কোন রোগের জন্য কোন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ? (পর্ব-৩)
সুস্থ থাকতে এবং বড় ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে, সমস্যা তৈরী হওয়ার সাথে সাথেই চাই সঠিক রোগ নির্নয় এবং চিকিৎসা। তবে ঠিক কোন উপসর্গ যে কোন রোগের পূর্বাভাস সেটা বোঝা দায়। আর তা জানতেই আজকের এই লেখা।

কোন রোগের জন্য কোন বিশেষজ্ঞ ডক্টর এটা জানিনা আমরা অনেকেই। আর এজন্যই পাশে আছি আমরা আস্থা ব্লগ। আমরা আয়োজন করেছি ধারাবাহিক পর্ব ভিত্তিক আলোচনা যার মাধ্যমে জানাতে চেষ্টা করব বিভিন্ন ধরণের উপসর্গ এবং তার জন্য নির্ধারিত বিশেষজ্ঞ ডক্টর সম্পর্কে। আমরা এই ধারাবাহিকের গত দুটি পর্বে তুলে ধরেছি গুরত্বপূর্ণ ১০ টি মেডিকেল বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডক্টর সম্পর্কে তথ্য। তিন নম্বর পর্বে চেষ্টা করছি আরো কিছু ব্যাধির উপসর্গ নিয়ে আলোচনা করতে এবং জানাবো এসব উপসর্গ দেখা দিলে ঠিক কোন বিশেষজ্ঞ ডক্টরের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
এলার্জিস্ট
এলার্জি মেডিকেলের একটি বিশেষ বিভাগ। যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে না দেখলে দেখা দেয় ভয়ানক বিপত্তি। সাধারণত ২৭ ধরনের এলার্জিক রিএ্যাকশন সম্পর্কে আমরা জানি। তবে খুব সচারাচর হলো এ্যাজমা, ব্রঙ্কিয়াল, ধূলা-বালি, গন্ধ, গরম, ঠান্ডা, রোদ, পশুপাখির লোম বা তাদের শরীরের শুকনো ত্বক সংক্রান্ত এ্যালার্জি। যাদের শরীর এসবের যেকোন একটি বা কয়েকটি দ্বারা এ্যালার্জিক তাদের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া অনেক কষ্টদায়ক হয়ে থাকে। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ তখন বাঞ্চনীয় হয়ে পড়ে। আর তাই কালক্ষেপণ না করে সরাসরি একজন এ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ বা এ্যালার্জিস্ট এর শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
এনডোক্রাইনোলজিস্ট
এনডোক্রাইনোলজিস্ট হলেন যিনি শরীরের এনডোক্রাইনোলজি বা হরমোন নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। এনডোক্রাইনোলজি শরীরের প্রয়োজনীয় হরমোনের তারতম্য সংক্রান্ত গবেষণা। এমন হলে শরীর তার জানান দেয় বিভিন্নভাবে। নারীদের ক্ষেত্রে লোমের আধিক্য, পুরুষ এবং নারীর উভয়ের শারীরিক স্থূলতা, হাইপার সোয়েটিং ডিসঅর্ডার অর্থাৎ অতিরিক্ত ঘাম, শরীর জ্বালাপোড়া ইত্যাদি হরমোনাল ইমব্যালেন্সমেন্ট বা হরমোন তারতম্যের লক্ষণ। এসব লক্ষন দেখা দিলে অবশ্যই একজন এনডোক্রাইনোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এছাড়াও এনডোক্রাইনোলজিস্ট নারী ও পুরুষের ইনফার্টিলিটি অর্থাৎ সন্তান জন্মদান সংক্রান্ত চিকিৎসাও প্রদান করেন।
হেপাটোলজিস্ট
একজন হেপাটোলজিস্ট মূলত অগ্ন্যাশয়, গলব্লাডার বা পিত্তথলি, লিভার ও কিডনী সংক্রান্ত বিশেষায়িত চিকিৎসক। এটি মূলত ইন্টারনাল মেডিসিনের একটি বিশেষ বিভাগ। উপরোক্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংক্রান্ত যেকোন উপসর্গে অন্য কোন বিভাগে না গিয়ে সরাসটি একজন হেপাটোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত হবে। এখন প্রশ্ন - "বুঝব কি করে যে কোন সমস্যায় ভুগছি?" কিছু সর্বজনজ্ঞাত উপসর্গ রয়েছে যেন পেট বুক জ্বালাপোড়া করা। প্রস্রাবের ইনফেকশন চরমে পৌছে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে বা ব্যথা চরমে পৌছলে কিডনী আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও অবশ্যই পেটের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন স্হানে মারাত্মক ব্যাথা অনুভূত হলে প্রাথমিকভাবে হেপাটোলজিস্ট এর স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত।
জেরিয়াট্রিশিয়ান
একজন জেরিয়াট্রিশিয়ান মূলত বয়ঃজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের ব্যাধি নিয়ে কাজ করেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগের লক্ষণ এবং ধরণে পরিবর্তন আসে যা খানিকটা বেশী যত্ন সহকারে দেখার প্রয়োজন হয়। একজন জেরিয়াট্রিশিয়ান মূলত এই ক্ষেত্রে বিশেষায়িত হয়ে থাকেন। সুতরাং বয়ঃজ্যেষ্ঠ ব্যাক্তির যেকোন সমস্যার পরামর্শের জন্য সর্বপ্রথম আমাদের একজন জেরিয়াট্রিশিয়ানের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং প্রয়োজন হলে তিনিই বিভিন্ন বিভাগে রোগীকে প্রেরণ করবেন।
হেমাটোলজিস্ট
হেমাটোলজি হলো রক্ত সংক্রান্ত বিশেষ জ্ঞান। রক্ত, রক্তের গঠন, রক্তের বিভিন্ন ইনফেকশন, এনিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া, হেমোফিয়া, লিউকোমিয়া জাতীয় রোগের চিকিৎসা প্রদান করেন একজন হেমাটোলজিস্ট। রক্তশূণ্যতা জনিত লক্ষণ যেমন শরীরের ফ্যাকাশে রং, চোখে ঘোলাটে রং, মাথা ঘোরা, লো প্রেশার, বার বার গলা শুকিয়ে যাওয়া এ ছাড়াও আরো বেশ কিছু সর্বজনজ্ঞাত লক্ষণ রয়েছে যা লক্ষিত হলে সরাসরি একজন হেমাটোলজিস্ট এর শরনাপন্ন হওয়া বাঞ্চনীয়।
আজ এ পর্যন্ত। আগামী পর্বে চেষ্টা করব আরো কিছু অজানা তথ্য জানাতে যা অবশ্যই কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে।