পিত্তথলির পাথরের চিকিৎসা করবেন কীভাবে?
পিত্তথলির পাথর যদি কোন সমস্যা তৈরি না করে তাহলে তা অপসরণের দরকার হয় না। কিন্তু জটিলতার সম্ভাবনা থাকলে তা অপারেশন করেই দূর করা সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। পিত্তথলির পাথর দূর করা ও এর চিকিৎসা নিয়ে আক্রান্তদের মাঝে বিভ্রান্তি দূর করতেই আজকের প্রবন্ধ।

-
পিত্ত-পাথর কোন সমস্যা না করলে এর চিকিৎসা প্রয়োজন নেই
-
পিত্ত-পাথরের চিকিৎসায় সার্জারিই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি
-
অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে পিত্ত-পাথর ফিরে আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে
-
ভেষজ বা হারবাল ঔষধের পিত্ত-পাথর সারিয়ে তোলার প্রমাণ নেই।
পিত্তথলির পাথর নিয়ে লেখা আমাদের প্রথম লেখায় “পিত্তথলির পাথর কেন হয়? প্রতিরোধ করবেন কীভাবে?” নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম।
সেখানে আমরা জেনেছিলাম পিত্ত-পাথর পিত্ত থলির মধ্যে অবস্থান করলে তা কোন উপসর্গ দেখায় না এবং পিত্ত থলি তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে। কিন্তু পাথর যখন পিত্তের নালি পথে আটকে যায় তখন নানারকম উপসর্গ ও জটিলতা দেখা দেয়। পিত্ত-পাথরের জটিলতা দেখা দিলে তা দ্রুত চিকিৎসা করা প্রয়োজন, কারণ অবহেলা করলে তা জন্ডিস, পিত্তথলিতে প্রচণ্ড ব্যথা এমনকি প্রাণসংশয়ী পিত্তের ক্যান্সারও হতে পারে।
পিত্ত পাথুরিয়া রোগে কোন চিকিৎসা নেওয়া উচিৎ এবং কোন চিকিৎসা কার্যকরী নয়, এই প্রবন্ধটিতে তা নিয়ে আলোচনা থাকবে।
পিত্তথলির পাথরের চিকিৎসা
পিত্তথলির পাথরের চিকিৎসা সাধারণত জটিল নয়। প্রথমে ডাক্তার আপনার শারীরিক উপসর্গ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন ও নিশ্চিত হবেন যে আপনার উপসর্গ পিত্তথলির পাথর হওয়ার সাথে মেলে। পরপর আল্ট্রাসোনোগ্রাফ ও সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে আপনার পিত্তথলির পাথরেরে অবস্থান ও আকৃতি বোঝার চেষ্টা করবেন। এর সাথে রক্ত পরীক্ষা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় টেস্ট দিতে পারেন। টেস্টের রিপোর্ট দেখে ও আপনার উপসর্গ বিবেচনায় ডাক্তার আপনাকে সার্জারি করার কিংবা না করার পরামর্শও দিতে পারেন। পিত্ত-পাথরের চিকিৎসায় সাধারণত তিন ধরণের চিকিৎসা করা হয়।
১. ল্যাপারোস্কপি
ল্যাপারোস্কপি পিত্তথলির পাথরের সবচেয়ে আধুনিক ও কার্যকরী সার্জারি। এই সার্জারিতে পেটের চারপাশে চারটি ছোট ছিদ্র করা হয় ও তার ভেতর দিয়ে টিউবের মত ভিডিও ক্যামেরা, লাইট, আল্ট্রাসোনো, ও অপারেশনের যন্ত্র প্রবেশ করানো হয়। পেটের ভেতর কার্বন ডাই অক্সাইড ঢুকানো হয় যেন অপারেশন এর জন্য যথেষ্ট জায়গা পাওয়া যায়। এই অপারেশনে সাধারণ এনেস্থেশিয়া করা হয়, অর্থাৎ আপনি অচেতন থাকবেন ও কিছু অনুভব করবেন না। অপারেশনে পাথর পাওয়া গেলে তা বের করে আনা হয় ও পেটের কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে সেলাই করে দেওয়া হয়। এই অপারেশন করতে আধা ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে ও রোগী সেদিনই বাড়ি যেতে পারেন। ৭ দিনের ভেতরে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
২. ওপেন সার্জারি
আগে উন্নত প্রযুক্তি না থাকায় ওপেন সার্জারি বেশি করা হতো, কিন্তু বর্তমানে এর প্রচলন খুবই কম। ওপেন সার্জারিতে পেট কেটে পিত্ত পাথর বের করা হয়। খুব বেশি জটিলতা না থাকলে এ ধরণের সার্জারির প্রয়োজন হয় না, যদিও এটি ল্যপারোস্কোপির মতই কার্যকরী। ওপেন সার্জারিতে রোগীকে পাঁচ দিন পর্যন্ত হাসপাতালে অবস্থান করতে হয় ও সম্পূর্ণ ভাবে সেরে উঠতে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগে। প্রেগনেন্সির তৃতীয় পর্যায়ে ও অতিরিক্ত স্থূল রোগীর জন্য ওপেন সার্জারির পরামর্শ দেওয়া হয় না।
৩. পিত্তথলির পাথর গলানোর ঔষধ
পিত্তথলির পাথর গলানোর ঔষধ সাধারণত সার্জারির মত কার্যকর নয়। কিছু ঔষধ পিত্তথলির কোলেস্টেরল পাথর গলিয়ে ফেলতে ব্যাবহার হয়, কিন্তু সেক্ষেত্রে দুই বছর কিংবা তারও বেশি সময় ঔষধ সেবন করতে হয়। এবং তাতেও পুনরায় পাথর হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।
তাছাড়া এসব ঔষধের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে, যেমন গর্ভনিরোধোক বড়ির কার্যকারিতা কমিয়ে দেওয়া, অসুস্থ বোধ করা, শরীর চুলকানো ইত্যাদি। স্তন্য দাত্রী নারীদের এই ঔষধ প্রেসক্রাইব করা হয় না।
কখন ও কোন ডাক্তার দেখাবেন?
পিত্ত-পাথরের কোন উপসর্গ যদি দেখা দেয় একজন গ্যাসট্রোলোজিস্ট ডাক্তারের এপোয়েন্টমেন্ট করবেন। নিন্মোক্ত উপসর্গ পিত্ত-পাথর রোগের জটিল অবস্থা নির্দেশ করে, সেক্ষেত্রে জরুরী স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন।
-
পেটের উপরের অংশে একটানা তীব্র ব্যথা যা কিছুতেই কমতে চায় না।
-
ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলদে হয়ে পড়া
-
প্রচণ্ড জ্বর ও কাঁপুনি।
লক্ষণ সম্পর্কে জানতে পড়ুন-
পিত্তথলির পাথর কেন হয়? প্রতিরোধ করবেন কীভাবে?
পিত্তথলির পাথর কী খেলে ভালো হবে?
পিত্ত-পাথরে বিশেষ কিছু খাওয়ার দরকার নেই। যেহেতু ফ্যাট যুক্ত খাবার খেলে পিত্তরস নির্গত হয়, পূর্বে ধারণা করা হতো কম ফ্যাট যুক্ত ডায়েট এর মাধ্যমে পিত্ত পাথরের উপসর্গ কমানো যায়। যদিও সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এর ফলে পিত্তের পাথর আরও বাড়তে পারে।
চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খেলে পিত্তের ব্যথা বাড়তে পারে। কিন্তু চর্বি জাতীয় খাবার একেবারে বন্ধ করা হিতে বিপরীত করতে পারে। পিত্ত পাথর হলে স্বাভাবিক পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যাতে সকল পুষ্টি উপাদান সঠিক ভাবে পেতে পারেন।
সবশেষে, এই প্রবন্ধটির মূল তথ্য গুলো আরেকবার জেনে নেওয়া যাক,
-
ল্যাপারোস্কপি পিত্ত পাথরের নির্ভরযোগ্য ও সহজ চিকিৎসা।
-
পিত্ত-পাথর গলানোর ঔষধ দীর্ঘদিন গ্রহণ করতে হয় ও তা ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে।
-
পিত্ত-পাথর জটিলতা সৃষ্টি করলে ওপেন সার্জারির দরকার …
-
চর্বি কম খেলে পিত্ত পাথরে উপকার হয় না, বরং পাথর বড় হতে পারে।
পিত্তথলির পাথর নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন?
প্রশ্ন: পিত্তথলির পাথরের ভেষজ চিকিৎসা কি কার্যকরী?
পিত্ত-পাথর রোগে এলোপ্যাথি ঔষধ আছে যদিও তা দীর্ঘ সময় নেয় ও তেমন কার্যকর না। এ রোগে ভেষজ চিকিৎসার কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো নেই, যদিও আরও গবেষণ প্রয়োজন।
প্রশ্ন: পিত্তথলির পাথর গলানোর উপায় কি?
সার্জারি ছাড়া পিত্ত পাথর গলানোর তেমন কোন সুবিধাজনক উপায় নেই। অনেক ক্ষেত্রে ক্যাথেটার এর মাধ্যমে পিত্তথলির ভেতর ক্যামিক্যল ঢুকিয়ে পাথর গলানো হয়, যদিও এই চিকিৎসা খুব জটিল এবং এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে ও পাথর ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে।
প্রশ্ন: পিত্তথলিতে পাথর হলে কি কি সমস্যা হয়?
পাথর পিত্ত-নালীতে আটকে গেলে পেটের উপরের অংশে তীব্র ব্যথা হয়, সেই সাথে জ্বর, বমি হওয়া, এসব উপসর্গও দেখা যায়। চিকিৎসা না করলে জন্ডিস ও পিত্তে ক্যান্সার হতে পারে।