শীতে ত্বকের শুষ্কতা দূর করার সহজ উপায়!

শীত আসলেই ত্বকের শুষ্কতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। জেনে রাখুন শুষ্ক ত্বক কি, কেন ত্বক শুষ্ক হয় ও এর ক্ষতিকর প্রভাব। শুষ্ক ত্বক প্রতিরোধের উপায় এবং এর বিভিন্ন চিকিৎসা।

কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে শীত যে দরজাতে কড়া নাড়া দিচ্ছে, সকালের মিষ্টি বাতাসই তার প্রমাণ। শহরের মানুশের যদি এমন অনুভূতি হয়, তাহলে গ্রামের মানুষের শীতকাল হয়ত চলেই এসেছে। শীতের আমেজ আরও বেশি ভালো করে বুঝতে পারছেন যাদের ত্বক শুষ্ক। তাদের জন্য শীতকাল কোনোভাবেই আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে না। শীতকালে বাতাসে আদ্রতা কমে যাওয়াতে কম বেশী সবাইকেই শুষ্ক তকের সমস্যাতে পড়তে হয়। ত্বকের স্বাভাবিক লাবণ্যতা, মুখে পরা বলিরেখা, ত্বকের কালচে ভাব ও বিবর্ণতা দূর করতে হলে ত্বকের যত্ন নিতে হবে। 

শুষ্ক ত্বক কি?

ত্বকে তেল্গ্রন্থির পরিমাণ কমে যাওয়া, পরিবেশগত কারণে অথবা অন্য যেকোনো কারণে ত্বকে টানটান ভাব, রুক্ষতা, চুলকানির মত অস্বস্তিকর অবস্থাকে শুষ্ক ত্বক বা ত্বকের শুষ্কতা বলে। সাধারণত শীতকালের শুষ্ক ও রুক্ষ প্রকৃতি এবং বাতাসের আদ্রতা কমে যাওয়া আপনার ত্বক শুষ্ক বানিয়ে ফেলবে। আপনার শরীরের যে কোনো অংশেই শুষ্ক ত্বকের প্রভাব পড়তে পারে। তবে সাধারণত মুখ, হাত, পা এই অংশগুলোই বেশী প্রভাবিত হয়। আপনি পৃথিবীর যেই প্রান্তেই থাকুন না কেন, সেই প্রান্তে যদি শীতের ছোঁয়া নাও পৌঁছায়, তারপরও আপনাকে কোনো না কোনোদিন শুষ্ক ত্বকের সমস্যাতে পড়তেই হবে। 

শুষ্ক ত্বকের লক্ষণ:

এমন অনেকেই আছেন যারা বুঝে উঠতে পারেন না তাঁদের ত্বক শুষ্ক,তৈলাক্ত নাকি মিশ্র। আবার ঠিক তেমনি অনেকেই জানেন না, শুষ্ক ত্বকের লক্ষণগুলো আসলে কেমন হয়! আসুন জেনে নেই, আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার ত্বকের বাড়তি যত্ন নেয়ার সময় হয়ে গিয়েছে, 

  • আপনি যদি আপনার ত্বকে খুব টানটান অনুভব করেন, বিশেষ করে গোসল করে আসার পরে যদি আপনি বুঝতে পারেন আপনার শরীর বেশী শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে, তাহলেই বুঝবেন আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে গিয়েছে।

  • হঠাৎ করেই দেখবেন, আপনার হাত, পা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ সাদা সাদা ও অমসৃণ হয়ে যাচ্ছে আর বাইরে থেকে দেখেই আপনার ত্বক রুক্ষ লাগছে। আপনাকে বুঝে নিতে হবে, আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে গিয়েছে। 

  • চুলকানি অনেকের সারাবছরই থাকে। তাই অনেকে মনে করে থাকেন, এর সাথে ত্বকের শুষ্কতার কোনো সম্পর্ক নেই। এই ধারণাটি ভুল।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যাদের ত্বক শুষ্ক, চুলকানির সমস্যাটা তাদেরই বেশি। আবার, শুষ্ক ত্বকের জন্য চুলকানিও বেড়ে যায়।

  • আমাদের অনেকের মধ্যে এমন ধারণা প্রায়ই বিদ্যমান থাকে যে, আমাদের শরীরে র‍্যাশের (ফুসকুড়ি) একমাত্র কারণ হলো, কোনো ঔষধের প্রতিক্রিয়া। আপনি হয়ত জানেনই না যে, শুষ্কতার কারণে আপনার ত্বক যখন প্রাণহীন হয়ে পড়ে, তখনই শরীরে র‍্যাশের আগমন ঘটে।

  • সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, আপনার হাত অথবা পায়ের চামড়া উঠা শুরু হয়েছে। শীতকে যেমন আপনাকে স্বাগত জানাতে হবে, তার সাথে এটাও বুঝে নিতে হবে, আপনার ত্বক শুষ্ক বলেই শীতের আবির্ভাব আপনি অনেকের আগে টের পাচ্ছেন।

  • অনেকেই মাথার খুস্কির জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। মাথার খুশকি তাদেরই বেশি হয় যাদের ত্বক তুলনামূলক ভাবে বেশি শুষ্ক। 

  • আপনি অনেক সুন্দর জুতা পরলেন কিন্তু দেখা গেল আপনার পায়ের গোড়ালি ফাটা। ভাবুন তো কেমন লাগবে দেখতে। শুষ্ক ত্বকের কারণেই পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়।  

ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণঃ

শুষ্ক ত্বক হওয়ার পেছনে প্রায়শই একটি পরিবেশগত কারণ থাকে। আবার কিছু নির্দিষ্ট রোগ আপনার ত্বকেও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।শুষ্ক ত্বকের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আপনার নজরে পরবে এমন সব বিষয়, যা হয়ত আপনি চিন্তাও করে দেখেননি কোনদিন। শুষ্ক ত্বকের সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে,

  • শীতকালে ত্বক শুষ্কতম হতে থাকে, যখন তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার মাত্রা হ্রাস পায়। কিন্তু আপনি মরু অঞ্চলে বাস করলে ঋতুভেদে তেমন কিছু আসে যায় না।

  • বংশগত বা অন্য কোন কারণে আপনার ত্বকে যদি তেলগ্রন্থির পরিমাণ কম থাকে তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই তেল নিঃসৃত  হবে না। যার দরুন স্বাভাবিক ভাবে আপনার ত্বক শুষ্ক হবার সম্ভাবনা থাকে।

  • আপনার বয়স ৪০ বা তার বেশি, তবে আপনি ঝুকিতে রয়েছেন। ৫০% এরও বেশি বয়স্কদের ত্বক শুষ্ক থাকে। বয়স্কদের শুষ্ক ত্বকের বিকাশের সম্ভাবনা বেশি থাকে। আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার তেলগ্রন্থি গুলি প্রাকৃতিকভাবে কম তেল তৈরি করে এবং আপনার শুষ্ক ত্বকের ঝুঁকি বাড়ায়।

  • ঘরের সেন্ট্রাল হিটিং, কাঠের জ্বলন্ত চুলা, স্পেস হিটার এবং ফায়ারপ্লেসগুলি সমস্ত আর্দ্রতা হ্রাস করে এবং আপনার ত্বককে শুকিয়ে দেয়।

  • দীর্ঘ সময় ​​গরম পানিতে গোসল করলে আপনার ত্বক শুকিয়ে যেতে পারে। একই ভাবে ভারী ক্লোরিনযুক্ত সাঁতার পুলগুলিতে প্রায়শই সাঁতার কাটলে ত্বক শুকিয়ে যাবে।

  • অনেক জনপ্রিয় সাবান, ডিটারজেন্ট এবং শ্যাম্পু আপনার ত্বক থেকে আর্দ্রতা কেটে দেয় কারণ সেগুলি তেল অপসারণ করার জন্য তৈরি করা হয়। এছাড়া স্যানিটাইজারস এবং লিপিড সলভেন্টস (অ্যালকোহল) এর অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বক শুকিয়ে দেয়।

  • ত্বকের অবস্থা যেমন এটোপিক ডার্মাটাইটিস (একজিমা) বা সোরিয়াসিসযুক্ত লোকেরা শুষ্ক ত্বকের ঝুঁকিতে থাকে।

  • যারা কৃষিকাজ করেন বা কন্সট্রাকশন এর কাজ করেন, তাঁদের পেশার কারণেই তাঁদের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।

  • আপনার শরীরে যদি ভিটামিন এ অথবা ভিটামিন বি এর পরিমাণ কম থাকে তাহলে আপনার ত্বক শুষ্ক হবে।

  • অতিরিক্ত পরিমাণে ধূমপান করলে, বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল পান করলে আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে।

শারীর এবং রোগের সাথে শুষ্ক ত্বকের সম্পর্ক

শীতকালে স্বাভাবিক ভাবেই  বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে আমাদের ত্বকে থাকা পানি পরিবেশে চলে যায়। যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। আবার দিনে যদি অনেকবার গোসল কড়া হয় অথবা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে অনেক পানি ত্বক থেকে বের হয়ে যায়। অন্যদিকে, আপনি যদি অনেক বেশি সময় এয়ারকন্ডিশনের মধ্যে থাকেন তাহলেও ত্বকের আদ্রতা করে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। 

কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন এবং রোগসম্বন্ধীয় অবস্থার কারণে শুষ্ক ত্বক হতে পারে। শুষ্ক ত্বকের সূত্রপাত বার্ধক্যজনিত বা হরমোনের পরিবর্তনের সাথে সংগঠিত হয়। বার্ধক্য সহজাতভাবে শুষ্ক ত্বকে মানুষকে আরও প্রবণ করে তুলতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বক শুষ্ক হতে শুরু করে। আবার হরমোনের পরিবর্তনের কারণে শুষ্ক ত্বক পরিলক্ষিত হয় যেমনটা মেনোপজাল মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়।

কিছু ক্ষেত্রে, যাদের হাইপোথাইরয়েডিজম, ডায়াবেটিস বা অপুষ্টি (উদাহরণস্বরূপ, ভিটামিন এ এর ​​অভাব) এর মতো শারীরিক অবস্থা রয়েছে তাদের জেরোসিসে (শুষ্ক ত্বকের মেডিকেল নাম) আক্রান্ত হতে পারে।

নিম্নলিখিত রোগসম্বন্ধীয় অবস্থাগুলো শুষ্ক ত্বকের কারণ হতে পারে,

  • হাইপোথাইরয়েডিজম

  • ডায়াবেটিস

  • অপুষ্টি

  • অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস

ঔষধের সাথে শুষ্ক ত্বকের সম্পর্ক

আপনি হয়ত অনেক সময় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ঔষধ সেবন করে ফেলেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আপনি আপনার পরিচিত কারো পরামর্শে ঔষধ সেবন করলেন কিন্তু এতে আপনার ত্বকের ক্ষতি হল। এর কারণ হল, সবার ত্বক এক রকম হয় না। যেই ঔষধটি আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত, সেটি হয়ত আরেকজনের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই ঔষধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে কেননা ঔষধ এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ও আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।  

বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহিত ঔষধ ত্বককে শুকিয়ে ফেলতে পারে। যেমন,

  • মূত্রবর্ধক ঔষধ যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিকারে ব্যবহিত হয়

  • কোলেস্টেরল-হ্রাসকারী ঔষধ

  • রেটিন-এ এবং আইসোট্রেটিনয়েনের মতো রেটিনয়েডস যা ব্রণ এর চিকিৎসায় ব্যাবহিত হয় 

শুষ্ক ত্বকের ক্ষতিকর প্রভাব

আমাদের দেশে প্রায় সারা বছরই জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশী থাকে আর যখনই শীতের আগমন ঘটে তখন আদ্রতা কমে যায়। এসময় ত্বকের স্বাভাবিক জৈবিক কার্যকলাপ বাধাগ্রস্থ হয়। ত্বকের এই পরিবর্তনের কারণে অনেক নতুন রোগের জন্ম হয়। 

  • ডার্মাটাইটিস হচ্ছে ত্বকের প্রদাহ। এর ফলে আক্রান্ত জায়গাতে চুলকানি হয়, ফুলে যায়, আবার অনেক সময় ফোসকা পরতেও দেখা যায়। এটি শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কোনো বয়সেই হতে পারে। তবে পরিবারে যদি কারো থেকে থাকে তাহলে হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে। 

  • অ্যাটপিক একজিমা এক ধরনের ডার্মাটাইটিস। যাদের অ্যাজমার সমস্যা আছে ও ঘন ঘন জ্বর আসে, তারা এই রোগে বেশী আক্রান্ত হন। এই রোগে রাতে চুলকানি বেশি হয় আর এখন পর্যন্ত এর উন্নত চিকিৎসা আবিষ্কার হয় নাই। তবে ক্ষতস্থানে অয়েন্টমেন্ট বা মেডিকেটেড ক্রিম ব্যবহার করতে ভালো হয়ে যায়।

  • সোরিয়াসিস এমন একটি রোগ, যেটি সাধারণত বংশগত কারণে হয়ে থাকে। এই রোগে অনেক বেশি চুলকানির কারণে অনেক সময় রক্তপাত হয়। হাত ও পায়ের পাতা, হাঁটু, কনুই, নখ, পিঠ,পায়ু পথের ভাঁজে বেশি হয়। ফটোথেরাপি ও লেজার প্রয়োগে অনেক সময় ভালো ফল পাওয়া যায়।     

ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধের ৫ টি উপায়ঃ

শুষ্ক ত্বকের কারণে যে আপনাকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে, সেটা তো বুঝেই গেছেন। সমস্যা যাতে বিরাট আঁকার ধারণ না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। আপনি চাইলেই আপনার ত্বকের শুষ্কতার প্রতিরোধ করতে পারেন।

  • আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে শুষ্কতার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুণ। যেহেতু মানুষভেদে কারণ ভিন্ন হয়, তাই আপনার কারণ খুঁজে বের করে সেইভাবে পদক্ষেপ নিন।

  • আপনাকে অবশ্যই ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার শুরু করতে হবে। আর যাদের আগে থেকেই ব্রণের সমস্যা আছে তারা যেই ক্রিম ই ব্যবহার করুণ না কেন, সাথে একটু পানি মিশিয়ে নিবেন।

  • আবার যাদের চর্মরোগের সমস্যা আগে থেকেই আছে, তাদের বেশি সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 

  • গোসলের সময় কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুণ আর শীত বলেই বেশী গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন না। কুসুম গরম পানি দিয়ে অল্প সময় নিয়ে গোসল করুন।

  • পানি যে কোনো রোগের অন্যতম ঔষধ। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

ত্বকের শুষ্কতা দূর করার ঘরোয়া উপায়ঃ

আপনার শুষ্ক ত্বকের সমস্যার জন্য আপনি হয়ত চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। আপনার যদি ঘরোয়া উপায় জানা থাকে তাহলে আপনি নিজের বাড়িতেই ত্বকের যত্ন নিতে পারবেন।

  • মধু কম বেশি সকলের বাসাতেই থাকে। তবে শীতকালে মধু শুধু মানুষ খেয়েই নিজেকে তৃপ্ত করেন। তবে জেনে রাখা ভালো, মধু শুষ্ক ত্বকের চিকিৎসাতে বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে। কাঁচা মধু আপনি যদি আপনার ত্বকে দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দেন এবং উষ্ণ পানি দিয়ে পরিস্কার করে নেন, তাহলে আপনার ত্বকের শুষ্কতা অনেকাংশে ঠিক হয়ে যাবে। এভাবে সপ্তাহে অন্তত তিনবার ত্বকে প্রয়োগ করতে হবে।  

  • শুষ্ক ত্বকের কারণে যখন আপনার চুলকানি হবে তখন আপানি ঠাণ্ডা দুধ ব্যবহার করতে পারেন। কাঁচা দুধ ৫ থেকে ১০ মিনিট কাপড়ে ভিজিয়ে ত্বকে প্রয়োগ করুণ, দেখবেন আপনার শুষ্ক ত্বকের জন্য আপনার যে চুলকানি বা সাদা সাদা ভাব দেখা দিয়েছিল, সেগুলো আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। 

  • আপনি যদি আপনার শুষ্ক ত্বক নরম করতে চান, তাহলে দই ব্যবহার করতে পারেন। প্রায় ১৫ মিনিট যদি ত্বকে দই প্রয়োগ করে রেখে দেন এবং উষ্ণ পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলেন, তাহলে আপনার ত্বকের শুষ্কতা কমবে। 

  • লেবুর উপকারিতা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরও জেনে রাখা ভালো, লেবুতে  যে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, সেটি চামড়া সতেজ করতে সাহায্য করে। ফালি করে কাটা লেবু ত্বকে প্রতিদিন ঘসতে পারেন।

  • দাদি নানীদের থেকে নারিকেল তেলের উপকারিতা হয়ত কম বেশি সবাই শুনে থাকবেন। রাতে ঘুমানোর আগে যদি আপনি নারকেল তেল লাগিয়ে ঘুমান, তাহলে সকালে যখন ধুয়ে ফেলবেন, দেখবেন আপনার ত্বক নরম তুলতুলে হয়ে গিয়েছে। 

  • অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করতে হলে আপনাকে আরও একটি বিষয় মাথাতে রাখতে হবে। সব ঋতুতে ফুল হাতা জামা পরা হয়ত সম্ভব নয়। তবে আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয় তাহলে আপনাকে ফুল হাতা জামা পরার অভ্যাস করতে হবে।

শুষ্ক ত্বকের মেডিকেল চিকিৎসা

ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করার পরে হয়ত আপনি দেখলেন কাজ হচ্ছে না। তখন আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

  • আপনার ত্বক অনুযায়ী ফেসওয়াশ দিনে অন্তন দুইবার ব্যাবহার করতে হবে। আপনি হয়ত সারাদিন বাইরে থাকেন আর স্বাভাবিক ভাবেই ধুলোবালি আপনার ত্বকে প্রবেশ করে। তাই ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে।  

  • আপনার ত্বক অনুযায়ী আপনাকে ভালো  ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে হবে। সব ময়েশ্চারাইজার সব ত্বকের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই এই ব্যাপারে সব চেয়ে ভালো হয়, আপনি যদি ডাক্তারের পরামর্শ মত ময়েশ্চারাইজার বেছে নেন।

  • গরমকালে আমরা বাইরে বের হওয়ার সময় সান্সক্রিম ব্যবহার করে থাকি। শীতকাল চলে এসেছে বলেই যে আপনি ব্যবহার বন্ধ করে দিবেন এমন ভুল করতে যাবেন না। অতিরিক্ত রোদ না থাকলেও অতিবেগুনি রশ্মির কারণে যে আপনার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে, সেটা আপনি হয়ত ভেবেই দেখেন না। তাই যেই সান্সক্রিম আপনার ত্বকের সাথে মানানসই শীতকালেও সেটা ব্যবহার করুণ। 

  • ক্যালসিনিউরিন ইনহিবিটর ক্রিম, কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে হয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। 

শীতের হিমেল হাওয়া যেন আপনার এবং আপনার ত্বকের কোনো ভাবেই ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে শুরু থেকেই। আর যাদের শুষ্ক ত্বকের সমস্যা আগে থেকেই তাদের এই ঋতুতে বেশি করে সতর্ক হতে হবে। রোগে আক্রান্ত হলে আপনি যেমন অস্থির হয়ে পড়েন, তাড়াতাড়ি যেন আপনার অসুখ সেরে যায়; ঠিক তেমনি আপনার ত্বক যেন শুষ্ক হয়ে না পরে, সেদিকে খেয়াল রাখার দায়িত্ব ও আপনার। 

Default user image

কাশপিয়া ইমতিয়াজ দৃষ্টি, লেখক, আস্থা লাইফ

ঢাকা শহরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া ও কালচার বিষয়ে পড়াশুনার কারণেই হয়ত বিভিন্নদিকে আগ্রহটাও একটু বেশি। আর সেই কারণেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে লেখালিখি। ভিন্নধর্মী বিষয়ের উপর লেখার ইচ্ছা থেকেই আস্থা লাইফ পরিবারে যোগ দেয়া। নিজের সবটুকু দিয়ে এই পরিবারের সাথে থেকে যেন সাধারণ মানুষের জ্ঞান কিছুটা বাড়িয়ে দেয়া যায়, তারই চেষ্টা করব।

Related Articles