রমজানে ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার টিপস

রমজানে সারাদিন না খেয়ে থাকার পরও ইফতারের পর অনিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণের কারণে আপনার ওজন হয়ে পড়ছে বাঁধনছাড়া! আবার গর্ভাবস্থায় সঠিকভাবে নিয়ম মেনে না চললে মা ও অনাগত সন্তানের হতে পারে বিপদ! তবে কি উপায় গ্রহণ করলে রোজায় সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা যাবে? আসুন জেনে নেই বিস্তারিত।

আরো পড়ুনঃ রমজানে সুস্থ থাকতে কি করবেন?

 

রমজানে ওজন নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে 

আপনি কি আপনার শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে চান? তবে, রমজান ই হতে পারে এর জন্য উপযুক্ত সময়। একটু সতর্ক হলে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন খুব সহজেই। 

আর এর জন্য আপনাকে কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হবে-

  • রান্নায় অতিরিক্ত তৈল ব্যবহার পরিহার করুন। এর পরিবর্তে শশ্য বা ভেজিটেবল স্যুপ ব্যবহার করুন।

  • রান্না করার পদ্ধতি হিসাবে খাবার ভাজার পরিবর্তে আগুনে ঝলসে বা সিদ্ধ করে খাওয়ার চেষ্টা করুন। 

  • চর্বিহীন লাল গরুর মাংস বা চামড়া মুক্ত মুরগীর গ্রীল বা বেশি করে মাছের গ্রীল খান।

  • মিষ্টির বিকল্প হিসেবে অনুমিত পরিমান তাজা ফল খান। প্রতিদিন দুইবেলা ফল খেতে পারেন, যার প্রতিবেলায় ৩ টি করে খেজুর খেলে তা আপনাকে ৬০-৭০ ক্যালরি শক্তি যোগান দিবে এবং তা আপনার জন্য যথেষ্ট।

  • রমজান এ আপনি যখন মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরি করবেন তখন পাস্তুরিত তরল দুধ অথবা কম চর্বি যুক্ত উপাদান ব্যবহার করুন এবং ফ্যাট ফ্রী দই খান।

  • বাদাম জাতীয় শস্য যখন খাবেন তখন এর পরিমানের ব্যপারে সংযমী হ্তে হবে।

  • মিষ্টি জুসের পরিবর্তে প্রতিদিন এক কাপ তাজা ফলের রস খান।

  • ইফতার এবং সেহেরীর মধ্যবর্তী সময়ে বেশি বেশি তরল খাবার বিশেষ করে পানি খান।

  • তাজা সবুজ সবজি খান। সাথে ফ্যাট এবং মেয়নিজ ছাড়া সালাদ খান। চাইলে সালাদের সাথে সামান্য অলিভ অয়েল এবং ভিনেগার মিশাতে পারেন তবে লবন নয়।

  • খাবারে শর্করার পরিমান কমিয়ে বিভিন্ন রকম সব্জির সাথে সেদ্ধ ভাত মিশিয়ে খান। এতে আপনার ক্ষুধা নিবারণের তৃপ্তি ভালো ভাবে অনুভূত হবে। এককাপ ভাত ই একবেলার খাবারের জন্য যথেষ্ট। 

  • প্রতিদিন কি খাবেন এবং কতটুকু খাবেন তা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখুন। যখন তখন খাওয়া, বেশি খাওয়ার প্রবণতা, ভাজাপোড়া বা শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া আপনার কোমরের মেদ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

  • প্রতিদিন ব্যায়াম করুন বা নূন্যতম ৩০ মিনিট হাটুন। এর জন্য আপনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোনো জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করতে পারেন বা সুইমিং পুলে গিয়ে সাতার কাটতে পারেন। 

 

আরো পড়ুনঃ রমজানে সেহরি ও ইফতারিতে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করবেন যেভাবে

আরো পড়ুনঃ সুস্বাস্থ্যের সাথে সিয়াম পালন করতে যে যে খাবারগুলো জরুরী

 

গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার টিপস

অনেক গর্ভবতী নারী রয়েছেন যারা রমজানে নিরাপদে রোজা রাখতে পারেন কিন্তু এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। যে সব গর্ভবতী নারী উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত, চিকিৎসা বিজ্ঞান তাদের রোজা রাখার ব্যপারে সম্মত নয়। প্রেগন্যান্সির সময় সঠিক পুষ্টির সরবরাহ মা এবং তার গর্ভের সন্তান উভয়ের জন্যই গরুত্বপূর্ণ। একজন গর্ভবতী নারীর জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ যে কিভাবে সে নিরাপদে রোজা রাখতে পারবে। আসুন জেনে নেই কিছু টিপস - 

  • ক্যাফেইন সমৃদ্ধ উত্তেজক খাবার যেমন - চা, কফি, কোমল পানীয় পরিহার করতে হবে।

  • খাবার যেন স্বাস্থ্য সম্মত ও সুষম হয় সে দিকে সর্বাধিক খেয়াল রাখুন। 

  • পানিশূন্যতা এড়ানোর জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে, দৈনিক অন্তত ৮-১২ গ্লাস।

  • এক গ্লাস দুধ ও কয়েকটি খেজুরের দিয়ে সবসময় ইফতার শুরু করুন। এরপরে সব ধরনের পুষ্টি থাকে এমন খাবারগুলি খাবেন। 

  • তারাবির নামাজের পর বা ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘন্টা আগে স্বাস্থ্যকর কিছু স্ন্যাকস খেতে পারেন।

  • অনুমিত পরিমান শর্করা খান এবং সম্পৃক্ত চর্বি (স্যাচুরেটেড ফ্যাট) এড়িয়ে চলুন।

  • মাংস, মুরগী, মাছ, ডিম ও চীজ এর মত প্রোটিন জাতীয় খাবার খান।

  • সেহেরীতে খাবার খাওয়ার সুযোগ গুলো কাজে লাগান। 

  • রান্নায় অতিরিক্ত ঝাল পরিহার করুন।

  • একেবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে কয়েক বার খাবার খেতে হবে।

  • ওজন বৃদ্ধি এবং অম্ল থেকে বাচার জন্য ভাজাপোড়া এবং চর্বি যুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।

  • দিনে অন্তত ২-৩ বার তাজা ফল খান। 

  • আধা ঘন্টার জন্য হলেও প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম করুন বা হাঁটুন।

 

আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়েরা কখন রোজা রাখতে পারবে আর কখন পারবে না

আরো পড়ুনঃ কর্মজীবি নারী পুরুষের যেভাবে রোজা রাখা উচিৎ

Default user image

খন্দকার মোঃ শওকত হোসেন, লেখক, আস্থা লাইফ

বরিশাল এর নিভৃত ও মনোরম একটি গ্রামে জন্ম। সাহিত্য অনুরাগী মা-বাবার কাছেই লেখালেখির হাতেখড়ি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করলেও লেখালেখির দিকেই ঝোঁকটা বেশি। তাই অবসরে লেখালেখির চেষ্টা করি। লেখনীর মাধ্যমে যদি কারো উপকার করা যায় কিংবা কোন পরিবর্তনের সূচনা করা যায়, তাহলে তৃপ্তিটা আসে মন থেকে। এই উদ্দেশেই আস্থা লাইফ পরিবারে যোগ দেয়া। আমার লেখার মাধ্যমে কারো মধ্যে কিঞ্চিৎ সচেনতাও যদি সৃষ্টি করতে পারি, সেইটাই হবে পরম পাওয়া।

Related Articles