হরতাল, অবরোধ, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগে জীবন বাঁচাতে করণীয়

বর্তমানে দেশে চলমান গোলযোগে প্রায়ই আহত, নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই প্রবন্ধে জানুন এমন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে যেভাবে আহত ব্যক্তির সাহায্য করতে পারেন।

 

দেশের পরিস্থিতি যখন ক্রমশ আরো খারাপের দিকে ধাবমান, জীবন কিন্তু থেমে নেই। যতই হরতাল, অবরোধ, গণ্ডগোল থাকুক, আমাদের ঠিকই স্কুল-কলেজ, অফিসে যেতে হচ্ছে। এর মাঝে অগ্নিসংযোগ, বোমা আর কত প্রাণঘাতী অস্ত্রের আশেপাশেই আমাদের চলাচল, এমনকি পরিস্থিতি খুব দ্রুত স্বাভাবিক হবারও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এরকম অবস্থায় না চাইলেও হয়ত সংঘর্ষ কিংবা অন্যান্য বিপৎকালীন অবস্থায় পড়ে যেতে পারেন। এই প্রবন্ধে এমন কিছু করনীয় ও সতর্কতা পদক্ষেপ এর কথা বলব যা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে ও বিপৎকালীন সময়ে নিজের ও অন্যের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে। 

 

পাবলিক বাসে সতর্কতা

যেখানই গণ্ডগোল হোক, সবার আগে আক্রোশের শিকার হয় বাসগুলো। ভাংচুর, আগুন লাগানো ইত্যাদি প্রায়ই হতে দেখা যায়। পাবলিক বাসে উঠলে নিজের ও অপরের নিরাপত্তার জন্য নিন্মোক্ত কাজগুলো করা উচিৎ।

  • রাস্তার খবরাখবর নিয়ে তবেই বাসে উঠুন। চলমান গণ্ডগোলের ভেতর বের হলে আর কিছু না হোক ভোগান্তি নিশ্চিত।

  • বাসের জানালা বন্ধ রাখুন, যেন বাইরে থেকে কিছু ছুঁড়ে দিতে না পারে। 

  • নারী ও শিশুদের বাসের সামনের দিকে বসতে দিন। খুব বেশি ভিড়ের ভেতর না ওঠা ভালো।

  • বাসের ভেতর ঘুমিয়ে পড়বেন না, ডানে বাঁয়ে খেয়াল রাখুন। কোন বিপদের সম্ভাবনা দেখলে ড্রাইভারকে জানান বা থামতে বলুন।

  • হেড-ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

  • গণ্ডগোলের ভেতর পড়ে গেলে বেরিয়ে আসুন, তাড়াহুড়ার প্রয়োজন নেই। মনে রাখবেন সাধারণ যাত্রীর উপর আক্রমণ কিংবা ক্ষতি করার চেষ্টা একমাত্র দূর্বৃত্ত ছাড়া আর কেউ করে না। তাই ভীত হয়ে ধাক্কাধাক্কি করার চেয়ে অন্যকে আগে বের হতে দিন।

 

আগুনে দগ্ধ ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা

কারো শরীরে আগুন লেগে গেলে প্রত্যেকটি সেকেন্ড অত্যন্ত মূল্যবান। সেই সময় সঠিক পদক্ষেপ নিলে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি কমিয়ে আনতে পারে এমনকি জীবনও বাঁচাতে পারে। আগুনে দগ্ধ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে নিচের পদক্ষেপগুলো অনুস্মরণ করুন।

  • কারো গায়ে আগুন লেগে গেলে, ব্যক্তিকে ছটফট বা দৌড়াতে বাঁধা দিন। ভারী কাপড় কিংবা চাদর পেলে আগুনের উপর চাপা দিন ও আক্রান্ত ব্যক্তিকে মাটিতে গড়াতে বলুন।

  • দগ্ধ ব্যক্তির গায়ে পানি ঢালুন ও ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে এম্বুলেন্স ডাকুন।

  • দগ্ধ-ব্যক্তির গায়ের জামা খুলে দিন, কিন্তু যদি চামড়ার সাথে জামা আটকে যায় তাহলে বেশি জোর দিবেন না। 

  • জামা খোলার পর আক্রান্ত স্থানে হালকা ঠাণ্ডা পানি ঢালুন। খেয়াল রাখবেন পানির গতি যেন বেশি না হয়। 

  • ২০ মিনিট পানির ঢালার পর আক্রান্ত স্থান ঠাণ্ডা হয়ে এলে পরিষ্কার পলিথিন দিয়ে আক্রান্ত স্থান ঢেকে দিন।

  • এম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করুন, কিংবা রোগীকে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

 

অতিরিক্ত রক্তপাত হলে করণীয়

সংঘর্ষের ভেতর কেউ আহত হয়ে রক্তপাতের ঘটনা ঘটলে নিন্মক্ত পদক্ষেপ গুলো নিতে পারেন।

ক্ষতস্থান পর্যবেক্ষণ করুন। প্রাথমিক রক্তপাত কমাতে পরিষ্কার রুমাল বা কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরুন। 

  • ক্ষতস্থানের ভেতরে কাচ বা এ জাতীয় কিছু ঢুকে গিয়ে থাকলে কখনোই বের করা উচিত নয়। এতে করে অনেক সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

  • আমাদের শরীরে দুই ধরণের রক্তনালী থাকে। শিরা ও ধমনী। এই প্রধান রক্তনালী কেটে গেলে খুব দ্রুত রক্তপাত হয়ে থাকে। শরীরে কোন কিছু ঢুকে গেলে তা বের করা না পর্যন্ত মারাত্মক রক্তপাত হবার সম্ভাবনা কম থাকে। অন্যদিকে, বের করে ফেললে কেটে যাওয়া রক্তনালী উন্মুক্ত হয়ে পড়ে, ও হঠাৎ প্রচণ্ড রক্তপাত হতে পারে।

  • এমন অবস্থায়, ঢুকে যাওয়া বস্তু সহই হালকা ব্যান্ডেজ করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তারেরা সহজেই যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন। 

  • কেটে যাওয়া জায়গায় কিছু না ঢুকে থাকলে, আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার পানির ধারার নিচে পরিষ্কার করুন।

  • এরপর খুব শক্ত না করে গজ কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিন। 

  • ব্যান্ডেজ বাঁধার পরও রক্তপাত বন্ধ না হলে, পুরনো ব্যান্ডেজের উপরই নতুন ব্যান্ডেজ বাঁধুন। এরপরও রক্তপাত হলে, খুলে নতুন করে ব্যান্ডেজ করুন।

  • আহত ব্যক্তিকে নিকটস্থ হাসপাতালে স্থানান্তর করুন।

 

অচেতন ব্যক্তির সাহায্যে করণীয়

গণ্ডগোলের ভেতর কেউ কোন কারণে অচেতন হয়ে গেলে প্রথমেই নিশ্বাস চেক করুন। অচেতন কিন্তু শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে এমন ব্যক্তিকে রিকভারী পজিশনে শুয়িয়ে সাহায্য বা অ্যাম্বুলেন্স ডাকা গুরুত্বপূর্ণ। রিকভারী পজিশন হলো, এমন ভাবে আহত ব্যক্তিকে শুয়িয়ে রাখা যাতে সে সবচেয়ে কম শক্তি প্রয়োগ করে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারে এবং গলায় খাবার বা অন্যকিছু আটকে দম বন্ধ হবার সম্ভাবনা না থাকে। চলুন নিচের কয়েকটি স্টেপে রিকভারী পজিশন শেখা যাক।

  • প্রথমেই ব্যক্তিকে পিঠের উপর চিৎ হয়ে শুয়িয়ে দিন।

  • তারপর হাঁটু ধরে টান দিয়ে কাঁত করে শুয়িয়ে দিন, এবং যে দিকে কাঁত করে শুয়িয়ে দিচ্ছেন তার বিপরীত দিকের হাত তার মুখের নিচে দিয়ে দিন।

  • অন্য হাতটির তালু উপরের দিকে করে ৯০ ডিগ্রি কোণে রাখুন।


 

ফটো ক্রেডিট: firstaidforfree.com

 

পরিশেষ

শুধু হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাই নয়, প্রাথমিক চিকিৎসার এই নিয়ম গুলো যেকোনো দুর্ঘটনাতেই কাজে লাগতে পারে, বাঁচাতে পারে মূল্যবান জীবন। প্রাথমিক চিকিৎসার সাথে সাথেই সাহায্যের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে ভুলবেন না। সর্বোপরি সবার নিরাপদ জীবন কামনা করে শেষ করছি।

 

আরও পড়ুনঃ

Default user image

দিগ্বিজয় আজাদ, লেখক, আস্থা লাইফ

আমি শিল্প সাহিত্যের লোক, একই সাথে বিজ্ঞানের কৌতুহলী ছাত্র। লিখালিখি আঁকাআঁকি করতে ভালোবাসি, পড়ালেখা করছি মাইক্রোবায়োলোজি নিয়ে। আস্থা ব্লগে কাজ করতে পেরে চরিত্রের দুটো দিকই যেন সমানভাবে সন্তুষ্ট হচ্ছে। চেষ্টা করি কত সহজে আপনাদের সামনে প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করা যায়। এবং এই প্রক্রিয়ায় যদি কেউ লাভবান হন, বা কিছু শিখতে যদি পারি সেই আমার পরম প্রাপ্তি। ব্যক্তিগত জীবনে শখের মিউজিশিয়ান। নেশার মধ্যে বই পড়া ও ঘুরে বেড়ানো।

Related Articles