সজিনা পাতার ৩০টি আশ্চর্যজনক উপকারিতা!
আজ আপনাদের এমন একটি যাদুকরী উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করব যা শত শত রোগ সমাধানে একাই একশ! হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। মরিঙ্গা অর্থাৎ সজনির কথাই বলছি। মরিঙ্গাকে কিন্তু মিরাকেল ট্রি ও বলা হয়ে থাকে এর অসম্ভব ঔষধি গুণের জন্য।
নিশ্চয়ই আপনি মরিঙ্গার সবজি খেয়ে থাকবেন। আর যদি না খেয়ে থাকেন, তাহলে এখন থেকে প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় মরিঙ্গাকে রাখুন। কেননা, এটির স্বাদ যেমন অতুলনীয়, তেমনি এর ভালো পুষ্টিগুণও রয়েছে।
মরিঙ্গার পুষ্টিগুণ
মরিঙ্গাকে পুষ্টির ডিনামাইট তথা ন্যাচারাল মাল্টি-ভিটামিন বলেছেন পুষ্টি বিজ্ঞানীরা। এজন্য মরিঙ্গা গাছের পাতাকে ‘সুপার ফুড অব নিউট্রিশন’ও বলা হয়। মরিঙ্গাতে আছে-
-
ক্যারোটিন
-
অ্যামিনো অ্যাসিড
-
বিভিন্ন প্রকারের ফেনোলিক এসিড
-
দুধের চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম
-
ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক
-
কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি
-
কলার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি পটাসিয়াম
-
এছাড়া মানুষের শরীরের অত্যাবশ্যকীয় আটটি অ্যামিনো অ্যাসিডের চাহিদা মরিঙ্গা পাতা পূরণ করে।
মরিঙ্গার বা সজিনা পাতার উপকারিতা
বর্তমান সময়ে নির্ভেজাল খাবারের অভাবে আমাদের শরীরে এমনেতেই পুষ্টির ঘাটতি দেখা যায় এবং সেই সাথে বিভিন্ন রোগ বালাইও দেখা দেয়। আপনারা কিন্তু বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানে প্রতিদিন মরিঙ্গা খেতে পারেন। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, মরিঙ্গার বহুমুখী উপকারিতা-
১. ত্বকের যত্নে
অনেকসময় সারাদিন রোদে থাকার কারণে বা পানিশূণ্যতার অভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা কিছুটা কমে যায়। মরিঙ্গা সেবন করলে শুষ্ক ত্বকও ফুটে ওঠে। শুধু তাই নয়, মরিঙ্গা আপনার মুখের ব্রণ নির্মূল করে এবং আপনার ত্বক পরিষ্কার করে তোলে।
২. মহিলাদের পিরিয়ডের সমস্যায়
নারীদের পিরিয়ডের সময়ে মরিঙ্গা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৩. গর্ভবতী মায়েদের যত্নে ও বুকের দুধ বৃদ্ধিতে
গর্ভবতী নারীদের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা মরিঙ্গা খেলে দূর হয়। মরিঙ্গা সেবন করলে গর্ভবতী নারীদের যেমন উপকার হয়, তেমনি তাদের সন্তানদের শরীরেও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করবেন।
এছাড়া মায়ের বুকের দুধে ঘাটতি হতে পারে। মরিঙ্গা সেবনে সেই ঘাটতি পূরণ হয়। তাই ইফতারে মরিঙ্গা সেবন করা যেতে পারে।
৪. শিশুদের হাড় ও দাঁত গঠনে
শিশুদের জন্যও মরিঙ্গা বেশ উপকারী। মরিঙ্গা শিশুদের দেহে ক্যালসিয়ামের যোগান দেয়। এছাড়া, হাড় ও দাঁত গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৫. মাথা ব্যথা উপশমে
অনেক সময় দেখা যায় পরিশ্রম করার কারণে বা অন্যকোন কারণে প্রচুর মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। এই মাথা ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে মরিঙ্গা সাহায্য করে। এক্ষেত্রে মরিঙ্গা দিয়ে সবজি বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
৬. খাবারে অরুচি ও হজমে সাহায্য করে
খাবারে অরুচির সমস্যা হলে, মরিঙ্গা সেই সমস্যা দূর করে। মরিঙ্গার পাতার শাক ও ভর্তা খেলে খাবারের রুচি বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া হজমে সমস্যা হলে মরিঙ্গা খেলে উপকার পাওয়া যায়। এক চামচ মরিঙ্গার রস ও এক চা চামচ মধু নারকেলের পানির সাথে মিশিয়ে খেলে পাচক সম্পর্কিত সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া মরিঙ্গা ফুল দুধের সাথে মিলিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৭. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মরিঙ্গা সাহায্য করে। এর প্রতিকারে পরিমাণ মত মরিঙ্গা পাতার রস খাওয়া যেতে পারে।
৮. বমি রোধে
বমি বমি ভাব হলে বা বমি হলে মরিঙ্গা খাওয়া যেতে পারে। এতে বেশ আরাম মিলবে।
৯. হাঁপানি রোগ প্রতিকারে
হাঁপানি রোগীদের জন্য মরিঙ্গা ফুলের রস বেশ উপকারী।
১০. ডায়রিয়া রোগের সমাধানে
ডায়রিয়া, কোলাইটিস ইত্যাদি সমস্যাগুলো সমাধানে মরিঙ্গা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
১১. কিডনি রোগীদের যত্নে
যাদের কিডনি এবং মূত্রাশয়ের সমস্যা আছে, তারা মরিঙ্গা খেলে উপকার পেতে পারে। এইক্ষেত্রে ডাক্তারর পরামর্শ নিয়েই সেবন করা উচিৎ।
১২. ক্লান্ত দূরীকরণে
আমাদের অনেকেরই কাজ করার ফলে শরীর বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং শরীর ব্যথা হয়। এ সমস্যা সমাধানে মরিঙ্গা খাওয়া যেতে পারে। মরিঙ্গা সেবনে শরীরের শক্তিও বৃদ্ধি পায়।
১৩. মেজাজ ঠিক রাখতে
আমাদের অনেকসময় মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। মন-মেজাজ ভালো রাখার জন্য মরিঙ্গা খাওয়া যেতে পারে।
১৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে মরিঙ্গা সাহায্য করে। মরিঙ্গা শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়।
১৫. ক্যান্সার রোগী উপশমে
ক্যান্সার রোগীদের জন্যও মরিঙ্গা উপকারী। শরীরে রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপিতে মরিঙ্গা সাহায্য করে থাকে।
১৬. গ্যাসের সমস্যা সমাধানে
গ্যাসের সমস্যা আমাদের সবারই একটা কমন সমস্যা। এক্ষেত্রে মরিঙ্গা পাতার রস লবণ দিয়ে খেলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া মরিঙ্গা পাতা অনেকক্ষণ জ্বাল দিয়ে রস বের করে শুকনো আদার গুড়ার সাথে খেলেও গ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৭. কুকুরের কামড়ে উপকারী
কুকুর কামড় দিলে সেই কুকুরের বিষ ধ্বংস করতে মরিঙ্গা সাহায্য করে। মরিঙ্গার পাতা পিষে এর রসের সাথে রসুন, হলুদ, লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়।
১৮. জ্বর ও সর্দি উপশমে
জ্বর জ্বর অনুভূত হতে পারে। সেক্ষেত্রে মরিঙ্গা পাতার শাক খেলে জ্বর দূর হয়। এছাড়া ইফতারে ঠান্ডা শরবত বা পানি খাওয়ার ফলে সর্দির সমস্যা হতে পারে যা মরিঙ্গা খেলে দূর হয়।
১৯. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করতে মরিঙ্গা ফুল খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতেও মরিঙ্গা ফুল খেলে উপকার পাওয়া যায়।
২০. বাতের ব্যথা সারাতে
বাতের ব্যথা দূর করতে মরিঙ্গার ফল নিয়মিত রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।
২১. হৃদরোগে কার্যকরী
হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মরিঙ্গা ফুল খেলে উপকার পেতে পারে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
২২. রক্তস্বল্পতা প্রতিকারে
অনেকরই রক্তস্বল্পতার সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানে মরিঙ্গা বেশ কার্যকরী।
২৩. স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে মরিঙ্গা সাহায্য করে থাকে।
২৪. ওজন কমাতে
অতিরিক্ত মোটা হলে মরিঙ্গা শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে চায়ের সাথে মরিঙ্গা গুড়া খেলে উপকার পাওয়া যায়।
২৫. তারুণ্য ও যৌন শক্তি ধরে রাখতে
তারুণ্য ধরে রাখতে অর্থাৎ অকালে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে মরিঙ্গা বেশ কার্যকরী। এছাড়াও যৌনসক্ষমতা বৃদ্ধিতে মরিঙ্গা কার্যকর ভূমিকা রাখে।
২৬. চুলের যত্নে
চুলের সমৃদ্ধিতে মরিঙ্গা বেশ উপকারী। চুলকে ভিতর থেকে মজবুত ও শক্ত করে মরিঙ্গা,এছাড়া চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়।
২৭. শ্বাসকষ্টের সমস্যা সমাধানে
শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে মরিঙ্গার রস খেলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
২৮. দাঁতের যত্নে
দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া,মাড়ি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার সমাধানে মরিঙ্গা সাহায্য করে।
২৯. হেঁচকি প্রতিকার করে
হেঁচকি উঠলে মরিঙ্গা পাতার রসের সাথে দুধ পান করলে হেঁচকি দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।
৩০. কৃমিনাশক রোগে কার্যকরী
কৃমিনাশক হিসেবেও মরিঙ্গা ব্যবহার করা যায়।
এছাড়াও মরিঙ্গার ভিন্নধর্মী কিছু উপকার রয়েছে-
-
মরিঙ্গার পুরো গাছ দিয়ে ঔষধ তৈরি করা যায়।
-
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য মরিঙ্গার শুঁটি থেকে তৈরি সবজি বা তার বীজের তেল ত্বকে লাগানো যেতে পারে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ রয়েছে যা চামড়ার সৌন্দর্য ধরে রাখে।
-
ক্ষত সারাতে মরিঙ্গা পাতার পেস্ট লাগানো যেতে পারে।
-
মরিঙ্গার পাতা পিষে হালকা গরম করে মাথায় লেপেও এর সুবিধা উপভোগ করা যায়।
-
এছাড়া মরিঙ্গার বীজ পিষে গন্ধ শুঁকলেও মাথা ব্যথা দূর হয় । আবার, মরিঙ্গা বীজের পাউডারও মাথাব্যথা থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে।
-
মরিঙ্গা গুড়ার সাথে টক দই,মধু ইত্যাদি মিশিয়ে রূপচর্চায় ব্যবহার করা যায়।
-
শরীরের যে কোনো জায়গায় ব্যথা থাকলে বা ফুলে গেলে, মরিঙ্গার শিকড়ের প্রলেপ দেয়া যেতে পারে। এতে ব্যথা ও ফোলা সেরে যায়।
-
কান ব্যথা হলে মরিঙ্গার শিকড়ের রস কানে দিলে কান ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
-
ফোঁড়া সাড়াতে মরিঙ্গার আঠার প্রলেপ দিলে তা সেরে যায়।
-
যেকোনো পোকা কামড় দিলে সেই স্থানে মরিঙ্গার রস লাগালে তা এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
মরিঙ্গার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
অতিরিক্ত মাত্রায় মরিঙ্গা সেবনে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে। মরিঙ্গা সাধারণত তখনই নিরাপদ যখন এর পাতা, ফল এবং বীজ খাদ্য হিসাবে খাওয়া হয়। মরিঙ্গা পাতা এবং বীজ সম্ভবত নিরাপদ, যখন এটি ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়, তবে তা স্বল্পমেয়াদী। মরিঙ্গা পাতাযুক্ত পণ্যগুলি ৬ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। মরিঙ্গা বীজ ধারণকারী পণ্যগুলি ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে মোরিঙ্গা শিকড় এবং মূলের ছাল অনিরাপদ হিসাবেই গণ্য করা হয়। শিকড় এবং মূলের ছালে বিষাক্ত পদার্থ থাকে।
শেষকথা
সবকিছুরই একইসাথে উপকারী ও অপকারী দিক আছে। কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো না। মরিঙ্গার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। তাই মরিঙ্গা সেবনে সতর্ক থাকুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।