কোন রোগের জন্য কোন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ? (পর্ব-১)
সুস্থ থাকতে এবং বড় ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে, সমস্যা তৈরী হওয়ার সাথে সাথেই চাই সঠিক রোগ নির্নয় এবং চিকিৎসা। তবে ঠিক কোন উপসর্গ যে কোন রোগের পূর্বাভাস সেটা বোঝা দায়। আর তা জানতেই আজকের এই লেখা।
ব্যাধি, চিকিৎসা, এবং ডাক্তার - এই শব্দ তিনটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একচ্ছত্র অংশ বললেই চলে। মানবযন্ত্র যেমন জটিল প্রক্রিয়া তেমনি এর ব্যাধিরও শেষ নেই। ঠিক সময় মতো সঠিক সমস্যা উদঘাটন করতে না পারলে বাড়ে জটিলতার পরিধি। আর তাই যেতে হবে বিশেষজ্ঞের কাছে।
কিন্তু এ যেন আরেক ভোগান্তি। কোন সমস্যার জন্য কোন বিশেষজ্ঞ সে বিষয়ে আমরা ৮০% মানুষই জানিনা। দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই, চিকিৎসায় কালক্ষেপন হয়, এমনকি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সঠিক রোগ নির্ণয় করা যায়না। ভুল চিকিৎসার সম্ভবনাও একেবারে কম নয় এসব ক্ষেত্রে।
আমরা সাধারণ মানুষ হয়তো জানিনা যে পাশাপাশি দুটো রোগের দু ধরনের ওষুধ একটি আরেকটির জন্য নিষিদ্ধ হতে পারে। একসাথে দুটো ওষুধ সেবনে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। আর এ বিষয়ে জানবেন কেবল একজন বিশেষজ্ঞ ডক্টর। তিনি রোগীর চলমান পরিস্থিতি, চলতে থাকা সকল ওষুধ পর্যালোচনা করে নতুনভাবে চিকিৎসা শুরু করবেন।
সুতরাং সব রোগের জন্য একই ডাক্তার বা একই সাথে সব রোগের চিকিৎসা মেডিকেল সাইন্সে গ্রহণযোগ্য নয়। আর তাই কোন সমস্যার জন্য কোন বিশেষজ্ঞ ডক্টর সে বিষয়ে সমূহ জ্ঞান থাকা সচেতনতার লক্ষ্মণ।
প্রায় প্রতিটি আলাদা শারীরিক সমস্যার জন্য মেডিকেল সাইন্সে আলাদা বিভাগ রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু বিশিষ্ট বিভাগ সম্পর্কে এবং কোন উপসর্গ পরিলক্ষিত হলে আমরা কোন বিভাগের শরণাপন্ন হতে পারি।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
প্রত্যেক ডাক্তারকেই যেহেতু মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করতে হয় তাই এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের কাছে যাবার ব্যাপারে রয়েছে আমাদের চরম উদাসীনতা। এজন্য যেকোনো সমস্যা হলেই আমরা ভাবি যে সেই নির্দিষ্ট বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে। যেমন মাথায় ব্যাথা হলে আমরা আগেই যেতে চাই নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে।
কিন্তু আমরা এটা জানিনা যে আদৌ এই ব্যাথা নিউরো সমস্যা সম্পর্কিত নাকি মানসিক চাপের সাথে সম্পর্কিত। এমন অবস্থায় একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করলে তিনি আপনার উপসর্গ সম্বন্ধে জেনে এবং কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে আপনাকে সেই বিশেষ রোগের বিশেষজ্ঞের কাছে যাবার জন্য রেফার করতে পারেন। তাই শরীরে নতুন কোন উপসর্গ দেখা দিলে আগে মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিৎ।
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট(পেটের পীড়া বিশেষজ্ঞ)
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টমূলত হজমতন্ত্র বিষয়ক জটিলতা নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করেন। লিভার, পেটের নানা রকম সমস্যা, হজমে সমস্যাজনিত ব্যথার প্রাথমিক লক্ষনেই সবার আগে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হওয়া বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ। তথাপিও বিভিন্ন সমস্যায় একইরকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে। গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টযদি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন লক্ষণ না পান সেক্ষেত্রে তিনি রোগীকে প্রাসঙ্গিক অন্য আরেকটি বিভাগে রেফার করতে পারেন।
কার্ডিওলজিস্ট (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ)
কার্ডিওলজিস্ট মূলত হৃৎপিণ্ড এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া বিষয়ক জটিলতা নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করেন। এই সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে এমন রোগীকে তারা তাদের ডায়েট এবং জীবনযাপন সম্পর্কে সম্পূর্ণ দিকনির্দেশনাও প্রদান করেন।
কার্ডিওলজি বিভাগের আওতায় আরও রয়েছেন পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট যারা মূলত শিশুদের হৃদরোগ সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রদান করেন এবং নিয়মিত পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও রয়েছেন কার্ডিও সার্জন যারা মূলত কার্ডিও ক্যাথেটারাইজেশান, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি জাতীয় চিকিৎসা প্রদান করেন। এই সার্জনদেরকে ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্টও বলা হয়।
সুতরাং বুকে মারাত্মক ব্যথা, বুকে অক্সিজেনের অভাব বোধ, চিনচিন ব্যথা, বুক ধপধপ করা, একটু পরিশ্রমেই হৃৎস্পন্দন বেশী হওয়া, শিশুদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মাত্রায় হৃৎস্পন্দন, আবার অনেক কম হৃৎস্পন্দন, নিঃশ্বাসে কষ্টের কারণে বুক অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করলে কালক্ষেপন না করে কার্ডিওলজিস্ট অথবা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
গাইনিকোলজিস্ট (স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ)
নারীদের যৌন সমস্যা হতে শুরু করে সন্তান ধারণ, বহন, জন্মদান, ও যৌনতন্ত্র বিষয়ক জটিলতার চিকিৎসা করেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা গাইনিকোলজিস্ট। এছাড়াও মেয়েদের খুব সাধারণ একটি রোগ হলো ইউটিআই বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, যার চিকিৎসার জন্য সচরাচর সবাই গাইনিকোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হন। এর প্রাথমিক চিকিৎসা একজন গাইনিকোলজিস্ট করলেও এটা মূলত ইউরোলজি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত সমস্যা। সুতরাং নারী বিষয়ক যেকোন সমস্যার সূচনা হলেই কোনরকম বিভ্রান্ত না হয়ে গাইনিকোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
এন্ড্রোলজিস্ট (পুরুষ রোগ বিশেষজ্ঞ)
এন্ড্রোলজিস্ট হলেন পুরুষরোগ বিশেষজ্ঞ। পুরুষদের যৌন সমস্যা, সন্তান জন্মদান সংক্রান্ত জটিলতা এবং প্রস্রাব সংক্রান্ত জটিলতার চিকিৎসা করে থাকেন একজন এন্ড্রোলজিস্ট। সাধারণতই স্ত্রী-রোগের সহজ সমাধান খুঁজে পাওয়া গেলেও, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুরুষ রোগের বিশেষায়িত চিকিৎসা নিয়ে জানা শোনার বেশ অভাব রয়েছে। অনেকেই এন্ড্রোলজিস্ট সম্পর্কে জানেন না। সুতরাং জেনে রাখা উচিত যে পুরুষের একান্ত সমস্যা সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য কোন রকম দ্বিধা না রেখে এন্ড্রোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
আজ এই পর্যন্তই। সামনের পর্বে আমরা আরও এমন কিছু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সম্পর্কে আপনাদের জানাবার চেষ্টা করব। আস্থা ব্লগের সাথে থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।