অনিদ্রা, ঘুমের ওষুধ এবং কিছু কথা

ঘুমের ওষুধ অনিদ্রার জন্য স্থায়ী কোন সমাধান নয়। বরং জীবনযাত্রায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে খুব সহজেই অনিদ্রার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই ঘুমের ওষুধের ব্যাপারে সচেতন হোন কারণ একমাত্র সচেতনতাই পারে আপনাকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে।

ঘুম একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে একটা। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রার ধরণটাই এমন যে মানুষ এই ঘুমকেই সবচেয়ে বেশী অবহেলা করে। মানুষ যখন সম্পূর্ণ সুস্থ্য অবস্থায় থাকে তখন ঘুমটাকে সে মনে করে বাহুল্য। অনেকে আবার ইন্টারনেটে পাওয়া বিভিন্ন মোটিভেশনাল কথাবার্তার দরুন জীবন এবং ক্যারিয়ারের প্রতি এতটাই নিমগ্ন হয়ে ওঠে যে তার মনে হয় যেন ঘুমিয়ে পড়লে জীবনটাকে ‘মিস’ করে ফেলবে। এজন্য সে ঘুমটাকেই সবচেয়ে বেশী অবহেলা করে।

অতঃপর ফল যা হবার তাই হয়। এভাবে ঘুমকে অবহেলা করতে করতে একদিন ঘুমই তাকে অবহেলা করা শুরু করে দেয়। তখন আসে অনিদ্রা। আর একমাত্র একজন অনিদ্রায় ভোগা মানুষই জানে ঘুমাতে চেয়েও ঘুমাতে না পারার কি কষ্ট! তখন সে খুব সহজেই শরণাপন্ন হয় ঘুমের ওষুধ অর্থাৎ স্লিপিং পিল এর। আমাদের দেশ এসব দিক থেকে এখনও ততটা উন্নত হয়নি, তাই ঘুমের ওষুধ যেকোনো ওষুধের দোকান থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কেনা সম্ভব হয়। আবার অনেক অ্যালার্জির বা কাশির ওষুধও আছে যেগুলো খেয়ে মানুষ ঘুমানোর চেষ্টা করে। তাতে ঘুম তো হয়ই না, বরং শরীরের উপর আসে এক ভয়ংকর ক্ষতিকর প্রভাব। তাই ঘুমের ওষুধ খাবার সঠিক নিয়ম জানাটা অত্যন্ত জরুরী। তবে তার আগে জরুরী অনিদ্রাকে বোঝা।

অনিদ্রা কি?

প্রশ্নটা দেখে অনেকেরই ভ্রু কুঁচকে যেতে পারে। তবে অনিদ্রার সংজ্ঞা জানা আসলেই দরকার। আমরা বেশীরভাগই মনে করি রাতে ঘুম না হওয়াকে অনিদ্রা বলে। তবে এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের রাতে একফোঁটা ঘুম না আসলেও দিনে তারা একটানা ৭/৮ ঘণ্টা দিব্যি ঘুমাতে পারেন। একে কিন্তু অনিদ্রা বলা যাবে না। অনিদ্রা তখনই হবে যখন রাতে বা দিনে কখনই ঘুম না আসবে।

স্লিপিং পিল কি?

স্লিপিং পিল এর শাব্দিক অর্থই হচ্ছে ঘুমের ওষুধ। রোগীর যখন ঘুম একেবারেই হয় না, তখন এই ওষুধ ব্যাবহারের পরামর্শ দেয়া হয় যাতে তার ঘুমে সহায়তা হয়। স্লিপিং পিল অন্যান্য বেশ কিছু নামেও পরিচিত যেমন, সিডেটিভ, স্লিপ এইড, স্লিপ মেডিসিন, ট্র্যাংকুইলাইজার ইত্যাদি। তবে সব স্লিপিং পিল যে একইরকমভাবে কাজ করবে এমন না। ধরণের উপর নির্ভর করে একেক্তা স্লিপিং পিল একেকরকম উপায় অবলম্বন করে কাজ করে। যেমন, কোন এক ধরণের সিডেটিভ হয়ত মাথা ঝিমঝিম ভাব তৈরি করার মাধ্যমে ঘুম আসার ব্যাবস্থা করে আবার কোনটা হয়ত মস্তিষ্কের সেই অংশটাকে নিশ্চুপ করিয়ে দেয় যে অংশটা আপনাকে সচল রাখে।

অনিদ্রায় ঘুমের ওষুধ কি পুরোপুরি কার্যকর?

সহজ উত্তর হচ্ছে – না। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের ওষুধের প্রভাবে বেশীরভাগ রোগীই স্রেফ একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট আগে ঘুমিয়ে পড়তে পারে এবং গড়ে তারা মাত্র ৩৫ মিনিট অতিরিক্ত ঘুমাতে পারে। সেজন্যই ডাক্তাররা সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য ঘুমের ওষুধ দিয়ে থাকেন। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ঘুমের ওষুধ খুব একটা কার্যকর কোন সমাধান নয়।

ঘুমের ওষুধ কখন কিভাবে খেতে হয়?

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ঘুমের ওষুধ কখনই খাওয়া উচিৎ নয়। তাই আপনার যদি ঘুমের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অতি দ্রুত কোন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক আপনার কাছে যে যে বিষয়গুলো জানতে চাইতে পারে তা হল-

১. অতীতে আপনার ঘুমানোর ধরণ

২. আপনার ব্যায়ামের রুটিন

৩. সমস্যাটি কতদিন ধরে চলছে

৪. আপনি এই মুহূর্তে অন্য কোন রোগের জন্য ওষুধ খাচ্ছে কিনা, খেলে সেগুলো কি কি

এরপর আপনার সাথে কথা বলে, প্রয়োজনে পরীক্ষানিরীক্ষা করে ডাক্তার আপনাকে ঘুমের ওষুধ সাজেস্ট করবে।

ডাক্তাররা সাধারণত চার ধরণের ঘুমের ওষুধ প্রেসক্রাইব করে থাকে –

১. বেনজোডায়াজেপিনস

২. বারবিচুরেটস

৩. অপোয়েডস

৪. হিপনোটিকস

এর বাইরেও ঘুমের ওষুধ হিসাবে যেগুলোর প্রচলন রয়েছে তা হল অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, মেলাটোনিন, এবং হার্বাল ওষুধ। এই প্রতিটা ওষুধেরই ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া উভয়ই রয়েছে। তাই শুধুমাত্র চিকিৎসকের দেয়া নিয়ম অনুযায়ীই ওষুধ খাবেন।

ঘুমের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসমূহ কি কি?

  • কোষ্ঠকাঠিন্য

  • মুখের ভেতর শুকিয়ে যাওয়া

  • মাথায় যন্ত্রণা

  • মাংসপেশির দুর্বলতা

  • হজমে সমস্যা, ইত্যাদি

ঘুমের ওষুধ চলাকালীন কি কি জিনিস খেয়াল রাখা উচিৎ?

  • নিয়মের বাইরে ওষুধ না খাওয়া।

  • যখন ঘুমাতে চান তার কয়েক ঘণ্টা আগে ওষুধ খাওয়া।

  • ঘুমের ওষুধ খাবার পর ঘুম যাতে না আসে এমন কাজ না করা।

  • বেশী করে পানি পান করা।

  • ঘুম ঘুম অবস্থায় গাড়ি বা অন্য যানবাহন না চালানো।

  • ঘুমের ওষুধের সাথে অ্যালকোহল পান না করা।

  • শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানো।

যেকোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিকে বিশেষভাবে নজর রাখা এবং তেমন কিছু ঘতলে সাথেসাথে ডাক্তারকে জানানো।

আরও জানুনঃ

Default user image

শফিকুল বাশার কাজল, লেখক, আস্থা লাইফ

পিতামহ-পিতামহী অনেক শখ করিয়া নাম রাখিয়াছিলেন শফিকুল বাশার কাজল। ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক সম্পন্ন করিবার পর খানিক এই কাজ, কতক ওই কাজ করিয়া অবশেষে ২০১৩ সালের শেষ হইতে ‘সামাজিক মতে বেকারত্ব’ অর্থাৎ কিনা লেখালেখিকেই জীবিকা অর্জনের একমাত্র উপায় হিসাবে বরণ করিয়া লইয়াছি। অদ্যাবধি অন্ততপক্ষে আট-দশখানা দিশী-বিদিশী কোম্পানি এবং অগণিত ব্যক্তিবিশেষের জন্যে প্রায় চল্লিশ সহস্রাধিক লেখা নামে-বেনামে সম্পন্ন করিবার সুযোগ হইয়াছে। ভালোবাসি নিজের পরিবার, সন্তান, এবং ফুটবল।

Related Articles