একজিমা দূর করার ১০টি উপায়
ব্যাক্তিবিশেষে একজিমার ট্রিগার ও অন্যান্য সতর্কতা মেনে চললে একজিমা বা বিখাউজ সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সুগন্ধিযুক্ত সাবান এবং ডিটারজেন্ট সহ বিভিন্ন ট্রিগারগুলি এড়িয়ে যেতে পারলেই আপনি একজিমার লক্ষণগুলি কমাতে সক্ষম হতে পারেন। আসুন বিস্তারিত জেনে নেই।
আপনার যদি একজিমা হয়ে থাকে তবে আপনিই বুঝবেন যে লালচে ত্বক এবং চুলকানির হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন জিনিস খুঁজা কতটা যন্ত্রণাদায়ক হয়। আপনি সম্ভবত ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পণ্য চেষ্টা করেছেন। দুর্ভাগ্যবশত, কিছু আইটেম আপনার ত্বককে আরও শুষ্ক করেছে এবং চুলকানিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে, এখনই আশা ছাড়বেন না! একজিমা থেকে প্রতিকার পেতে আপনি বাড়িতে চেষ্টা করতে পারেন এমন অনেকগুলি বিকল্প রয়েছে যেগুলি আপনাকে আর্দ্রতা পূরণ করতে এবং আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক বাধা রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
আর আপনি যদি একজিমার জন্য প্রেসক্রিপশন মোতাবেক ঔষুধ গ্রহণ করে থাকেন তবে নতুন ঘরোয়া প্রতিকার চেষ্টা করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ হবে।
একজিমার স্থায়ী চিকিৎসা আছে কি?
একজিমা সম্পুর্ণ রূপে সারে না। তবে ব্যাক্তিবিশেষে একজিমার ট্রিগার ও অন্যান্য সতর্কতা মেনে চললে একজিমা সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ছোট বয়সে চিকিৎসা নিলে কারো কারো ক্ষেত্রে একজিমা ভালো হয়, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এটি জীবন ব্যাপী থেকে যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে একজিমা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পরিকল্পিত জীবন পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি মেনে চললে সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করা যায়।
একজিমা দূর করার উপায়
নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করলে একজিমার যন্ত্রণা, অস্বস্তি ও প্রকোপ সামলানো যায় ও আক্রান্ত ত্বকও সেরে ওঠে।
১. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
একজিমার একটি প্রধান সমস্যা হলো অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক, যার প্রভাবে চুলকানি বাড়ে। দিনে দুইবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার ত্বককে সুস্থ করতে ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। ড্রাই স্কিনের জন্য ময়েশ্চারাইজার খুব ভালো কাজ করে।
এলকোহল ও অন্যান্য বাড়তি সুগন্ধি মুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। ক্রিম, তেল বা লোশন জাতীয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যায়। তবে বিভিন্ন ধরণের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার এর পর একটি বেছে নেওয়া উচিত। এলোভেরা জেল লাগানো একজিমা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে ভালো ফল দেয়।
২. চুলকানি প্রতিরোধী ক্রিম লাগাতে পারেন
একজিমার চুলকানী প্রচণ্ড অস্বস্তিকর হতে পারে। চুলকানি প্রতিরোধী ক্রিম ব্যাবহার এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ১% হাইড্রোকর্টিসোন চুলকানি প্রতিরোধী ক্রিম হিসেবে কাজ করে, তবে ডাক্তারের প্রেসক্রিপ্শন মোতাবেক ব্যবহার করাই উত্তম।
৩. চুলকানির ঔষধ খেতে পারেন
অনেকসময় চুলকানি প্রতিরোধে ক্রিমের চেয়ে খাবার বড়ি বা ট্যাবলেট বেশি স্বাচ্ছন্দদায়ক হতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিহিস্টামিন জাতীয় চুলকানি প্রতিরোধী ট্যাবলেট ব্যবহার করা যায়।
৪. একজিমার স্থানে চুলকাবেন না
চুলকানোর ফলে ক্ষত তৈরি ও ইনফেকশন হয়ে যাবার ভয় থাকে। তাছাড়া চুলকালে সেরে ওঠার সময় ও বেড়ে যায়। তাই যথাসম্ভব চুলকানো থেকে বিরত থাকার জন্য আক্রান্ত স্থান ঢেকে রাখা, ঔষধ গ্রহণ ও নখ ছোট রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
৫. প্রতিদিন গোসল করুন
একজিমার সমস্যা তৈরি হয় বিশেষ বিশেষ ট্রিগার এর কারণে, সেটা কাপড়ের ফেব্রিক থেকে ফুলের রেণু সহ অনেক কিছুই হতে পারে, তাই এসব শরীরের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে নিয়মিত গোসল করা জরুরী। তবে কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে হবে।
৬. কেমিক্যাল মুক্ত দ্রব্যাদি ব্যবহার করুন
একজিমা ক্যামিক্যাল এর কারণেও হতে পারে। তাই সবসময় কম ক্যামিক্যাল যুক্ত ও একই ধরণের সাবান, শ্যাম্পু ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
৭. পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন
সবসময় হাইড্রেটেড থাকতে চেষ্টা করুন এবং প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি পান করুন। পানি আপনার ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।
৮. পোশাক ব্যবহারে সচেতন হোন
তুলা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। নতুন পোশাক পরার আগে ধুয়ে ফেলুন। উল বা সিন্থেটিক ফাইবার এড়িয়ে চলুন।
৯. মানসিক চাপ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
আপনার মানসিক চাপ এবং আবেগজনিত ট্রিগারগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। আপনি যদি মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির লক্ষণগুলি অনুভব করে থাকেন তবে তা সারাতে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
১০. ইরিটেন্টস এন্ড অ্যালার্জেন্স পরিহার করুন
যে কোনো বস্তু যেমন- খাবার, কসমেটিক, কাপড়, গৃহপালিত পশু ইত্যাদি যার সংস্পর্শে আসলে আপনার এলার্জি বা চুলকানি শুরু হয়ে যায় তা থেকে দূরে থাকুন বা পরিহার করার চেষ্টা করুন।
একজিমা হলে কি খাওয়া যাবে না?
এলার্জির মতই একজিমাতেও কিছু খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার প্রয়োজন পড়ে। ব্যক্তি ভেদে সমস্যা জনক খাবার ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত দুধ, ডিম আর চিনবাদামের কারণে একজিমার সমস্যা শুরু হতে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে এলার্জি টেস্টের মাধ্যমে খাদ্যাভাস পরিকল্পনা করা উচিত।
উপসংহার
একজিমা পুরোপুরি ভালো হয় না, কিন্তু নিয়ম মেনে একে পুরোপুরি সুস্থ থাকা যায়। ডাক্তারের পরামর্শে একজিমার ধরণ বুঝে জীবন পদ্ধতি পরিবর্তন ও ঔষধ সেবন করা উচিত। সেই সাথে চর্ম রোগীকে অন্যভাবে দেখার সামাজিক প্রচলন এর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আমাদের হওয়া উচিত সহানুভূতিশীল ও স্বাভাবিক।