করোনাভাইরাস হলে হৃদরোগীরা কেন এত ঝুঁকিতে থাকেন?
করোনাভাইরাসে কি শুধুই ফুস্ফুসে আক্রমন করে!! করোনাভাইরাসে কিভাবে হৃদরোগে প্রভাব ফেলে? এই সময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের করণীয় কী?
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম নতুন এই করোনাভাইরাস প্রজাতি শনাক্ত হয়। এরপর তা ধীরে ধীরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে গিয়ে বর্তমানে বিশ্ব মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। এ বছর মার্চ মাসে আমাদের দেশেও এ রোগে আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাম ও অন্তর্ভুক্ত হয় বিশ্ব মহামারীর তালিকায়। বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৯,৩৭,৫৬৭ জন যার মধ্যে শতকরা ৮১% সুস্থতা লাভ করেছেন, ১৯% মৃত্যুবরণ করেছেন এবং ৫% বর্তমানে সংকটপূর্ণ অবস্থায় আছেন, আর বর্তমান বাকী ৯৫% রোগী স্বল্প থেকে মাঝারি বিভিন্ন পর্যায়ে আছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগের সংকটপূর্ণ অবস্থায় যাওয়া এবং আইসিউতে লাইফ সাপোর্ট এর প্রয়োজনীয়তা এবং সবশেষে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া বেশিরভাগ রোগী ষাটোর্ধ এবং দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন রোগাক্রান্ত। এ সমস্ত রোগের মধ্যে হৃদরোগ অন্যতম যাতে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর হার ১০% এর মত যা সমসাময়িক অন্যান্য রোগের তুলনায় বেশি। সে জন্যে হৃদরোগে আক্রান্তদের করোনাভাইরাসের ব্যাপারে অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।
করোনাভাইরাসে কিভাবে হৃদরোগে প্রভাব ফেলে?
করোনাভাইরাস এমন একটি মারাত্বক ফ্লু জাতীয় রোগ যা সাধারন সর্দি,জ্বর,কাশি থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া এমনকি প্রাণঘাতী ইনফেকশন করে থাকে। তাই সবার ধারণা এ রোগ শুধু ফুসফুসকেই আক্রান্ত করে, কিন্তু এই ভাইরাস হৃদপিণ্ডের নানা প্রকার মারাত্মক এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী রোগ করতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হার্ট ফেইলিউর, একিউট এমআই যাকে আমরা সচরাচর হার্ট অ্যাটাক নামে চিনি। এছাড়াও হৃদপিণ্ডের মাংসপেশির প্রদাহও করতে পারে।
এই সময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের করণীয়
১। প্রথমত সাধারণ মানুষদের ক্ষেত্রে এ সময়ে যা যা করণীয় এবং বর্জনীয় তা অবশ্যই এবং অতি অবশ্যই মেনে চলা।
২। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা
৩। পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা
৪। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতিত কোন নতুন কোন ঔষধ খাওয়া বা নিয়মিত খাওয়া কোন ঔষধ বাদ না দেয়া
৫। যথাসম্ভব চাপ মুক্ত থাকা। চাপমুক্ত হবার জন্যে নিচের উপায় অনুসরন করতে পারেন,
-
কিছুক্ষন পর পর টিভি, সামাজিক যোগা্যোগ মাধ্যম বা অন্য কোন উপায়ে বা মাধ্যমে এ রোগের খবর না দেখা।
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যে কোন পরামর্শ যথাযথ ও সঠিক উপায়ে যাচাই করা ব্যাতিত গ্রহন করা থেকে বিরত থাকা। যেমন কিছুদিন আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ক্লোরোকুইন বা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নামক ওষুধ সেবন, হৃদরোগীদের জন্যে মারাত্মক ক্ষতি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে! তাই এসব ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।
-
প্রতিদিনকার একটি রুটিন করে নিন
-
বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দুরবর্তী আত্বীয়, বন্ধুবান্ধব, আপনজনদের সাথে যোগাযোগ রাখুন
-
পরিবার কে সময় দিন
-
ধর্মীয় উপাসনায় মন নিবেশ করুন
-
নিয়মিত পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন
-
আপনার শখ এবং অবাস্তবায়িত স্বপ্নকে সময় দিন তবে এ সময় অবশ্যই ঘরে থেকে
৬। ঘরেই নিয়মিত ব্যায়াম করুন।বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মধ্যম শ্রমের ব্যায়াম অথবা ৭৫ মিনিট তীব্র শ্রমের ব্যায়াম করা উচিত। এবং এ সময় তা ঘরে বসেই করা সম্ভব! সেজন্যে নীচের কিছু উপায় হতে পারে,
-
প্রতি ৩০ মিনিট বা ১ ঘন্টা পর পর ঘরে মধ্যম গতিতে হাটা যেতে পারে
-
উঠ বস করা যেতে পারে
-
কায়িক শ্রমের গৃহস্থালি কাজ করা যেতে পারে
-
অনলাইনে এ ব্যাপারের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে সে মত করা যেতে পারে
৭। ধুমপান মদ্যপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।
৮। ডাক্তারের পরামর্শ মত ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোকক্কাল ভ্যাক্সিন নিন।
পরিশেষে শুধু এটুকুই অনুরোধ অযথা আতংকিত হবেন না। নিজে নিয়ম মাফিক চলার চেষ্টা করুন এবং অন্যদের উৎসাহিত করুন। যেহেতু এ রোগের এখন পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্ট ঔষধ কিংবা প্রতিষেধক নেই তাই আপনার সচেতনতাই পারে আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে বাঁচাতে।
ঘরে থাকুন। সুস্থ থাকুন।