কোন রোগের জন্য কোন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ? (পর্ব-২)
সুস্থ থাকতে এবং বড় ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে, সমস্যা তৈরী হওয়ার সাথে সাথেই চাই সঠিক রোগ নির্নয় এবং চিকিৎসা। তবে ঠিক কোন উপসর্গ যে কোন রোগের পূর্বাভাস সেটা বোঝা দায়। আর তা জানতেই আজকের এই লেখা।

"আপনি কি অসুস্থ? তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।" এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বহুল উচ্চারিত এবং উপযোগী পরামর্শ। কিন্তু জটিলতা তৈরী হয় তখনই, যখন আমরা বুঝতে পারি না বা রোগীকে পরামর্শ প্রদান করতে পারিনা যে কোন সমস্যার জন্য ঠিক কোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। আর তাই আমাদের এই বিশেষ প্রয়াস আপনাদের জন্য।
আমরা ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি পর্ব প্রকাশ করে চলেছি যেখানে জানানোর চেষ্টা করব কোন রোগের জন্য কোন বিশেষজ্ঞ ডক্টর উপযোগী। গত পর্বে আমরা কথা বলেছি মেডিসিন, গ্যাসট্রোলজি, কার্ডিওলজি, স্ত্রী ও পুরুষ রোগ বিশেষজ্ঞ সম্পর্কে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা আমাদের এ পর্ব সাজিয়েছি নিউরোলজি, ইউরোলজি, অর্থোপেডিক্স, ডার্মাটোলজিস্ট এবং গ্যাস্ট্রো পিডিয়াট্রিক্স সম্পর্কে আলোচনা নিয়ে। জানাবো উপরোক্ত প্রাসঙ্গিক কোন উপসর্গে আমরা সর্ব প্রথম কোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবো।
১. নিউরোলজিস্ট
নিউরোলজি মূলত ব্রেইন, নার্ভাস সিস্টেম এবং স্পাইনাল কর্ড সংক্রান্ত গবেষনা। নিম্নোক্ত লক্ষণগুলি দেখলে নিউরোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হওয়া শ্রেয়।
-
ব্রেইন সংক্রান্ত কোন ইনফেকশন
-
মাইল্ড বা মেজর স্ট্রোক
-
নার্ভাস সিস্টেমে গোলযোগের কারণে রোগীর দুর্বলতা
-
মাথা ঘোরা
-
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
-
মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা
-
চোখে ঝাপসা দেখা
-
মাথার দুপাশে যন্ত্রণা
-
সাময়িক সূক্ষ্ম যন্ত্রণা
-
মাথার পিছনে চাপ অনুভব করা
তবে অন্য ব্যাধির কারণেও এধরণের লক্ষ্মণ দেখা দিতে পারে। নিউরোলজিস্ট যদি মনে করেন লক্ষ্মণগুলো নিউরোলজি সংক্রান্ত না, তখন তিনি অন্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শের কথা বলবেন।
২. ইউরোলজিস্ট
ইউরোলজি মূলত ইউরিন, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট, ব্লাডার সংক্রান্ত গবেষনা এবং চিকিৎসা। সাধারণত নারীদের ইউরিন অর্থাৎ মূত্র বিষয়ক জটিলতায় আমরা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হই এবং পুরুষেরা পুরুষ রোগ বিশেষজ্ঞ অথবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে যাই। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে-
-
তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা
-
একবারে মূত্র ত্যাগ করায় বাঁধা
-
বারে বারে মূত্র ত্যাগ করার প্রয়োজন অনুভূত হওয়া
-
তলপেট ভারি মনে হওয়া
-
মূত্রের রং গাঢ় হলুদ থেকে লালচে হওয়া
-
অনেক ক্ষেত্রে ঘোলাটে
-
গন্ধযুক্ত হওয়া
এমন অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, পুরুষ রোগ বিশেষজ্ঞ বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে সমাধান পাওয়া গেলেও কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আমাদের ভোগান্তি যেন শেষ হতে চায় না। কারণ ইউরোলজি সংক্রান্ত সূক্ষ্ম পড়াশোনা কেবল একজন ইউরোলজিস্টই করে থাকেন। অনেকেই আমরা জানি না যে এ ধরণের কোন বিশেষ বিভাগ রয়েছে। তাই কালক্ষেপণ না করে সবার আগে ইউরিন বা মূত্র সংক্রান্ত যেকোন সমস্যায় রোগীর ইউরোলজিস্ট এর পরামর্শ নেয়া উচিৎ।
৩. অর্থোপেডিক সার্জন / অর্থোপেডিস্ট
অর্থোপেডিকস মূলত অস্থি, লিগামেন্ট এবং নার্ভ নিয়ে গবেষণা এবং চিকিৎসা। একজন অর্থোপেডিস্ট এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ ডক্টর যিনি প্রাসঙ্গিক পরামর্শ এবং চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। কোমর, হাত, পায়ের অস্হি এবং লিগামেন্ট সংক্রান্ত ব্যাথা অনুভব করলে বিভিন্ন বিভাগের ডক্টরের কাছে না ঘুরে সরাসরি অর্থোপেডিস্ট এর সাথে পরামর্শ করা ভালো হবে। তবে অন্য কোন কারণেও এ ধরণের ব্যাথা হতে পারে যা একজন অর্থোপেডিক ডাক্তার ভালো বুঝবেন এবং প্রয়োজন হলে অন্য বিভাগে প্রেরণ করবেন।
৪. ডার্মাটোলজিস্ট
ডার্মাটোলজি মূলত ত্বক, চুল, নখ সংক্রান্ত গবেষনা এবং চিকিৎসা। ত্বকের একনে, অ্যালার্জি, ত্বকের ক্যান্সার এবং এ জাতীয় প্রায় তিন হাজারেরও বেশী ব্যাধির চিকিৎসা প্রদান করেন একজন ডার্মাটোলজিস্ট। সুতরাং এ জাতীয় পরামর্শের জন্য আর কোন দ্বিতীয় চিন্তা মাথায় না রেখে সরাসরি একজন ডার্মাটোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হওয়াই একমাত্র উপায়।
৫. গ্যাস্ট্রো পেডিয়াট্রিশিয়ান
আমরা এটুকু প্রায় সবাই জানি যে শিশুদের কোন রোগ দেখা দিলে সরাসরি শিশু বিশেষজ্ঞ বা পেডিয়াট্রিশিয়ান এর নিকট যেতে হবে। কিন্তু অনেকেই এটা জানি না যে শিশুদের গ্যাস্ট্রিক সংক্রান্ত সমস্যার জন্য বিশেষজ্ঞ ডক্টর রয়েছেন যিনি হলেন গ্যাস্ট্রো পেডিয়াট্রিশিয়ান। শিশুদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সচরাচর একটি বিষয়। আর এই গ্যাস থেকেই উদ্ভুত হয় নানা রকম লক্ষণ যার কারণ আমরা বুঝতে পারিনা। ছুটে যাই শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে। কিন্তু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে সমস্যাটি উদ্ভুত হয়েছে পেটে গ্যাস তৈরী হওয়ার কারণে এবং তা রুপ পরিবর্তন করে অন্য কোন ভীতিজনক সমস্যা তৈরী করেছে। এমনকি শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। তাই শিশুর কারণ ছাড়া কান্না, খেতে না চাওয়া, রাতে -দিনে গভীর ঘুম না হওয়া, অস্হিরতা বা খিটখিটে ব্যবহার, পায়খানার অনিয়মে সবার আগে গ্যাস্ট্রো পেডিয়াট্রিশিয়ান এর স্মরণাপন্ন হওয়া বাঞ্চনীয়।
চেষ্টা করেছি সাধারণ ধারণা উপস্থাপন করে আপনাদের প্রাথমিক একটি দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য। যার ফলে হঠাৎ সিদ্ধান্তহীনতার অস্হিরতা থেকে রোগী এবং তার পরিবার হয়তো খানিকটা মুক্তি পাবেন। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রাথমিক পদক্ষেপ নিলে পরবর্তী ধাপগুলো কর্তব্যরত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষজ্ঞরাই সহজ করে দেবেন আশা রাখছি। আমাদের ধারাবাহিক পর্বের তৃতীয় পর্বে চেষ্টা করব আরো কিছু রোগ এবং বিশেষজ্ঞ ডক্টর সম্পর্কে আলোকপাত করতে।