ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লাইফস্টাইলে এই ৬টি পরিবর্তন আনুন
ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বেশী যা প্রয়োজন তা হচ্ছে সচেতনতা। সাথে জানতে হবে কী কারণে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং কমে যায় এবং কীভাবে প্রতিদিনের এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আপনার দৈনন্দিন জীবনের সুনির্দিষ্ট কিছু পরিবর্তন আপনাকে এনে দিতে পারে সুস্থ স্বাভাবিক স্বাস্থ্য।

ডায়াবেটিস একটি শারীরিক অবস্থা যাতে রক্তে চিনির মাত্রা (গ্লুকোজ) খুব বেশি হয়ে যায়। এটি অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব করা এবং ক্লান্তির মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে এবং এটি আপনার চোখ, হৃদপিন্ড এবং স্নায়ুতে গুরুতর সমস্যা হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ-
-
১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (৫.৬ মিলিমোল/লিটার) এর কম থাকা স্বাভাবিক।
-
১০০ থেকে ১২৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (৫.৬ থেকে ৬.৯ মিলিমোল/লিটার) প্রিডায়াবেটিস হিসাবে নির্ণয় করা হয়।
-
দুটি পৃথক পরীক্ষায় ১২৬ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (৭ মিলিমোল/লিটার) বা তার বেশি হলে ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধরা হয়।
আপনার ডাক্তারের সাথে নিবিড় পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনে ছয়টি মূল পরিবর্তনের উপর আলোকপাত করে আপনি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আসুন জেনে নেই বিস্তারিত-
১) স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন
আপনার ডায়াবেটিস থাকলে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপনি যা খান তা আপনার রক্তে শর্করাকে প্রভাবিত করে। কোন খাবার কঠোরভাবে বন্ধ করার মোটেও প্রয়োজন নেই, আপনার শরীরের যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু খাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করুন।
-
প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল এবং আঁশযুক্ত খাবার খান।
-
উচ্চমাত্রার চিনি এবং চর্বিযুক্ত খাবার সীমিত কিংবা পরিহার করুন।
-
চর্বিহীন দুগ্ধজাত খাবার এবং চর্বিহীন মাংস বেছে নিন। উচ্চমাত্রার চিনি এবং চর্বিযুক্ত খাবার সীমিত কিংবা পরিহার করুন।
-
মনে রাখবেন যে কার্বোহাইড্রেট চিনি বা গ্লুকোজে পরিণত হয়, তাই আপনার কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার দিকে নজর রাখুন। আপনি যদি আপনার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে ইনসুলিন বা ওষুধ গ্রহণ করেন তবে এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ।
-
খাবারের অংশের আকার ছোট করলে ক্যালোরি গ্রহণ কমাতেও সাহায্য করবে। আপনি যদি আপনার ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করতে চান তবে ডায়েট প্লেট একটি চমৎকার সমাধান।
২) নিয়মিত ব্যায়াম করুন
আপনি যদি সক্রিয় না হয়ে থাকেন তবে এখনই এটি শুরু করার উপযুক্ত সময়। আপনাকে কোন জিমে যোগদান করতে হবে না কিংবা ক্রস-ট্রেনিং করতে হবে না। শুধু হাঁটুন, বাইক চালান বা সাঁতার কাটুন। আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত দৈনিক ৩০ মিনিটের ক্রিয়াকলাপ যা আপনাকে সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন ঘামতে সাহায্য করবে এবং জোরে শ্বাস নিতে বাধ্য করবে। একটি সক্রিয় জীবনধারা আপনার রক্তের শর্করাকে কমিয়ে এনে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি আপনার হৃদরোগের সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়। এছাড়াও, এটি আপনাকে অতিরিক্ত ওজন হারাতে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৩) সময়মত চেকআপ করান
বছরে অন্তত দুবার আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করুন। ডায়াবেটিস আপনার হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ায়। সুতরাং আপনার কোলেস্টেরল, রক্তচাপ এবং HbA1c (৩ মাসের মধ্যে গড় রক্তে শর্করা) এই মাত্রাগুলো জানুন। প্রতি বছর সম্পূর্ণ চোখের একটি পরীক্ষা করুন। পায়ের আলসার এবং স্নায়ুর ক্ষতির মতো সমস্যাগুলি পরীক্ষা করতে একজন ফুট ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন।
৪) মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন
আপনি যখন মানসিক চাপে থাকেন, তখন আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এবং যখন আপনি উদ্বিগ্ন হন, আপনি আপনার ডায়াবেটিস ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। এমতাবস্থায় আপনি ব্যায়াম করতে, সঠিক খাবার খেতে বা ওষুধ খেতে ভুলে যেতে পারেন। বিভিন্ন উপায়ে স্ট্রেস দূর করার উপায় খুঁজার চেষ্টা করুন যেমন, গভীর শ্বাস, যোগব্যায়াম বা নানান রকম শখের কাজ যা আপনার স্নায়ূকে শিথিল করে দিতে পারে।
৫) ধূমপান পরিহার করুন
ডায়াবেটিস আপনার হৃদরোগ, চোখের রোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, রক্তনালীর রোগ, স্নায়ুর ক্ষতি এবং পায়ের সমস্যাগুলির মতো স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আপনি যদি ধূমপান করেন তবে আপনার এই সমস্যাগুলি হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। ধূমপান ব্যায়াম করাকে কঠিন করে তুলতে পারে। ধূমপান ত্যাগ করার উপায় সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
৬) অ্যালকোহলকে না বলুন
লিভার সাধারণত রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়াকে প্রতিরোধ করতে সঞ্চিত চিনি ছেড়ে দেয়। কিন্তু যদি আপনার লিভার অ্যালকোহল বিপাক করতে ব্যস্ত থাকে, তাহলে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা আপনার লিভার থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য নাও পেতে পারে। আপনি অ্যালকোহল পান করার কিছুক্ষণ পরেই এবং পরবর্তী ২৪ ঘন্টার জন্য রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে। তাই অ্যালকোহলকে এড়িয়ে যাওয়াই আপনার জন্য শ্রেয়।
আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে এমন কারণগুলি সম্পর্কে আপনি যত বেশি জানবেন, তত বেশি আপনি ওঠানামা অনুমান করতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে পারেন। আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা আপনার লক্ষ্য পরিসরে রাখতে সমস্যা হলে, আপনার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। একটি সুস্থ ও সঠিক জীবনযাত্রার মাধ্যমে এভাবেই আমরা ডায়াবেটিসকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি।