যে ৬টি কারণে আপনার ব্রণ হতে পারে

ব্রণ সব বয়সের মানুষের কাছেই বিরক্তির কারণ। যদিও তরুণ-তরুণী ও সৌন্দর্য সচেতন মানুষের জন্য এটি যেন চিরশত্রু। এই প্রবন্ধটিতে আমরা ব্রণ কী এবং ব্রণের কারণগুলো সম্পর্কে আলোচনা করব।

ব্রণ - বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের জন্য এক আতঙ্কের নাম। পৃথিবীতে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে জীবনের কোনো না কোনো সময় ব্রণের সমস্যায় ভোগে নি। ঠাট্টা করে কেউ কেউ একে বলে 'তারুণ্যের রোগ'। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯.৪ ভাগ লোক এই সমস্যায় আক্রান্ত। শুনতে খুব সাধারণ বলে মনে হলেও ব্রণ থেকে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা এবং সেই সাথে মানসিক সমস্যাও তৈরি হতে পারে৷ একেবারে প্রতিরোধ করা হয়ত সম্ভব হয়, তবে সাধারণ এই চর্মরোগ পরবর্তীতে যেন বিরাট কোনো সমস্যা তৈরি না করে আজ সেজন্য এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। 

 

ব্রণ আসলে কী? 

ব্রণ মূলত দীর্ঘমেয়াদি একটি স্কিন ডিজিজ। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলা হয় Acne Vulgaris। সাধারণত কিশোর কিশোরীদের মধ্যেই ব্রণের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বিশ্বের অন্তত ৮৫ শতাংশ টিনএজ ছেলে মেয়েরা এই সমস্যায় আক্রান্ত। মুখমণ্ডল, পিঠ এবং কখনো কখনো ঘাড় ও বুকে ব্রণ হতে দেখা যায়। 

 

মুখে ব্রণ কেন হয়? 

সত্যি বলতে ব্রণের শতভাগ নির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কিছু কারণকে এভাবে সনাক্ত করা হয়-

 

১. অ্যান্ড্রোজেন হরমোন

বেশির ভাগ ছেলে মেয়েই বয়ঃসন্ধিকালে এই সমস্যায় আক্রান্ত হয় বলে ধরে নেয়া হয়, এ সময়ে দেহে যে অতিরিক্ত অ্যান্ড্রোজেন জাতীয় হরমোন তৈরি হয় তার প্রভাবেই ব্রণের উৎপত্তি হয়। 

 

২. সিবাম নির্গত হওয়ার পথ বন্ধ হলে

আমাদের ত্বকে অসংখ্য লোমকূপ রয়েছে। লোমকূপের নীচে থাকে Sebaceous Gland নামক এক ধরনের গ্ল্যান্ড। এ থেকে Sebum বা তেল জাতীয় পদার্থ তৈরি হয়। যা লোমকূপ দিয়ে ত্বকের বাইরে বেরিয়ে আসে। Sebum বেরিয়ে আসার এই পথ অতিরিক্ত তেল, মৃত কোষ বা ময়লা জমে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কোনো কারণে যদি এই লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সেখানে ধীরে ধীরে এই তেল জাতীয় পদার্থ জমতে শুরু করে, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয় এবং আস্তে আস্তে তা ব্রণে পরিণত হয়। 

 

৩. মহিলাদের রজঃচক্র বা গর্ভধারণ জনিত সমস্যায়

আগেই বলেছি বয়ঃসন্ধিতে অ্যান্ড্রোজেন জাতীয় হরমোন যেমন টেস্টোস্টেরন ক্ষরণ বেড়ে যায়। এর ফলে Sebaceous Gland অতিরিক্ত কর্মক্ষম হয়ে ওঠে। এবং বেশি বেশি তেল উৎপন্ন করতে থাকে। আবার মহিলাদের রজঃচক্র বা গর্ভধারণ জনিত কারণেও শরীরে বিভিন্ন হরমোনের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। ফলাফল - অতিরিক্ত Sebum এবং পরবর্তীতে ব্রণ। 

 

৪. জেনেটিক

অনেকের জেনেটিক কারণে ব্রণ হতে পারে। বাবা মা দুজনেরই যদি ব্রণের সমস্যা থেকে থাকে, তবে ভবিষ্যতে সন্তানেরও এই সমস্যা হবে তা আগে থেকেই বলে দেয় যায়। 

 

৫. PCOS

যেসব মহিলারা PCOS অর্থাৎ পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম নামক রোগে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রেও ব্রণ একটি কমন স্কিন ডিজিজ। 

 

৬. মানসিক ও অন্যান্য সমস্যা

আবার মানসিক দুশ্চিন্তা, অবসাদ, নিদ্রাহীনতা (ইনসমনিয়া), অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস থেকেও ব্রণ হতে পারে। 

 

ব্রণ থেকে কি কি সমস্যা হতে পারে 

  • ত্বকে স্থায়ী ক্ষতচিহ্ন বা Scarring হতে পারে। 

  • ব্রণ সেরে যাবার পর ত্বক এক শেড কালো বা এক শেড সাদা হয়ে যেতে পারে। একে বলে পিগমেন্টেশন (Pigmentation)।

  • পরবর্তীতে মেলানোমা নামক স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়। মেলানোমা এবং ব্রণ উভয়েরই অ্যান্ড্রোজেন জাতীয় হরমোনের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। তবে মেলানোমা খুব একটা কমন ক্যান্সার নয়। তাই এ ধরনের কেস খুব কমই দেখা যায়। 

  • বয়ঃসন্ধিকালের বিষণ্ণতার পেছনে বড় একটি কারণ ব্রণজনিত সমস্যা। এই বয়সে সঙ্গত কারণেই স্কুল কলেজগামী ছেলে মেয়েদের কাছে বাহ্যিক সৌন্দর্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়। ফলে ব্রণের মত সমস্যা নিয়ে অনেকেই বিব্রত বোধ করেন। এ প্রসঙ্গে আলোচিত কোরিয়ান ড্রামা True Beauty একটি সুন্দর উদাহরণ হতে পারে। চেহারায় ব্রণ থাকার দরুণ নায়িকা লিম জু কিয়ং ঘরে বাইরে যে নিদারুণ সমস্যার মুখোমুখি হয়, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে এই ড্রামা। 

 

শেষকথা

ব্রণ যেহেতু খুব স্বাভাবিক একটি সমস্যা ও শতভাগ সফলভাবে প্রতিরোধ করাও কার্যকরী কোন উপায় নেই, তাই ব্রণ হলে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়া একদমই উচিত নয়্। সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে ব্রণ শুধুই একটা দাগ, যা চাঁদের উপর ক্ষণস্থায়ী মেঘ জমার সাথে তুলনীয়। ব্রণ নিয়ে আমাদের ২য় প্রবন্ধে জানুন, ব্রণের প্রতিকার ও প্রতিরোধ।

 

আরও পড়ুনঃ

Default user image

ডাঃ ঐশ্বি তৃষা সৃষ্টি ঢালী, লেখক, আস্থা লাইফ

আমি ঐশ্বি তৃষা সৃষ্টি ঢালী। বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে অল্প স্বল্প লেখালেখি করতে ভালো লাগে। আস্থা লাইফের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্লগগুলি মানুষের মধ্যে একটু হলেও সচেতনতা তৈরি করবে বলে আমার বিশ্বাস। ভালো লাগে ঘুমাতে, গান শুনতে, নানা রকম খাবার খেতে আর সবচেয়ে ভালো লাগে কথা বলতে।

Related Articles