চিনি খেলে ডায়াবেটিস হয়? জেনে নিন প্রচলিত এমন ২১ টি ভুল ধারণা!
টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিক কি এবং এগুলো সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা, ডায়াবেটিক রোগীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত ভ্রান্ত ধারণা
বর্তমান সময়ের সর্বাধিক পরিচিত দুরারোগ্য ব্যাধির নাম ডায়াবেটিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটিকে অতি বিস্তৃতির কারণে মহামারি হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। অত্যধিক বিস্তার আর ভয়, এই রোগ সম্পর্কে মানুষের মনে তৈরি করেছে অনেক ভ্রান্ত ধারণা। কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল? এই ব্যাপারগুলোতে সঠিক ধারণার বড্ড অভাব। অথচ ডায়াবেটিক রোগের ঝুঁকি, লক্ষণ এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনের সাথে এর সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রভাবিত করতে পারে আপনার স্বাস্থ্য ও আপনার জীবনকে। ডায়াবেটিক সম্পর্কে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা এই রোগ এবং রোগীর সমস্যা অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে। আসুন জেনে নেওয়া যাক ডায়াবেটিক সম্পর্কে তেমনই কয়েকটি প্রচলিত ধারণা যেগুলো একেবারেই সঠিক নয়।
১. পরিবারের কারো ডায়াবেটিক নেই তাই আমার হবার চিন্তা নেই
পরিবারের কারো ডায়াবেটিক থাকাটা যদিও ডায়াবেটিক হবার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, কিন্তু এটাই একমাত্র কারণ নয়। এছাড়াও ডায়াবেটিক হবার জন্য আরও অনেক বিষয় কাজ করে।
টাইপ-১ এবং টাইপ-২, দুই প্রকার ডায়াবেটিকের ভিন্ন ভিন্ন কারণে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
টাইপ-১ঃ এই প্রকার কে বলা হয় জুভেনাইল ডায়াবেটিক। এই প্রকারের ডায়াবেটিকে রোগীর অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন তৈরির পরিমাণ খুবি অল্প বা কখনো কখনো একেবারেই হয় না। এর সাধারণ কারণ হতে পারে-
-
পারিবারিক
-
অগ্ন্যাশয়ের রোগ
-
শরীরের অন্যত্র ঘা বা অন্য কোনো রোগ যার কারণে অগ্ন্যাশয়ের ক্ষতি হতে পারে
-
অন্যান্য হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি
টাইপ-২ঃ এক্ষেত্রে শরীর তার নিজের ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না যার ফলে শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে না। পারিবারিক ও জিনগত কারণ ছাড়া আর যেসব কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিক হয়-
-
স্থূলতা বা মাত্রাতিরিক্ত ওজন
-
পরিশ্রমহীন জীবনযাপন
-
বিভিন্ন সংক্রমণ রোগের বিস্তার
-
বিটা কোষ (ইনসুলিন তৈরি করে যে কোষ) -এর কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া
এছাড়াও ডায়াবেটিকে আক্রান্ত হবার আরো কিছু কারণ হল-
-
প্রাক-ডায়াবেটিক অবস্থাঃ রক্তে সুগার লেভেল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি, কিন্তু ডায়াবেটিক হিসাবে গণ্য হবার মত বেশি নয়। এ অবস্থায় ডায়াবেটিক হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
-
জাতিগতঃ হিস্পানিক বা লাতিন আমেরিকান, আফ্রিকান আমেরিকান, নেটিভ আমেরিকান, এশিয়ান আমেরিকান, প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপবাসী এবং আলাস্কার স্থানীয় সম্প্রদায়ের লোকেদের মাঝে ডায়াবেটিকের প্রকট বেশী।
-
পূর্বে গর্ভকালীন ডায়াবেটিক থাকলে পরবর্তীতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
-
মহিলাদের পলিসিস্টিক ওভারী সিন্ড্রোম (হরমোনজনিত সমস্যা যার কারণে মাসিক নিয়মিতভাবে হয় না) থাকলে ডায়াবেটিকে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
-
বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক সময় ডায়াবেটিক হবার সম্ভাবনা থাকে।
২. টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস আসলে একই
টাইপ ১ এবং টাইপ ২ উভয় প্রকার ডায়াবেটিক ইনসুলিনের সাথে সম্পর্কিত হলেও এরা রোগ হিসাবে ভিন্ন প্রকারের।
টাইপ ১ ডায়াবেটিক এর ক্ষেত্রে শরীর ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। শিশুদের মাঝে এই রোগ বেশি দেখা যায়। ৫-১০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে টাইপ ১ ডায়াবেটিস দেখা যায় এবং নিয়মিত ইনসুলিন নেবার প্রয়োজন পড়ে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিক রোগী তাদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি করে বটে, কিন্তু তাদের শরীরের কোষ সেই ইনসুলিনকে যথাযথভাবে ব্যাবহার করতে পারেনা। স্থুলতা বা কম নড়াচড়া করা ইত্যাদি এই টাইপ ২ রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঔষধের প্রয়োজন হয়। ক্ষেত্র বিশেষে ইনসুলিন নেবারও প্রয়োজন হতে পারে।
৩. ডায়াবেটিক হলে সকল প্রকার চিনি খাওয়া বন্ধ করতে হবে
ধারণাটি ভুল। ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হয় যার মধ্যে চিনিও থাকে। প্রয়োজনে চিনি খাওয়া নিষিদ্ধ নয় তবে যেন সীমিত হয়। মনে রাখা দরকার যে চিনি বিভিন্ন খাদ্যের মাঝেই লুকিয়ে থাকে যেমন, পাউরুটি, টমেটো কেচাপ, সালাদ, পাস্তা সস ইত্যাদি, তাই হয়ত আমরা নিজের অজান্তেই অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করে ফেলছি।
৪. বেশি বেশি চিনি খেলে ডায়াবেটিস হবে
এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ডায়াবেটিস হবার পেছনে অনেকগুলো জটিল ব্যাপার কাজ করে। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত সরল শর্করা গ্রহণ, চর্বি জাতীয় খাবার ইত্যাদি টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া ডায়াবেটিস হবার পেছনে বংশগত ব্যাপার, বয়স, রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা এবং স্থবির জীবন যাপন এই ব্যাপারগুলো কাজ করে। অতএব চিনি বেশী খেলে ডায়াবেটিক হয় না বরং ডায়াবেটিক হলে চিনি সীমিত খেতে হয়।
৫. নিজের পছন্দমত খাবার খাওয়া যাবে না
ডায়াবেটিস হলে খাওয়ার বেপারে সতর্কতা মেনে চলতে হয় বটে, তবে তার মানে এই নয় যে নিজের সব পছন্দের খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। বরং পছন্দের খাবার না পেয়ে শরীরে ক্ষুধা তৈরি হয়। তাই এর সমাধান হিসাবে নিয়মিত খাদ্য তালিকাতে আপনার পছন্দের খাবারটিকেও অন্তর্ভুক্ত করুন, তবে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শমতে।
৬. এক দু’বেলা না খেলে ওজন কমবে এবং ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রনে থাকবে
সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অবশ্যই তিন বেলা খাবার খেতে হবে। এক বেলা না খেলে যেমন রক্তে শর্করা অনিয়মিতভাবে কমে যাবে, সেই সাথে পরের বেলা অতিরিক্ত ক্ষুধা তৈরি করবে। তাই স্বাভাবিক পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে। আর ওজন কমাতে ব্যায়াম করুন, সাথে আঁশ সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খান, যা আপনাকে দীর্ঘ সময় ক্ষুধা মুক্ত রাখবে।
৭. কেবল বেশি ওজন বা মোটা হলেই ডায়াবেটিক হয়
টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর সাথে বেশি ওজন বা স্থুলতার গভীর সম্পর্ক থাকলেও, তার মানে এই নয় যে সকল ডায়াবেটিক রোগী অতি ওজনধারী বা মোটা। আবার সকল অতি ওজনধারী বা স্থুল ব্যাক্তির ডায়াবেটিস হবে এমনটাও নয়। আর টাইপ ১ ডায়াবেটিক সাথে স্থুলতার কোন সম্পর্ক নাই।
৮. ডায়াবেটিক হলে নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হবে
টাইপ ২ ডায়াবেটিক ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিক এর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এই প্রকারের ডায়াবেটিক হলে সাধারণত জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে বা প্রাথমিক ধাপে ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে ঔষধে কাজ না হলে ইনসুলিন ব্যাবহার করা হয়।
৯. ডায়াবেটিক রোগী রক্তদান করতে পারবে না
পূর্বে ইনসুলিন তৈরি হতো গরু থেকে যাকে বেভিন ইনসুলিন বলা হয়। বেভিন ইনসুলিন ব্যাবহার করলে রক্ত দেয়া যায় না। তবে এখন আর বেভিন ইনসুলিন ব্যাবহার করা হয় না। তাই যেকোনো ডায়াবেটিক রোগী সুস্থ অবস্থায় রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক থাকলে রক্ত দিতে পারবেন।
১০. ডায়াবেটিস আক্রান্ত মহিলাদের গর্ভধারণ করা উচিত নয়
এটা ঠিক যে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মহিলাদের গর্ভধারণে ঝুঁকি থাকে কিন্তু তাই বলে গর্ভধারণ করা যাবে না এই কথাটা একদম সঠিক নয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে এবং ঠিকমতো পূর্বপ্রস্তুতি নিলে ডায়াবেটিক আক্রান্ত মহিলার গর্ভধারণ করতে কোন বাধা নেই বা সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে কোন সমস্যা নেই। এর জন্য যেসব নারী সন্তান নিতে ইচ্ছুক কিন্তু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের গর্ভধারণের কমপক্ষে তিন মাস আগ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। তা না হলে ডায়াবেটিসজনিত বিভিন্ন জটিল রোগ দেখা দিতে পারে যেমন কিডনি, হার্ট, স্নায়ু, চোখ ইত্যাদি অঙ্গে সমস্যা দেখা দিবে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের গর্ভধারণের জন্য মানসিক প্রস্তুতির পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস, সঠিক ওজন এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণ এ মনোযোগ দিতে হবে। যেসব নারীরা সঠিকভাবে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তাদের গর্ভকালীন জটিলতার ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অনেক্ষেত্রে গর্ভপাত সহ প্রসবকালীন অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
১১. গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিকে আক্রান্ত থাকলেও সন্তান জন্মের পর মায়েরা ভাল হয়ে যায়
একজন গর্ভপতি মা তার গর্ভাবস্থার কোনও একটা সময় যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় তবে তাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা জেসটেশনাল ডায়াবেটিস মেলিটাস (Gestational Diabetes Mellitus) বলে। গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার জীবনের প্রথমবারের মতো এই ডায়াবেটিস দেখা দেয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সাময়িক, সন্তান জন্মের পর সাধারণত আর থাকে না। তবে প্রসবের পর কোনও রোগী যদি সঠিক ভাবে খাদ্যাভ্যাস পরিচালনা অথবা জীবন যাপন নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পরিসংখ্যান বলছে গর্ভকালীন ডায়াবেটিক আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে ৫০-৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে সন্তান জন্মের পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিকে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
১২. গর্ভাবস্থায় ইনসুলিন নিলে ভ্রূণের ক্ষতি হয়
গর্ভাবস্থায় ইনসুলিন নিলে ভ্রূণের ক্ষতি হয় এই কথাটা পুরুপুরি অসত্য। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরণের হরমোন ইনসুলিন এর কাজকে ব্যাঘাত ঘটায় যার ফলে ইনসুলিন রক্তের শর্করাকে শরীরের অন্যান্য অংশে নিয়ে যেতে পারে না। এর ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। রক্তে উচ্চ শর্করার কারণে ভ্রূণের ক্ষতি হতে পারে। একারণে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে ইনজেকশনের মাধ্যমে অতিরিক্ত ইনসুলিন দিতে হয়।
১৩. ডায়াবেটিক রোগী গম খেতে পারবে কিন্তু ভাত খেতে পারবে না
গম বা চাল, দুটোই শর্করা জাতীয় এবং প্রায় একি উপায়ে রক্তের শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তবে এটা ঠিক যে গম শষ্য দানা যুক্ত খাবার যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু তাই বলে গর্ভপতি মা ভাত খেতে পারবে না তা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং ডায়াবেটিস রোগীদের গম বা চাল উভয় হিসাব করে খাওয়া উচিত।
১৪. ডায়াবেটিক হলে ক্যান্ডি বা চকলেট খাওয়া যাবেনা
ক্যান্ডি বা চকলেটে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে যা রক্তের শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আর নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ক্যান্ডি, চকলেট বা মিষ্টি কোনোকিছু খেতে কোনও বাধা নেই, তবে অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে।
১৫. ডায়াবেটিক রোগীর পাস্তা, রুটি, আলু বা নুডুলস খাওয়া যাবে না
স্টার্চ জাতীয় খাবার প্রাকৃতিকভাবে শরীরে জমা হয় এবং গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। তাই এ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা ভাল। কিন্তু সামান্য পরিমাণে খেলে কোনও বাধা নেই।
১৬. বেশি ব্যায়াম ডায়াবেটিক রোগীর রক্তের সুগার লেভেল বেশি কমিয়ে দেয় তাই এটা করা যাবেনা
ধারণাটি ভুল। বিশেষ করে যারা ইনসুলিন নেন তাদের অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করা আবশ্যক। তবে বেশী ব্যায়াম যদি অন্য কোন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে অথবা শরীরকে ক্লান্ত করে দেয় সেক্ষেত্রে ব্যায়াম কম করাই ভাল।
১৭. ইনসুলিনের কারণে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়
ইনসুলিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্যান্য ডায়াবেটিক ঔষধের তুলনায় কম। এমনকি এটি অন্য ঔষধের সাথেও দৃশ্যত কোনও ক্রিয়া করে না। বরং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
১৮. ইনসুলিনে ওজন বাড়ে
এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মাঝেও বিতর্ক আছে। অনেক ক্ষেত্রেই ইনসুলিন নেয়া শুরু করার পর পর ওজন বৃদ্ধি হয়। অনেকেই এর জন্য ইনসুলিন কে সরাসরি দায়ী করেন। আবার অনেকের মতে ইনসুলিন নেয়ার ফলে কিছু ক্যালরি শরীরে জমা হয় যা সাধারণভাবে প্রসাবের সাথে বের হয়ে যাওয়ার কথা, ফলে ওজন বৃদ্ধি পায় না।
১৯. ডায়াবেটিস রোগীরা বিষণ্ণতা বোধ করেন
আসলে যে কোনো রোগ হলে একটা মন খারাপ ভাব চলে আসে। সাধারণের তুলনায় ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিষণ্ণতার মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। এছাড়া রক্তের চিনির পরিমাণ মানসিক অবস্থাকে খানিকটা প্রভাবিত করতে পারে। তবে নিয়মিত সাস্থ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বিষণ্ণতা অনেকাংশে কেটে যায়।
২০. আমার পরীক্ষার দরকার নাই, আমি বুঝি কখন আমার ডায়াবেটিস বাড়ে
ডায়াবেটিস রোগীদের মাঝে এই ধারণাটা বেশি কাজ করে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে, রক্তে শর্করার বৃদ্ধি অনুভব করে বুঝতে পারা প্রায় অসম্ভব। সুগার কমে যাওয়ার কিছু উপসর্গ থাকলেও সেটা কি পরিমাণে কম তা অনুভব করা সম্ভব না। অন্যদিকে কিছু রোগী সুগার দ্রুত বাড়লে অসুস্থ বোধ করেন, কিন্তু দীর্ঘ সময় নিয়ে সুগার বাড়লে তারা খুব কম সময়ই টের পান।
২১. টাইপ-২ ডায়াবেটিক কম ক্ষতিকর
এই ধারণাটি অনেক বেশি প্রচলিত কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল। কোনও ডায়াবেটিকই দুর্বল বা কম ক্ষতিকর নয়। সঠিকভাবে প্রতিকার না করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিকও প্রাণঘাতী হতে পারে। সঠিক নিয়ন্ত্রণের কারণে ঝুঁকি কমে গেলেও তাতে রোগের ভয়াবহতা কমে না।
পরিশেষে, ডায়াবেটিক এমন একটি রোগ যা একবার হলে সারাজীবনের জন্য বয়ে বেড়াতে হয়। কায়িক পরিশ্রম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং সচেতনতার মাধ্যমে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখাটা জরুরি কেননা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক হার্ট, কিডনি, রক্তনালি সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।