অন্ডকোষের যে ৬টি রোগ নিয়ে কখনও অবহেলা করবেন না
টেস্টিকল বা অন্ডকোষের রোগ নিয়ে অবহেলা মানে জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। কিন্তু আপনি কি জানেন অন্ডকোষের রোগগুলি কি কি? তাদের উপসর্গ ও চিকিৎসাই বা কি হবে? তবে আসুন জেনে নেই বিস্তারিত।

অন্ডকোষ পুরুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা পুরুষের প্রজননের অংশ হিসেবে কাজ করে। এটি পুরুষের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্থান। অন্ডকোষে শুক্রানু উৎপন্ন হয় এবং টেস্টোস্টেরণ হরমোন তৈরী হয় । অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল অঙ্গ হওয়ার পরও অন্ডকোষের বিভিন্ন সমস্যা অনুভূত হলে সাধারণত পুরুষরা গোপন রাখে, যা পরবর্তীতে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করে। অন্ডোকোষের বেশ কিছু রোগ ও এর চিকিৎসা নিয়ে সাজানো এই আর্টিকেলটি।
অন্ডকোষের রোগ ও চিকিৎসা
১. হার্নিয়া
অন্ডোকোষের সাধারণ রোগ হচ্ছে হার্নিয়া। এই রোগে আক্রান্ত পুরুষ হাঁচি বা কাশি দিলে তাদের অন্ডোকোষ ফুলে যায়। এ রোগ যে কোনো বয়সের নারী-পুরুষের হতে পারে। হারনিয়া একটি সারজিক্যাল রোগ হওয়ায় অপারেশন ছাড়া এ রোগ ভালো হওয়া সম্ভব না।
হার্নিয়া বলতে সাধারণ ভাবে পেট মধ্যস্থ খাদ্যনালী বা অন্য যে কোনো অঙ্গ পেটের দূর্বল স্থান দিয়ে বাইরে চলে আসাকে বোঝায়। হার্নিয়া বিস্তৃত হতে হতে অন্ডোকোষ অবধি চলে যাওয়ায় স্বাভাবিক অর্থে আমরা হার্নিয়া বলতে অন্ডোকোষ বড় হয়ে যাওয়ার রোগকেই বুঝি।
হার্নিয়ার কারণ
হারনিয়ার একমাত্র কারণই হলো পেট বা এবডোমেন ওয়ালের দূর্বলতা। এই দূর্বলতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন: জন্মগত, অপারেশন, আঘাত, ইনফেকশন ইত্যাদি।
হার্নিয়ার উপসর্গ
হার্নিয়ার প্রকারভেদ থাকায় সব ধরণের হার্নিয়ার উপসর্গ প্রকাশ পায় না। বিশেষ করে ছোট হার্নিয়ার ক্ষেত্রে উপসর্গ থাকে না বললেই চলে।
উল্লেখযোগ্য কিছু উপসর্গ-
-
ব্যথা করবে
-
পেট বা কুঁচকিতে ভারী ভাব অনুভূত হবে
-
মল ত্যাগ করতে সমস্যা
হার্নিয়ার চিকিৎসা
সাধারণত হার্নিয়ার চিকিৎসা হিসেবে আমরা অস্ত্রপাচারই জানি। তবে প্রাথমিক অবস্থায় হোমিও কিংবা এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় হার্নিয়া থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
হার্নিয়া প্রতিরোধের উপায়
-
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
-
স্বাস্থ্যকর ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হবে
-
ভারী জিনিস তোলার সময় সচেতন থাকতে হবে
-
মল ত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেওয়া যাবে না
-
কাশি দীর্ঘস্থায়ী হলে চাপ দেওয়া যাবে না
২. অন্ডকোষের প্রদাহ
অন্ডকোষের আরো একটি প্রচলিত রোগ হলো অন্ডকোষের প্রদাহ। অন্ডকোষের এক ধরণের সংক্রমনের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। অন্ডকোষের প্রদাহের মাত্রা বেড়ে গেলে রোগীর প্রচন্ড জ্বর হয় এবং অন্ডকোষ ফুলে যায়। এছাড়া প্রসাবের সময় ব্যথা ও বমিবমি ভাব হয়ে থাকে।
অন্ডকোষ প্রদাহের কারণ
অন্ডোকোষ প্রদাহ একটি স্বাভাবিক রোগ হলেও এর কারণ সম্পর্কে আমরা অবগত নই। অন্ডকোষ প্রদাহের কারণের মধ্যে আছে বিষণ্ণ নিরবতা, মূত্রনালীর সংক্রমণ, প্রোস্টেট সংক্রমণ। এছাড়াও মানসিক আঘাত, যক্ষ্মারোগ, পুরুষ ব্রুসেলোসিস সংক্রামিত হওয়ার ফলেও এ রোগ হয়ে থাকে।
অন্ডকোষ প্রদাহের উপসর্গ
অন্ডকোষ প্রদাহের কিছু উপসর্গ প্রকাশ পায়। উপসর্গ গুলো হলো-
-
অন্ডকোষে ফুসকুড়ি হওয়
-
প্রসাবে ব্যথা অনুভূত হওয়
-
লিঙ্গ থেকে স্রাব হওয়া
-
নিচের পেট বা পেলভিক এলাকায় ব্যথা বা চাপ অনুভূত হওয়া
অন্ডকোষের প্রদাহ রোগের চিকিৎসা
অন্ডকোষের প্রদাহ একটি গোপন রোগ হওয়ায় এর চিকিৎসা নিয়ে মানুষ বেশ উদাসীন থাকে। এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এ রোগের সবচেয়ে ভালো ও কার্যকরি চিকিৎসা হলো হোমিওপ্যথি। তাই ভালো হোমিওপ্যথি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
অন্ডকোষের প্রদাহ প্রতিরোধের উপায়
অন্ডকোষের প্রদাহ রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ মেনে চলতে হবে। যেমন:
-
নিরাপদ যৌন অভ্যাস
-
মূত্রনালীর সংক্রমণ পুনরাবৃত্তি
৩. অন্ডথলি ফুলে যাওয়া
অন্ডথলি ফুলে যাওয়া একটি প্রচলিত অসুখ। যেকোনো বয়সী পুরুষের এ রোগ হয়ে থাকে। অন্ডকোষ ফোলার সাথে ব্যথা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। এই সমস্যা অন্ডথলির একপাশেও হতে পারে আবার দুই পাশেও হতে পারে।
অন্ডথলি ফুলে যাওয়ার কারণ
অন্ডথলি বিভিন্ন কারণে ফুলে যেতে পারে। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ হলো- আঘাত, হার্নিয়া, অন্ডকোষের প্রদাহ, অন্ডকোষে প্যাঁচ খাওয়া ইত্যাদি।
অন্ডথলি ফুলে যাওয়ার উপসর্গ
অন্ডথলি ফুলে যাওয়ার কিছু উপসর্গ দেখা যায়। যেমন-
-
শুক্রাশয়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া
-
মূত্র আটকে যাওয়া
-
কুঁচকিতে ব্যথা অনুভূত হওয়া
-
পায়ে পানি আসা
-
মুত্রের অস্বাভাবিক গন্ধ
অন্ডথলি ফুলে যাওয়া রোগের চিকিৎসা
অন্ডথলি ফুলে যাওয়া রোগের চিকিৎসা তিন রকমের হয়ে থাকে। ঘরোয়া চিকিৎসা, এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা। রোগের পরিস্থিতি বুঝে চিকিৎসা নিতে হবে।
অন্ডথলি ফুলে যাওয়ার প্রতিরোধের উপায়
অন্ডকোষ ফুলে যাওয়া রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সুস্থ জীবনব্যবস্থা ও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
৪. টেস্টিকুলার টরসন
টেস্টিকুলার টরসন অন্ডকোষের প্রচলিত রোগের মধ্যে একটি। এক্ষেত্রে অন্ডকোষ ঘোরে এবং শুক্রানু কর্ডকে মোচড় দেয় যা অন্ডকোষে রক্ত নিয়ে আসে। এই অবস্থা সাধারণত ১২-১৮ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যায়।
টেস্টিকুলার টরসনের কারণ
টেস্টিকুলার টরসনের কারণের মধ্যে বংশগতি ধারা অন্যতম। তাছাড়া বয়ঃসন্ধিকালে অন্ডকোষের বৃদ্ধির কারণেও এমনটা হয়ে থাকে।
টেস্টিকুলার টরসনের উপসর্গ
টেস্টিকুলার টরসনের বেশ কিছু উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়। এগুলো হলো-
-
অন্ডকোষ ফুলে যাওয়া
-
পেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া
-
ঘন মূত্র ত্যাগ
-
জ্বর
টেস্টিকুলার টরসনের চিকিৎসা
টেস্টিকুলার টরসনের চিকিৎসার অন্যতম মাধ্যম হলো অস্ত্রপাচার। অভিজ্ঞ ডাক্তারের দ্কারা অস্ত্রপাচার করে নিয়মিত ওষুধ সেবনে এই রোগ সেরে যায়।
টেস্টিকুলার টরসন প্রতিরোধের উপায়
টেস্টিকুলার টরসন প্রতিরোধের উপায় হলো বয়ঃসন্ধি কালে অন্ডকোষ জনিত কোনো সমস্যা পরিলক্ষিত হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
৫. অন্ডকোষে টিউমার
অন্ডকোষে টিউমার আজকাল আলোচিত একটি রোগ। যদিও এই রোগের প্রকৃত কারণ অজানা। অন্ডকোষে টিউমার মূণত ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়।
অন্ডকোষের টিউমারের উপসর্গ
অন্ডকোষের টিউমারের কিছু উপসর্গ পাওয়া যায়। এগুলো হলো-
-
অন্ডকোষ অস্বাভাবিক বড় হতে থাকা
-
অন্ডকোষ ফুলে যাওয়া
-
স্তন ফুলে যাওয়া
অন্ডকোষের টিউমারের চিকিৎসা
অন্ডকোষের টিউমিরের অ্যালোপেথিক চিকিৎসার থেকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বেশি কার্যকর।
৬. অন্ডকোষের বৃদ্ধি
অন্ডকোষের বৃদ্ধি বা হাইড্রোসিল হল অন্ডকোষের একটি নির্দিষ্ট ধরণের ফোলা। অন্ডকোষে আঘাতের কারণে সব বয়সী পুরুষেরই এই রোগ হতে পারে।
অন্ডকোষ বৃদ্ধির কারণ
এটি এমন একটি রোগ যা কি না জন্মের সময় উপস্থিত থাকতে পারে। তাছাড়া যে কোনো বয়সেই এ রোগ হতে পারে অন্ডকোষে ব্যথা পেলে।
অন্ডকোষ বৃদ্ধির উপসর্গ
অন্ডকোষ বৃদ্ধি বা হাইড্রোসিলের কিছু উপসর্গ রয়েছে। যেমন-
-
একটি বা দুটো অন্ডকোষে ব্যথাহীন ফোলা
-
একটি অন্ডকোষ ভারী অনুভূত হওয়া
অন্ডকোষ বৃদ্ধির চিকিৎসা
রোগটি যদি নবজাতকের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় তবে এক বছরের মধ্যে আপনাআপনি সেরে যাবে। যদি তা না হয় তবে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে সারিয়ে নিতে হবে যদি বেশি অস্বস্তির জন্ম দেয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রেও ছয় মাসের মধ্যে সেরে যায়। না সারলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
অন্ডকোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধের উপায়
শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ আপনাআপনি সেরে যায়। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতিরোধের উপায় গুলো হলো-
-
অন্ডকোষকে আঘাত থেকে সুরক্ষিত রাখা
-
খেলাধুলার সময় অ্যাথলেটিক কাপ ব্যবহার করা
-
টাইট অন্তর্বাস পড়া থেকে বিরত থাকা
শেষকথা
অন্ডকোষ পুরুষের অত্যন্ত সংবেদী ও গোপনীয় অঙ্গ। এই অঙ্গের সমস্যা নিয়ে আমরা উদাসীন থাকি যা পরবর্তীতে বড় ধরণের সমস্যা নিয়ে আসতে পারে। তাই অন্ডকোষ নিয়ে সতর্ক থাকার পাশাপাশি অন্যদের সতর্ক করতে হবে এবং কোনো ধরণের সম্যা পরিলক্ষিত হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।