ওমেগা-৩ কি? ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার কোনগুলি?
দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যতম একটি ফ্যাট হচ্ছে ওমেগা ৩। হাতের নাগালেই রয়েছে ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ খাদ্য যা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় থাকলে সুস্থ থাকা যায় অনায়াসেই।
সুস্থ-সুন্দর ও নীরোগ জীবনযাপন করার ইচ্ছা আমাদের সকলেরই যা কিনা সঠিক খাদ্য গ্রহণের ফলে অনেকটাই সম্ভব। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যতালিকার মধ্যে অন্যতম একটি খাদ্য উপাদান কিন্তু ফ্যাট যা নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে মানুষের মধ্যে। ওমেগা ৩ এমনই একটা ফ্যাট যা নিয়মিত ও সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করা আবশ্যক।
ওমেগা ৩ আসলে কি এবং কোন কোন খাবার থেকেই বা পাবেন এসব নিয়ে বিস্তারিত জানুন এই লেখায়।
ওমেগা ৩ কি?
ওমেগা ৩ হলে এক ধরণের পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড। জেনে রাখা ভলো, ফ্যাটি এসিডকে মূলত দুইভাগে ভাগ করা হয়- স্যাচুরেটেড ও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড। ওমেগা ৩ হচ্ছে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড। আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিডকে গুড বা হেলদি ফ্যাট ও বলা হয়।
দেহের জন্য অত্যাবশকীয় খাদ্য উপাদান ওমেগা ৩ মানুষের সুস্থ ভাবে বেচে থাকার জন্য যতটুকু দরকার তা শরীরে নিজে নিজে তৈরী হতে পারে না। এটি খাদ্য উৎস থেকে গ্রহণ করতে হয়।
ওমেগা ৩ এর প্রকারভেদ
ওমেগা ৩ প্রধানত তিন ধরণের হয়-
১. আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড
আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিডকে এসেনশিয়াল ওমেগা ৩ বলা হয় কেননা এটি দেহে নিজে নিজে তৈরি হতে পারে না। খাবার এর মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়।
এটাও সবচেয়ে বেশি প্রোয়জনীয় ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। সাধারণভাবে প্রাকৃতিক বিভিন্ন খাবারে পাওয়া যায়, যেমন ফ্ল্যাক্সসীড, চিয়া বীজ, বাদাম এবং কিছু সব্জির তেলে।
২. ইকোসাপেন্টানোইক অ্যাসিড
ইকোসাপেন্টানয়ইক অ্যাসিড এবং ডেকোসাহেক্সানোয়াইক অ্যাসিড দেহ নিজে নিজেই তৈরি করতে পারে, কিন্তু তৈরী হওয়ার প্রক্রিয়া বেশ ধীরগতির এবং খুব কম পরিমাণেই তৈরি হয়। ইকোসাপেন্টাইনোয়াইক অ্যাসিড বিভিন্ন মাছে পাওয়া যায়, যেমন স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডিন, এবং টুনা।
৩. ডেকোসাহেক্সানোইক অ্যাসিড
ডেকোসাহেক্সানোইক অ্যাসিড মাছের তেলে পাওয়া যায়।
ওমেগা ৩ কি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী?
এক কথায় শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্য ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড জরুরি। সংক্ষেপে এবং সহজ ভাষায় বলা যায় ওমেগা ৩ শরীর সুস্থ রাখতে, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। নিয়মিত ওমেগা ৩ খাদ্য তালিকায় থাকা মানে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক অংশে কমিয়ে আনা।
ওমেগা-৩ এর উৎস কি কি?
ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, বিভিন্ন বীজ ও বাদাম। তবে ওমেগা ৩ গ্রহণের উৎকৃষ্ট উৎস হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। মাছের মধ্যে রয়েছে-
-
ম্যাকারেল,
-
সার্ডিন,
-
টুনা,
-
হেরিং।
তবে বিভিন্ন কারনেই যেমন অ্যালার্জি হলে অনেকে মাছ খেতে পারেন না। আবার কেউ কেউ ভেজেটেরিয়ান হওয়ার কারণে মাছ খান না। তারা অবশ্যই প্লান্ট বেইজ উৎস থেকে ওমেগা ৩ গ্রহণ করবেন। বীজের মধ্যে রয়েছে-
-
তিসি বীজ,
-
চীয়া সিড,
-
কিডনী বিন,
-
সয়াবিন,
-
ক্যানোলা অয়েল,
-
বিভিন্ন বাদাম যেমন আখরোট।
প্রতিদিন কি পরিমাণ ওমেগা-৩ খাবেন?
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যে দেহের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এ ব্যপারে নিশ্চয়ই কারোরই কোন সন্দেহ নেই। তবে কি পরিমাণ ওমেগা ৩ গ্রহণ করা শরীরের জন্য দরকার সেটা অনেকেরই অজানা।
-
প্রতিদিন কি পরিমাণ ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড গ্রহণ করা প্রয়োজন সেটি নির্ভর করে শরীরের আলফা লিনোলেয়িক এসিড কতটুকু দরকার তার উপর। কেননা আলফা লিনোলেয়িক এসিডই হচ্ছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
-
তবে হেলদি ডায়েটের জন্য ডেকোসাহেক্সানয়িক এসিড ও ইকোসাপেন্টানোয়িক এসিড ও গুরুত্বপূর্ণ।
-
এছাড়াও শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, মেডিক্যাল হিস্ট্রি, বয়স লিঙ্গভেদে একেক ব্যক্তির একেক পরিমাণে ওমেগা ৩ দরকার হয়।
-
তবে সাধারণত গড়ে একজন পুরুষের প্রতিদিন ১.৬ গ্রাম ও মহিলাদের ১.১ গ্রাম ওমেগা ৩ গ্রহণ করতে হবে।
-
গর্ভাবস্থায় এর চাহিদা কিছুটা বৃদ্ধি পায় তখন প্রায় ১.৪ গ্রাম ওমেগা ৩ দরকার হয়।
-
উল্লেখ্য বয়সভেদে বিভিন্ন শারিরীক অসুস্থতায় ও দেহে এর ঘাটতি হলে অবশ্যই শরীরে ওমেগা ৩ গ্রহণের চাহিদার তারতম্য হবে।
ওমেগা ৩ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম?
ঔষধের দোকানে বা অনলাইনে এখন অনেক ব্র্যান্ডের ওমেগা ৩ সাপ্লিমেন্ট বা ওমেগা ৩ ক্যাপসুল পাওয়া যায়। অনেকে এমনেতেই তা কিনে খাচ্ছেন। তবে এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে কোন সাপ্লিমেন্টই কখনও চিকসৎকের পরামর্শ ব্যতিত গ্রহণ করা যাবে না।
প্রথমেই বলে রাখি ওমেগা ৩ এর ঘাটতি হলে কি ধরণের লক্ষণ শরীরে দেখা দিবে তা নিয়ে তেমন কোন গবেষণা এখনও হয় নি। তবে গবেষকরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ওমেগা ৩ গ্রহণের স্বাস্থ্য উপকারীতা নিয়ে।
চিকিৎসক ও ডায়েটিশিয়ান বৃন্দ শরিরীক অবস্থা ও বিভিন্ন রোগের প্রতিকারের জন্য ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ডিপ্রেশন দূর করতে বা প্রতিরোধে, ভালো ঘুমে সহয়তা করতে চুল ও ত্বক সুন্দর রাখার জন্য অনেক সময় ই ওমেগা ৩ সাপ্লিমেন্ট দেয়া হয় এছাড়াও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ রোগীর শরীরে লিপিড লেভেল কেমন হৃদরোগের ঝুঁকি কেমন এসব বিবেচনা করে ওমেগা ৩ সাপ্লিমেন্ট দিয়ে থাকেন।
ওমেগা ৩ গ্রহণে কী সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার?
এতক্ষণে তো জেনে গেলেন ওমেগা ৩ এর বেস্ট সোর্স হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। এছাড়াও বাদাম ও বিভিন্ন বীজেও কিন্তু ভালো পরিমাণে ওমেগা ৩ পাওয়া যায়। তবে কিছু মাছ গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে কেননা এতে রয়েছে বেশি পরিমাণে মার্কারি।
যেসব মাছ অন্য মাছ খায় সেসব মাছের মধ্যে মার্কারির পরিমাণ বেশি থাকে যেমন কিং ম্যকরেল, সার্ক, ব্ল্যাক ফিশ, ক্যাট ফিশ। অতিরিক্ত মার্কারি গ্রহণের ফলে মার্কারী পয়জনিং হতে পারে। গর্ভাবস্থায় এসব মাছ গ্রহণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এছাড়াও এক দিনে ৩ গ্রাম এর বেশি ওমেগা-৩ নিয়মিত গ্রহণ করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে কারন অতিরিক্ত ওমেগা ৩ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
পরিশেষে
সর্বোপরি স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিয়মিত খাদ্য তালিকায় ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড রাখতে হবে। শরীর সুস্থ রাখতে এর গুরুত্ব অভাবনীয়।