স্বাস্থ্যসেবায় প্রচলিত ২৫টি ভ্রান্ত ধারণা!

লবণ স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক ঘটায়, ডিম খাওয়া হার্টের জন্য ক্ষতিকর, গর্ভবতী মায়েরা মাল্টিভিটামিন খাচ্ছেন তো, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ক্যান্সার ঘটায়, লালচিনি সাদাচিনির চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর ও চিনি খেলেই ডায়বেটিস হয়, পুড়ে যাওয়া ক্ষতে বরফ ব্যবহার করুন । এইগুলো কি আসলে সঠিক ?

আপনার সাথে কখনও এমন হয়েছে কি? যেমন ধরুন, স্বাস্থ্য সম্পর্কে এমন কোন তথ্য যা আপনি বহুকাল ধরে শুনে আসছেন কিন্তু একদিন জানতে পারলেন যে সম্পূর্ণ মিথ্যা! আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু ব্যাপারে এই ধরনের অভিজ্ঞতা আছে।

যেমন ধরুন, মায়েরা তাদের বাচ্চাদেরকে প্রায়ই বলে থাকে, গাজর খেলে নাকি রাতকানা রোগ হয়না। কিংবা ধরুন, আনারসের সাথে দুধ খাওয়ার ব্যাপারটাই! একটু চিন্তা করলেই বুঝে যাবেন, এই প্রথাগত উক্তিগুলো ছোটবেলা থেকেই এমনভাবে আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে, যখন সত্য টা জানতে পারি, তখন নিজেকে বোকার রাজ্যের একজন বলে আবিষ্কার করি!

১. লবণ স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক ঘটায়ঃ

আমরা প্রায়ই শুনে থাকি লবন স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক ঘটায়। কিন্তু এই কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। লবণ শরীরের ব্লাড প্রেসার কেবল মাত্র ১-৫ মিলিমিটার/পারদ স্কেলে কমিয়ে দেয়। যেটা কখনই বড় ধরণের রোগ যেমনঃ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক কিংবা মৃত্যু ঘটায় না। তবুও কিছু ব্যতিক্রম আছে, যদি লবণের প্রতি আপনি সংবেদনশীল হোন, তাহলে হয়তবা আপনার কিছুটা ব্লাড প্রেসার কমতে পারে। তাই, জনসচেতনতার লক্ষ্যে গবেষকরা বলেছেন, যতটুকু লবণ খাবারের স্বাদ ও গুনাগুন ঠিক রাখে ঠিক ততটুকু আয়োডিন সমৃদ্ধ লবণ আমাদের গ্রহণ করা উচিত।

২. সতেজ থাকতে প্রয়োজন প্রতিদিন ৮ গ্লাস পানিঃ

যদিও প্রতিদিন পানি পান করা শরীরের জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয়। কিন্তু, আমরা জানিনা ঠিক কতটুকু দরকার। জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থা (National Science Foundation) জানিয়েছে যে, দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার ২.৭ লিটার এবং একজন পুরুষের ৩.৭ লিটার পানিই পারে, দেহের সমস্ত পানির চাহিদা পূরণ করতে।  বেশির ভাগ পানিই আমরা পেয়ে থাকি গ্রহনকৃত খাবার থেকে এবং বাকিটুকু পেয়ে থাকি নিজের পানি পান করা থেকে।

তাহলে কি বলা যায়, খাবার থেকে আসা পানি বাদে, ৮ গ্লাস পানি (প্রায় ২.৫ লিটার) আপনার নিত্যদিনের প্রয়োজনের চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে?

এই ভুল ধারণাটি ১৯৪৫ সালের আমেরিকার সরকারী সংস্থা থেকে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সবাই একে আদর্শ বলে মেনে নেয়।

৩. প্রতিদিন ১ টি আপেল দূরে রাখবে সকল অসুখ থেকেঃ

নিঃসন্দেহে আপেল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আপেল মূলত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, কিন্তু এতে এমন কোন জৈবিক গুন নেই যা ম্যাজিক বুলেটের মত কাজ করবে সকল রোগ থেকে!

আপেল কখনই অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল এবং অন্যান্য রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখেনা। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী ঔষধ যারা গ্রহণ করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা সমাধানে শুধুমাত্র আপেল, এই তথ্যটি সম্পূর্ণই মিথ্যা। তবে, গবেষণায় প্রমানিত করেছে যে, আপেলের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুনাগুন শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

তারমানে বুঝতেই পারছেন এটা সম্পূর্ণটাই একটা মনগড়া ধারণামাত্র।  

৪. মানুষ কেবল ৫ টি অনুভূতি অনুভব করে পারেঃ

এটা তো সত্যিই মনে হচ্ছে? তাই না। স্বাদগ্রহনের ক্ষমতা, গন্ধ নিতে পারার ক্ষমতা, দেখার ক্ষমতা, শুনতে পারা এবং সবশেষে স্পর্শানুভূতি।

ভুল!, এই পাঁচটি খুবই প্রাথমিক ধারণা। 

আপনার ব্রেইনকে পুরো শরীরের নিউরণগুলো প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের সিগন্যাল পাঠিয়ে যাচ্ছে। যেমনঃ ভারসাম্যতা, তাপ অনুভব করা, বাধা বুঝার ক্ষমতা (এর মানে, সামনে একটি দেয়াল থাকলে সেখান থেকে সরে আসার ক্ষমতা)।  শুধুমাত্র স্পর্শের ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ধরণের অনুভূতি পাওয়া যায়। তাই, স্পর্শ হলো এমন একটা অনুভূতি যাকে "সোমাটোসেনসেশন" বলে থাকে, যেটা সংযুক্ত থাকে, ত্বক, চুলের গোঁড়া, চিহৃবা, তালু এবং মুখের ভেতরের অংশগুলোর সাথে৷

৫. ডিম খাওয়া হার্টের জন্য ক্ষতিকরঃ 

এটা বহুল প্রচলিত ধারণা যে, ডিমে থাকে কোলেস্টেরল যা খেলে হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সত্যটা হচ্ছে, অন্যান্য খাবারের তুলনায় ডিমে খুব অল্প পরিমাণের কোলেস্টেরল থাকে। মূল ব্যাপার হচ্ছে প্রয়োজনের চেয়ে অতিমাত্রায় খাওয়া যাবে না। আপনি যদি ১ মেট্রিক টন ডিম খেয়ে নেন, সেক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই মৃত্যুঝুঁকিতে থাকবেন! তবে, কখনও ১/২ ডিম আপনাকে কিছুই করবেনা। বরং ডিম খুব পুষ্টিকর একটি খাবার। এতে আছে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা  হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং এটি প্রমাণিত। 

৬. শীতকালে সর্দিকাশি বেশি হয়ঃ

এটি আমার মনে হয়, সবচেয়ে পরিচিত একটা উক্তি যেটা একসময় আমি নিজেও বিশ্বাস করতাম। আপনি আপনার জীবনে কোন না কোন শীতকালে অন্তত একবার হলেও শুনতে হয়েছে, "মাফলার টা জড়িয়ে নাও, নয়ত ঠান্ডা লেগে যাবে"।

কিন্তু ঠিক তার উল্টো যুক্তিটাই এখানে খাটে।একজন সুস্থ সবল মানুষ যদি কয়েক ঘন্টা প্রচন্ড ঠান্ডা পরিবেশে থাকে, এটি তাঁর রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কে কয়েক গুনে বাড়িয়ে দেয়। তাই বলে, প্রচণ্ড শীতের সময় অবশ্যই গরম কাপড় ছেড়ে বাইরে যাওয়া টা নিতান্তই কাম্য নয়। 

৭. গর্ভবতী মায়েরা মাল্টিভিটামিন খাচ্ছেন তো? 

আমরা মনে করি প্রসূতি মায়েদের এবং শিশুদের অল্প ভিটামিনের ঘাটতি হলেই এক কৌটা মাল্টিভিটামিন খেতে হবে। কিন্তু সত্যি কি জানেন? এটা সম্পূর্ণটাই মনগড়া। 

আমরা একটা নিয়মিত খাদ্যাভাস যেমন ধরুনঃ ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম এবং তেল জাতীয় খাবার থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকি। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য এটা কোন আাহামরি কিছু নয়! বরং তিনি যদি অতিরিক্ত মাত্রায় ফলিক এসিড (আয়রনঃ যা কলা, কচু জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণ থাকে) গ্রহণ করেন, তাহলে এটি আপনার ভবিষ্যত সন্তানের বিকলাঙ্গের জন্যও দায়ী হতে পারে! 

৮. মিষ্টি জাতীয় খাবার ব্রেইনকে সুস্থ রাখেঃ 

অনেক অভিভাবকগণকেই বলতে শুনবেন, চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে মস্তিষ্কের কাজ ভালো হয়। কিন্তু চিনি আসলে মারাত্মক রকমের ক্ষতিকর যখন এটা অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া হয়ে যায়। 

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাবা-মায়েরা তার ছোট্ট সন্তানকে বেশি করে চিনি জাতীয় খাবার খাওয়াচ্ছেন। রিসার্চে প্রমাণিত হয়েছে যে, যেসকল বাচ্চারা অতিরিক্ত রকমের মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে, তাদের ব্যবহার দিন দিন রূঢ় হতে দেখা গেছে। 

৯. শরীরের ওজন কমাতে, অল্প পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট (লো- কার্ব ডায়েট) এবং বেশি পরিমাণে প্রোটিনের ব্যবহার, আপনাকে দিতে পারে ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে মুক্তিঃ 

গত কয়েক দশকেও এই ধারণা টি খুব প্রচলিত ছিল যে, লো- কার্ব ডায়েট খুব কার্যকর ওজন কমানোর ক্ষেত্রে। “কিন্তু লো- কার্ব ডায়েট ক্যান্সারের ঝুকি কমায়” এখন পর্যন্ত এটার সত্যতা যাচাইয়ে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গত কয়েক দশকে বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করেও এর স্বপক্ষে কোন  যুক্তি পায়নি যা কিনা ক্যান্সার রোধে এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে! 

১০. কফি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরঃ 

কফিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে যা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে শরীরের ফ্রি রেডিক্যালকে ধ্বংস করতে সক্ষম। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, কফি ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কমায় ও ডায়বেটিস রোধ করে। এমনকি এলজাইমার (সৃতিশক্তি লোপ পাওয়া) বা পারকিনসনিজম (সারাক্ষন হাত পা কাপা, শরীরের মাংসপেশী অস্বাভাবিক শক্ত হয়ে থাকা, স্পর্শকাতরতা কমে যাওয়া) নামক মস্তিষ্কের রোগ থেকে দূরে রাখে। তবে, নির্দিষ্ট পরিমাণে না নিলে উল্টো ঘটনাও ঘটতে পারে। 

১১. কার্বনডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ রক্তের রঙ নীলঃ 

রক্তের রঙ কখনই নীল হতে পারেনা, যদিনা আপনি এলিয়েন হয়ে থাকেন! মূলত এটি হচ্ছে একটি চোখের ভ্রান্তি। মনে রাখবেন, আলো যখন আমাদের দেহের ভিতর পৌছায় দেহের টিস্যুগুলো সেই আলো গ্রহন করে। যখন সেটি প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে ধরা দেয় তখন সেটাকে নীল রঙের বলে মনে হয়। তাই, চামড়ার উপরে আমরা ধমনীগুলোকে নীল দেখতে পাই। 

১২. মাইক্রোওয়েভ ওভেন ক্যান্সার ঘটায়ঃ

সাধারণত মাইক্রোওয়েভ অভেন ডিজাইন করা হয়েছে পানির অণুগুলোর অনুরণনের ফলে তারা এক অরবিটাল থেকে তাদের অন্য অরবিটালে স্থানান্তরিত হয়। এছাড়াও এটি অল্প মাত্রার মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন ব্যবহার করে খাবার কে উত্তপ্ত করে দেয়। এক্ষেত্রে গ্লাভস ছাড়া অভেনের ভিতরে হাত দেওয়ার সময় একটু সাবধান থাকতে হবে যাতে হাত পুড়ে না যায়। কিন্তু এই রেডিয়েশন  কখনই ক্যান্সার ঘটানোর মত শক্তিশালী নয়। 

১৩. অর্গানিক খাবার কীটনাশক মুক্ত এবং অধিক পুষ্টিকরঃ

আমরা প্রায়ই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল, অর্গানিক গ্রীন টি ইত্যাদি সুপারমার্কেট থেকে কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কেননা, আমরা মনে করি, এই ফসলগুলো উৎপাদনে কোন কীটনাশক ব্যবহৃত হয়না। আসলে বাস্তবে দেখা যায়, কৃষকরা পোকামাকড় ও ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য অবশ্যই কীটনাশক ব্যবহার করেন। আসলে জৈব ও অজৈব যেকোন ফসলের জন্যই কীটনাশক দরকার। তাই ইউএসএফডিএ (USFDA) এই ব্যাপারে বলেছেন, "অর্গানিক খাদ্যে যতটুকু কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, তা ঝুঁকিপূর্ণ নয়"। 

১৪. চকলেটে ত্বকের ব্রণ সমস্যাঃ 

বিজ্ঞানীরা চকলেট নিয়ে একটি পরীক্ষা চালান। এক গ্রুপের মানুষকে চকলেট বার এবং অন্য একটি গ্রুপে প্লাসিবো চকলেট ( যেটি আসলে চকলেট নয় শুধুমাত্র চকলেট ফ্লেবার দেয়া) দিয়ে তাদেরকে কয়েক সপ্তাহ চকলেট খাওয়ার পূর্বে ও পরে পর্যবেক্ষণ করেন। এবং তাতে দুই দলের কারোরই ত্বকে ব্রণ দেখা যায়নি। 

১৫. মানুষের মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধি হয়নাঃ 

অনেকেই বলে থাকেন, তুমি যে কয়টি কোষ মস্তিষ্কে নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছো ঠিক ততগুলোই সারাজীবন ধরে তোমার মস্তিষ্কে কাজ করবে। 

কিন্তু বিজ্ঞান বলে, আমাদের ফ্রন্টাল করটেক্স (মস্তিস্কের অংশ) ৩০ বছর পর্যন্ত সময় নেয় পুরোপুরি ভাবে সুগঠিত হতে। এই পদ্ধতিকে বলে " নিউরোজেনেসিস"। 

১৬. লালচিনি সাদাচিনির চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকরঃ

চিনির রঙ যাই হোক না কেন, এর পুষ্টিমানে তেমন কোন ফারাক নেই। সাধারণত লাল চিনি সাদা চিনির চেয়ে একটু কম পরিশোধিত হয়ে থাকে। তাই অনেকে মনে করে, চিনির গুনাগুন হয়তবা কমে গেছে। আসলে মোটেও তা নয়। দুইপ্রকার চিনিতেই রয়েছে প্রচুর গ্লুকোজ যা আমাদের শারীরিক চাহিদার মৌলিক উপাদানের মধ্যে একটি। 

১৭. চিনি খেলেই ডায়বেটিস হয়ঃ 

বহুল প্রচলিত একটি ধারণা যেটা মোটামুটি সবাই আমরা বলে থাকি, চিনি বেশি খেলে ডায়বেটিস হবে। অথচ ধারণাটি ভুল।  

আমেরিকার ডায়বেটিস এসোসিয়েশান জানিয়েছে, ডায়বেটিস আসলে অনেক গুলো রোগের প্রথম লক্ষণ। রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে গেলে অথবা আমাদের অগ্নাশয়ের কার্যক্ষমতা কমে গেলেও ডায়বেটিস হতে দেখা যায়। হতে পারে এটি বংশগত বা নাম না জানা অসংখ্য কারনের জন্য।

ক্রমাগত চিনি খেলে নিঃসন্দেহে ওবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন, মেদ জমতে পারে। তাই, চিনিটা পরিমাণমত খাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন পুষ্টিবিদরা। 

১৮. ক্ষুধার্ত থাকলে বাড়তি মেদ ঝরে যায়ঃ

আমরা অনেকেই সকালের নাস্তাটা বাদ দিয়ে যাই, হয়তবা সেটা অফিসের দৌড়ে কিংবা সেটা সকালের ক্লাসের জন্যই হোক! আবার, কেউ কেউ করে একটু মুটিয়ে যাচ্ছে বলে! 

আসলে খুব বেশিক্ষণ ক্ষুধার্ত থাকলে মনে হয় যেন শরীর তার জমানো ক্যালরি থেকে শক্তি সঞ্চার  করে। কিন্তু, এই প্রসেস খুব বেশিক্ষণ চলতে থাকে না। বরং এই রুটিন যদি আপনি প্রতিনিয়ত চালাতে থাকেন, তাহলে এটা উল্টো ফলাফল দিতে পারে। অনেক অল্প খাওয়া বা পুরোপুরি ক্ষুধার্ত থাকলে শরীর মারাত্মকভাবে ডিহাইড্রেশন অনুভব করে। সেই সাথে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে; গ্যাস্ট্রিক, আলসারের মত রোগ। 

তাই, প্রতিবেলায় পরিমিত পরিমাণে সুষম খাদ্যই পারে শরীরকে মেদ থেকে দূরে রাখতে এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে। 

১৯. ডিটক্স ড্রিংকস (বিশেষ পানীয়) শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দেয়ঃ 

মানুষ প্রচন্ডভাবে আগ্রহ অনুভব করে কিভাবে খুব সহজেই শরীরের বেঁধে যাওয়া টক্সিন বা দূষিত পদার্থ কে বের করে দেবে। তাই খুব দ্রুত কার্যকরী উপায় হিসেবে তারা ডিটক্স ড্রিংকস খেয়ে থাকে। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে, এসব যথারীতি পানীয়ের আসলে এই ধরণের কোন ক্ষমতাই নেই। শীরের ওজন কমানো আপনার লিভারের কাজ এবং লিভার তা খুব ভালোভাবেই করে আসছে। তাই এ ধরনের ডিটক্স ড্রিংকস না নিয়ে বরং সকাল- সন্ধ্যা হাঁটার অভ্যাস করুন। আর পুষ্টিবিদের সাহায্যে একটা পূর্ণাঙ্গ ডায়েট চার্টও ব্যবহার করতে পারেন। 

২০.পুড়ে যাওয়া ক্ষতে বরফ ব্যবহার করুনঃ 

রিসার্চার রা বলেছেন, পুড়ে যাওয়া ক্ষতে বরফ দিয়ে রাখলে, এটি আরও মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ, বরফ প্রচন্ড ঠান্ডা থাকে যা আপনার ত্বকের উপরিভাগকে ক্ষতি করে থাকে। 

এছাড়াও বাটার বা মেওনিজ ব্যবহার করা থেকেও দূরে থাকবেন কেননা, এটি বার্নিং প্রসেস কে আরও দীর্ঘায়িত করে। 

তাই, সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, সাধারণ তাপমাত্রার ট্যাপের পানির নিচে ক্ষত স্থানকে কিছুক্ষণ ধরে রাখা। সেই সাথে জ্বালাপোড়া বন্ধ হয় এমন কিছু মলম লাগানো এবং কিছু ব্যান্ডেজের মাধ্যমে জায়গাটাকে বাইরের জীবাণু থেকে দূরে রাখা। 

২১. সবসময় সবজি এবং ফলমূল খোসা ছাড়িয়ে খাবেনঃ 

সবজি - ফলমূল যেমন- আলু, আপেল, গাজর এবং টক জাতীয় ফলের খোসায় থাকে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিকর উপাদান। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়ঃ আপেলের খোসায় ভিটামিন-কে, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি এবং ক্যালসিয়াম থাকে। অন্যদিকে, একটা খোসাসহ সিদ্ধ আলু বেশি পরিমান ভিটামিন বহন করে একটা খোসা ছাড়ানো আলুর চেয়ে। 

এছাড়াও, খোসাসহ সবজি ও ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে যা চর্বি কমানোর ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখে এবং দীর্ঘসময় ক্ষুধামুক্ত রাখবে। তাছাড়া এই নিয়ে গবেষণা চলছে যে, আঁশ জাতীয় খাবার হজমে সহায়তা করে, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে এবং কোলেস্টেরল কে নিয়ন্ত্রিত রাখে। 

তাই, আজ থেকেই খোসা ছাড়ানো বন্ধ করে দিন আর এই সকল পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করুন।

২২. ভেজেটেরিয়ান হয়ে যান, এমনিতেই স্লিম হয়ে যাবেনঃ 

যারা কোন প্রকার আমিষ জাতীয় খাবার তাদের খাদ্য তালিকায় রাখেনা সাধারণত আমরা তাদেরকেই ভেজেটেরিয়ান বলে থাকি। সবার একটা ধারণা থাকে, এরা তো অতিরিক্ত তেল চর্বি জাতীয় খাবার খাচ্ছে না, তারমানে তাদের ভুঁড়ি হওয়ার ও কোন সম্ভাবনা নেই! তাহলে, এই ডায়েট টাই আমার জন্য পারফেক্ট! 

কিন্তু খাদ্য তালিকা থেকে সম্পূর্ণরুপে আমিষ বাদ দিলে আপনি একটা বিরাট পুষ্টিকর অংশ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করছেন। আমরা সবাই জানি, গরুর লাল মাংস খুব সহজেই নতুন লোহিত রক্তকণিকার জন্ম দেয়, যা আপনার দেহকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। 

তবে, সব ভেজেটেরিয়ান ও একরকম না, বিভিন্ন শাক সবজিতেও প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। তাই, নিজের ডায়াট চার্টে সবকিছুর মিশ্রনে একটি পরিপূর্ণ উপাদানই দিতে পারে আপনাকে যথার্থ পুষ্টি। 

২৩. রসুন খেলে মশা কামড় দিবে নাঃ 

এখন পর্যন্ত এই ধরনের কোন সত্যতার খবর পাওয়া যায়নি। ২০০৫ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, পরীক্ষিত কর্মীরা একই পরিমাণে মশার কামড় খেয়েছেন, রসুন খাওয়া এবং না খাওয়া অবস্থায়। 

মশা সাধারণত সেই ধরনের মানুষকে বেশি কামড় দেয়, যারা অতিরিক্ত কার্বনডাইঅক্সাইড নিঃসরণ করে। এছাড়া মশারা ঘাম, অতিরিক্ত শরীরের তাপমাত্রা এবং পারফিউম যারা ব্যবহার করেন তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। 

তাই, আপনার রসুন খাওয়ার সাথে এর কোন সম্পর্কই নেই। বরং বাজারে, বিভিন্ন ধরনের মশা নিরোধক ক্রিম, ওয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায় যা মশা নিধনে সক্ষম। এছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস লেমন ইউক্যালিপটাস ওয়েল, টি ট্রি ওয়েল, সাইট্রোনেলা নামক গাছের তেল ও মশা নিরোধে সহায়তা করে। 

মশা যেহেতু পানিতেই জন্মায়, তাই খেয়াল রাখবেন আপনার বাড়ির আশেপাশে যেন পানি জমে না থাকে, যা থেকে ডেঙ্গুসহ নানা রকম মশা মাছির বিস্তার না হয়। 

২৪. রাতে ভিজা চুলে ঘুমালে সকালে উঠে দেখবে ঠান্ডা লেগে গেছেঃ 

ঠাণ্ডা ভাইরাসজনিত রোগ। আপনি কখনোই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবেন না শুধুমাত্র ভিজা চুলে ঘুমালে। চুলের ভেজা পানিটুকু ভাইরাস জন্ম দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বরং ভাইরাস হচ্ছে ছোঁয়াচে। তাই, আপনার কারো সংস্পর্শে আসা জরুরী যে ভাইরাসজনিত রোগটি বহন করছে। 

২৫. পাবলিক টয়লেট থেকে রোগজীবাণু ছড়ায়ঃ 

অনেকেই ভেবে থাকেন শুধুমাত্র পাবলিক টয়লেটে বসলেই তারা রোগজীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে যাবেন! আসলে টয়লেট ঠিকমতো পরিষ্কার না রাখলে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত না ধুলে পাবলিক, পারসোনাল যে কোন টয়লেট থেকে রোগজীবাণু ছড়াবে।  

তাছাড়া আপনার শরীরে যদি কোন খোলা কাটাছেঁড়া থাকে সেক্ষেত্রে ওখানে যেকোন উপায়েই জীবানু আক্রমণ করতে পারে। যেকোন জায়গার দরজার হাতল, বাসের সিট এমনকি পাশের মানুষের হাঁচি কাশি থেকেও আপনি ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হতে পারেন।

সবশেষে, এটাই বলা যায়, বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত তার আবিষ্কারের মাধ্যমে সকল ভ্রান্ত ধারণাকে বদলে নতুন সচেতনতা ছড়িয়ে দিবে গোটা বিশ্বে। তাই নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে  জানুন, শুনুন এবং সুস্থ থাকুন। 

 

Default user image

ফাহমিদা মালিহা, লেখক, আস্থা লাইফ

খাদ্য, পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করার জন্যই আমার লেখালেখির হাতেখড়ি। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে এখনও মানসিক সুস্থতার ব্যাপারে সচেতনতা খুব কম। আমরা নিজেদের কতটুকু ভালো রাখছি, কতটা পুষ্টিকর খাদ্যাভাস আমাদের জন্য জরুরী সেটা অনেকেই আমরা জানিনা। এছাড়াও রয়ে গেছে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারনা ও অজ্ঞতা। ক্রমাগত প্রেসক্রিপশন বিহীন ঔষধের স্বরণাপন্ন হচ্ছে আমাদেরই আসেপাশেরই মানুষেরা। তাই, একজন ফার্মাসিস্ট হিসেবে নিজের অবস্থান থেকে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যই হবে আমার এই লেখালেখির ক্ষুদ্র প্রয়াশমাত্র।

Related Articles