এই গরমে ত্বকের যত্ন। জেনে নিন ৭টি টিপস!
ত্বকের যত্ন ঋতু অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তীব্র শীত কিংবা প্রচন্ড গরম - আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি বুঝে নিয়ে সেই অনুযায়ী ত্বকের প্রতি আমাদের যত্নশীল হওয়া উচিত। আজ আসুন গরমে কিভাবে ত্বকের যত্ন নেয়া যায় সেটা জেনে নেই।

ত্বককে বলা হয় আমাদের শরীরের 'ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্স'। বাইরের ধুলো বালি, রোগ জীবাণু সব কিছু থেকে আমাদের রক্ষা করার প্রাথমিক দায়িত্বে ত্বক সম সময় নিয়োজিত। অথচ সেই ত্বকের যত্ন নেয়ার ব্যাপারে আমাদের অনেকেরই সম্যক ধারণা নেই। ত্বকের যত্ন নেয়ার অর্থ শুধু মুখ ধোয়া কিংবা বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করা নয়। খাদ্যাভ্যাস থেকে স্লিপ প্যাটার্ন সব কিছু নিয়ম মত মেনে চললে তবেই ত্বকের যথাযথ যত্ন নেয়া সম্ভব।
১. রকমভেদে ত্বকের যত্নও ভিন্ন হয়
প্রথমত শরীরের বিভিন্ন স্থানের ত্বক বা চামড়া ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়। মুখের চামড়া স্বভাবতই কিছুটা কোমল ও সংবেদনশীল প্রকৃতির হয়ে থাকে। আবার আমাদের হাত পায়ের চামড়া কিছুটা বেশি সহনশীল হয়। আবার কারো ত্বক হয় তেলতেলে, কারোটা হয় শুষ্ক ও রুক্ষ ধরনের। কারো কারো আবার মিশ্র ধরনের হয়; না শুষ্ক না তেলতেলে। ত্বকের যত্ন নেবার জন্য প্রথমেই আপনাকে নিজের ত্বক কোন ধরনের সেটা বুঝে নিতে হবে। অনেকে আবার শুধুমাত্র মুখে নানা রকম প্রসাধন ব্যবহার করাকেই ত্বকের যত্ন হিসেবে ধরে নেন। যেটা সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা।
২. নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখুন
এই প্রচন্ড গরমে ত্বকের যত্ন নিতে হলে প্রথমেই ত্বক পরিষ্কারের কথা ভাবতে হবে। বাইরে না গেলেও বার বার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। যারা বাইরে কাজ করেন, তারা অবশ্যই ওয়েট ওয়াইপ বা ভিজা টিস্যু ব্যাগে রাখুন। কিছুক্ষণ পর পর তা দিয়ে মুখ হাত পা মুছে ফেলুন।
বাইরে থেকে আসার পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে মুখে লেগে থাকা ধুলোবালি তো পরিষ্কার হবেই, পাশাপাশি মুখের লোমকূপ যারে আমরা পোরস (Pores) বলি সেগুলোও খুলে যাবে।
দিনে অন্তত ২ বার নির্ভরযোগ্য একটি ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশ বা ক্ষারবিহীন সাবান দিয়ে মুখ ধুতে হবে। অনেকে বাজারের ফেসওয়াশের বদলে ঘরে প্যাক বানিয়ে মুখে ব্যবহার করেন। আপনিও চাইলে দুধ, মধু, এলোভেরা, কমলার খোসা, আলুর খোসা, রোজ ওয়াটার এসব দিয়ে হোমমেড ক্লিনজার বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
৩. সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে বাঁচুন
সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি আমাদের ত্বকে বিভিন্ন রকম সমস্যা সৃষ্টি করে। সেইসব সমস্যার মধ্যে সান বার্ন বা রোদে পোড়ার মত ছোটো সমস্যা যেমন আছে, তেমনি স্কিন ক্যান্সারের মত বড় সমস্যাও রয়েছে।
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি আমাদের ত্বকের কোলাজেন সংশ্লেষণের হার কমিয়ে দেয়। ফলে আমাদের ত্বক অকালেই বুড়িয়ে যায়, রিংকেলস বা বলিরেখা দেখা দেয়। সানস্ক্রিন এই সব সমস্যা থেকে আমাদের ত্বককে অনেকাংশে রক্ষা করতে সক্ষম।
সানস্ক্রিন কেনার আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নেয়া উচিত। সব সানস্ক্রিন সবার জন্য নয়। যাদের ত্বক তেলতেলে, তাদের ওয়াটার বেজড সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। আবার যাদের ত্বক শুষ্ক, তাদের জন্য আছে অয়েল বেজড সানস্ক্রিন। বাইরে বের হবার ২০ মিনিট আগে মুখে এবং শরীরের অন্যান্য যেসব অংশ সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসবে সেসব জায়গায় সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। এছাড়াও সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির হাত থেকে বাঁচার জন্য সব সময় ছাতা বা বড় টুপি ব্যবহার করতে পারেন।
৪. প্রচুর পানি পান করুন
ত্বক পরিষ্কার থেকে ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখা, সব কিছুই পানি দিয়ে করা সম্ভব। পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য পানি পান করা জরুরি। গরমে এম্নিতেই সবার মধ্যে কম বেশি পানিশূন্যতা দেখা যায়। এই ঘাটতি পূরণ করার জন্য দিনে অন্তত সাত থেকে আট গ্লাস পানি পান করা উচিত।
এছাড়াও ত্বকের ডারমিস নামক স্তরে পানির অভাব হলে ত্বক তার স্থিতিস্থাপকতা হারায়, ফলে ত্বক ক্রমেই রুক্ষ শুষ্ক হয়ে ওঠে। আবার পানি খেলে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। তাই প্রতি দুই ঘন্টা পর পর অল্প অল্প পানি খাওয়া উচিত। পানির পাশাপাশি ডাবের পানি, শসা, লেবু এসব ফল এই সময়ে বেশি করে খাওয়া উচিত।
৫. ত্বকের যত্নে যা খাবেন
গরমে এম্নিতেই খাওয়া দাওয়া সাবধানে করার একটা ব্যাপার থাকে। বাইরের ভাজাভুজি তেল মশলা জাতীয় খাবার শুধু পেটের জন্যই নয়, পাশাপাশি ত্বকের জন্যও ক্ষতিকারক।
প্রতিদিন সাইট্রাস জাতীয় ফল খেতে পারেন। এছাড়াও যেকোনো মৌসুমি ফল কিংবা শাক সব্জি প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। মাছ কিংবা মাংস, অল্প মসলা দিয়ে ঝোল ঝোল করে রান্না করতে হবে। ভাজা কিংবা ভুনা তরকারি খাওয়া কমিয়ে দেয়া উচিত। অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মুখে ব্রণ বা Acne সমস্যার অন্যতম একটি কারণ।
পানি খাবার কথা আগেই বলেছি। পানি এবং তরল যেকোনো খাবার খেতে পারেন। প্রতিবেলা ভাতের বদলে একবেলা ভাত, একবেলা স্যুপ, একবেলা রুটি এভাবে খেতে পারেন। মোটকথা খাওয়া দাওয়া অবশ্যই করবেন, তবে সেটা যেন হয় নিয়ম মেনে, পরিমিত পরিমাণে।
৬. প্রসাধনী ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
একটা সময় ছিল যখন সাজগোজ মানেই ছিল সাবান দিয়ে মুখ ধুয়ে মুখে স্নো পাউডার আর ঠোঁটে লিপস্টিক লাগানো। আমরা যারা ৯০ এর দশকে বেড়ে ওঠা নাইন্টিজ কিডস, আমাদের অধিকাংশের জন্য প্রসাধনী মানে ছিল শুধু পাউডার আর লিপস্টিক। বর্তমানে সাজগোজের ধরন পাল্টেছে, মানুষের প্রাপ্তি, চাহিদা এবং বিউটি স্ট্যান্ডার্ড সবটাই আমূল পাল্টে গেছে।
ক্লিনজার থেকে টোনার, ফাউন্ডেশন থেকে কনসিলার পর্যন্ত মেকাপের প্রায় ৮ থেকে ১০ টা ধাপ। প্রতিটা ধাপে ভালো ব্রান্ডের অরিজিনাল প্রডাক্ট ব্যবহার করা খুবই ব্যয়বহুল এবং অরিজিনাল প্রডাক্ট পাওয়াটাও বেশ ঝামেলার। এজন্য বাজারে এখন হরেক রকমের রেপ্লিকা। প্রতিটা সৌন্দর্য্য পণ্যের দুই তিন রকমের রেপ্লিকা এখন বাজারে পাওয়া যায়। এগুলোর দামও হাতের নাগালে, পাওয়াও সহজ। নিম্নমানের এসব প্রডাক্ট ব্যবহার ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে। সেক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হবে অবশ্যই ভালো মানের অরিজিনাল প্রডাক্ট ব্যবহার করুন, হোক সেটা দেশি কিংবা বিদেশি। যদি কোনো প্রডাক্ট আপনার সাধ্যের বাইরে হয়, তবে ঘরেই বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে নিজেই সেটা বানিয়ে নেবার চেষ্টা করুন।
৭. নিতে পারেন স্কিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
মুখে ব্রণ হলে আমরা প্রথমেই আমাদের ফেসওয়াশ চেঞ্জ করি। তারপর ব্রণ নখ দিয়ে খুচিয়ে সেটাকে ফাটিয়ে দেবার চেষ্টা করি। এরপর যখন ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হয়, তখন টুথপেষ্ট, বরফ, আলুর খোসা ইত্যাদি টোটকা ব্যবহার করি। এভাবে আমাদের মধ্যে অধিকাংশই ত্বকের সমস্যার জন্য ভুলেও ডাক্তারের পরামর্শ নেবার কথা ভাবি না।
আপনার নিকটস্থ হাসপাতালে যদি কোনো ডার্মাটোলজিস্ট বা স্কিন বিশেষজ্ঞ থেকে থাকেন, তাহলে এসব সমস্যায় তার পরামর্শ নিতে পারেন। স্কিন ডিজিজ শুধুমাত্র স্কিন থেকে হয় এমন নয়। হরমোনের বিভিন্ন সমস্যা থেকেও স্কিন ডিজিজ হতে পারে। আবার স্কিন ডিজিজ থেকে ইনফেকশন হয়ে বড় কোনো সমস্যা তৈরিও হতে পারে। আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আক্রান্ত স্থানে বিভিন্ন রকম মেডিকেটেড ওষুধ, শ্যাম্পু, মলম ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।