ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার ১০ কারণ

মোটামুটি সবারই একটা ভ্রান্ত ধারণা হচ্ছে ঘন ঘন প্রস্রাব মানেই ডায়াবেটিস। অনেকে আবার অভিযোগ করেন তার তো ডায়াবেটিস নেই তাহলে বারবার কেন প্রসাব হয়। তবে বারবার প্রস্রাব হওয়ার পেছনে কি কারণই বা রয়েছে?

বারবার প্রস্রাব কেন হচ্ছে সে সম্পর্কে মানুষের সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে শারিরীকভাবে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একথা সত্যি যে ডায়াবেটিসের একদম কমন সিম্পটম হলো বারবার প্রস্রাব হওয়া। এছাড়াও আরো অনেক কারণ দায়ী। অনেকে আবার এই সমস্যাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের অজান্তেই দেহের মারাত্মক ক্ষতি করছেন। আপনি যদি না জানেন বারবার প্রস্রাব কেন হচ্ছে তাহলে তো সমাধান ও করতে পারবেন না। আসুন জেনে নেই ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার পিছনে কি কি কারণ রয়েছে।

 

ঘন ঘন প্রস্রাব আসলে কি?

খুব সহজ করে যদি বলি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বার প্রস্রাব করা অর্থাৎ গড়ে সারাদিনে ৭/৮ বারের বেশি প্রস্রাব হলে তাকে ঘন ঘন প্রস্রাব বলে।

  • প্রতি ঘন্টায় কিংবা ৩০ মিনিট পর পর যদি আপনাকে ওয়াসরুমে যেতে হয় তাহলে সেটি অবশ্যই ঘন ঘন প্রস্রাব হিসেবে বিবেচিত হবে।

  • যেকোন বয়সে এবং যে কারোই হতে পারে এটি তবে ৭০ বছরের বেশি বয়স্কদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি দেখা দেয়।

 

ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ

ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রধান কারণগুলি হচ্ছে-

 

১. প্রোস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধি 

এই ক্ষেত্রে সমস্যাটা পুরুষদের  হয়ে থাকে। জন্মগত ত্রুটির  কারণেে এটি বড় হতে পারে। এছাড়াও  প্রোস্টেট টিউমারের কারণেে মূত্রতন্ত্রের উপরে চাপ পরে যা ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ।

 

২. ডায়াবেটিস 

প্রথমেই উল্লেখ করেছি যে ডায়াবেটিস হলো ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার একদম কমন কারণ। ইনসুলিন দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি না হলে অথবা উৎপন্ন ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে তাকে ডায়াবেটিস বলে। আমারা যে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাই তা ভেঙ্গে গ্লুকোজকে ব্লাডসেলে পাঠায় ইনসুলিন, কিন্তু ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিন গ্লুকোজকে ব্লাডসেলে পাঠাতে পারে না ফলস্বরূপ গ্লুকোজ ব্লাডে জমা হয়। এই জমাকৃত গ্লুকোজ বারবার প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহ থেকে বের হয়ে যায়।

 

৩. প্রেগন্যান্সি

প্রেগন্যান্সির সময় মূত্রের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। উল্লেখ্য এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, ভয় পাওয়ার কিছু নেই তবে জানা দরকার কেন এমন হয়। এর কারণ হচ্ছে ফিটাস মূত্রথলীর উপর চাপ প্রয়োগ করে যার কারণেে মূত্রথলি বেশিক্ষণ মূত্র জমা রাখতে পারে না এবং বারবার প্রস্রাব হয়। এটি সাধরণত গর্ভাবস্থার প্রথম  তিন মাস ও শেষ তিন মাসে বেশি হয়ে থাকে। 

 

মোলার প্রেগন্যান্সি কেন হয়? কেন আক্রান্ত মায়েরা ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকেন?

 

৪. মূত্রনালীর ইনফেকশন 

মূত্রনালীর ইনফেকশন নারীদের একটি কমন সমস্যা। সাধারণত এটি ব্যাকেটিরিয়ার আক্রমণের কারণে হয়। এর ফলে ঘনঘন প্রস্রাব ছাড়াও মূত্র ত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া হতে পারে।

 

৫. ওভার এক্টিভ ব্লাডার 

বিভিন্ন কারণেে ব্লাডার অত্যাধিক সক্রিয় হয়ে যেতে পারে যেমন ইনফেকশন, স্থুলতা, হরমোনাল ইমব্যালেন্স,স্নায়ু তন্ত্রের বিভিন্ন রোগ। ব্লাডার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সক্রিয় হলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।

 

৬. ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস 

এটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যা পেইনফুল ব্লাডার সিন্ড্রোম নামেও পরিচিত। এ রোগের কারণে সঠিকভাবে শনাক্ত করা যায় নি তবে এর ফলে ঘনঘন প্রস্রাব হয়।

 

৭.  সিকেল সেল এনিমিয়া

এটি একধরণের রক্তশূন্যতা যা বংশগত কারণে হয়ে থাকে এটি কিডনি ও প্রস্রাবের ঘনত্বের উপর প্রভাব ফেলে যা ঘন ঘন প্রস্রাবের জন্য দায়ী।

 

৮. ব্লাড ক্যালসিয়াম লেভেল

হাইপোক্যালসেমিয়া যার ফলে রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায় এবং হাইপারক্যালসেমিয়া যার ফলে রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায় এই দুই অবস্থাই কিডনীর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে যার ফলে ইউরিনেশনের পরিমান বেড়ে যায়।

 

৯.ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস

এটি একটি রেয়ার রোগ যার ফলে মূত্র ত্যাগের পরিমান অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।

 

১০. অন্যান্য

এছাড়াও বিভিন্ন কারণ রয়েছে যেমন- 

  • ব্লাডার ক্যানসার,

  • ওভারিয়ান ক্যানসার,

  • রেডিয়েশন থেরাপি, 

  • বিভিন্ন ঔষধ গ্রহণ, 

  • স্ট্রোক ও স্নায়ুতন্ত্রের রোগ।

রোগ ছাড়াও সাধারণ কিছু কারণ রয়েছে যেমন চা, কফি বেশি পান করা,অত্যাধিক তৃষ্ণা লাগা।
 

ঘন ঘন প্রস্রাব নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন?

 

১. মহিলাদের ঘনঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ কী?

মূত্রনালীর ইনফেকশন বা সংক্রমণের কারণে নারীদের ঘনঘন প্রস্রাব বেশী হয়।

সাধারণত পায়ুপথে এবং প্রস্রাবের রাস্তার আশেপাশে প্রচুর ব্যাকটরিয়া থাকে কোন কারণেে যদি সেসব ব্যাকটেরিয়া পায়ুপথে বা প্রস্রাবের রাস্তার ভিতরে প্রবেশ করে তখন তাকে ইউনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) যাকে বাংলায় মূত্রনালীর সংক্রমণ বলা হয়। ইউটিআই নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কেননা নারীদের ইউরেথ্রেরা ছোট হওয়ায় খুব সহজেই ব্যবকটেরিয়া আক্রমণ করে।

এছাড়া অন্যান্য যেসব কারণে মেয়েদের ঘনঘন প্রস্রাব হয়- 

  • প্রেগন্যান্সি

  • জরায়ুতে টিউমার

  • মেনোপজের কারণে 

  • এস্ট্রোজেন হরমোন লেভেল কমে গেলে।

  • ওভারিয়ান ক্যান্সার থাকলে

 

২. পুরুষদের ঘনঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ কী?

পুরুষদের সাধারণত প্রস্টেট বড় হয়ে গেলে এ সমস্যা দেখা দেয় এছাড়াও প্রস্টেটে ব্যকটিরিয়ার সংক্রমণ ও প্রস্টেট ক্যান্সারের কারণেে বারবার প্রস্রাব হয়।

 

৩. পানি থেকে প্রস্রাব হতে কতক্ষণ সময় লাগে?

প্রস্রাবে অতিরিক্ত তরল এবং বর্জ্য পদার্থ থাকে যা শরীরের কোন কাজে আসে না। শরীরের পানিকে প্রস্রাবে পরিণত করতে কতক্ষণ সময় লাগবে সেটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। আমরা যে খাদ্য এবং পানি গ্রহণ করি তা কিডনির মাধ্যমে পরিশোধিত হয়ে রক্তে এবং অতিরিক্ত বর্জ্য ও তরল নলের মাধ্যমে মূত্রথলিতে জমা হয়। প্রস্রাব তৈরির প্রক্রিয়াটি ঘটতে কতক্ষণ সময় লাগে তার সাথে কিডনির কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে। একজন ব্যক্তি যে পরিমাণ পানি এবং খাদ্য ও বিভিন্ন মেডিসন গ্রহণ করে তার উপর ভিত্তি করে প্রস্রাব তৈরী হয়।

 

৪. বারবার প্রস্রাবের বেগ পায় কেন?

অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রস্রাব করার পরপরই আবার প্রস্রাবের জন্য বাথরুমে যেতে হয় এটি সাধরণত মূত্রনালীর সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।

 

৫. কতক্ষণ পরপর প্রস্রাব করা স্বাভাবিক? 

সাধারণত ৩/৪ ঘণ্টা পরপর প্রস্রাব করা উচিত। প্রস্রাবের বেগ আসলে চেপে রাখ উচিত নয়।

 

পরিশেষে 

আপনার উপরিউক্ত যে  কোন কারণে বারবার প্রসাব হতে পারে। প্রথমেই কি কারণে সমস্যা হচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে। সমস্যা দেখা দিলে ভয় না পেয়ে বরং ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

 

 

আরও পড়ুনঃ

Default user image

মুশফিক জাহান, লেখক, আস্থা লাইফ

পড়াশোনা করছি গভার্নমেন্ট কলেজ অফ এপ্লাইড হিউম্যান সাইন্সে খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান নিয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি পুষ্টি নিয়ে টুকটাক লেখালেখি করি মূলত জনগনের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এছাড়াও বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছি। অবসর সময়ে গল্পের বই পড়তে ভালোবাসি।

Related Articles