আপনার রান্নার তেল কি স্বাস্থ্যকর?
সয়াবিন, নাকি অন্য কিছু? কে হবে আপনার রান্না ঘরের মাস্টার অয়েল? রান্নায় সঠিক তেল নির্বাচন করবেন কিভাবে? কিভাবে সঠিকভাবে তেল সংরক্ষণ করবেন?
রান্নার অপরিহার্য উপাদান হল তেল। তেল ছাড়া রান্নার কথা ভাবাও যায় না। সুদূর অতীতে একটি সময় ছিল যখন মানুষ সরিষার তেল ব্যবহার করে রান্না করত। ধীরে ধীরে যখন মানুষের চাহিদা বাড়তে থাকে আর সেই চাহিদা মত সরিষার যোগান হয় না তখন বাজারে আসে সয়াবিন তেল। সেও সত্তর এর দশক এর কথা। সেই যে সয়াবিন এর ব্যবহার শুরু হয়, আজ অবধি চলছে এবং ভবিষ্যৎ এ এর চাহিদা বাড়বে বৈ কমবে না।
সুদীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় সয়াবিন সফলতার সাথে বাজার ধরে রাখছে। এই সুদীর্ঘ সময় মানুষ কি শুধু সয়াবিনই ব্যবহার করছে নাকি সয়াবিন এর বিকল্প হিসেবে আরও কিছু তারা ব্যবহার করছে? তারা কি এখনো সরিষা ব্যবহার করতে চায়? নাকি ক্যানোলা অয়েল, অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, পিনাট অয়েল এর মত স্বীকৃত স্বাস্থ্যকর তেল এর দিকে মানুষ ঝুকছে? মানুষ এখন জানতে চায় তারা তাদের রান্নার কাজে যে তেল ব্যবহার করছে তা কি সঠিক? তারা জানতে চায় রান্নার জন্য উপযুক্ত তেল কোনটি?
কোন তেল রান্নার জন্য উপযুক্ত, কোন তেল এ রান্না করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কম এ সবই নির্ভর করে তেল এর গঠন এর উপর। আমরা যাকে তেল বলছি সে হল এক ধরণের চর্বি। এই তেল বা চর্বি কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত বা তেল এ রান্না করলে এর স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে কিনা সেটাই আলোচ্য বিষয়। আমরা খাবার রান্না করি তেল বা চর্বি দিয়ে। রান্না করা এই খাবার এর সাথে আমরা চর্বি গ্রহণ করছি।
খাবারে কতটা চর্বি গ্রহণ করছি সেটি বিবেচ্য নয়, রক্তে কোলেস্টরেল বৃদ্ধি ও হৃদরোগ এর ঝুঁকি বাড়ে কোন ধরণের চর্বি গ্রহণে সেটাই বিবেচ্য। তাই খাবারে চর্বি গ্রহণের আগে জানতে হবে কোন ধরণের চর্বি এবং কতটুকু চর্বি গ্রহণ করছি। খাবারে চর্বি গ্রহণ করার আগে আসুন জেনে নেই চর্বি সম্পর্কে।
চর্বি কি?
চর্বি হল ট্রাই গ্লিসারাইড নামক অণুর সমন্বয়ে গঠিত একধরণের পদার্থ। একটি ট্রাই গ্লিসারাইড অণুতে তিনটি ফ্যাটি এসিড চেইন থাকে। ট্রাই গ্লিসারাইড বা চর্বি কঠিন হবে নাকি তরল হবে সেটি নির্ভর করে এই চেইন গুলোর উপর। এবং গুরুত্বপূর্ন ব্যাপারটি হল, চর্বিটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হবে নাকি উপকারি হবে তা নির্ভর করে ফ্যাটি এসিডের প্রকৃতির উপর।
ফ্যাটি এসিড ও চর্বির মাত্রাভেদে রান্নার তেল বাছাই করা
ফ্যাটি এসিডের কার্বন অণুর মধ্যকার বন্ধন কেমন হবে তার উপর নির্ভর করে চর্বির প্রকৃতি। কিছু ফ্যাটি এসিড এর কার্বন সিঙ্গেল বন্ড বা একক বন্ধন যুক্ত, আবার কিছু ফ্যাটি এসিডের কার্বন একক ও দ্বি-বন্ধন যুক্ত। একক বন্ধন যুক্ত ফ্যাটি এসিডকে সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড বা স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড বলে। আর এক বা একাধিক দ্বি-বন্ধন যুক্ত ফ্যাটি এসিডকে অসম্পৃক্ত বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড বলে। সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরে ভিন্ন ভাবে কাজ করে। সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আর অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড শরীরের জন্য উপকারি।
রান্নার জন্য উপযুক্ত তেল নির্বচন করার সময় প্রথম যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হল তেল এর চর্বির হিসাব। রান্নার যে তেল ব্যবহার করি তা ১০০% ই চর্বি। এই চর্বির মধ্যে ভাল এবং মন্দ চর্বি রয়েছে।
-
ভাল চর্বি বলতে ,অসম্পৃক্ত চর্বি। অসম্পৃক্ত চর্বি রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে।
-
খারাপ চর্বি বলতে সম্পৃক্ত চর্বি যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে এমন সব তেল রান্নার জন্য ব্যবহার করা উচিৎ যার মধ্যে সম্পৃক্ত দ্রবনের পরিমাণ ৩৫% এর বেশি না হয় এবং তা কখনোই ৫০% এর বেশি না।
স্মোকিং পয়েন্ট বিবেচনায় রান্নার তেল নির্বাচন
রান্নার জন্য উপযুক্ত তেল নির্বাচন করার সময় আরও একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হয়, আর তা হল তেলের স্মোকিং পয়েন্ট। স্মোকিং পয়েন্ট হল এমন একটি তাপমাত্রা, যে তাপমাত্রায় তেলের গঠন ভেঙ্গে যায় এবং পুড়ে ধোয়া উড়তে থাকে। তেলের এমন ঘটনায় খাবারের স্বাদ নষ্ট হয় এবং শরীরে ক্ষতিকর ফ্রী-রেডিকেল প্রবেশ করে। আমরা রান্নার কাজে যে সব তেল ব্যবহার করি, সেসব তেলের ভিন্ন ভিন্ন স্মোকিং পয়েন্ট রয়েছে। যেমন, অলিভ অয়েল এর স্মোকিং পয়েন্ট নিম্ন বা মৃদু (১৯৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস )। যদিও স্বাস্থ্য সম্মত তেল হিসেবে অলিভ অয়েল এর সুনাম রয়েছে, এবং এটি সুগন্ধি যুক্ত। কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নার জন্য (১৭৭-২৩২ ডিগ্রী) এটি উপযুক্ত না। তাই উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নার জন্য উচ্চ স্মোকিং পয়েন্ট যুক্ত তেল ব্যবহার করতে হবে।
তেলের সম্পৃক্ত বা অসম্পৃক্ত চর্বির হিসাব বা স্মোকিং পয়েন্ট এর হিসাব এসব কিছু তো এক তেলের মধ্যে পাওয়া সম্ভব না। তাই চাইলেই রান্না ঘরে আপনি বিভিন্ন রকমের তেল রাখতে পারেন। আপনার রান্না ঘরে কি কি তেল থাকবে বা আপনার জন্য উপযুক্ত রান্নার তেল কি হতে পারে বা সুদীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করে আসা সয়াবিন এর কি কোনো বিকল্প আছে বা সয়াবিন এর কি কোনো বিকল্প প্রয়োজন আছে?
আসুন জেনে নেই বিভিন্ন রকম তেলের বিশ্লেষণ,
সয়াবিন তেল
রান্নার তেল হিসেবে সর্বাধিক ব্যবহৃত তেল হল সয়াবিন। কারণ এটি একটি উদ্ভিজ্জ তেল, এর স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি কম (সম্পৃক্ত চর্বি ১৫% এবং অসম্পৃক্ত চর্বি ৮৫%) এবং কোলেস্টেরল বিহীন। কোলেস্টেরল না থাকায় এটি হার্টের জন্য উপকারি একটি তেল। তাছাড়া সয়াবিন খুবই সহজলভ্য। সয়াবিন এর স্মোকিং পয়েন্ট হল ২৫৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাই রান্নার জন্য উপযুক্ত এবং নিরাপদ।
সরিষার তেল
উপমহাদেশীয় খাদ্য সংস্কৃতি ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে সরিষা ব্যবহার এর ইতিহাস জানা যায় এবং তা এখন ও চলমান। সয়াবিন তেল এর এই জনপ্রিয়তার আগে মানুষ সরিষা তেল ব্যবুহার করেছে ব্যাপক হারে। অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড এ ভরপুর এই তেল। এই তেলে সম্পৃক্ত চর্বি ১২% এবং অসম্পৃক্ত চর্বি ৮৮%। তাছাড়া ওমেগা আলফা-৩ এবং ওমেগা আলফা-৬ রয়েছে এই তেলে। ভিটামিন-ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এই তেলে। রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে হৃদরোগ এর ঝুঁকি কমায়। এই তেলের স্মোকিং পয়েন্ট ২৪৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
কুসুম ফুলের তেল ( সাফফ্লাওয়ার অয়েল )
কুসুম ফুলের তেল এ অধিক পরিমাণে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকে (সম্পৃক্ত চর্বি ৯% এবং অসম্পৃক্ত চর্বি ৯১%) যা আপনার শরীরে মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে আপনাকে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ এর ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখে। প্রতিদিন মাত্র দুই টেবিল চামচ কুসুম ফুলের তেল গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা আপনাকে রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে করনারি আর্টারি ডিজিস এর ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভাল কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কুসুম তেলের স্মোকিং পয়েন্ট হল ২৬৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা অধিক উত্তাপে রান্নার জন্য উপযুক্ত এবং নিরাপদ।
ক্যানোলা তেল
এটি একটি উদ্ভিজ্জ তেল। প্রচুর অসম্পৃক্ত চর্বি রয়েছে এই তেলে। এই তেলে সম্পৃক্ত চর্বি ৮% এবং অসম্পৃক্ত চর্বি ৯২%। এই তেল রক্তের কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারি ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড এই তেল এ পাওয়া যায়। এই তেলের স্মোকিং পয়েন্ট ২০৪ ডিগ্রী এর নিচে। অধিক উত্তাপে রান্নার জন্য অনুপযুক্ত তেল।
অলিভ অয়েল
জলপাই নিষ্কাষন করে এই তেল তৈরি করা হয়। বিভিন্ন ঔষধি গুন সমৃদ্ধ এই তেল ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে শত বর্ষ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। সয়াবিন বা ক্যানোলার মত অলিভ অয়েলও উচু মাত্রার অসম্পৃক্ত চর্বি রয়েছে (সম্পৃক্ত চর্বি ১৪% এবং অসম্পৃক্ত চর্বি ৮৬%) এবং সম্পৃক্ত চর্বির পরিমান খুবই কম। এই তেল রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ এ সাহায্য করে এবং কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিস এর ঝুঁকি কমায়। বাজারে দুই ধরণের অলিভ অয়েল পাওয়া যায়। এক্সট্রা ভার্জিন এবং এক্সট্রা লাইট। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল অপেক্ষাকৃত দামি এবং বেশ সুগন্ধি যুক্ত। বিভিন্ন ধরণের সালাদ ও কাঁচা ফল বা সবজির খাবারে সুগন্ধি বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। আর রান্নার জন্য ব্যবহার করা হয় এক্সট্রা লাইট অলিভ অয়েল। এক্সট্রা লাইট অলিভ অয়েল এর স্মোকিং পয়েন্ট হল ২৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
নারকেল তেল
যে কোন তেল এর তুলনায় নারকেল তেলে সবচেয়ে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি আছে (সম্পৃক্ত চর্বি ৯২% এবং অসম্পৃক্ত চর্বি ৮%)। সম্পৃক্ত চর্বি হলেও এর কার্বন অণুর গঠন একটু দুর্বল প্রকৃতির,যার ফলে এই বন্ধন সহজেই ভেঙ্গে যায় এবং খাদ্য হজম সহজ করে তাকে সহজেই শক্তিতে পরিণত করেতে পারে। শরীরে লিউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে নারকেল তেল। অর্গানিক ফ্যাট নিয়ে গবেষনা করে এমন গবেষকদের মতে নারকেল তেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ প্রতিরোধে কাজ করে। নারকেল তেল এর স্মোকিং পয়েন্ট ২৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
রাইস ব্রান অয়েল বা তূষের তেল
বাজারে নতুন এই তেল নিয়ে রয়েছে বেশ আগ্রহ। ধানের তুষ এবং কুঁড়া থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় এই তেল উৎপাদন করা হয়। ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ এই তেলে হার্ট বান্ধব উপাদান রয়েছে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই তেল হার্ট এর জন্য উপকারি এবং রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। এই তেলে সম্পৃক্ত চর্বি ২০% এবং অসম্পৃক্ত চর্বি ৮০%। অধিক উত্তাপে রান্না করার মত স্মোকিং পয়েন্ট (২৫৪ ডিগ্রী) রয়েছে এই তেল এর মধ্যে।
তিল এর তেল
সুদূর অতীত কাল থেকে বহুল ব্যবহৃত একটি উদ্ভিজ্জ তেল। তিল এর বীজ থেকে এই তেল উৎপাদন করা হয়। শুধু রান্নার জন্য নয়, রান্না ছাড়াও এর আরও বিবিধ ব্যবহার রয়েছে। খাবারের সুগন্ধি বৃদ্ধির জন্য এই তেল ব্যবহার করা হয়। এই তেল এ সম্পৃক্ত চর্বি ১৪% এবং অসম্পৃক্ত চর্বি ৮৬%। এই তেলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। হার্ট সুস্থ্য রাখায় এর রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। রক্তের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, আর্থাইটিস এর চিকিৎসায় এর ব্যবহার রয়েছে। এই তেল ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি প্রবেশ করতে পারে না। উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নায় এই তেলের রয়েছে এক বিশেষ সুবিধা। এই তেলের স্মোকিং পয়েন্ট হল ৪১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
সূর্যমুখী তেল
দামী তেলের তকমা রয়েছে এই তেলের। প্রধাণত অসম্পৃক্ত চর্বি দিয়ে গঠিত এই তেল (সম্পৃক্ত চর্বি ১১% এবং অসম্পৃক্ত চর্বি ৮৯%)। এই তেলে স্মোকিং পয়েন্ট ২২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা দৈনন্দিন রান্নার জন্য বিশেষ উপযোগী। ওজন নিয়ন্ত্রণ করা ও হার্ট ভালো রাখে এই তেল। প্রচুর প্রাণশক্তি রয়েছে এই তেলে। হাড় ভালো রাখা, ব্যাথা দূর করা, চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখা, মাথা ঠান্ডা রাখা, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখার মত অনেক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে এর ব্যবহারে।
অ্যাভোকাডো তেল
অ্যাভোকাডো তেল তৈরি হয় অ্যাভোকাডো ফল থেকে। এই তেল অসম্পৃক্ত চর্বি দিয়ে গঠিত। এই তেল সম্পৃক্ত চর্বি ১২% এবং অসম্পৃক্ত চর্বি ৮৮%। এই তেল কোলেস্টেরল বিহীন এবং ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ। এই তেল উচ্চ রক্তচাপ কমায়, আর্থাইটিস এর উপসর্গ কমায়। অ্যাভোকাডো তেল ত্বকে ব্যবহার করে ত্বকের নানা সমস্যা দূর করা হয়। এই তেল কোলেস্টেরল বিহীন হওয়ায় এটি হার্টের জন্য উপকারি। অ্যাভোকাডো তেল এর স্মোকিং পয়েন্ট বেশি হওয়ায় (২৭১ ডিগ্রী সেলসিয়াস) এটি রান্না করার জন্য উপযুক্ত ও নিরাপদ।
তেল সংরক্ষণ
শুধু ভালো দেখে একটা তেল নির্বাচন করলেই হবে না। রান্নার জন্য সঠিক তেলটি পেতে হলে সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে জানতে হবে। তেল সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে না পারলে আপনার বাছাই করা সঠিক তেলই আপনার শারীরিক অসুবিধার কারণ হতে পারে। সঠিক ভাবে তেল সংরক্ষণ করার জন্য নিচের উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারেন,
-
তেল এর পাত্রের মুখ ভালো ভাবে লাগিয়ে রাখতে হবে ,নয়তো বাতাসের অক্সিজেন তেল এর সাথে বিক্রিয়া করে তেল এর গুনাগুন নষ্ট করে দেয়।
-
তেল এর পাত্র আলো থেকে দূরে ও শীতল স্থানে রাখুন।
-
স্বচ্ছ পাত্র ব্যবহার না করে গাঢ় রং এর পাত্র ব্যবহার করুন,যাতে করে সূর্যের আলো পাত্রে প্রবেশ করতে না পারে।
-
আয়রন বা কপার এর পাত্রে তেল রাখবেন না।
-
তেল ভালো থাকার সময়সীমা নোট করে রাখুন। যেমন, উৎপাদন এর তারিখ হতে অলিভ অয়েল ভালো থাকে ১৫ মাস, তিল এর তেল ভালো থাকে ৬ মাস, রাইস ব্রান, সয়াবিন, সূর্যমুখি ভালো থাকে ১২ মাস।
-
বেশি সময় সংরক্ষণ করতে চাইলে তেল রেফ্রিজারেটরে রাখতে পারেন।
-
দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করতে না চাইলে রান্না ঘরে ছোট পাত্র রাখুন তেল এর জন্য।
আপনার রান্নার ঘরের মাস্টার অয়েল কে হবে সেটা আপনার বিচার। যত সব কথা বার্তা শুধু আপনার বিচার এর মানদণ্ড কে তথ্যবহুল করার জন্য। বিচার করার দায়িত্ব আপনার। আপনার রান্না ঘরে কি শুধু সয়াবিনই থাকবে নাকি সয়াবিন এর বিকল্প অ্যাভোকাডো, সরিষা, তিল বা সূর্যমুখিকে বেছে নিবেন, তা শুধু আপনারই ইচ্ছা। যদি আপনি ভোজন রসিক আবার স্বাস্থ্য সচেতন হন, তাহলে রান্না ঘর সামলাতে কয়েকটি তেল কে আলাদা আলাদা পাত্রে স্থান দিতে পারেন আপনার রান্না ঘরে। তবে যে বিষয় গুলোকে অবশ্যই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে তা হল তেল এর চর্বি গঠন, এর স্মোকিং পয়েন্ট ও তেলের সংরক্ষণ পদ্ধতি। তবেই তেল আপনার সু-স্বাস্থ্যের কারণ হয়ে উঠবে।
ত্বকের যত্নে নারকেল তেল এর চমৎকার কিছু গুণাগুণ!
যে ১১ টি খাবারে শর্করার পরিমান বেশি থাকে!