কোন রোগের জন্য কোন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ (পর্ব-৪)

সুস্থ থাকতে এবং বড় ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে, সমস্যা তৈরী হওয়ার সাথে সাথেই চাই সঠিক রোগ নির্নয় এবং চিকিৎসা। তবে ঠিক কোন উপসর্গ যে কোন রোগের পূর্বাভাস সেটা বোঝা দায়। আর তা জানতেই আজকের এই লেখা।

কোন রোগের জন্য কোন বিশেষজ্ঞ?  হ্যাঁ খুবই স্পর্শকাতর বিষয় কারণ চিকিৎসা নিয়ে সিদ্ধান্তের বিলম্ব কখনো কখনো মারাত্মক দুর্ঘটনা বয়ে আনতে পারে। তাই প্রত্যেকেরই জেনে রাখা উচিত যে কোন রোগের জন্য কোন বিশেষজ্ঞ ডক্টর রয়েছেন। এতে করে প্রয়োজন হলেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হবে। আর তাই আস্থা ব্লগের এই বিশেষ আয়োজন। আমরা ধারাবাহিক পর্ব আকারে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিশেষজ্ঞ ডক্টর সম্পর্কে সাধারণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি যা আপনাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে।

গত তিনটি পর্বে আলোচনা করেছি মোট ১৫ টি বিশেষজ্ঞ বিভাগ এবং ডক্টর নিয়ে। এ পর্বে চেষ্টা করব আরো কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডক্টর, সে সব রোগের প্রাথমিক উপসর্গ এবং করণীয় নিয়ে।

নিওন্যাটোলজিস্ট

নিওন্যাটোলজিস্ট হলেন শিশু বিশেষজ্ঞেরই একটি বিশেষ বিভাগ। একজন নিওন্যাটোলজিস্ট মূলত শিশুর আইসিইউ সাপোর্টের জন্য বিশেষজ্ঞ। সদ্যজাত শিশুর বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে তাকে এন -ইসিইউ তে ভর্তি করে ইনকিউবেটরে রাখার প্রয়োজন হয়, এছাড়াও সময়ের আগেই জন্মলাভ করা শিশুকেও এন আই সি ইউ তে ভর্তি রেখে বিশেষ ব্যবস্হাপনায় কৃতিমভাবে তার বিকাশ ঘটানো হয়। আর এই বিশেষ কাজটি নিয়েই পড়াশোনা করেছেন একজন নিওন্যাটোলজিস্ট।

অপথ্যামোলজিস্ট

অপথ্যামোলজিস্ট মূলত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ। তবে তিনি আরো কিছু বাড়তি কাজ করেন যা সচরাচর সব চক্ষু বিশেষজ্ঞ করেন না। তিনি একজন সার্জন অর্থাৎ চক্ষু চিকিৎসার পাশাপাশি চক্ষু বিষয়ক অপারেশন করার দক্ষতা এবং অনুমোদন তিনি অর্জন করেছেন।

একজন অপথ্যামোলজিস্ট বিশেষ কিছু চক্ষু রোগ সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন যেমন ক্যাটারাক্টস, গ্লুকমা, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, ড্রাই আই ইত্যাদি।

তাই চক্ষু সংক্রান্ত কোন সমস্যায় যখন চক্ষু বিশেষজ্ঞ এধরণের কোন ব্যধীর কথা উল্লেখ করবেন তখন দেরি না করে এবং বিভিন্ন জায়গায় না ঘুরে সরাসরি একজন অপথ্যামোলজিস্ট এর কাছে যাওয়াই শ্রেয়। সেক্ষেত্রে অপারেশন যদি না'ও প্রয়োজন হয় তবুও উপযুক্ত চিকিৎসা তিনিই করতে পারবেন।

ইনফেকশাস ডিজিজ স্পেশালিস্ট

একজন ইনফেকশাস ডিজিজ স্পেশালিস্ট (ইডিএস) মূলত জটিলতম ইনফেকশনের চিকিৎসা প্রদান করেন। যেমন এইচ আই ভি এবং টি বি। তিনি মূলত একজন ইন্টারনাল মেডিসিন ডক্টর এবং ইনফেকশন নিয়ে বিশেষভাবে পড়াশোনা করছেন। তাই এক সপ্তাহের বেশী কাশি হলে আমরা প্রথমে মেডিসিন স্পেশালিস্ট এর কাছে যাই, তিনি অবশ্যই কফ পরীক্ষা করতে বলবেন। কফ পরীক্ষায় যদি টিবি ধরা পড়ে সেক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই দেরি না করে একজন ইডিএস ডক্টরের শরণাপন্ন হব। তবে টিবির আরো কিছু ধরণ আছে যেটি রোগীকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে। বোঝা যায়না আসলে কোন সমস্যা এবং কোন ডক্টরের কাছে যাওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে সকলেই প্রথমে মেডিসিন ডক্টরের শরণাপন্ন হন। তারপর বিভিন্ন রকম টেস্ট রিপোর্টে যদি টিবি ধরা পড়ে সেক্ষেত্রে দ্রুত সুস্থ হতে সরাসরি ইডিএস ডক্টরের দারস্থ হতে হবে। 

এইচ আই ভি এর ক্ষেত্রেও একই  পরামর্শ।

ইমিউনোলজিস্ট

একজন ইমিউনোলজিস্ট মূলত একজন মেডিসিন ডক্টর এবং পাশাপাশি শরীরের ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধক সিস্টেম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একজন ব্যক্তি অনেক অসুস্থ থাকছেন অথচ বিশেষ কোন রোগ সনাক্ত করা যাচ্ছেনা। সেক্ষেত্রে ধারণা করা হয় তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে এসেছে এবং এমন অবস্থা থাকলে ধীরে ধীরে সে একাধিক রোগে আক্রান্ত হবেন অচিরেই। আর তখন তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য চিকিৎসা এবং পরামর্শ প্রদান করেন একজন ইমিউনোলজিস্ট। সুতরাং এধরনের পরিস্থিতিতে বিচলিত না হয়ে ইমিউনোলজিস্ট এর কাছে গেলে দ্রুত সমাধান মিলবে আশা করি।

ডায়েটেশিয়ান/ ডায়েটিস্ট

ডায়েটেশিয়ান মূলত পড়াশোনা করেন রোগীর প্রয়োজনীয় খাদ্যাভ্যাস নিয়ে। ডায়েট বিষয়টি আপেক্ষিক।  সব রোগীর জন্য ডায়েট একই রকম নয়। রোগ ভেদে যেমন ডায়েট আলাদা তেমনি একই রোগ হলেও রোগী ভেদে ডায়েট আলাদা হয়। বিষয়টি সূক্ষ্ম এবং গুরুত্বপূর্ণ যার উপর রোগীর সুস্হতা নির্ভর করে অনেকাংশে। আর এই  বিশেষ কাজ করে থাকেন একজন ডায়েটেশিয়ান। ডায়েটেশিয়ান হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডক্টরকে এমবিবিএস ডিগ্রী সম্পন্ন করতে হয় এবং তারপর  এ বিষয়ে আলদা পড়াশোনা করতে হয়।

উপরোক্ত পাঁচজন বিশেষজ্ঞ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা একান্ত জরুরী। নতুবা, হঠাৎ কোন সমস্যায় সিদ্ধান্ত হীনতার অসহায়ত্ব আমাদের দুর্বল করে দেবে এমনকি বড় ধরণের ক্ষতির শিকার হওয়া লাগতে পারে।

আরও জানুনঃ

Default user image

শফিকুল বাশার কাজল, লেখক, আস্থা লাইফ

পিতামহ-পিতামহী অনেক শখ করিয়া নাম রাখিয়াছিলেন শফিকুল বাশার কাজল। ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক সম্পন্ন করিবার পর খানিক এই কাজ, কতক ওই কাজ করিয়া অবশেষে ২০১৩ সালের শেষ হইতে ‘সামাজিক মতে বেকারত্ব’ অর্থাৎ কিনা লেখালেখিকেই জীবিকা অর্জনের একমাত্র উপায় হিসাবে বরণ করিয়া লইয়াছি। অদ্যাবধি অন্ততপক্ষে আট-দশখানা দিশী-বিদিশী কোম্পানি এবং অগণিত ব্যক্তিবিশেষের জন্যে প্রায় চল্লিশ সহস্রাধিক লেখা নামে-বেনামে সম্পন্ন করিবার সুযোগ হইয়াছে। ভালোবাসি নিজের পরিবার, সন্তান, এবং ফুটবল।

Related Articles