মরিঙ্গা পাউডার কি আসলেই সুপারফুড, গবেষণা কি বলছে

সজনে পাতার গুঁড়া বা মরিঙ্গা গুঁড়া হচ্ছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও আয়রন সহ বিভিন্ন ধরণের খনিজের একটি দুর্দান্ত উৎস। মরিঙ্গা পাউডার ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ত্বকের যত্নে এবং ক্লোরেস্টরল নিয়ন্ত্রণ সহ বিভিন্ন জটিল রোগে অত্যন্ত কার্যকরী।

 

সজনে পাতা গুঁড়ার ১৫টি বিস্ময়কর উপকারিতা

 

ইদানিং সজনে গুঁড়া নিয়ে চারদিকে বেশ আলোচনা হচ্ছে। তবে আমাদের দেশে কিন্তু সজনের ব্যবহার বেশ পুরোনো। সজিনার ডাঁটা সবজি হিসেবে ভীষণ জনপ্রিয়, বিশেষ করে ডালের সাথে এর স্বাদ কিন্তু অতুলনীয়। আর সজনে পাতা খাওয়ার চলও অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। শাক হিসেবেও এটা ব্যবহার হয়।

তবে বর্তমানে যেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা হল সজনে পাতার গুঁড়া। আর এর ইংরেজী নাম মরিঙ্গা পাউডার যা অনলাইনে দেধারছে বিক্রি হচ্ছে।

 

বহুকাল হতে সজনে গাছের বাকল পাড়াগায়ে সুস্বাদু আচার তৈরিতে, কখনো বা শাক অথবা ভর্তা হিসেবে খাবার তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে যুগের পরিক্রমায় এর স্বাস্থ্য উপকারিতা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত হবার পর থেকে দেশে দেশে এর কদর বেড়েছে বহুগুণে। 

 

তাই তো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বান্যিজিকভাবে এই সজনে পাতা বহুলভাবে চাষ হচ্ছে। ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং ইন্দোনেশিয়া সজনে পাতা রপ্তানি করে বড় অঙ্কের মুনাফা অর্জনে এগিয়ে আছে। 

আমাদের আজকের আর্টিকেলে তাই সুস্বাস্থ্যের মূল মন্ত্র সজনে পাতার গুঁড়ার এই কালজয়ী উপকারিতাগুলো সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করব। একাধিক কার্যসিদ্ধির মহৌষধ এই মরিঙ্গা পাউডার উপকারিতা এবং সজনে পাতা বিষয়ক খুঁটিনাটি টিপসগুলো জানতে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন। 

 

সজনে পাতার আবাসস্থল

মরিঙ্গা ওলিফেরা নামক এই উদ্ভিদ ড্রামস্টিক ট্রি, গোল্ডেন রেইন ট্রি, অলৌকিক গাছ, বেন অয়েল ট্রি বা হর্সরাডিশ ট্রি ইত্যাদি নামেও পরিচিত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে লোকেরা এই উদ্ভিদটি অগণিত স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য ব্যবহার করে আসছে। মরিঙ্গা ওলিফেরা একটি দ্রুত বর্ধনশীল, খরা-প্রতিরোধী গাছ, যা ভারতীয় উপমহাদেশের স্থানীয় এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপকভাবে জন্মায়। 

সাধারণত এই উদ্ভিদে লম্বা, সরু, ত্রিকোণাকার বীজ থাকে, যে কারণে একে ড্রামস্টিক গাছ এবং এশিয়ার সামুদ্রিক বা দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলে জন্মানোর ফলে মালুংগে নামেও বহুল পরিচিত। এটি তার কচি বীজ এবং পাতার জন্য ব্যাপকভাবে চাষ হয়, কখনো বা সবজি হিসাবে অথবা ঐতিহ্যগত ভেষজ ওষুধ তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

 

 

সুপারফুড মরিঙ্গা পাউডার 

মরিঙ্গাকে পুষ্টির ডিনামাইট তথা ন্যাচারাল মাল্টি-ভিটামিন বলেছেন পুষ্টি বিজ্ঞানীরা। এজন্য মরিঙ্গা গাছের পাতাকে  ‘সুপার ফুড অব নিউট্রিশন’ও বলা হয়। মরিঙ্গা অলৌকিক পাতা বা মিরাকল ট্রি নামেও সুপরিচিত।

 

কুলি কুলি ফুডসের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও, লিসা কার্টিস মরিঙ্গা পাউডার এর উপকারিতা প্রসঙ্গে তার একটি বক্তব্যে বলেন, "মরিঙ্গা পাউডার এই গ্রহের সবথেকে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন, গাঢ় সবুজ শাকগুলোর একটি। এটি প্রোটিন, অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড, ২৭টি ভিটামিন এবং ৪৬ টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ।" 

 

মরিঙ্গা পাউডারে আরও রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, বি ভিটামিন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন সি এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। সামগ্রিকভাবে, মরিঙ্গা পাউডার ম্যাক্রো- এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এবং অন্যান্য জৈব সক্রিয় যৌগগুলিতে সমৃদ্ধ যা আপনার শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

 

সজনে পাতার পুষ্টিগুণ

সজনে পাতায় উপস্থিত মানব দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এমন পুষ্টি উপাদান গুলো হলো-

  • ভিটামিন এ

  • ভিটামিন বি ১ (থায়ামিন)

  • ভিটামিন বি ২ (রিবোফ্লাভিন)

  • ভিটামিন বি ৩ (নিয়াসিন)

  • ভিটামিন সি (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড)

  • ক্যালসিয়াম

  • পটাসিয়াম

  • আয়রন বা লৌহ

  • ম্যাগনেসিয়াম

  • ফসফরাস

  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

  • ক্যারোটিন

  • অ্যামিনো অ্যাসিড

  • বিভিন্ন প্রকারের ফেনোলিক এসিড

  • এমনকি এতে স্বল্প পরিমাণ চর্বি উপাদানও আছে, তবে কোন ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল নেই।

 

মরিঙ্গা পাউডার উপকারিতা 

ঐতিহ্যবাহী মরিঙ্গা পাউডার বা সজনে পাতার গুঁড়া বর্তমানে বিশ্বব্যাপী উপাদেয় খাবার এবং ঔষধ হিসেবেও বেশ সমাদৃত। এটি স্তন, স্কিন, লিভার, কোলোরেক্টাল এবং অন্যান্য ক্যান্সারের চিকিৎসায় কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত।

সজনে পাতার উপকারিতা আসলে গুণে শেষ করা যাবে না। তবে আমরা এর বিশেষ স্বাস্থ্য উপকারীতাগুলি জানার চেষ্টা করব। আসুন আপনার দেহে সজিনা পাতার গুঁড়া কি কি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে তা জেনে নেই।

 

 

১. ত্বকের যত্নে

  • সজনে পাতায় উপস্থিত রয়েছে আইসোথিওসায়ানেটস, যা ডিটক্সিফিকেশনে সহায়তার মাধ্যমে ত্বক সুস্থ রাখে এবং দেহের বিভিন্ন প্রদাহ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • প্রাণীদের নিয়ে করা বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সজনে বীজের তেল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে ত্বকের ক্ষত দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে।

  • সজিনা পাতার গুঁড়াতে থাকা পুষ্টি উপাদান কোলাজেন উৎপাদন করে ফলে ত্বকের বলিরেখা কমে।

  • ত্বক ছাড়াও সজনে পাতায় নিয়াজিমিসিন যৌগ উপস্থিত থাকে, যা কোষের বিকাশ বাধাগ্রস্থ করে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

  • মরিঙ্গা পাউডার চুলের যত্নেও উপকারী।

 

২. যকৃতের সুরক্ষায়

  • সজনে পাতা নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ থেকে লিভারকে রক্ষা করতে পারে।

  • একটি গবেষণায় পশুদের সজনে পাতা খাওয়ানোর ফলে, ঐ নির্দিষ্ট সংখ্যক পশুর দেহে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কম পাওয়া যায় এবং তাদের লিভারেও কম প্রদাহ দেখা যায়।

 

৩. কিডনি সুরক্ষায়

  • যাদের কিডনি এবং মূত্রাশয়ের সমস্যা আছে, তারা মরিঙ্গা খেলে উপকার পেতে পারে।

  • এটি কিডনিতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ জমা হয়ে পাথর সৃষ্টির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করে, ফলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হবার ঝুঁকি কমে।

  • এইক্ষেত্রে ডাক্তারর পরামর্শ নিয়েই সেবন করা উচিৎ।

 

৪. গ্যাস্ট্রিক এবং পেটের সমস্যা দূর করে

  • সজনে পাতা পেটের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রায় ৮৫% পর্যন্ত রোধ করতে পারে। 

  • এটি পেপটিক আলসার প্রতিরোধক।

  • অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সজনে পাতায় উপস্থিত উপকারী যৌগ সমূহ অত্যন্ত কার্যকরী। ফলে পেটের সমস্যা খুব সহজেই সমাধান হয়ে যায়।

 

৫. হজমে সাহায্য করে

  • মরিঙ্গা পাউডারের নির্যাসে উপস্থিত দ্রবণীয় ফাইবার পানিতে দ্রবীভূত হয়ে জেলিতে পরিণত হয়, যা হজমের সমস্যা দূর করে এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

 

৬. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

  • একইভাবে সজনে পাতার গুঁড়ার অদ্রবণীয় ফাইবার মলে যোগ হয়ে, পাচনতন্ত্রের মধ্যকার কার্যক্রম সহজ করে তোলে, ফলস্বরূপ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হ্রাস পায়। 

 

৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

  • বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে মরিঙ্গা সাহায্য করে। এছাড়া মরিঙ্গা শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়। 

  • সজনের অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলো দেহে রোগজীবাণুর বিকাশ রোধ করতে এবং আলসারেটিভ কোলাইটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

  • এছাড়াও সজনে পাতা খাদ্যবাহিত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, যেমন স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস (এস. অরিয়াস) এবং এসচেরিচিয়া কোলি (ই. কোলি) ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

 

 

৮. ডায়াবেটিস নিরাময় করে

  • সজনে পাতার গুঁড়া রক্তে শর্করা ও ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং ডায়াবেটিস নিরাময় করে।

  • মরিঙ্গা পাউডারে উপস্থিত ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড উল্লেখযোগ্য রূপে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

  • খাবার গ্রহণের পর কোষে গ্লুকোজ (চিনি) নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

  • রোজা বা উপবাসে থাকাকালীন সময়ে সজনে পাতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দেহে ইনসুলিনের মাত্রা, এইচবি১সি বা HbA1C নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

 

৯. মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যায় 

  • আপনার মেজাজ এবং স্নায়ুতন্ত্রের মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, আলঝেইমার রোগ, নিউরোপ্যাথিক ব্যথা, বিষন্নতা সহ মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় সজনে গুঁড়ার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করে।

  • অনেক সময় দেখা যায় পরিশ্রম করার কারণে বা অন্যকোন কারণে প্রচুর মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। এই মাথা ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে মরিঙ্গা সাহায্য করে। এক্ষেত্রে মরিঙ্গা দিয়ে সবজি বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

 

১০. হৃদরোগের চিকিৎসায়

  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান গুলোর মধ্যে সজনে পাতায় উপস্থিত কোয়ারসেটিন যা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করে।

  • কোয়ারসেটিন হচ্ছে এক ধরণের উদ্ভিদ রঞ্জক এবং একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভোনয়েড, যা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যৌগ প্রদাহ প্রতিরোধ করতে পারে এবং হৃদরোগে উল্লেখযোগ্য উপকারী উপাদান হিসেবেও ভূমিকা পালন করে।

  • সুস্থ হৃদক্রিয়া বজায় রাখতে এবং কোলোরেস্টেরলের মাত্রা সঠিক রাখতে সজনে পাতার হাইপো-কোলেস্টেরোলেমিক (লিপিড-হ্রাসকারী) এবং অ্যান্টিথেরেস্কোটিক উপাদান কাজ করে।

 

১১. আর্থ্রাইটিস রোগের চিকিৎসা

  • রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে সজনে পাতার নির্যাস এর অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত কার্যকর।

 

১২. ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা

  • মরিঙ্গা গুড়ায় এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এতে নিয়াজিমিসিন নামে একটি যৌগ রয়েছে, যা ক্যান্সার কোষের বিকাশকে দমন করে।

  • কিছু বিজ্ঞানীর মতে, সজনে পাতা এবং গাছের অন্যান্য অংশের নির্যাসে এমন বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যা ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলতে পারে। যদি আরও গবেষণার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এটি নিশ্চিত করা যেতে পারে যে, মরিঙ্গা স্তন, লিভার, কোলোরেক্টাল এবং অন্যান্য ক্যান্সারের চিকিৎসায় কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে।

 

১৩. হাঁপানির চিকিৎসা

  • মরিঙ্গাতে এমন উপাদান রয়েছে যা হাঁপানি, শ্বাসনালীর সংকোচন এবং শ্বাসনালীতে প্রদাহ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে গবেষকরা গিনিপিগদের মরিঙ্গা নির্যাস দেওয়ার পরে গিনিপিগের ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

১৪. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

  • মরিঙ্গাতে এমন কিছু পদার্থ রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

  • একটি সমীক্ষায়, একদল সুস্থ অংশগ্রহণকারী এক সপ্তাহের জন্য ১২০ গ্রাম রান্না করা মরিঙ্গা পাতা খেয়েছিল এবং অন্য আরেকটি দল তা করেনি। খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর, যারা মরিঙ্গা খেয়েছিলেন তাদের রক্তচাপ কম ছিল।

 

১৫. চোখ ভালো রাখে

  • সজনে পাতার পাউডারে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা ক্যারোটিন, চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অপরিহার্য উপাদান। 

 

মরিঙ্গা পাউডার কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?

মরিঙ্গা নির্যাস স্থূলতার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণ প্রশমিত করতে সাহায্য করতে পারে। সজনে পাতা আসলে সরাসরি ওজন কমায় না, তবে ওজন বৃদ্ধি পায় এমন কারণগুলিকে প্রতিহত করে। যেমন-

  • প্রদাহ প্রতিরোধ করে

  • লিপিড নিয়ন্ত্রণ করে

  • কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়

  • লিভারকে সুরক্ষা দেয়

 

সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম    

সজনে পাতার পাউডার বিভিন্ন স্যুপ, স্ন্যাকস, শাক হিসেবে, ভর্তা বা বিভিন্ন ড্রিংকসে ব্যবহার করতে পারেন। সজনে পাতার স্বাদ পরিপূর্ণ সঠিকভাবে বর্ণনা করা কঠিন, তবে অনেকের মতে এটি গ্রিন টি এর মতো স্বাদযুক্ত আবার অনেকে এটিকে ঘাসের গন্ধের সঙ্গে তুলনা করেন।

 

 

  • এই সজনে পাতা আপনি রসুন, পেঁয়াজ এবং কাঁচা মরিচ কুচির সাথে স্বাদমতো লবণ ও তেল সহযোগে ভর্তা হিসেবে খেতে পারেন।

  • অথবা, অন্যান্য শাকের মতো সাধারণভাবে রান্না করে পরিবেশন করতে পারেন।

  • এছাড়াও আপনি সালাদে, স্যুপের সাথে, কখনো বা বিভিন্ন ধরনের সসেজের সাথে পরিবেশ করেও খেতে পারেন।

  • আপনার প্রতিদিনের সাধারণ পানীয়তে সজনে পাতার পাউডার মিশিয়ে অসাধারণ স্বাস্থ্যকর একটি ড্রিংকসও আপনি উপভোগ করতে পারেন।

  • গ্যাসের সমস্যা আমাদের সবারই একটা কমন সমস্যা। এক্ষেত্রে মরিঙ্গা পাতার রস লবণ দিয়ে খেলে গ্যাসের  সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

  • এছাড়া মরিঙ্গা পাতা অনেকক্ষণ জ্বাল দিয়ে রস বের করে শুকনো আদার গুড়ার সাথে খেলেও গ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

 

সজনে পাতা কখন খাওয়া নিরাপদ?

  • মরিঙ্গা গুঁড়া সাধারণত তখনই নিরাপদ যখন এর পাতা, ফল এবং বীজ খাদ্য হিসাবে খাওয়া হয়।

  • মরিঙ্গা পাতা এবং বীজ সাধারণত নিরাপদ হয় যখন এটি ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়, তবে তা স্বল্পমেয়াদী।

  • মরিঙ্গা পাতাযুক্ত পণ্যগুলি ৬ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। আর, মরিঙ্গা বীজ ধারণকারী পণ্যগুলি ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে।

যদিও সজনের বিষাক্ততার বিশেষ কোন অকাট্য দলিল অনুপস্থিত, তবে মরিঙ্গা শিকড় এবং মূলের ছাল অনিরাপদ হিসাবেই গণ্য করা হয়। শিকড় এবং মূলের ছালে বিষাক্ত পদার্থ থাকে।

কিছু কিছু বিশেষজ্ঞগণের মতে সজনে গাছের মূলে উপস্থিত স্পিরোচিনের (একটি বিষাক্ত পদার্থ) প্রভাবে সজনে উদ্ভিদের মূল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা অনিরাপদ। অতএব, এটি শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করার পূর্বে তাদের শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনায় ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে গ্রহণ করা উত্তম হবে।

 

মরিঙ্গা পাউডার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

সজনে পাতার তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে, সজনে পাতা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং উপকারী হওয়া সত্ত্বেও অতিরিক্ত খাওয়া অনুচিত। প্রবাদ আছে, “উনো ভাতে দুটো বল, অতি ভাতে রসাতল।” অর্থাৎ এটি উপকারি বটে, তবে তা পরিমিত পরিমাণ। যাইহোক, আপনি যদি মরিঙ্গা পাউডার ব্যবহার করার ব্যাপারে দ্বিধায় থাকেন তবে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিবেন।

 

শেষকথা

সজনে পাতা আন্টিঅক্সিডেন্ট ও ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এবং ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি পাতা। এই সজনে পাতার গুঁড়া আপনার শরীরের ক্ষত দ্রুত নিরাময় হতে শুরু করে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা সঠিক রাখা পর্যন্ত সর্বপ্রকার দ্বায়িত্ব পালন করে থাকে।

তবে মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। এর তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকলেও নিয়ম মেনে সেবন করা উত্তম। আর বিশেষ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। 

 

আরও পড়ুনঃ

পর্যাপ্ত ঘুম পেতে মেনে চলুন এই ৮টি উপায়

সর্দি-কাশি হলে শান্তিতে ঘুমাতে মেনে চলুন এই ৮ টিপস

শরীরচর্চা যেভাবে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে

 

Default user image

মেহেবুবা হাসান, লেখক, আস্থা লাইফ

সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য ও জ্ঞান সমুদ্রের মাঝে জন্ম নেওয়া আমি এক সামান্য মানুষ, মেহেবুবা হাসান। উদ্ভিদ তত্ত্বের বই পুস্তকের বাইরে সাহিত্যকে ভালোবেসে কলম হাতে নেওয়া। আমার বিশ্বাস প্রতিটি মানুষের নিজস্ব ভাষা থাকে, আমার ভাষা কলম। সমাজকে রাতারাতি পরিবর্তন বা পরিমার্জনের আশা ব্যতিরেকে নিজস্ব পরিতৃপ্তি এবং মানুষের সামান্যতম উপকারে আসা আমার একান্ত প্রচেষ্টা।

Related Articles