চোখ ওঠা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ও প্রতিকার
চোখ ওঠা বা কনজাঙ্কটিভাইটিস খুবই সাধারণ একটা রোগ যা নিজেই নিজেই ঠিক হয়ে যাবে, এটা যেমন সত্য তেমনি এটাও সত্য যে কনজাঙ্কটিভাইটিস এর মাত্রা ভয়ানক হলে সেটা রোগীর জন্য খুব বড় ধরণের বিপদ ডেকে আনতে পারে, এমনকি অন্ধত্বও দেখা দিতে পারে।

বর্তমান সময়ে চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব বেশ বেড়ে গিয়েছে। ডাক্তারি ভাষায় এই রোগের পোশাকি নাম কনজাঙ্কটিভাইটিস। রোগটির প্রকোপ দেখা দেবার পর সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আপনাআপনিই ঠিক হয়ে যায়। তাই চোখ ওঠা নিয়ে আমরা কেউই খুব বেশী বিচলিত হই না। তবে চোখ ওঠার ধরণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানলে আমরা হয়ত এই রোগটি নিয়ে এতো নিশ্চিন্ত নাও থাকতে পারি। আসুন দেখি চোখ ওঠা রোগ কি কি কারণে হতে পারে এবং জেনে নেই এগুলি প্রতিকারের উপায়।
কনজাঙ্কটিভাইটিস কি?
কনজাঙ্কটিভাইটিস, ইংরেজিতে যার আরেক নাম ‘পিংক আই’, হচ্ছে চোখের এক ধরণের প্রদাহ। আমাদের চোখের পাতার চারিপাশে অবস্থিত স্বচ্ছ ঝিল্লি অর্থাৎ কনজাঙ্কটিভাতে যখন এক ধরণের প্রদাহ বা ইনফেকশন হয়, তখন আমরা তাকে কনজাঙ্কটিভাইটিস বলি।
কিসের প্রভাবে কনজাঙ্কটিভাইটিস হয়?
চোখ ওঠার সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-
-
ভাইরাস
-
ব্যাকটেরিয়া
-
অ্যালার্জেন
তবে এছাড়াও আরও বেশ কিছু কারণে কনজাঙ্কটিভাইটিস হতে পারে। যেমন-
-
রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শ
-
কন্টাক্ট লেন্স
-
চোখের মাঝে অস্বাভাবিক কোনকিছু যাওয়া
-
বায়ুদূষণকারী পদার্থ
-
ফাঙ্গাই
-
অ্যামিবা
-
প্যারাসাইট
-
(বাচ্চাদের ক্ষেত্রে) অশ্রুনালী সঠিকভাবে তৈরি না হওয়া
কনজাঙ্কটিভাইটিস এর লক্ষণসমূহ
কনজাঙ্কটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগের সবচেয়ে প্রচলিত লক্ষণগুলো হচ্ছে –
-
চোখ লাল হয়ে যাওয়া
-
চোখ চুলকানো
-
চোখের ভেতরে খচখচ করা বা এক ধরণের অস্বস্তি হওয়া
-
চোখের পাতায় ময়লা জমা
-
চোখ থেকে পানি পড়া
তবে এর বাইরেও ভিন্ন ধরণের কনজাঙ্কটিভাইটিস এর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন –
-
ঠাণ্ডা, সর্দি, বা অন্যান্য শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা
-
অতিরিক্ত পুঁজ বের হবার কারণে চোখের পাপড়ি জোড়া লেগে যাওয়া
-
কানে ইনফেকশন হওয়া
-
নাক চুলকানো, হাঁচি, গলা খুসখুস করা, অথবা অ্যাস্থমা (অ্যাজমা)
কনজাঙ্কটিভাইটিস এর চিকিৎসা
কনজাঙ্কটিভাইটিস বা চোখ ওঠা সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যে এমনিই চলে যায়। তাই এটির জন্য সাধারণত কাউকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয় না। বাসায় কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে খুব সহজেই চোখ ওঠা রোগের ফলে সৃষ্ট কষ্টের মাত্রা কমিয়ে আনা যায়।
-
সকাল বেলা তুলা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে চোখ ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে।
-
একটা মোটা কাপড় পানিতে ভিজিয়ে দুই চোখের উপর কিছুক্ষণ রেখে দেয়া যেতে পারে।
তবে কনজাঙ্কটিভাইটিস এর মাত্রা বেড়ে গেলে বা কয়েক সপ্তাহে এটি পুরোপুরি সেরে না গেলে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। এক্ষেত্রে ডাক্তার আপনার পরিস্থিতি বুঝে আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক আই ড্রপ, অয়েন্টমেন্ট, বা ট্যাবলেট দিতে পারে। এছাড়া অ্যালার্জিজনিত চোখ ওঠার ক্ষেত্রে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধও ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন।
চোখ উঠলে করনীয়
কারও চোখ উঠলে নিম্নে উল্লেখিত কাজগুলো না করার জন্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন-
-
হাত দিয়ে চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
-
কোনভাবে চোখে হাত গেলে সাথে সাথে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন।
-
পরিষ্কার তোয়ালে ব্যাবহার করুন।
-
বালিশের কভার মাঝেমধ্যে পাল্টে ফেলুন।
-
কন্টাক্ট লেন্স বা অন্য কোন চোখের প্রসাধনী কারও সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
চোখ ওঠার সাথে সাথে খেয়াল রাখতে হবে যেন এটি আরও খারাপ দিকে যেতে না পারে। এবং তেমন কোন আলামত দেখা দেয়ার সাথেসাথেই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ একমাত্র আমাদের সকলের সচেতনতাই পারে আমাদেরকে একটা সুস্থ্য জীবন দিতে।