ব্রণ দূর করার ৭টি উপায়

বাজারে ইন্টারনেটে ও অন্যান্য প্রসাধনী বিক্রয় কেন্দ্রে প্রায়ই ব্রণ দূর করা ও নিরাময় করার বিউটি প্রডাক্ট পাওয়া যায়, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ব্রণ কি আসলেও প্রতিকার করা সম্ভব? অসুন জেনে নেই।

ব্রণ কি সম্পূর্ণ সেরে যায়?  উত্তরটা প্রথমেই দিয়ে দেওয়া যাক। ১০০ ভাগ প্রতিরোধ হয়ত সম্ভব নয়। তবে ব্রণ থেকে যেন অন্য সমস্যা তৈরি না হয় তার জন্য কিছু কিছু প্রাথমিক ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে পারেন। চলুন কি কি পদক্ষেপ নিলে ব্রণ হবার সম্ভাবনা কমবে ও ব্রণ হয়ে গেলে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে তা জানা যাক।

 

ব্রণ কমানোর উপায়

১. ব্রণ হবার পরে প্রথম যে বিষয়টা মাথায় রাখা উচিত তা হল, কোনো ভাবেই ব্রণ নখ দিয়ে খোটা খুটি করা যাবে না। 

২. কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। বিভিন্ন রকম ফল, তাজা সবজি, দই, বাদাম এসব খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।  

৩. ত্বকে ময়লা জমে ব্রণ হতে পারে তবে ব্রণ হবার এটাই একমাত্র কারণ নয়। তাই বার বার ঘষে ঘষে মুখ ধোয়া যাবে না। এতে বরং ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমে যায়। ত্বক শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে ওঠে। 

৪. ত্বক পরিষ্কারের জন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি অথবা হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।

৫. অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করলে অবস্থা আরো খারাপ হবার সম্ভাবনা থাকে। সম্ভব হলে মুখে গরম পানির ভাপ নিতে পারেন। এতে করে বন্ধ হওয়া লোমকূপ খুলে যায় এবং জমে থাকা তেল বাইরে বের হয়ে আসার সুযোগ পায়। 

৬. ২ দিন পর পর মাথার চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। মাথার চুল থেকে যেন ময়লা বা খুশকি ব্রণের উপর না পড়ে। 

৭. ব্রণের উপর যথাসম্ভব কম প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত। অয়েল বেজড প্রসাধনী ব্যবহার না করে ওয়াটার বেজড প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে। ঘুমানোর আগে অবশ্যই মেকআপ রিমুভার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ঘুমাতে হবে। 

 

ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায় 

ব্রণের সমস্যায় ঘরোয়া টোটকা খুব কাজে আসে। টি ট্রি অয়েল, মধু, দই, গ্রিন টি, এলোভেরা, নিম  - এগুলো প্রাকৃতিক ভাবেই প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এসব মিলিয়ে পেস্ট করে নিজের মত প্যাক বানিয়ে মুখে সপ্তাহে দুই দিন করে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ব্রণ কমার পাশাপাশি ত্বকের কমনীয়তা বৃদ্ধি পাবে। 

 

ব্রণ প্রতিরোধের উপায়

১ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস খাওয়ার চেষ্টা করুন

প্রথমেই আসি খাবারের প্রসঙ্গে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শুধু ব্রণের জন্যই নয়, যেকোনো রোগ প্রতিরোধ করার প্রথম পদক্ষেপ হল নিজের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার, অতিরিক্ত লবণ, নানা রকম জাংক ফুড, ফল এবং আঁশ জাতীয় খাবার কম খাওয়া এসব অভ্যাস ঝেড়ে ফেলতে হবে। 

২ এলার্জি জাতীয় খাবার পরিহার করুন

এলার্জি জাতীয় খাবার তা যত সুস্বাদুই হোক না কেন, এড়িয়ে চলা উচিত। দিনে অন্তত ৮ - ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। 

৩ ত্বকের জন্য মানানসই প্রসাধনী ব্যবহার করুন

আজকাল টিভি খুললেই পিম্পল দূরকারী ফেসওয়াশ এবং ক্রিমের নানান চটকদার বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। মাত্র ১০ দিন, ৭ দিন কিংবা ৩ দিনে ব্রণ দূর করার অসংখ্য বিজ্ঞাপন দেখে বিভ্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। তবে বিজ্ঞাপন দেখে বার বার প্রসাধনী বদল করাটা উচিত নয়। আপনার ত্বক কিরকম, ঠিক কি কি উপাদান যুক্ত কসমেটিকস আপনার ত্বকের জন্য মানানসই এসব বিস্তারিত জেনে তবেই প্রসাধনী কেনা উচিত।

৪  সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

বাইরে বের হবার আগে মুখে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত রোদ থেকে বাঁচার জন্য সঙ্গে ছাতা রাখতে পারেন। 

৫ নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিন

আপনি যতই ব্যস্ত হোন না কেন, সপ্তাহে অন্তত একদিন স্কিন কেয়ারের জন্য আধা ঘণ্টা সময় হাতে রাখুন। আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন রকমের ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। 
 

ডাক্তারের কাছে কখন যাবেন? 

আমাদের দেশে দুই চারটা ব্রণ নিয়ে খুব কম মানুষই ডাক্তারের কাছে যায়। বরং বেশির ভাগ মানুষই এ অবস্থায় ফেসওয়াশ, সেরাম, ময়েশ্চারাইজার সহ নিজের কসমেটিকস এর ব্রান্ড বদল করতে থাকেন। 

তবে ব্রণের পরিমাণ যদি বেশি হয় তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো। পুরো মুখে কিংবা শরীরের অন্যান্য জায়গায় লাল লাল ফুসকুড়িতে ভরে গেলে কিংবা ব্রণ থেকে ব্যথাযুক্ত সিস্ট তৈরি হলে একজন চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়াটাই নিরাপদ। এক্ষেত্রে মেডিকেটেড সাবান শ্যাম্পু ফেসওয়াশ দিয়ে প্রাথমিকভাবে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বেনজাইল পার অক্সাইড এবং স্যালিসাইলিক এসিড যুক্ত কসমেটিকস ব্যবহার করতে পারেন। এতে কাজ না হলে এন্টিবায়োটিক কিংবা রেটিনয়েড জাতীয় ওষুধ দেয়া যেতে পারে। কখনো কখনো এস্ট্রোজেন প্রজেস্টোরন যুক্ত পিলও প্রেসক্রাইব করা হয়। 

কিভাবে চিকিৎসা করলে ব্রণ দূর হবে এবং কি কি পদক্ষেপ নিলে ভবিষ্যতে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে সেটা চিকিৎসকের চিকিৎসা পদ্ধতি, ব্রণের তীব্রতা, ব্রণের পরিমাণ এবং রোগীর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। 

 

পরিশেষে

ব্রণ এবং ব্রণ পরবর্তী দাগ নিয়ে আমাদের চিন্তার অন্ত নেই। অথচ রোজকার খাবার, কসমেটিকস, জীবন যাত্রা, ঘুমের পরিমাণ এসব নিয়ন্ত্রণ করেই কিন্তু ব্রণ অনেকাংশে দূর করা যায়। আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ব্রণ একটি স্কিন ডিজিজ। অন্যান্য রোগের মতই এরও চিকিৎসা আছে। একটি সাধারণ চর্মরোগ যেন আমাদের আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া এবং এ থেকে মানসিক অবসাদের কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। 

 

আরও পড়ুনঃ

Default user image

ডাঃ ঐশ্বি তৃষা সৃষ্টি ঢালী, লেখক, আস্থা লাইফ

আমি ঐশ্বি তৃষা সৃষ্টি ঢালী। বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে অল্প স্বল্প লেখালেখি করতে ভালো লাগে। আস্থা লাইফের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্লগগুলি মানুষের মধ্যে একটু হলেও সচেতনতা তৈরি করবে বলে আমার বিশ্বাস। ভালো লাগে ঘুমাতে, গান শুনতে, নানা রকম খাবার খেতে আর সবচেয়ে ভালো লাগে কথা বলতে।

Related Articles