যে ১০ টি কারণে ডিম খাবেন
আমাদের নিত্যদিনের খাবারে সহজলভ্য প্রোটিন এবং বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের পরিপূর্ণ ভান্ডার হলো ডিম। এটি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর প্রোটিনের সুষম একটি উৎস। পাশাপাশি এটি খুব সহজেই আপনার দৈনন্দিন খাবারে যুক্ত করতে পারেন।
-
ডিম এমন একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার যা জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন,এবং সম্পূর্ণ প্রোটিনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি তে সমৃদ্ধ।
-
এছাড়াও খাদ্য হিসেবে ভিটামিন বি-২, নভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই, ফোলেট, আয়োডিন, কোলিন, লিউসিন,এসকল উপাদানের উৎস হলো ডিম।
-
ডিমে লুটেইন(lutein)ও যিয়াস্যানথিন(zeaxanthin)নামক প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে যা বৃদ্ধ বয়সে চোখের ক্ষতি ঠেকাতে সাহায্য করে।
-
ডিমের কুসুম শরীর এর খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রাবৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।
-
এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোক এর ঝুকি কমতে পারে।
এজন্যই আমাদের নিত্যদিনের খাবারে একটি করে ডিম রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ডিমের পুষ্টি উপাদান
একটি প্রমান সাইজ ডিমে রয়েছে-
-
ভিটামিন এ: ৬%
-
ফোলেট: ৫%
-
ভিটামিন বি-৫: ৭%
-
ভিটামিন বি-১২: ৯%
-
ভিটামিন বি-২: ১৫%
-
ফসফরাস: ৯%
-
সেলেনিয়াম: ২২%
-
চর্বি: ৪.৬ গ্রাম
-
এছারাও ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি-৬, ক্যালসিয়াম এবং জিংকও রয়েছে।
ডিমের উপকারিতা
১) উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত কিন্তু হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না
অন্রক বছর ধরেই, ডিম তাদের উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে খারাপ খ্যাতি অর্জন করেছে। যাইহোক, সাম্প্রতিক গবেষণা দেখা যায় যে খাদ্যতালিকাগত (ডায়েটারি) কোলেস্টেরল রক্তের কোলেস্টেরলের উপর খুব কম প্রভাব ফেলে। বেশিরভাগ মানুষের জন্য, খাদ্যতালিকাগত কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত নয় এবং এটি মোট কোলেস্টেরল বা "খারাপ" এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় না। আসলে, ডিমের সঠিক ব্যবহার "ভাল" এইচডিএল কোলেস্টেরলকে উন্নত করতে পারে। উপরন্তু, এক লক্ষ এরও বেশি সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দুটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন একটি সম্পূর্ণ ডিম খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকির সাথে যুক্ত নয়। যাইহোক, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডিম খাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, কারণ কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে প্রতি সপ্তাহে ৭ টি ডিম খাওয়া তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
২) হৃদরোগ ও স্ট্রোক এর ঝুকি কমায়
চীনে বিজ্ঞানিদের গবেষণার ফলে দেখা যায় যে-ডিম হৃদরোগ ও স্ট্রোক এর ঝুকি কমায়। ডিমের ভালো কোলেস্টেরল এর মধ্যে HDL(high-density lipoprotein)হলো একটি। যার অভাবে মানবদেহে হৃদরোগ ও স্ট্রোক এর ঝুকি বারতে থাকে। গবেষণায় প্রমাণিত হয় প্রতিদিন ২ টি করে ডিম ছয় সপ্তাহ খেলে দেহের HDL এর পরিমান ১০% করে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৩) ডিমে উচ্চমানের প্রোটিন থাকে
মানবদেহ সচল রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান হলো প্রোটিন। একটি প্রমান সাইজের ডিমে ৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহন আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে, পেশী ভর বৃদ্ধি করতে পারে, রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে এবং হাড়ের স্বাস্থ্যকে অনুকূল করতে পারে।
8) ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ
ডিমের কুসুম এমন একটি খাবার যা প্রাকৃতিক ভাবে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-ডি সরবরাহ করে। কখনও কখনও ভিটামিন ডি কে 'সানশাইন ভিটামিন' বলা হয়, ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে - এটি সুস্থ হাড় এবং দাঁতের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান।
৫) ওজন নিয়ন্ত্রণ
ডিম ওজন কমাতে এবং ডায়েট প্ল্যান ঠিক রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ প্রোটিন যুক্ত ডিম পোস্ট ওয়ার্কআউট ক্ষুধার (পরিশ্রমের পরে যে ক্ষুধা লাগে) জন্য উপযোগী। ত্রিশের উপর মহিলাদের যাদের ওজন বেশী তাদের ক্ষেত্রে এক গবেষণায় দেখা যায়, ব্রেকফাস্টের জন্য অন্যান্য খাবারের পরিবর্তে ডিম খাওয়া পূর্ণতার অনুভূতি বাড়িয়ে তোলে এবং পরবর্তী ৩৬ ঘন্টার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম ক্যালোরি খেতে বাধ্য করে। এটি নানা রকম ভাবে রান্না করে খাওয়া যায়।যা ডায়েট প্ল্যান ও সুস্বস্থ ধরে রাখতে অনেক কার্যকর।
৬) চোখের জন্য উপকারী
ডিমের কুসুমে লুটেইন(lutein)ও যিয়াস্যানথিন(zeaxanthin) নামক প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে যা বৃদ্ধ বয়সে চোখের ক্ষতি ঠেকাতে সাহায্য করে। এই লুটেইন (lutein) ও যিয়াস্যানথিন (zeaxanthin) হলো দুটি শক্তিশালী এন্টিওক্সিডেন্ট যা চোখের রেটিনা সচল রাখতে জরুরি ভুমিকা পালন করে। প্রতিদিন ১.৩ টি করে ডিমের কুসুম খেলে ৪.৫ সপ্তাহে রক্তে লুটেইন এর মাত্রা ২৮-৫০% এবং যিয়াস্যানথিন এর মাত্রা ১৪০-১৪২% বৃদ্ধি পায়।
৭) ডিমে প্রচুর পরিমাণে কোলিন থাকে
একটি ডিম উচ্চমাত্রায় কোলিন (choline)সরবরাহ করে। কোষের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য কোলিন অপরিহার্য, গর্ভাবস্থায় মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের বিকাশে একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে, শিশুদের মধ্যে জ্ঞানীয় বিকাশ এবং বয়স্কদের মধ্যে জ্ঞানীয় হ্রাস হ্রাস করতে সহায়তা করে কোলিন।
ওষুধের আকারে কোলিন হেপাটাইটিস, সিরোসিস, বিষণ্নতা, স্মৃতিশক্তির পতন, আল্জ্হেইমার রোগ এবং ডিমেনশিয়া, হাটিংটন কোরিয়া এবং টোরেটের রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই আমরা ডিমের মাধ্যমে এর অভাব পুরন করতে পারি।
৮) ডিমে উপকারী ওমেগা-৩ পাওয়া যায়
ওমেগা-৩ এর বড় একটি উৎস হলো ডিম। ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ট্রাইগ্লিসারাইডের রক্তের মাত্রা কমাতে পরিচিত,যার বেড়ে যাওয়া হৃদরোগের জন্য সুপরিচিত। তাই ডিম খাওয়া রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর একটি কার্যকর উপায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে মাত্র পাঁচটি ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ডিম খাওয়ার ফলে তিন সপ্তাহের মধ্যে ট্রাইগ্লিসারাইড ১৬-১৮% কমে যায়।
৯) মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে
ডিম আমাদের মানুষিক সাস্থ্যের সুস্থতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। একটি সুষম খাদ্য মানসিক চাপ কমানো এবং উন্নত মানসিক স্বাস্থ্য অনুশীলনের দিকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এবং যখন ডিমের প্রধান উপকারিতার কথা আসে - ভিটামিন বি২, বি১২, কোলিন, আয়রন এবং ট্রিপটোফানের সংমিশ্রণ সবই উদ্বেগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, বিষণ্নতার লক্ষণ এবং স্বাভাবিকভাবে ভালো ঘুমের জন্য সাহায্য করে।
১০) প্রবীণদের শারীরিক উন্নয়নে সহায়ক
ডিম বয়ষ্কদের শারীরিক বৃদ্ধির জন্য পুষ্টি গ্রহনে সহায়তা করে। ডিম উচ্চমানের প্রোটিন এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ এর একটি সহজলভ্য, সহজে হজমযোগ্য উৎস-যা বয়স্কদের জন্য একটি আদর্শ খাদ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারে। ডিমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লিউসিন, একটি অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে যা চলমান পেশী সহায়তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি ভিটামিন ডি এবং ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড সহ অন্যান্য মূল পুষ্টি, পাশাপাশি সামান্য পরিচিত পুষ্টি, কোলিন, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে।
ডিম সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে একটি, যা আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে। ডিম সাধারণত সস্তা, দুর্দান্ত স্বাদযুক্ত এবং প্রায় যেকোনও খাবারের সাথে খাওয়া যায়। তাই শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন আমাদের খাবারের মেনুতে ডিম খাওয়া উচিৎ।