ঘন ঘন প্রস্রাব থেকে মুক্তির উপায় কী?
ঘন ঘন প্রস্রাব শুধু বিরক্তিকরই নয় এটি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকরও বটে। কিছু বদ অভ্যাস ও নানা শারিরীক জটিলতার কারণে সৃষ্ট এই সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব বাড়িতে বসেই।
ঘন ঘন প্রস্রাব শুধু শারিরীক যন্ত্রণাই দেয় না মানসিক অশান্তিরও কারণ হয়ে দাড়ায়। কেউ কেউ আবার হতাশ হয়ে পরেন কিভাবে এর সমাধান করবেন কোন ডাক্তার এর কাছে যাবেন বা ঘরোয়া কোন সমাধান আছে কিনা এসব ভেবে। এই সকল প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো এই লেখনীতে।
ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিরোধে করণীয় কী?
ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিরোধে প্রথমেই দরকার সচেতন হওয়া। কয়েকটি ছোট ছোট ব্যাপারে সচেতন হলেই এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব যেমন, খাদ্যাভাস ও ব্যায়াম।
খাদ্যাভ্যাস
-
বিকেলের পর কিছু কিছু খাবার সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দিতে হবে যেমন চা, কফি, জুস, টমেটো ও টমেটো থেকে তৈরিকৃত খাবার, আর্টিফিশিয়াল সুইটনার ইত্যাদি।
-
এছাড়াও ঘুমানোর ২ /৩ ঘন্টা আগে রাতের খাবার খাওয়া উচিৎ। উল্লেখ্য এই অভ্যাস গড়ে তোলা সর্বোপরি স্বাস্থ্যের জন্যই ভালো।
-
নিয়মিত ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাদ্য গ্রহন করতে হবে। যেমন-
-
বিভিন্ন বীজ যেমন চিয়া সিড,বাদাম,ওটস,বিভিন্ন ডাল,মটরশুটি,
-
শাকসবজি যেমন ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, বিটরুট,
-
ফলমূল যেমন কলা,আপেল স্ট্রবেরী,অ্যাভোকেডো ইত্যাদি।
-
আঁশ জাতীয় খাবারের ঘাটতি হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় আর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে মূত্রথলীর উপর চাপ পরে যার ফলে বারবার প্রস্রাবের বেগ আসে।
আঁশযুক্ত খাবার কি কি? কেন আশযুক্ত খাবার খাবেন?
কেগেল ব্যায়াম
কেগেল ব্যায়াম ইউরিনারি ভারসাম্যহীনতা প্রতিরোধ ও অসমাঞ্জস্যতা নিয়ন্ত্রণে ভুমিকা রাখে, পেলভিক ফ্লোর পেশির সমস্যা দূর করে ও শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এছাড়াও জরায়ু ও মূত্রথলির সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। পেলভিক ফ্লোর শব্দটি অনেকের কাছেই অপরিচিত। পেলভিক ফ্লোর হচ্ছে এমন কিছু পেশি যেগুলো প্রস্রাবের ফ্লো অর্থাৎ প্রস্রাবের বেগ বন্ধ করতে সাহায্য করে।
কেগেল ব্যায়াম কিভাবে করবেন?
কেগেল ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই পেলভিক ফ্লোর শনাক্ত করতে জানতে হবে।
-
ব্যায়ামের শুরুতে সোজা হয়ে বসে পা টানটান করে রাখতে হবে। বসার সময় পিঠ অবশ্যই সোজা থাকবে
-
এরপর স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিতে হবে এবং পেলভিক ফ্লোর শনাক্ত করে ৩ সেকেন্ড সংকুচিত করে রাখতে হবে। এরপর ৩ সেকেন্ড প্রসারণ করতে হবে অর্থাৎ সংকুচিত পেশি ছেড়ে দিতে হবে।
-
এভাবে একটানা ১০ বার পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
-
দিনে দুই থেকে তিন বার করতে পারেন। ব্যায়ামটি সকালে এবং রাতে অবশ্যই করা উচিত। খেয়াল রাখতে হবে এই ব্যায়াম করার সময় মূত্রথলি যেন খালি থাকে।
-
যখন আপনি পুরোপুরি শিখে ফেলবেন তখন ৫ সেকেন্ড ধরে সংকোচন ও ৫ সেকেন্ড ধরে প্রসারণ করবেন এতে করে পেলভিক ফ্লোর শক্তিশালী হবে এবং ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিরোধে সহায়তা করবে।
কিভাবে ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিকার করা যায়?
ঘন ঘন প্রস্রাব বন্ধ করার জন্য প্রথমেই জানতে হবে ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হচ্ছে। সাধারণত চিকিৎসক ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ ও লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
-
তরল খাবার গ্রহণ সীমিত করতে হবে।
-
ইউরিনারি ট্রাক্ট অর্থাৎ মূত্রনালীর ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে।
-
ডায়াবেটিস ও প্রস্টেট গ্রন্থিতে সমস্যা থাকলে অর্থাৎ রোগ অনুযায়ী সমস্যা সমাধান করতে হবে এবং খাদ্যাভাস ও ঔষধ গ্রহণ করতে হবে।
-
চিকিৎসক পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন থেরাপি নেয়া যেতে পারে।
-
ঘন ঘন প্রস্রাব বন্ধ করার কার্যকরী একটি উপায় হচ্ছে কেগেল ব্যায়াম।
উল্লেখ্য চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত এর কোনটাই নিজে নিজে গ্রহন করা যাবে না। এর প্রতিকার মূলত শারিরীক অবস্থার উপর নির্ভর করবে। তাই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়াও কিছু খাবার গ্রহনের ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা কমতে পারে। যেমন-
জিরা
এটি সাধরণত আমরা মশলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। এক গবেষণায় দেখা গেছে জিরা মুত্রনালীর ইনফেকশন দূর করতে সহায়তা করে। তাই মূত্রনালীর সংক্রমণের কারণে যদি ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে জিরা উপকারে আসবে। এখন নিশ্চয়ই আপনাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে জিরা কিভাবে খাবেন বা মশলা হিসেবে ব্যবহার করলেই উপকার পাবেন কিনা। এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে এক গ্লাস নরমাল পানিতে সারারাত এক চা চামচ পরিমাণ জিরা ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে পানিটুকু গ্রহণ করতে হবে।
তুলসি পাতা ও মধু
আবার ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণে যদি হয় মূত্রনালীর সংক্রমণ তবে তুলসি পাতার রস ও মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
দীর্ঘদিন ধরে যদি সারাদিন অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় ৭/৮ বারের বেশি প্রস্রাব হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। বারবার প্রস্রাবের পাশাপাশি আরো বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিলে বা সমস্যা হলে দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যেমন-
প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলে।
-
জ্বর হলে ও বমি হলে
-
ক্লান্তি ও দূর্বলতা অনুভব করলে
-
বারবার প্রস্রাব ও রাতের বেলায় ৩ বারের বেশি প্রস্রাব হলে
-
প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হলে, প্রস্রাব ঘোলাটে দেখালে
-
প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হলে
-
প্রস্রাব করার সময় ব্যথা অনুভব হলে ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে
-
ক্ষুধা কমে গেলে ও দ্রুত ওজন হ্রাস পেলে
-
তলপেটে ব্যথা অনুভব হলে
ঘন ঘন প্রস্রাব নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন?
১. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ কী?
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার ১০ কারণ
২. লিভারে কোন সমস্যা থাকলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়?
লিভারের সমস্যার সাথে ঘন ঘন প্রস্রাবের কোন সম্পর্ক নেই।
৩. গর্ভাবস্থায় কি ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক?
হ্যা।
৪. কেগেল ব্যায়াম কি ঘন ঘন প্রস্রাব প্রতিরোধে সক্ষম?
হ্যা।
পরিশেষে
বেশিরভাগ সময়ই ঘন ঘন প্রস্রাবের ফলে তেমন শারিরীক জটিলতা দেখা দেয় না। ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করতে হলে আগে জানতে হবে কেনো সমস্যা হচ্ছে কারণ শারিরীক অবস্থার উপর চিকিৎসা নির্ভর করে।