সর্দি-কাশি হলে শান্তিতে ঘুমাতে মেনে চলুন এই ৮ টিপস
সর্দি-কাশির প্রকোপে রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হচ্ছে? এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং নির্বিঘ্নে ঘুমাতে প্রবন্ধটি বিস্তারিত পড়ুন।

অনেক রাত, দেরি হয়ে যাচ্ছে! আপনি একটি শান্তির ঘুম দিতে চাচ্ছেন- কিন্তু প্রতিবার যখনই চেষ্টা করছেন, অনাকাঙ্ক্ষিত কাশি বা নাক বন্ধ হয়ে আপনাকে বারবার জাগিয়ে দিচ্ছে।
রাতের বেলায় কাশি এবং নাক বন্ধ হওয়া খুবই বিরক্তিকর এবং হতাশাজনক। কারণ দিনের বেলা কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পেতে এবং অসুস্থতার সাথে লড়াই করার জন্য আপনার পর্যাপ্ত ঘুমানো দরকার। কিন্তু বিরক্তিকর কাশি আপনাকে আপনার অধরা ঘুমকে ব্যহত করতেই থাকবে।
তবে উপায়! রাতে শান্তির ঘুম পেতে সর্দি কাশি থেকে মুক্তির জন্য আপনার করণীয় কী? এই প্রবন্ধে রয়েছে আপনার জন্য প্রয়োজনীয় সব টিপস।
রাতে পর্যাপ্ত ঘুম কেন দরকার?
ঘুম মূলত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবং সর্দি-কাশি উপশমে সহায়তা করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতি রাতে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমানো ব্যক্তিদের থেকে, যারা ৭ ঘণ্টা ঘুমায় তাদের সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৩ গুণ বেশি।
অনেক ক্ষেত্রে রাত্রে ঠিকভাবে ঘুমাতে না পারলে সর্দি-কাশির সমস্যা বেড়ে যায়। তাই আপনি যাতে রাতে নির্বিঘ্নে ঘুমাতে পারেন সেই চেষ্টাই করুন।
বয়স অনুযায়ী আপনার কত ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন
সর্দি কাশি হলে রাতে ঘুমের সমস্যা এড়াতে প্রয়োজনীয় ৮টি টিপস
সর্দি-কাশির চরম অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এবং রাতে নির্বিঘ্নে ঘুমাতে আমাদের এই টিপসগুলি মেনে চলতে পারেন।
১. গরম পানীয় এবং তরল খাবার খান
সর্দি-কাশির উপশমে গরম পানীয় বেশ উপকারী। সেক্ষেত্রে আপনি গরম চা কিংবা সবজি বা মুরগির স্যুপ পান করতে পারেন। এছাড়াও কুসুম গরম পানি পান করুন এবং হালকা গরম তরল জাতীয় খাবার খান। কেননা গরম পানি বা তরল গলার শ্লেষ্মা পাতলা করে থাকে এবং নাক বন্ধ প্রতিকার করে। আর এতে আপনি আরাম বোধ করবেন।
২. একটু করে মধু খান
অনেকসময় সর্দি কাশির সমস্যা সমাধানে মধু বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কেননা মধুতে অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। তাইতো আপনার সর্দি কাশির সমস্যা দূর করতে অল্প মধু খেতে পারেন।
ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার (ইউএসএ) ফিজিশিয়ান স্টিফেন রাসেল বলেন, “কাশি কমাতে উষ্ণ পানি বা চায়ের সঙ্গে মধু খেলে উপকার পাওয়া যায়।” এমনকি ছোট শিশুদের সর্দি-কাশির ওষুধের বিকল্প হিসেবে মধু খেতে দেওয়া যেতে পারে। তবে ১ বছর বা ১২ মাসের কম বয়সী বাচ্চাদের মধু দেওয়া উচিত না। সেক্ষেত্রে একজন শিশু ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিবেন।
৩. ঘুমানোর সময় মাথা ও ঘাড় উঁচুতে রাখুন
আপনার যদি সর্দি কাশির জন্য রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হয়, তবে একটি কৌশল অনুসরণ করুন। ঘুমানোর সময় আপনি মাথা-ঘাড় উঁচুতে রাখুন।
জর্জিয়া ইনফেকশাস ডিজিজের ফিজিশিয়ান মিশেল ব্লাসের মতে, “আমরা যখন শুয়ে থাকি, তখন গলায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে শ্লেষ্মা জমতে থাকে। আর এই সমস্যা এড়ানোর উপায় হচ্ছে, শরীরের উপরের অংশ একটু উঁচুতে তুলে ঘুমানো এবং এতে গলায় শ্লেষ্মা জমতে পারবে না।”
ফটো ক্রেডিট: wikihow
৪. ন্যাজাল ডিকনজেস্ট্যান্ট স্প্রে বা নাকের ড্রপ ব্যবহার করুন
সর্দি কাশির কারণে নাক বন্ধ হয়ে গেলে ঘুমাতে অনেক কষ্ট হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ন্যাজাল ডিকনজেস্ট্যান্ট স্প্রে বা নাকের ড্রপ নিতে পারেন।
ন্যাজাল ডিকনজেস্ট্যান্টগুলিতে এমন পদার্থ থাকে যা রক্তনালীগুলিকে লক্ষ্য করে কাজ করে নাকের প্যাসেজগুলি খুলে দেয় এবং পোস্ট-ন্যাজাল ড্রিপ বা নাকের পিছনের মিউকাস বা শ্লেষ্মা হ্রাস করে, যা পরোক্ষভাবে রাতে কাশি কমাতে সহায়তা করে। বেশিরভাগ ন্যাজাল ডিকনজেস্ট্যান্ট ট্যাবলেট, ড্রপ বা স্প্রে হিসাবে ফার্মেসিতে পাওয়া যায়।
ফটো ক্রেডিট: ENT Associates
তবে সর্দি-কাশির চিকিৎসার জন্য নাকের স্প্রে বা ড্রপ ব্যবহার করার কিছু মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেননা অনেক ক্ষেত্রে এতে উচ্চ রক্তচাপ, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, এবং নিদ্রাহীনতার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
৫. সর্দি-কাশির ওষুধ সেবন করুন
সর্দি কাশির হাত থেকে বাঁচতে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ ওষুধ সেবন করতে পারেন। মূলত রাতের বেলা কাশির প্রকোপে ঘুম না হলে একটি কফ ড্রপ (থ্রোট লজেন্স) কিংবা হার্ড ক্যান্ডিও চুষে খেতে পারেন। এতে আপনার গলায় প্রশান্তির পাশাপাশি কাশির মাত্রাও কমে যাবে। এছাড়াও আপনার সর্দি-কাশির সমস্যা প্রকট হলে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ বা কফ সিরাপ সেবন করতে পারেন।
৬. কাঁধ ফিরে ঘুমাতে চেষ্টা করুন
আপনি সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হলে কাঁধ ফিরে শোবেন। কেননা এতে অনেকটা আরাম পাবেন। আর এইসময় চিৎ হয়ে শোবেন না, কারণ এতে দেহে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে কাশি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বুকেও চাপ পড়তে পারে। এছাড়াও রাতের বেলা আপনার কাশি শুরু হলে খানিকটা পানি পান করুন। কেননা এতে গলার শুকনো ভাব কমে গিয়ে কাশিও কম হবে।
৭. বিছানা পরিষ্কার রাখুন
আপনি যেখানে সম্পূর্ণ রাত্রি কাটাবেন সেটিই যদি পরিষ্কার না থাকে তবে শান্তিতে ঘুমাবেন কীভাবে? আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ অ্যাজমা, অ্যালার্জি এবং ইমিউনোলজি সুপারিশ করে যে- “আপনি সপ্তাহে একবার আপনার বিছানার চাদর, গদির কভার, কম্বল এবং বালিশগুলি গরম পানিতে (১৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৫৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি তাপমাত্রায় ধুয়ে ফেলুন।
তাই চেষ্টা করুন সবসময় পরিপাটি বিছানায় ঘুমাতে। এতে ঘুম আরামদায়ক হয়।
৮. হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন
আপনার শোয়ার ঘরটি খুব আর্দ্র হলে বা কম হলে তা সর্দি-কাশির লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই আপনার ঘরটির আর্দ্রতার মাত্রা যদি ৩০% থেকে ৫০% এর মধ্যে রাখতে চান, তবে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন। তবে আদ্রতা ৪০% থেকে ৬০% এর মধ্যে রাখাই শ্রেয়। কেননা হিউমিডিফাইয়ার রুমের বাতাসকে আদ্রতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর এতে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া অনেকটা সহজ হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়াও হিউমিডিফাইয়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা নিয়মিত পরিষ্কারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করুন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
সাধারণত সর্দি কাশি ৭ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হয়। অনেক মানুষের ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকার কারণে, তাদের সর্দি কাশি দ্রুত ভালো হয়ে যায়। আবার অনেকেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা বা অন্য কোন অসুস্থতা থাকার ফলে, সর্দি কাশির মতো সমস্যা আরো গুরুতর সংক্রমণে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এতে অনেক সময় দেখা যায় যে, সামান্য সর্দি কাশির সমস্যা থেকে নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিস পর্যন্ত হতে পারে। আর তাইতো আপনার সর্দি কাশি জনিত সমস্যা যদি এই নির্দিষ্ট সময়সীমার (৭ থেকে ১০ দিন) মধ্যে ভালো না হয় কিংবা অবস্থা আরও খারাপ হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
শেষকথা
সর্দি-কাশি জনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হলে রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘাবড়ে না গিয়ে, বরং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে চেষ্টা করুন। চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ ঠিকভাবে সেবন করুন এবং সুস্থ থাকুন। এছাড়াও সর্দি-কাশির সময় শান্তিতে ঘুমাতে চাইলে উপরোক্ত টিপসগুলি মেনে চলুন।
আরও পড়ুনঃ
-
পর্যাপ্ত ঘুম পেতে মেনে চলুন এই ৮টি উপায়
-
অ্যালার্জি নাকি সাধারণ ঠান্ডা! বুঝবেন যেভাবে
-
কিভাবে অ্যালার্জি বা ঠাণ্ডা প্রতিরোধ করবেন?