একজিমা কেন হয়? একজিমা হলে বুঝবেন কিভাবে?
একজিমা এক ধরণের চর্ম রোগ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়ার কারণে হয়ে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে একজিমার প্রবণতা বেশি থাকলেও সব বয়সেই এই রোগটি হতে পারে। কিন্তু একজিমার লক্ষণগুলি জানা আছে তো? আসুন জেনে নেই বিস্তারিত।

চর্মরোগ সব মানুষের ভেতরই খুব সাধারণ হলেও, সম্ভবত বাংলাদেশের মানুষ চর্মরোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি অসচেতন আর বিকারহীন। জানা যায় পার্শ্ববর্তী দেশের ২৫-৩০ ভাগ মানুষ বিভিন্ন ধরণের একজিমায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, কিন্তু আমাদের দেশের এরকম কোন সার্বজনীন পরিসংখ্যান নেই। তবু সহজেই ধারণা করা যায়, মোটামুটি ভালো সংখ্যক মানুষ একজিমায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ২০০৫ সালের একটি গবেষণায় উঠে আসে, বাংলাদেশের ৭-১৪ বছর বয়স্ক শিশুদের ভেতর শতকরা ৬-৭ শতাংশ শিশু একজিমায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।
একজিমা কী?
একজিমা এক ধরণের চর্মরোগ যাতে ত্বকে চুলকানী, ফোলা ভাব, চামড়া ওঠা জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়। বাংলাদেশের স্থানীয় ভাষায় এই রোগটিকে বিখাউজও বলা হয়ে থাকে। এলার্জির সাথে এর কিছু সাদৃশ্য থাকলেও এটি এলার্জির থেকে ভিন্ন।
একজিমা ডার্মাটাইটিস গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। ডার্মাটাইটিস হচ্ছে এমন একটি অবস্থার গ্রুপ যা ত্বকের প্রদাহ সৃষ্টি করে।
অল্প বয়স্ক শিশুদের একজিমা হবার প্রবণতা বেশি থাকে, তবে মোটামুটি অর্ধেক শিশু বয়সন্ধিকাল পার করতে করতে একজিমার থেকে পরিত্রাণ পেয়ে থাকে, বাকী অর্ধেক শিশুর ক্ষেত্রে একজিমার কিছু কিছু উপসর্গ স্থায়ী হতে পারে। যদিও সব বয়সের মানুষেই হঠাৎ একজিমার সমস্যা তৈরি হতে পারে। এর স্থায়ী চিকিৎসা নেই, যদিও বিভিন্ন ঔষধ ও সতর্কতার মাধ্যমে এর উপসর্গ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
একজিমার কারণ
একজিমা কেন হয় সে সম্পর্কে একদম সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য এখনো জানা যায় নি। তবে গবেষক গণ কিছু কিছু জিনিসের সাথে একজিমা হবার সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। নিচে একজিমা হবার সম্ভাব্য কারণ গুলো দেওয়া হলো-
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা
আমাদের রক্তে এমন কিছু রক্ত কণিকা থাকে যারা শরীরে ঢুকে পড়া বাইরের বস্তু, জীবাণু বা প্রোটিন সনাক্ত করে ভক্ষণ করে ফেলে। ঠিক এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই পরিবেশে থাকা হাজার হাজার অনুজীব থেকে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। বাইরে থেকে ঢোকা বস্তু মোকাবেলায় শরীর বিভিন্ন স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা করে। যেমন, চামড়ায় কাঠের গুড়া লাগলে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া ছাড়াই শরীর সেটা দূর করবে, অন্যদিকে ক্ষতিকর ক্যামিক্যাল প্রবেশ করলে চুলাকানী, ব্যথা ইত্যাদি হবে।
এখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কোন গোলযোগের জন্য যদি ক্ষতি করে না এমন পদার্থেও চুলকানী বা র্যাশ এর মত সমস্যা তৈরি হয় তখন তাকে একজিমা বলে। এলার্জি আর একজিমার মধ্যে পার্থক্য হলো, এলার্জির অনেক ধরণের প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, অন্যদিকে একজিমা শুধু ত্বকে চুলকানি ও দলা হয়ে চামড়া ওঠার সমস্যা তৈরি করে।
একজিমার কোন দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই, যদিও নিয়ন্ত্রণে না রাখলে একজিমা প্রচণ্ড কষ্টকর হতে পারে।
একজিমার ট্রিগরা হলো যে উপাদানের উপস্থিতি তে একজিমা শুরু হয়। রোগী ভেদে একজিমার ট্রিগার ভিন্ন হতে পারে। কোন কোন উপাদানের সংস্পর্শে একজিমা হয়ে থাকে তা জানা থাকলে এড়িয়ে চলা সহজ হয়।
২. বংশগতি
পরিবারে কারো একজিমা, এজমা, এলার্জি বা হে ফিবার থাকলে একজিমা হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাবা মায়ের কাছ থেকে কোন উপাদানে একজিমা হওয়ার জিন পেতে পারে সন্তান।
৩. পরিবেশগত
অনেক সময় পরিবেশে কোন উপাদানের সংস্পর্শে বেশি থাকলে একজিমা হতে পারে। বায়ু দূষণ, ধুলা, ধোয়া, সাবান বা প্রসাধনী কিংবা বিশেষ কোন ধরণের কাপড়ও একজিমার সমস্যা তৈরি করতে পারে। বাতাসের জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কম বা খুব বেশি হলে একজিমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪. আবেগগত
অনেকসময় মানুষের খারাপ মানসিক অবস্থার কারণে একজিমা শুরু হতে পারে। তবে একজিমার সাথে মানসিক অবস্থা ও আবেগের সম্পর্ক এখনো স্পষ্ট করে জানা যায় নি।
একজিমার লক্ষণ
একজিমার লক্ষণগুলো সাধারণত ত্বকে দৃশ্যমান হয়ে থাকে। এর লক্ষণগুলো খেয়াল করুন।
-
শুষ্ক ত্বক
-
প্রচণ্ড চুলকানি
-
ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা
-
চামড়া ফুলে যাওয়া
-
ত্বক থেকে চামড়ার মত মোটা স্তর উঠে আসা
-
খোসা ওঠা, ত্বক এবড়ো-থেবড়ো অইশযুক্ত চেহারা পাওয়া।
-
ত্বকে ফাটল দেখা দেওয়া ও রস বের হওয়া।
-
লাল বা বাদামী ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেওয়া।
একজিমার ধরণের উপর নির্ভর করে এই উপসর্গ গুলোর মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
একজিমা কত প্রকার?
একজিমা কয়েক ধরণের আছে। যার মধ্যে রয়েছে-
-
এটোপিসি ডার্মাটাইটিস
-
কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস
-
ডিসিডিরোটিসি এক্জিমা
-
নিউরো ডার্মাটাইটিস
-
নিউমুলার এক্জিমা
-
সেবরহেইক ডার্মাটাইটিস.
কারও কারও ক্ষেত্রে একই সময়ে একাধিক ধরণের একজিমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
একজিমা নাকি দাদ বুঝবেন কিভাবে?
অনেক সময় একজিমা আর দাদ এর উপসর্গে কিছুটা মিল থাকতে পারে, বিশেষ করে নিউমুলার একজিমাতে দাদের মতই গোলাকার আকৃতির আক্রান্ত স্থান দেখা যায়।
-
যদিও দাদ সম্পূর্ণ ফাংগাস বহিত রোগ অন্যদিকে নিউমুলার একজিমা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। দাদ ও নিউমুলার একজিমা আলাদা করার উপায় হলো-
-
দাদ এ রিং আকৃতির দাগ দেখা যায় যেখানে লাল অংশের বাইরের দিকে গোলাকার বর্ডার থাকে, অন্যদিকে নিউমুলার একজিমাতে কয়েন আকৃতির আক্রান্ত স্থান দেখা যায়।
-
দাদ এর আক্রান্ত স্থানে ফুসকুড়ি দেখা যায়, অন্যদিকে একজিমাতে শুষ্ক চামড়া, খোসা ওঠা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।