মাইগ্রেন সূত্রপাতের ৮টি কারণ

মাইগ্রেনের মাথাব্যথা কিভাবে শুরু হয় তা হয়ত আপনি জানেন কিন্তু মাইগ্রেন কেন হয় তা আপনি কখনও খেয়াল করেন নি! মাইগ্রেন সূত্রপাত হওয়ার জন্য এমন কিছু ফ্যাক্টর (মাইগ্রেন ট্রিগার) কাজ করে যা জানলে হয়ত আপনি মাইগ্রেনের পুনরাবৃত্তি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

মাইগ্রেন নিয়ে আমাদের প্রথম লেখায় আমরা মাইগ্রেন কি? মাইগ্রেনের ৪টি স্টেজ কি কি? নিয়ে বিস্তারিত আলোচলা করেছিলাম। আজকের লেখায় আমরা মাইগ্রেনের ট্রিগার অর্থাৎ, মাইগ্রেন সূত্রপাত হতে পারে এমন ৮টি কারণ নিয়ে জানব। আশা করি এই লেখাটি আপনার মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে কার্যকারী ভূমিকা পালন করবে।

মাইগ্রেনের ব্যথা কেন হয়?

আসলে চিকিৎসকরা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত নন যে মাইগ্রেন মাথাব্যথার কারণ কী, তবে তারা মনে করেন মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু ক্যামিক্যল বা রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্যহীনতা এতে ভূমিকা পালন করতে পারে।

তবে ব্রেইনস্টেমের পরিবর্তন এবং ট্রাইজেমিনাল নার্ভের সাথে এর ইন্টার‍্যাকশন মিথস্ক্রিয়া, মাইগ্রেনের মাথাব্যথার জন্য মুখ্য কারণ হতে পারে। এতে মস্তিষ্কের বিভিন্ন ক্যামিক্যলের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, যাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সেরোটোনিন।

  • ব্রেইনস্টেম হল মস্তিষ্কের নীচের অংশ যা আপনার আপনার মস্তিষ্ককে আপনার মেরুদণ্ডের সাথে সংযুক্ত করে।

  • মস্তিষ্কের ট্রাইজেমিনাল নার্ভ আপনার চোখ এবং মুখের চলাচলে সহায়তা করে। এটি আপনাকে মুখের বিভিন্ন সংবেদন অনুভব করতে সহায়তা করে এবং ব্যথার জন্য একটি প্রধান পথ হিসেবে কাজ করে। 

  • সেরোটোনিন একটি বহুমুখী নিউরোট্রান্সমিটার যা আপনার ঘুম, ক্ষুধা এবং স্মৃতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই নিউরোট্রান্সমিটারটি সুস্থতা, আনন্দের ও বিষণ্ণতার অনুভূতিকেও প্রভাবিত করে এবং আপনার স্নায়ুতন্ত্রের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

মাইগ্রেন ট্রিগার বা সূত্রপাতের ৮টি কারণ

মাইগ্রেনের ট্রিগার হলো যে যে ঘটনা বা ঘটনা প্রবাহ মাইগ্রেন অ্যাটাকের সূচনা করে থাকে। মাইগ্রেন সম্পর্কে যদি শুধু একটা জিনিস জানতে হয়, শুধু ট্রিগার নিয়ে জানুন। আপনার মাইগ্রেনের ট্রিগার যদি বুঝতে পারেন, মাইগ্রেন এর পুনরাবৃত্তি অনেকাংশেই আটাকাতে পারবেন। যদিও ক্রোনিক মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে এটি বুঝতে পারা ও নিয়ন্ত্রণ তত সহজ নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ জরুরী। মাইগ্রেন অ্যাটাক সাধারণত ট্রিগার হওয়ার ছয় ঘন্টা থেকে দুই দিনের মধ্যে যে কোনও সময়ে শুরু হতে পারে।

চলুন মাইগ্রেনের সাধারণ ট্রিগারগুলি সম্পর্কে জানা যাক।

১. অনিয়মিত ও অপর্যাপ্ত ঘুম

ঘুম আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষয়পূরণ ও সঠিকভাবে কাজ করার জন্য সবচেয়ে জরুরী, তাই এটি আশ্চর্যের নয় যে ঘুমের সমস্যাই হলো মাইগ্রেনের সবচেয়ে সাধারণ ট্রিগার। একজন মাইগ্রেন রোগীর নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুমানো প্রয়োজন। ঘুমের ঘাটতি যেমন মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে, তেমনি, অতিরিক্ত ঘুমও মাইগ্রেনের সূত্রপাত করতে পারে।

২. হরমোনের পরিবর্তন

প্রতি ৫ জন নারীর ১ জন মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগে থাকেন। এর জন্য দায়ী হলো নারীদের হরমোনের পরিবর্তন। সাধারণত ঋতুচক্র ও প্রেগনেন্সির সময় এস্ট্রোজেন নামক হরমোনের অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, যা মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে। অনেক সময় হরমোন থেরাপি ও বার্থ কন্ট্রোল পিলও মাইগ্রেন ট্রিগার করে থাকে।

৩. স্ট্রেস বা মানসিক চাপ

মাইগ্রেনের একটা সাধারণ ট্রিগার হলো স্ট্রেস। দেখা যায় কাজের চাপ বা কোন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা যখন আসে তখনি মাইগ্রেনের সমস্যা তৈরি হয়। স্ট্রেসের কারণে মস্তিষ্কে কিছু ক্যামিক্যল রিলিজ হয় ও রক্ত সঞ্চালনে পরিবর্তন হয়, যা মাইগ্রেনের সূচনা করতে পারে। তাই একবারে বেশি চাপ নেওয়া যাবে না। চাপ যেন না নিতে হয়, সে অনুসারে সব কাজ সারতে হবে।

৪. খাবার

কিছু কিছু খাবারও মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে। যেমন, ক্যাফেইন ( কিছু মানুষের ক্ষেত্রে), কৃত্তিম চিনি, টেস্টিং সল্ট, চকলেট, অ্যালকোহল ইত্যাদি। মাইগ্রেন আক্রান্ত ব্যক্তির নিজস্ব খাবারের ট্রিগার চিনে রাখা জরুরী।

৫. পানি স্বল্পতা

পানি স্বল্পতা মাইগ্রেনের একটি কারণ হতে পারে। পানি স্বল্পতার জন্য মস্তিষ্কের ধমনিগুলো সংকোচিত হয়ে যায় যার ফলে শুরু হতে পারে মাইগ্রেন। দৈনিক ২-৩ লিটার পানি পান করলে এই সমস্যাটা দূর করা যায়।

৬. পরিবেশের প্রভাব

পরিবেশের প্রভাবেও মাইগ্রেন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। রোদে বেশি সময় অবস্থান করা, প্রচণ্ড গরম বা শীত, উচ্চ শব্দ, উজ্জ্বল আলো ইত্যাদি মাইগ্রেনের সূচনা করতে পারে। ক্যাপ, ছাতা, সানগ্লাস বা শব্দ প্রতিরোধক হেডফোন দিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়। 

৭. অতিরিক্ত পরিশ্রম

অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমও অনেক সময় মাইগ্রেন ট্রিগার করে থাকে। ব্যায়ামের কারণেও এটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। ব্যায়ামের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে ব্যায়াম করা বাড়াতে হব। ও মানসিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিরতি ও পানি পান জরুরী।

৮. ব্যথা ও অ্যালার্জির ঔষধ

ব্যথা ও এলার্জির ঔষধ অনেক সময় মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে। Aspirin, Ibuprofen, Acetaminophen, Naproxen ও ক্যাফেইন সমৃদ্ধ ব্যথানাশক এক্ষেত্রে দায়ী হতে পারে।

মাইগ্রেনের ঝুঁকির কারণ

অন্যান্যদের থেকে আপনার মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হওয়ার কারণগুলি হচ্ছে-

আপনার জিন

আপনার পরিবারের কেউ যদি মাইগ্রেনের মাথাব্যথায় ভুগে থাকেন, তবে আপনার মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।

আপনার বয়স

মাইগ্রেনের মাথাব্যথা আপনার জীবনের যেকোন সময়ে হতে পারে। তবে কিশোর বয়সে আপনার প্রথম মাইগ্রেন অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাধারণত মাইগ্রেন মাথাব্যথা  আপনার বয়সের ৩০-এর দশকে শীর্ষে থাকে এবং পরবর্তীতে যত বয়স বাড়ে তত কম তীব্র হতে থাকে।

আপনার লিঙ্গ

পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের প্রায় তিনগুণ বেশি মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

শেষকথা

যদিও আপনি মাইগ্রেনের ট্রিগারগুলিকে পুরোপুরি প্রতিরোধ করতে সক্ষম নাও হতে পারেন, কিছু সাধারণ জিনিস যেমন, নিয়মিত ভালো মানের ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস, ব্যায়াম এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এই ট্রিগারগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তবে মাইগ্রেন শুরু হওয়ার আগেই তা থামাতে সাহায্য করতে পারে।

 

মাইগ্রেন নিয়ে আমাদের অন্যান্য লেখাগুলি-

Default user image

দিগ্বিজয় আজাদ, লেখক, আস্থা লাইফ

আমি শিল্প সাহিত্যের লোক, একই সাথে বিজ্ঞানের কৌতুহলী ছাত্র। লিখালিখি আঁকাআঁকি করতে ভালোবাসি, পড়ালেখা করছি মাইক্রোবায়োলোজি নিয়ে। আস্থা ব্লগে কাজ করতে পেরে চরিত্রের দুটো দিকই যেন সমানভাবে সন্তুষ্ট হচ্ছে। চেষ্টা করি কত সহজে আপনাদের সামনে প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করা যায়। এবং এই প্রক্রিয়ায় যদি কেউ লাভবান হন, বা কিছু শিখতে যদি পারি সেই আমার পরম প্রাপ্তি। ব্যক্তিগত জীবনে শখের মিউজিশিয়ান। নেশার মধ্যে বই পড়া ও ঘুরে বেড়ানো।

Related Articles