কথার সূত্র ধরে আরেকটি প্রশ্ন চলে আসল। এই হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা হাইপো কী? আর হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ কি কি?
উত্তরঃ ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা ৩.৯ মিলি মোল/লিটার এবং ডায়বেটিক রোগী নন এমনদের ক্ষেত্রে ৩ মিলি মোল/লিটার এর নিচে হয় তখন আমরা হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা হাইপো বলি। অর্থাৎ আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাবে। নিয়মিত রক্তের শর্করা তথা ডায়াবেটিস পরিমাপ করতে হবে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ অনূভুত হয় না। তবে কিছু লক্ষণ থেকে সন্দেহ করা যেতে পারে। সেগুলো হচ্ছে-
-
ঘাম অনুভূত হওয়া,
-
মাথা ঘুরা,
-
উদ্বিগ্ন বা অসুস্থ বোধ করা,
-
কাঁপতে থাকা,
-
ঠোঁট শিহরিত হওয়া,
-
ক্ষুধার্ত বোধ,
-
ফ্যাকাশে লাগা,
-
বুক ধড়ফড় করা,
-
কথা জড়িয়ে আসা।
প্রশ্নঃ যদি কেও রোজা রাখা অবস্থায় হঠাৎ হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা হাইপো হয়ে যায় অর্থাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়, সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে করণীয় কি?
উত্তরঃ তখন অবশ্যই রোজা রাখা উচিৎ হবে না এবং সাথে সাথে ডায়াবেটিসের মাত্রা মেপে নিতে হবে।
-
যদি রোজার যে কোন সময় আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা ৩.৩ মিলি মোল / লিটার এর নিচে বা তার থেকে কম হয়, এবং
-
যদি রোজার একদম শুরুতে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা ৩.৯ মিলি মোল / লিটার হয় এবং আপনি যদি ইনসুলিন নিয়ে থাকেন বা গ্লিক্লাজাইড ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন
তবে, আপনাকে যেকোন উপায়ে তাৎক্ষণিকভাবে রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে। রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করার কয়েকটি উপায় হলো-
-
একটি ছোট গ্লাসে (১৫০-২০০ মিলি) খাঁটি ফলের রস, অথবা
-
অল্প পরিমাণ (৯০-১২০ মিলি) এনার্জি যুক্ত পানীয়, অথবা
-
গ্লুকোজ ট্যাবলেট, অথবা
-
মিষ্টিজাতীয় খাবার।
১৫-২০ মিনিট পর রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা মেপে নিন; যদি এখনও ৪.০ মিলি মোল / লিটার এর নিচে থাকে তবে আবার উপরের যেকোন একটি উপায় অনুসরণ করুন। গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক হয়ে আসলে হালকা নাস্তা খেয়ে নিবেন।
প্রশ্নঃ আরেকটা ব্যাপার, আমরা হরহামেশাই দেখি যে অনেক ডায়াবেটিস রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। এটা কেন হয়?
উত্তরঃ রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা আপনাকে অস্বাস্থ্যকর, পানিশূন্য করে তোলে এবং স্নায়ু, রক্তনালী ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলি যেমন কিডনি এবং চোখের ক্ষতি করতে পারে। এবং যদি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি হয়ে যায়, তবে আপনি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। তাছাড়া রক্তে শর্করার মাত্রা কমেও অজ্ঞান হবার আশংকা থাকে।
প্রশ্নঃ কি দেখলে বোঝা যাবে কারো রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেছে?
উত্তরঃ রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রার লক্ষণগুলো হচ্ছে-
-
খুব তৃষ্ণার্ত লাগবে,
-
ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা,
-
প্রচুর প্রস্রাব করা বিশেষত রাতে ঘুম থেকে বেশ কয়েকবার জেগে ওয়াশরুমে যাওয়া,
-
চরম ক্লান্তি অনুভব করা,
-
খিটখিটে মেজাজ,
-
দূর্বল লাগা,
-
মাথাব্যাথা,
-
হঠাৎ করে কাজে মনোযোগ দিতে না পারা।
প্রশ্নঃ হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা প্রতিরোধের কোন উপায় আছে কি? বিশেষ করে রোজার সময়?
উত্তরঃ রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা এড়াতে আপনাকে যে কাজগুলো করতে হবে-
-
রমজানের আগে ডাক্তারের সাথে দেখা করে আসুন, কারণ আপনার ডায়াবেটিসের ওষুধের পরিবর্তন করতে হতে পারে।
-
আপনার ডায়াবেটিসের ওষুধ সর্বদা গ্রহণ করতে হবে।
-
পরিমিতভাবে মিষ্টিযুক্ত খাবার খান।
-
ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন।
-
আপনি অসুস্থ থাকলে রোজা রাখা ঠিক হবে না।
-
নিয়মিত রক্তের শর্করা তথা ডায়াবেটিস পরিমাপ করতে হবে।
প্রশ্নঃ আরেকটা সমস্যা যেটা ডায়াবেটিস রোগী ছাড়াও আমরা সবাই অনুভব করি রমজান মাসে, পানিশূন্যতা। রোজায় এই ঝুঁকিটা কতটুকু? কারা পানিশূণ্যতার ঝুঁকিতে আছে?
উত্তরঃ পানিশূণ্যতা হয় যখন আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকে না। রমজানে অনেক সময় ধরে রোজা রাখার ফলে আপনাকে দীর্ঘক্ষণ তরল ছাড়া থাকতে হয়। আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি থাকলেও আপনি পানিশূণ্যতায় ভুগতে পারেন। আপনি যদি পানিশূণ্য হয়ে যান তবে আপনার রক্তে চিনির মাত্রা খুব বেশি হয়ে যাবে এবং আপনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
পানিশূণ্যতার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে-
-
মাথা ঘোরা,
-
দিশেহারা হওয়া,
-
চেতনা হ্রাস,
-
প্রস্রাবের পরিমাণ একদম কমে যাওয়া,
-
গাঢ় রঙের প্রস্রাব হওয়া।
পানিশূণ্যতা হওয়ার ঝুঁকি সমূহ হচ্ছে-
-
আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হন,
-
রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা থাকলে,
-
বয়স্ক মানুষ,
-
গর্ভবতী নারী,
-
উচ্চ রক্তচাপের জন্য ডাইইউরেটিকস (যা কিডনি থেকে তরল এবং লবণ বের করে দেয়) জাতীয় ওষুধ খান,
-
গরম আবহাওয়া,
-
অপর্যাপ্ত তরল গ্রহণ।
আপনাকে ইফতার ও সেহরির মাঝে প্রচুর পরিমাণে চিনিমুক্ত পানীয় পান করতে হবে। এটাও মনে রাখবেন যে চা, কফি এবং কিছু কোলা পানীয়গুলিতে ক্যাফেইন রয়েছে যা মূত্রবর্ধক এবং আপনাকে পানিশূণ্য করে দিতে পারে।
প্রশ্নঃ অনেকে রাতে বা মধ্যরাতে একেবারে বেশি করে খেয়ে রোজা রাখে! মানে আলসেমি করে হোক বা অন্য কোন কারণে হোক সেহরিতে ঘুম থেকে উঠে না। এটা কি ঠিক?
উত্তরঃ অবশ্যই ঠিক না। যেহেতু লম্বা সময় আপনি যাবতীয় খাবার ও পানাহার থেকে বিরত থাকবেন। সেহেতু সেহরিতে খাবার না খেলে আপনাকে স্বাভাবিকের চেয়ে আরো অনেক বেশি সময় ধরে না খেয়ে থাকতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের দীর্ঘ সময় খাবার ও পানি ছাড়া থাকলে রক্তে চিনির মাত্রা কম হওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং পানিশূণ্যতা হয়। তাই আপনার ঠিক সেহরির সময় খাওয়া উচিৎ হবে, মধ্যরাতে না।
প্রশ্নঃ রোজার সময় সবাই একটু মুখরোচক খাবার খেতে পছন্দ করে বিশেষ করে ইফতারে। রমজান মাসে আমাদের কি ধরণের খাবার খাওয়া উচিৎ?
উত্তরঃ রমজানে কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে ভুলবেন না। অধিক পরিমাণে খাওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে শর্করাযুক্ত খাবারগুলি আপনাকে কেবল ওজন বাড়িয়ে তুলবে না বরং এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা ভারসাম্যহীন করে দেয়।
মনে রাখবেন রমজান কিন্তু আপনাকে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলার শিক্ষা দেয়। রমজানে আপনি নিম্নোক্ত খাবারগুলি নির্বাচন করতে পারেন-
-
রোজা ভাঙার জন্য কেবল ১-২ টি খেজুর খেতে পারেন, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে।
-
যদি আপনি ফলের রস পান করেন তবে একটি ছোট গ্লাসে (১২০ মিলি) নিবেন।
-
সেহরি ও ইফতারে স্টার্চযুক্ত শর্করা খাবেন কারণ এই খাবারগুলো ধীরে ধীরে শক্তি নির্গত করে যা রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণের জন্য উপকারী। যেমন ভাত, সুজি, পাস্তা এবং দানাদার বা বীজযুক্ত রুটি। তবে পরিমিত পরিমাণে।
-
খাবারে সম্পৃক্ত চর্বির (স্যাচুরেটেড ফ্যাট) পরিমাণ হ্রাস করতে চর্বিহীন মাংস এবং মুরগি বেছে নিতে পারেন।
-
মসুর ডাল, মটরশুটি এবং ডাল প্রাকৃতিকভাবে স্বল্প চর্বিযুক্ত আমিষের উৎস।
-
আপনার খাবারে ফলমূল, শাকসবজি এবং সালাদ অন্তর্ভুক্ত করুন।
-
স্বাস্থ্যকর রান্না পদ্ধতি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
-
আপনার রান্নায় ব্যবহৃত তেলের পরিমাণ হ্রাস করুন। তেল খাবারে ঢেলে দেওয়ার চেয়ে চামচে পরিমাপ করে নিন।
-
ঘি এবং মাখন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
-
ভাজা জাতীয় খাবার যেমন পরটা, পুরী, সামোসা, পাকোড়া, ভাজা কাবাব, ভাজা মুরগি ইত্যাদি পরিহার করুন।
-
আপনার রান্নায় লবণের পরিমাণ হ্রাস করুন এবং খাওয়ার সময় অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করবেন না।
-
আচার, লবণযুক্ত বাদাম এবং সস জাতীয় উচ্চতর লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
-
এমন খাবারগুলি এড়িয়ে চলুন যেগুলিতে চিনি খুব বেশি থাকে, যেমন মিষ্টান্ন, কেক, বিস্কুট, চকোলেট, পুডিং, ক্ষীর ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ আর পানীয় নিয়ে আপনার কি মতামত? আমরা কী ধরণের পানীয় পান করতে পারি?
উত্তরঃ সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণ তরল পান করবেন (চিনিবিহীন), বিশেষত পানি।
পানীয় সম্পর্কে পরামর্শ বলতে গেলে,
-
চা বা কফি পান করা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন, এগুলিতে ক্যাফেইন রয়েছে এবং এটি আপনাকে পানিশূনণ্য করতে পারে।
-
চিনিবিহীন পানীয় পান করুন।
-
কিছু চিনিবিহীন পানীয়, যেমন ডায়েট কোলাতেও ক্যাফেইন থাকে, তাই সেগুলিও এড়িয়ে চলুন।
-
ফলের রস খাবেন না। কিন্তু আস্ত ফল কিংবা ফলের অংশ খেতে মানা নেই তবে নিয়ন্ত্রণহীন নয় এবং যথাসম্ভব রসালো ফল পরিহার কিংবা কম পরিমানে খাবেন।
প্রশ্নঃ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানলাম আপনার কাছে। আজকের শেষ প্রশ্ন, আমরা তারাবীহ নামাজ পড়তে পারবো তো?
উত্তরঃ দেখুন ব্যাপারটা তারাবির নামাজে না। কথা হচ্ছে আপনি কি পরিমাণ পরিমাণ পরিশ্রম করছেন এবং সেই অনুযায়ী পর্যাপ্ত শক্তি আপনার দেহে আছে কিনা। শরীরে পর্যাপ্ত শক্তির জোগান থাকলে শুধু তারাবি কেন যেকোনো শারীরিক কসরত করতে পারবেন। তাই তারাবীহ নামাজ পড়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি ইফতারে পর্যাপ্ত খাবার খেয়েছেন। এটি রক্তে শর্করার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবং আপনার শরীরের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করবে। তারাবীহ নামাজের সময় পাশে পানি বা গ্লুকোজ রাখতে পারেন।
পরিশেষ
রমজানে আমাদের সবারই আশা থাকে সবগুলা রোজা ঠিকমত পালন করা। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের একটু বেশি সচেতন থাকতে হবে। আপনার ডায়াবেটিক ডাক্তার আপনাকে যে পরামর্শ দেয় তা দয়া করে নোট করে রাখুন। যদি আপনাকে রোজা না করার পরামর্শ দেওয়া হয় তবে দয়া করে তা গুরুত্ব সহকারে নিবেন এবং সেভাবে চলার চেষ্টা করবেন।