আর বি এস টেস্ট কি? রোগ নির্ণয়ের কার্যকরী ১৪টি স্বাস্থ্য পরীক্ষা!
চিকিৎসক রোগ নির্ণয়ের জন্যে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে বলেন। প্রেসক্রিপশনে লেখা সেই টেস্ট গুলোর অধিকাংশই আমরা বুঝি না! গুরুত্বপূর্ণ সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই লেখায়
সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে তৈরি করা হয়েছে অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে। মানুষের শরীরের মধ্যে বিস্ময়কর ভাবে চলছে হাজারো রকম কাজ। কিন্তু, নানা কারণে এসকল শারীরবৃত্তীয় কাজের কোনো একটির যদি ব্যাঘাত ঘটে তখন সৃষ্টি হয় রোগ। রোগ থেকে মুক্তিলাভের জন্য প্রয়োজন চিকিৎসা। তবে, চিকিৎসা ভুল হলে ভালো হওয়ার চেয়ে খারাপটাই বরং বেশি হয়ে যায়। আর তাই সু-চিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা অপরিহার্য।
সু-চিকিৎসার প্রথম ধাপ হল রোগীর সমস্যা সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে সঠিক রোগ নির্ণয় করা। ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিভিন্ন রোগের প্রকৃতি এবং পরিস্থিতি নির্ণয় করা হয় যেটা ছাড়া সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
সাধারণত আমরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে চিকিৎসকরা যখন ল্যাব টেস্ট করানোর উপদেশ দেন তখন আমাদের মনে হয় শুধু শুধু টেস্ট গুলো করানো হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে কোন টেস্ট কেন করতে দেয়া হয়েছে সেটা সম্পর্কে আমাদের ধারণা না থাকা। রোগীর রোগ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হলে তার ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট সম্পর্কে ধারণা থাকা অতীব জরুরি।
আসুন কিছু কমন ল্যাব টেস্ট সম্পর্কে ধারণা নেয়া যাক।
১। কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট বা সিবিসি (CBC)
যেসব কারণে সিবিসি টেস্ট করা হয়
রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য পর্যালোচনা করার জন্য সিবিসি টেস্ট করা হয় যার মাধ্যমে রক্তের উপাদানগুলোর পরিমাণ দেখা হয়। এই টেস্টের মাধ্যমে সাধারণত যেসব রোগ নির্ণয় করা যায়,
-
রক্তশূন্যতা (Anemia) আছে কিনা
-
ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকোমিয়া (Leukemia)-র প্রাথমিক শনাক্তকরণ
-
ব্লাড ক্লটিং বা রক্ত জমাট বাঁধায় (Bleeding Disorder) সমস্যা আছে কিনা
-
কোনো ধরণের সংক্রমণ (Infection) ব্যাধি আছে কিনা
-
প্রদাহ (Inflammation) জনিত সমস্যা আছে কিনা
রক্তের উপাদানগুলোর যেসব বিষয় পরীক্ষা করা হয় সেগুলো হলো,
-
লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা (RBC Count)
-
শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা (WBC Count)
-
রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ
-
রক্তে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ
-
প্লাটিলেট এর সংখ্যা
-
লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ
সিবিসি টেস্টের স্বাভাবিক ফলাফলের ব্যাপ্তি
সিবিসি টেস্টের ফলাফল থেকে কিছু ধারণা
-
লোহিত রক্তকণিকা, হিমোগ্লোবিন এবং হেমাটোক্রিটের প্রধান কাজ সারা শরীরে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বহন করা। এই সকল রক্ত উপাদানের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে যে রোগটি হয় তার নাম রক্তস্বল্পতা (Anemia)।
-
শরীরে অস্থিমজ্জায় (Bone Marrow) লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন হয়। অস্বাভাবিক এই উৎপাদন বৃদ্ধি নির্দেশ করে পলিসাইথেমিয়া ভেরা (Polycythemia Vera) যা রক্তের এক ধরণের ধীরগতির ক্যান্সার।
-
ডিহাইড্রেশন বা পানি সল্পতা, কিডনি সমস্যা, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং ধূমপানের কারণে, রক্তে লোহিত রক্তকণিকা বা হেমাটোক্রিট এর পরিমাণ বেড়ে যায়।
-
শ্বেত রক্তকণিকা বিভিন্ন জীবাণুকে আক্রমণ করে দেহের রোগ প্রতিরোধ করে। ক্যান্সার, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, অস্থিমজ্জা জড়িত সমস্যা কিংবা ঔষধের প্রতিক্রিয়ায় রক্তের এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের পরিমাণ কমে যায়।
-
যে কোনো ধরণের সংক্রমণ (Infection) এবং প্রদাহ (Inflammation) - এর ফলে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ বেড়ে যায়।
-
অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। লিউকোমিয়া (Leukemia) নামক রক্তের ক্যান্সারের ফলে এই উপাদানের অস্বাভাবিক হ্রাস পায়।
২। র্যানডম ব্লাড সুগার বা আর বি এস (RBS)
যেসব কারণে আর বি এস টেস্ট করা হয়
আরবিএস (RBS) টেস্টের মাধ্যমে দিনের যেকোনো সময়ে (র্যানডমলি) প্রবাহিত রক্তে সুগার তথা গ্লুকোজের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। তবে ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয়ে আরবিএস নিশ্চিত পরীক্ষা নয়, শুধুমাত্র ধারণার জন্য করা যায়। যাদের ডায়াবেটিস নেই তাঁদের ক্ষেত্রে যেকোনো মুহূর্তে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণের তেমন পার্থক্য দেখা যায় না। আর যাদের ডায়াবেটিস আছে তাঁদের আরবিএস টেস্টের মাধ্যমে বর্তমানে ডায়াবেটিসের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়।
একজন সুস্থ মানুষের রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক পরিমাণ
ফলাফল বর্ণনা
৩। ফাস্টিং ব্লাড স্যুগার (FBS)
এটি একটি রক্ত পরীক্ষা যার মাধ্যমে রক্তে স্যুগার তথা গ্লুকোজের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। এই টেস্টের আগে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হয়।
যে কারণে করা হয়
-
ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয়ের জন্য
স্বাভাবিক ফলাফল
-
১০০ মিলিগ্রাম/ ডেসিলিটার অথবা (৫.৬ মিলিমোল/ লিটার) এর কম
ফলাফল বর্ণনা
৪। এইচবিএ১সি (HbA1c)
এটি একটি রক্ত পরীক্ষা যা বিগত ৩ মাসের রক্তে গড় গ্লুকোজের পরিমাণ প্রদান করে। ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয়ের অনেকগুলো পরীক্ষা আছে, যেখানে রোগীকে একটা নির্দিষ্ট সময় না খেয়ে থাকতে হয়। সেই তুলনায় এইচবিএ১সি (HbA1c) টেস্টটি যেকোনো মানুষের জন্য সহজ ও সুবিধাজনক। এই টেস্টটি করার জন্য একজন ব্যক্তির না খেয়ে থাকার প্রয়োজন নেই।
এই টেস্টের অন্য নামগুলো হলো – হিমোগ্লোবিন এ১সি (Hemoglobin A1c), গ্লাইক্যাটেড হিমোগ্লোবিন (Glycated Hemoglobin) এবং গ্লাইকোসাইলেটেড হিমোগ্লোবিন (Glycosylated Hemoglobin)।
এইচবি১সি টেস্টের ফলাফল শতকরায় (%) প্রকাশ করা হয় এবং এটি সাধারণত ৪% - ১৪% হয়ে থাকে।
যে কারণে করা হয়
-
ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয়ের জন্য
স্বাভাবিক ফলাফল
-
৫.৭% এর কম
ফলাফল বর্ণনাঃ
-
হিমোগ্লোবিন লোহিত রক্তকণিকার উপাদান যা অক্সিজেন বহন করে। রক্তে বেশি পরিমাণ গ্লুকোজ থাকলে তা হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়ে গ্লাইক্যাটেড হিমোগ্লোবিন (HbA1c) রূপে থাকে। আর তাই, এই টেস্টের ফলাফলের মাধ্যমে রক্তে বেশি পরিমাণ গ্লুকোজ তথা ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় করা হয়। বেশি পরিমাণ শতকরা HbA1c নির্দেশ করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি।
৫। ইউরিন আর.এম.ই (Urine RME)
এটি একটি প্রস্রাবের পরীক্ষা। এর পূর্ণ নাম Urine Routine Microscopic Examination. এই টেস্টে কিছু পরিমাণ প্রস্রাব সংগ্রহ করে প্রস্রাবের রঙ, উপাদান (যেমনঃ শর্করা, প্রোটিন), পি.এইচ, ব্যাকটেরিয়া অথবা অন্য কোনো জীবাণু আছে কি না দেখা হয়।
যে কারণে করা হয়
-
মূত্রনালী বা প্রস্রাবের সংক্রমণের জন্য
-
কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষার জন্য
ফলাফল বর্ণনা
মূত্রনালীর সংক্রমণ মূলত জীবাণু (বিশেষ করে, ব্যাকটেরিয়া) দ্বারা হয়ে থাকে। ইউরিন (প্রস্রাব) কালচার করে ইউরিনে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সুযোগ দেয়া হয়।
-
যদি ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, তাহলে ফলাফল পজিটিভ।
-
যদি ব্যাকটেরিয়া কম কিংবা না জন্মায় তাহলে ফলাফল নেগেটিভ ।
৬। সেরাম ক্রিয়েটিনিন (Serum Creatinine or S. Creatinine)
এটি একটি রক্ত পরীক্ষা যার মাধ্যমে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ দেখা যায়। ক্রিয়েটিনিন হলো শরীরের অনাবশ্যক বর্জ্য পদার্থ, যা কিডনি দ্বারা শরীরের বাইরে নিষ্কাশিত হয়। কিডনি ঠিকমত কাজ না করলে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
যে কারণে করা হয়
-
কিডনির কার্যকারিতা নির্ণয়ের জন্য
রক্তে স্বাভাবিক ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ
ফলাফল বর্ণনা
-
মাংশপেশির বিপাকের ফলে বর্জ্য পদার্থ হিসেবে ক্রিয়েটিনিন উৎপন্ন হয়। স্বাভাবিক কিডনি ক্রিয়েটিনিন সহ অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ রক্ত থেকে ছেঁকে নিয়ে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। রক্তের সেরামে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ক্রিয়েটিনিন পাওয়া গেলে, এটি কিডনির অকার্যকরীতা প্রকাশ করে।
৭। এইচ.বি.এস এজি (এলাইসা) [HBsAg (ELISA)]
হেপাটাইটিস বি একটি সংক্রামক রোগ। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এই রোগ দেখা যায়। এর ফলে যকৃতে (Liver)) মারাত্মক প্রদাহের (Inflammation) সৃষ্টি করে। রক্ত, বীর্য অথবা শরীরের অন্যান্য তরল পদার্থের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। সময়মত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে এই রোগের কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এইচ.বি.এস এজি (এলাইসা) এক ধরণের রক্ত পরীক্ষা যা রক্তে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণের ফলে তৈরি হওয়া এন্টিবডির পরিমাণ চিহ্নিত করে।
যে কারণে করা হয়
-
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য
ফলাফল বর্ণনা
৮। ব্লাড গ্রুপিং এবং আরএইচ ফ্যাক্টর (Rhesus Factor or RH Factor)
এটি একটি রক্ত পরীক্ষা।
যে কারণে করা হয়
-
রক্তের গ্রুপ এবং আরএইচ ফ্যাক্টর নির্ণয়ের জন্য
-
গর্ভধারণের সময় ঝুঁকি এড়ানোর জন্য
ফলাফল বর্ণনা
-
রেসাস বা আরএইচ ফ্যাক্টর মানুষের শরীরের লোহিত রক্ত কণিকার একটি আমিষ। এটি থাকলে রক্তের আরএইচ ফ্যাক্টর পজিটিভ হয়, অন্যথায় আরএইচ ফ্যাক্টর নেগেটিভ।
-
আরএইচ ফ্যাক্টর নেগেটিভ হওয়া কোনো রোগ না। তবে, গর্ভধারণের সময় এটি প্রভাব ফেলতে পারে।
-
যদি মায়ের আরএইচ ফ্যাক্টর নেগেটিভ এবং বাবার আরএইচ ফ্যাক্টর পজিটিভ হয়, তখন মায়ের গর্ভে বাচ্চার আরএইচ ফ্যাক্টর পজিটিভ হতে পারে। সেক্ষেত্রে, সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
-
সাধারণত মায়ের গর্ভে বাচ্চার রক্তের সাথে মায়ের রক্ত মিশ্রিত হয় না। কিন্তু, বাচ্চা জন্মের সময় বাচ্চার শরীর থেকে কিছু পরিমাণ রক্ত মায়ের শরীরে প্রবেশ করতে পারে এবং মায়ের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়। প্রথম বাচ্চার ক্ষেত্রে সমস্যা না হলেও, মায়ের শরীরে তৈরি হওয়া এন্টিবডি দ্বিতীয় বাচ্চার ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ হয়।
৯। ভেনেরিয়েল ডিজিজ রিসার্চ ল্যাবোরেটরি বা ভি.ডি.আর.এল (VDRL)
ট্রিপোনেমা প্যাল্লিডাম নামক এক ধরণের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে সিফিলিস রোগ হয় যা সাধারণত যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়ায়। তবে, রক্তদানের সময় একই সূঁচ ব্যবহার করলে এই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে।
ভি.ডি.আর.এল একটি রক্ত পরীক্ষা যা দ্বারা রক্তে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে তৈরি হওয়া এন্টিবডি চিহ্নিত করা যায়।
যে কারণে করা হয়
-
যৌনবাহিত রোগ সিফিলিস রোগ নির্ণয়ের জন্য।
ফলাফল বর্ণনা
-
সিফিলিসের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার কারণে শরীরে যে এন্ডিবডি তৈরি হয় সেটি চিহ্নিত করে ভি.ডি.আর.এল টেস্ট ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নিশ্চিত করে।
১০। সেরাম বিলিরুবিন (Serum Bilirubin or S. Bilirubin)
আমাদের রক্তের লোহিত রক্তকণিকাগুলো চার মাস বা ১২০ দিন পর স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙ্গে যায় এবং এর ফলে বিলিরুবিন নামক রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয়। সাধারণত বিলিরুবিন যকৃতে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পরবর্তীতে পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কোনো কারণে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে দেখা দেয় জন্ডিস, যার ফলে চোখের সাদা অংশ ও অন্যান্য মিউকাস ঝিল্লি হলুদ হয়ে যায়। সাধারণত লিভার সমস্যা জন্ডিস রোগের প্রধান কারণ।
সেরাম বিলিরুবিন একটি রক্ত পরীক্ষা যা রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ নির্ণয় করে।
যে কারণে করা হয়
-
জন্ডিস রোগ নির্ণয়ের জন্য
-
লিভারের রোগ নির্ণয়ের জন্য
-
রক্তস্বল্পতা রোগ নির্ণয়ের জন্য
স্বাভাবিক ফলাফল
ফলাফল বর্ণনা
রক্তের সেরামে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বিলিরুবিন পাওয়া গেলে যা হতে পারেঃ
-
অধিক হারে লোহিত রক্তকণিকার ভাঙ্গন – রক্তস্বল্পতা রোগ
-
লিভারের অকার্যকারিতা – লিভারের রোগ
-
ত্বকে ও চোখে হলুদ রঙের উপস্থিতি – জন্ডিস রোগ
১১। লিপিড প্রোফাইল (Lipid Profile)
এটি এক ধরণের রক্ত পরীক্ষা যা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নির্ণয় করে। আর তাই এই টেস্টকে কোলেস্টেরল টেস্টও বলা যায়।
যে কারণে করা হয়
পরিমিত পরিমাণে কোলেস্টেরল শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য দরকার হলেও, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কিছু রোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যেমনঃ
-
হার্ট অ্যাটাক
-
স্ট্রোক
-
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (ধমনীতে LDL জমা হওয়া)
ফলাফল বর্ণনা
১২। এস.জি.পি.টি বা এ.এল.টি (SGPT ALT)
এটি এক ধরণের রক্ত পরীক্ষা যার মাধ্যমে অ্যালানিন অ্যামাইনোট্রান্সফেরাজ (ALT) এনজাইমের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। এলানিন অ্যামাইনোট্রান্সফেরাজ এর অন্য নাম সেরাম গ্লুটামিক পাইরুভিক ট্রান্সঅ্যামাইনেজ (SGPT)
যে কারণে করা হয়
-
লিভারের কার্যকারিতা পরিমাপ করার জন্য
স্বাভাবিক ফলাফল
-
প্রতি লিটার সেরামে ৭-৫৬ ইউনিট ALT
ফলাফল বর্ণনা
-
অ্যালানিন অ্যামাইনোট্রান্সফেরাজ (ALT) প্রধানত লিভারে পাওয়া যায়। এটি খাবারকে শক্তিতে রূপান্তর করার কাজে ব্যবহৃত হয়। লিভারের কোনো ক্ষতি হলে এই এইজাইম অনেক বেশি ক্ষরিত হয়ে রক্তে মিশে যায়। রক্তের সেরামের এই এনজাইমের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি লিভারের রোগ নির্দেশ করে।
১৩। ইউরিক এসিড (Uric Acid)
এটি একটি রক্ত পরীক্ষা যার মাধ্যমে রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
যে কারণে করা হয়
-
গাউট (Gout) রোগ নির্ণয়ের জন্য (গাউট হ'ল এক ধরণের প্রদাহজনক আর্থ্রাইটিস যা কিছু লোকের মধ্যে বিকশিত হয় যাদের রক্তে উচ্চ মাত্রায় ইউরিক অ্যাসিড রয়েছে)
-
কিডনিতে পাথর জমার কারণ অনুসন্ধানের জন্য
-
ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ইউরিক এসিডের পরিমাণে লক্ষ্য রাখার জন্য
স্বাভাবিক ফলাফল
ফলাফল বর্ণনা
-
ইউরিক এসিড একটি বর্জ্য পদার্থ যেটিকে সাধারণত কিডনি রক্ত থেকে ছেঁকে নিয়ে প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে বের করে দেয়। রক্তে এটির পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে তা ক্রিস্টাল আকারে বিভিন্ন জয়েন্টে জমা হয় এবং গাউট রোগ সৃষ্টি করে। এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ইউরিক এসিড কিডনিতে পাথর তৈরির জন্য দায়ী।
১৪। থাইরয়েড স্টিমুলাটিং হরমোন (TSH)
আমাদের গলার সামনের দিকে অবস্থিত থাইরয়েড নামক একটি গ্রন্থি থেকে কিছু প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন আমাদের বিপাক সহ আরো বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, আমাদের শরীরে যতটুকু হরমোন প্রয়োজন তার চেয়ে কম কিংবা বেশি পরিমাণে এই হরমোন তৈরি হলে তখন নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়।
থাইরয়েড স্টিমুলাটিং হরমোন (TSH) থাইরয়েড গ্রন্থি কে উদ্দীপ্ত করে প্রয়োজনীয় হরমোনগুলোর নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
এটি একটি রক্ত পরীক্ষা যার মাধ্যমে রক্তে TSH হরমোনের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
যে কারণে করা হয়
-
থাইরয়েডের রোগ নির্ণয়ের জন্য।
স্বাভাবিক ফলাফল
-
০.৪-৪ মিলিইউনিট/ লিটার
ফলাফল বর্ণনা
-
TSH এর পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে হ্রাস পেলে এটি থাইরয়েডের নিষ্ক্রিয়তা প্রকাশ করে, তখন এটিকে হাইপোথাইরয়ডিজম বলা হয়।
-
অন্যদিকে, এই পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে হাইপারথাইরয়ডিজম বলে, যা থাইরয়েডের অধিক সক্রিয়তা নির্দেশ করে।
পরিশেষে বলা যায় কিছু সাধারণ তথ্য উপাত্ত যদি জানা থাকে, তবে সেগুলো অনেক কাজে আসে। যেমন অনেক ভুল এড়ানো সম্ভব অর্থাৎ প্রেসক্রিপশনে কি কি টেস্ট লেখা হয়েছে সেইটা যদি আপনার রোগের পেক্ষিতে বুঝতে পারেন তাহলে ভুল এড়ানো যাবে। রেফেরেন্স ডাটা দেখে বুঝা যাবে আপনার রোগের অবস্থা, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে। তাছাড়া উপরোক্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো নিজ থেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করানো যায়, যার ফলে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ে। যেহেতু চিকিৎসকেরা সবসময় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, তাই এইসব স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো সম্পর্কে আমাদের সবার জানা উচিত এবং আমদের পরিবারকেও জানানো উচিত।