ই-সিগারেট কি স্বাস্থ্য জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর?
ই-সিগারেট এর উৎপত্তি ও কিভাবে এটি এত জনপ্রিয় হল, কি আছে এই ই-সিগারেটে, ই-সিগারেট কি ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করে, ই-সিগারেট কি ক্ষতিকর নাকি উপকারী ?
ধূমপায়ীদের কাছে স্বস্তির অন্য নাম ধূমপান করা। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে ধরণ বদলেছে ধূমপানের ক্ষেত্র্রেও। সাধারণ সিগারেটের পাশাপাশি এখন বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই ই-সিগারেট প্রচলিত। তামাকের পরিবর্তে ই-সিগারেট ধূমপায়ীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। ইউকে টোব্যাকো এবং সংশ্লিষ্ট পন্য নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে ২০১৬ সালে ই-সিগারেট একটি ভোগ্য পন্য হিসাবে অনুমোদন পায়। ই-সিগারেট ব্রিটেনের মার্কেটে কোন প্রকার মেডিসিন হিসাবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত না হলেও তা নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপী (এনআরটি) বা ধূমপায়ীদের সিগারেট ছাড়ানোর সহায়ক পন্য হিসাবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়েছিল।
ই-সিগারেট কি?
ই-সিগারেট একটি ব্যাটারি চালিত ডিভাইস যা অ্যারোসলের বা স্প্রের মধ্যে থাকা তরল নিকোটিনকে তাপ প্রকিয়ার মাধ্যমে বাষ্পীভূত করে। ই-সিগারেট দেখতে ইউএসবি ফ্লাশ ড্রাইভ বা প্যান আকৃতির হয়ে থাকে। যা ধূমপান ছাড়াই তামাকের ধোঁয়ায় শ্বাস নেওয়ার মতো অনুভূতি তৈরী করে। ধূমপান ছাড়ানোর জন্য কিংবা ধূমপানের বিকল্প হিসাবে ধূমপায়ীরা এ ডিভাইসটি ব্যবহার করেন। এটি অনেকের কাছে ই-সিগস, ই-হোক্কাহ, মডস, ভ্যাপপেন নামে পরিচিত।
ই-সিগারেট এর আবির্ভাব
সাধারণভাবে জানা যায় চাইনিজ ফার্মাসিস্ট হন লিক ২০০৩ সালে আধুনিক ইলেকট্রিক সিগারেট এর আবিষ্কার করেছিলেন। একই বছরে বিশ্ববাজারে গাণিতিক হারে এটি ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৪ সালের এক জরিপে দেখানো হয়, ১৩% আমেরিকান হাইস্কুল স্টুডেন্ট এর ব্যবহার করেন এবং ২০১৫ সালে সেখানকার ১০% প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ই-সিগারেট এর ব্যবহার করেন। প্রায় ৬০% ব্যবহারকারী ব্রিটেনের, যেখানে ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বেড়েছে ৭ লাখ ই-সিগারেট ব্যবহারকারী। যদিও ২০০৩ সালে এটির আবিষ্কারের কথা জানা যায়, ধারণা করা হয় ১৯৬৩ দিকে চাইনিজ টোব্যাকো কোম্পানী নিকোটিন অ্যারাসল উৎপাদন শুরু করেছিল। ২০১৮ সালে, ৯৫% ই-সিগারেট তৈরী হয়েছে চায়নায়। কারণ ঐ সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মেডিসিন পলিসির কারণে ই-সিগারেট নিয়ে নানা রকম আইনী বিতর্ক দেখা দেয়।
ই-সিগারেটে কি কি উপাদান বিদ্যমান?
সাধারণ সিগারেটের মতো ই-সিগারেটেও রয়েছে বিভিন্ন উপাদানঃ
১. ব্যাটারি
২. একটি তাপ উৎপাদনকারী যন্ত্রাংশ বা কয়েল (অ্যাটোমাইজার)
৩. ই-সিগারেট লিকুইড।
৪. রিফিলেবল কার্টিজ
ই-সিগারেটের লিকুইডে যেসব রাসায়নিক উপাদান রয়েছে
নিকোটিন, প্রোপাইলিন গ্লাইকল ও ভেজিটেবল গ্লিসারিন এর মতো ক্ষতিকর সব উপাদান। এছাড়া কিছু ই-সিগারেটে থাকে অ্যারোসল ফর্ম্যালডিহাইড অথবা অ্যাক্রোলিন জাতীয় কার্সিনোজেনিক যৌগ, এ্যাসিটালডিহাইড, টলুইনের মতো হাইড্রোকার্বন, টুব্যাকো স্পেসিফিক নাইট্রোসেমিনসহ আরো বহু উপাদান।
ই-সিগারেট এর প্রকারভেদ
১. সিগ-এঃ ই-সিগারেটের প্রথম প্রজন্ম দেখতে অনেকটা টোব্যাকো সিগারেটের আকৃতির ছিল। প্রথম প্রজন্মের ই-সিগারেটের মধ্যে লিকুইড প্রবেশ করানো যেতো, যা একবার ব্যবহারের পর ডিভাইসটি ফেলে দিতে হতো। এই ধরনের ই-সিগারেট ইদানিং আর তেমন একটা দেখা যায় না।
২. ট্যাংক মডেল বা ভ্যাপ প্যানসঃ এই ধরনের ই-সিগারেটে রিচার্জেবল এটোমাইজার থাকে যাতে লিকুইড ঢোকানো হতো।
৩. পড সিস্টেমঃ এটি দেখতে কমপেক্ট রিচার্জেবল ডিভাইস এর মতো কিছুটা ইউএসবি স্টিক অথবা ই-লিকুইড ক্যাপসুলের আকৃতির।
৪. মডস অথবা এ্যাডভান্সড পারসোনাল ভেপোরাইজারঃ এটি অতি জটিল আকৃতির ট্যাংক মডেলের, যেটা সক্রিয় করার ক্ষেত্রে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কাস্টমাইজ করা সম্ভব।
ই-সিগারেট কিভাবে কাজ করে ?
ই-সিগারেট ব্যবহারকারী যখনই এটিকে অভ্যাসে পরিণত করে তখন এর মধ্যেই তার প্রকৃত শান্তি নিহিত। নিকোটিন গ্রহণকারীর মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত নিকোটিনের অভাব হলে তার অস্থিরতা শুরু হয়। এই অস্থিরতা দূর করা কেবল ই-সিগারেটের মাধ্যমেই সম্ভব। ই-সিগারেটে সাধারণত নিকোটিন, প্রোপাইলিন গ্লাইকল, ভেজিটেবল গ্লিসারিন এবং সুগন্ধী মিশ্রন থাকে। এই জাতীয় নিকোটিনের দ্রবণ ব্যাটারির মাধ্যমে গরম হয়ে তা ধোঁয়া উৎপন্ন করে। যা, ধূমপান ছাড়াই তামাকের ধোঁয়ায় শ্বাস নেওয়ার মতো অনুভূতি তৈরী করে। তারপর নিকোটিন খুব দ্রুত ফুসফুসে পৌছাতে ও রক্তে অতিবাহিত হতে পারে। রক্তে পৌছানোর পর এ নিকোটিন মস্তিষ্কের পাশাপাশি শরীরের নানা অঙ্গে পৌছাতে পারে। আমরা কেবল নিকোটিনের ফুসফুসে ও রক্তে পৌছানো সম্পর্কেই বেশী জানি, কিন্তু তা আমাদের ত্বক আর মিউকাস মেমব্রেনও ভেদ করতে সক্ষম হয়। ই-সিগারেট এর নিকোটিনের পরিমাণ যেকোন ব্যক্তির নেশা তৈরী করার জন্য যথেষ্ট এবং তা থেকে আসক্তও করতে পারে।
কারা ই-সিগারেট ব্যবহার করছে ?
অধিকাংশ ই-সিগারেট ব্যবহারকারী হচ্ছে যারা আগে সাধারণ সিগারেট ব্যবহার করতো তারা এখন ই-সিগারেট ব্যবহার করছে এবং নব্য ধূমপায়ীরাও ই-সিগারেটে আসক্ত হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গ্রেট ব্রিটেনের ৬২ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ২৩ লাখ মিলিয়নেরও বেশী প্রাপ্তবয়স্ক ই-সিগারেট ব্যবহার করছে। ২০১৭ সালের দিকে একটি জরিপে দেখা যায়, মার্কেটে নতুন আসা এ ডিভাইসটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিশোরদের সংখ্যা অধিক। তরুণদের মধ্যে এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং তাদের অধিকাংশই কখনো ধূমপান করতো না। ২০০৫ সাল পর্যন্ত যেখানে একটিমাত্র ব্র্যান্ড ছিলো সেখানে এই কয়েকবছরে প্রায় ৫০০ ব্র্যান্ডে গিয়ে পৌছেছে। ২০১৩-১৪ সালের এক জরিপে দেখানো হয় আমেরিকার ১৮ থেকে ২৪ বছরের ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৩৫% ই-সিগারেট ব্যবহার করে। এছাড়াও বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই ই-সিগারেট এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের প্রকৃত সংখ্যা জানা না গেলেও অনেক তরুণ ই-সিগারেটে আসক্ত হচ্ছে। এই সিগারেট প্রাপ্ত বয়স্ক ও কিশোর-কিশোরীরা ঝুঁকে পড়ছে।
ই-সিগারেট কি সাধারণ সিগারেট থেকে কম ক্ষতিকর?
একটি সাধারণ সিগারেটে ৭ হাজারেরও বেশি ক্ষতিকর রাসানিক উপাদানের মধ্যে ৬০টি উপাদান ক্যান্সার এর কারন হিসাবে পরিচিত। তামাক মানব দেহে সরাসরি ক্ষতি করে এমনকি ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিসাবে কাজ করে। অন্যদিকে ই-সিগারেটে নিকোটিনসহ এমন সকল উপাদান রয়েছে, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
নিকোটিন কিশোরদের মস্তিষ্ক বিকাশে বাধা দেয় এবং ব্রেইনের যে অংশ মনোযোগ, শেখা, মেজাজ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে তা নিকোটিনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। নিকোটিন মানবদেহের প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে এবং ফুসফুসের অবকাঠামো এবং রক্তনালীর ক্ষতি করে। সাধারণ সিগারেট এর তুলনায় ই-সিগারেট গ্রহণে ৩ গুণ বেশি ঝুঁকি থাকে। মেডিকেল নিউজ টুডে এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ই-সিগারেট এর উপর করা বিভিন্ন গবেষণা বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে যে, “ই-সিগারেটের ধোঁয়া মানুষের ফুসফুস এবং মূত্রাশয়ের ক্যান্সারসহ হৃদরোগের অন্যতম কারণ।”
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা ও জার্নালে ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা এমনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এর কারণে ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধক যেসব কোষ রয়েছে সেসব কোষকে দুর্বল এবং অকার্য্কর করে দেয়। এছাড়া ফুসফুসের ব্যাক্টেরিয়া ও এলার্জি প্রতিরোধক কোষের সাধারণ ক্রিয়াকলাপে বাধার সৃষ্টি করে।
প্রাপ্তবয়সে ই-সিগারেট গ্রহণকারীদের এলার্জি রোগসহ হাপানিতে ভোগে। গবেষকদের মতে এ সিগারেটে বিভিন্ন ফ্লেভার ও চিনি, জুস বা মিষ্টি জাতীয় উপাদানের কারণে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।
তাই ই-সিগারেটকে ধূমপানের বিকল্প ভাবা হলেও তা কোন অংশে মানুষের উপকার করেনা বরং মারাত্মক ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। নিকোটিনে তামাকের তুলনায় ক্ষতির কারণ কম হলেও এসব ফ্লেভারের কারণে বমি বমি ভাব, মাথা ঘুরানো, মুখে ও নাকে ক্ষত হওয়া ছাড়াও গর্ভবর্তী নারীদের গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক ই-সিগারেট এর ক্ষতিকর প্রভাবের বিশ্লেষণ করে দেখান যে এটি ভ্যাপিং এর ফলে প্রায় ফুসফুস এর আটশত জটিলতা সৃষ্টি করে এবং এর ব্যবহারের ফলে ১৩টির মতো মৃত্যু ঝুকি রয়েছে। যা কোন অংশেই সাধারণ সিগারেট হতে কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
ই-সিগারেট ধূমপানে আসক্তদের অভ্যাস ছাড়াতে কতটা সফল?
কতিপয় বিশ্লেষণের আঙ্গিকে দেখা যায় ই-সিগারেটের নিকোটিনের ব্র্যান্ড, লেভেল, কার্টিজ এবং রিফিলের কারণে তা সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। সাধারণ ধূমপায়ীদের মধ্যে অনেকেই চায় তাদের এমন বাজে অভ্যাস পরিত্যাগ করতে। কিন্তু আসক্তির কারণে বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ধূমপানে ফিরে যায়। আর এই অবস্থায় যখন তারা ইলেট্রনিক এ ডিভাইসটি পায় স্বাভাবিকভাবে তামাকের চেয়ে ৯৫ভাগ কম ক্ষতিকর বিধায় এটির প্রতি আগ্রহ জন্মায়। কিন্তু বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা বিশ্লেষণে দেখা যায় এটি শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিকভাবে ব্যাপক প্রভাবিত করে এবং দীর্ঘদিনের ব্যবহারের ফলে আসক্তিতে পরিণত হয়। সাধারণ ধূমপায়ীদের থেকে ই-সিগারেট গ্রহণকারীদের তুলনায় নানা কারণে ই-সিগারেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে নেশায় আসক্ত হয় এবং জেনে শুনে দীর্ঘকাল ব্যবহারের ফলে একটি প্যাসিভ বদ অভ্যাস গড়ে তোলে, যা সাধারণ সিগারেট ছাড়াতে গিয়ে সহায়তার বদলে আরো বেশি ক্ষতি করে। অধিকাংশ ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তারা ই-সিগারেটে সাধারণ সিগারেটের ফ্লেভার না পেয়ে আবার সাধারণ সিগারেটেই ফিরে যায়। তাদের ধূমপানের অভ্যাস সহজে ছাড়াতে পারে না।
ই-সিগারেট ব্যবহারের ফলে যেসব শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়
-
ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতিঃ ই-সিগারেট নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ফুসফুসের অবকাঠামো এবং রক্তনালীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ধোঁয়া ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে। ই-সিগারেটের রাসায়নিক দ্রব্য, তৈলজাতীয় ফ্লেভার ও নিকোটিনের তাপে যে অ্যারোসল সৃষ্টি করে তা ফুসফুসে গিয়েও ক্ষতি করতে পারে। ই-সিগারেট এর ফলে ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধক যেসব কোষ রয়েছে সেসব কোষকে দুর্বল এবং অকার্যকর করে দেয়।
-
শ্বাস ও খাদ্যনালীর ক্ষতঃ ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের দীর্ঘমেয়াদী বদঅভ্যাসের ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস ও খাদ্যনালীতে ক্ষত হতে পারে।
-
ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাঃ সাধারণ সিগারেটের মতো ই-সিগারেটেও রয়েছে এমন কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান যার ফলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
-
মূত্রাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাঃ ই-সিগারেটের ধোঁয়া দ্রুত গতিতে মানুষের ফুসফুস পর্যন্ত অতিক্রম করে। যা মূত্রাশয় পর্যন্ত আক্রান্ত করতে পারে। আর এই সমস্যা থেকে ক্যান্সার হতে পারে।
-
হৃদরোগের সম্ভাবনাঃ ই-সিগারেট দীর্ঘকাল গ্রহণ করতে থাকলে তাদের হৃদস্পন্দনের মাত্রা, কার্বন মনোঅক্সাইড লেভেল অথবা প্লাজমা নিকেটিন লেভেলের পরিবর্তনে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে ই-সিগারেট গ্রহণকারী হৃদরোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থাকে।
-
মুখগহ্বর, গলায় অস্বস্তি এবং কাশিঃ ই-সিগারেট ব্যবহারকারীরা মুখ ও গলায় অস্বস্তি অনুভব করে এবং শুকনো কাশি হয়ে থাকে।
-
রক্ত চলাচল ব্যাহত করেঃ এই ক্ষেত্রে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) এর কোন পরিবর্তন হয়না। ফলে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
-
এলার্জি সমস্যাঃ ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিন ই-সিগারেট গ্রহণের ফলে এলার্জির ক্রিয়াকলাপ দুর্বল ও প্রতিরোধ করতে বাধা দেয়। তাই এলার্জির জীবানো সক্রিয় হয়ে এলার্জিজনিত সমস্যায় ভোগে।
-
হাপানিঃ ই-সিগারেট গ্রহণের ফলে শ্বাসনালীর ক্ষতি করে এবং হাপানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
-
বমি ও মাথা ঘুরানোঃ ই-সিগারেটের বিভিন্ন ফ্লেভারের কারণে শুরুর দিকে ই-সিগারেট গ্রহণকারীর বমি বমি ভাব ও মাথা ঘুরায়।
-
মুখে ও নাকে ক্ষতঃ নিকোটিনের ক্ষতিকর ধোঁয়া মুখে ও নাকে বহুবার প্রবেশের ফলে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।
-
গর্ভপাত ও গর্ভের শিশুর ক্ষতিঃ ই-সিগারেট ব্যবহারের ফলে গর্ভবর্তী নারীদের গর্ভের শিশুর ক্ষতি ও গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে।
-
মস্তিস্কের ক্ষতিসাধনঃ নিয়মিত নিকোটিন গ্রহণের ফলে কিশোর-কিশোরীদের ব্রেইনের উপর প্রভাব পড়ে ও মেধা বিকাশে বাধা দেয়। এছাড়াও ব্রেইনের যে অংশ মনোযোগ, শেখা, মেজাজ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ এর কাজে ব্যবহৃত হয় তা নিকোটিনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
-
মানসিক ও আচরণগত সমস্যাঃ ই-সিগারেটে আসক্ত হওয়ার ফলে নানা রকম মানসিক ত্রুটি দেখা দিতে পারে। এমনকি দীর্ঘদিনের বদভ্যাস এর কারণে তাদের আচরণে তারতম্য লক্ষ্য করা যায় ও অনিয়ন্ত্রিত আচরণের দিকে অগ্রসর হয়।
বাংলাদেশে ই-সিগারেট ব্যবহারের ব্যাপকতা ও ভবিষ্যৎ সংকট
বাংলাদেশে ই-সিগারেট ব্যবহারে দেশের তরুণ সমাজ এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। তবে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীরা অধিকাংশই শহরাঞ্চলে বসবাসকারী। ই-সিগারেট তাদের কাছে যতটা না আসক্তির বিষয় তার চেয়ে বেশি আগ্রহের কারণ। বিশেষ করে ইলেকট্রিক ডিভাইস হিসাবে প্রাক্তন ধূমপায়ী ও নব্য ধূমপায়ীদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় বস্তু। সাধারণ ধূমপায়ীদের মধ্যে জরিপ করে দেখা গেছে, তারা আসলে ই-সিগারেটকে বিকল্প হিসাবে দেখছেনা, বরং এটি ব্যবহার করে তারা নিজেদের স্ট্যান্ডার্ড ধূমপায়ী মনে করে। কিন্তু তাদের অভিযোগ হলো এটি আসলে সাধারণ সিগারেটে থাকা উপাদানের ফলে যে সেনসেশন তৈরি করে, তা এই ই-সিগারেটে পাওয়া যায় না। কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরো বাড়বে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। গ্যাটস ২০১৭ এর সাধারণ পর্যালোচনা অনুযায়ী বাংলাদেশের ই-সিগারেট গ্রহণকারী ০.২ শতাংশ, যা বাংলাদেশী ধূমপায়ীদের তুলনায় খুবই কম। কিন্তু এর দ্রুত প্রচারের ফলে ব্যবহার প্রসারিত হবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। জানা গেছে, বাংলাদেশে ই-সিগারেট ব্যবহারে ১৫ বছর বয়সী ও তরুণরাই বেশী আগ্রহী।
অধিকাংশ ই-সিগারেট বর্তমানে বাজারজাত করা হয় চায়না থেকে আমদানি করার মাধ্যমে। ই-সিগারেট ব্যবহারকারীরা এসব ডিভাইসগুলো সাধারণত অনলাইন শপিং ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব সহজেই অর্ডার করে পেয়ে থাকে। বিভিন্ন কনফেকশনারী ও রাস্তার পাশের ছোট দোকানে এটি সহজলভ্য। যদিও বাংলাদেশে এখনো শুধু শহরেই ই-সিগারেট এর ব্যবহার লক্ষ্যণীয় তাই এটির দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আগেই আমাদের দেশের সরকারের উচিৎ এমন ক্ষতিকর দ্রব্যের আমদানিসহ তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ করা। আমরা জানি “প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে উত্তম”। আর তাই এসব দ্রব্য গ্রহণের ফলে যে রোগ শরীরে দানা বাধবে তা নিরাময় করার আগেই যদি যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে আমাদের দেশের অনেক মানুষ এমন ভয়ানক বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাবে। মানুষের শারীরিক সুস্থ্যতা ও জীবনমান সুনিশ্চিত করতে হলে সকল প্রকার সাবধানতা ও ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে মিডিয়ায় প্রচার করা আবশ্যক।