রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সেরা ৮ টি খাবার। [পর্ব - ২]

আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন ও খাদ্যাভ্যাসের সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার নিগুড় সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে যাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করোনা ভাইরাসের মত প্রাণঘাতী ভাইরাসকেও প্রতিহত করতে সক্ষম। আজকের এই আর্টিকেলে এমনই কিছু খাবার সম্পর্কে জানাব যেগুলোর মাধ্যমে নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো অনেক বেশি শক্তিশালী করে তুলতে পারবেন।

আমাদের এই সিরিজের আগের পর্ব “যে খাবার খেলে বাড়বে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (পর্ব - ১)” এ আমরা বলেছিলাম এমনই কিছু খাবার সম্পর্কে যেগুলোর পুষ্টিগত মান এতই বেশি যে অনেকেই এগুলোকে সুপারফুড বলে আখ্যায়িত করেন। আর তারই ধারাবাহিকতায় আজকে দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে খাবারের সম্পর্ক নিয়ে আমরা একটু বেশিই গুরুত্ব দিচ্ছি, কেননা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই পারে করোনা ভাইরাস বা এই ধরণের ভয়াবহ কোন মহামারী থেকে আমাদের রক্ষা করতে। 

আসুন তাহলে দ্বিতীয় পর্বে আরো কিছু চমৎকার সুপারফুডের সাথে পরিচিত হয়ে নেই। আর শুধু পরিচিত হলেই হবে না বরং আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার মধ্যে এই খাবারগুলো অবশ্যই রাখা উচিৎ। 

১) রসুন 

আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অন্যতম একটি সহকারী যোদ্ধা হল এই রসুন। এমনকি সাধারণ জ্বর সর্দি এবং ফ্লু এর বিরুদ্ধে রসুন খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আমাদের সুস্থ করে তোলে। এছাড়াও রসূনে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, যা আপনাকে যে কোন ধরণের অসুস্থতা থেকে দ্রুত নিরাময় লাভে সাহায্য করবে। আবার আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন তাহলে রসুন আপনার জন্য উপশম হিসেবে কাজ করতে পারে। 

শরীরকে ডি-টক্সিফাই করার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধরণের ওষুধ থেকে রসুন বরং আরো অনেক বেশি কার্যকরী। একটু আগেই যেমনটা বলছিলাম যে দ্রুত নিরাময় লাভের ক্ষেত্রে রসুন বেশ উপকারী। 

২) হলুদ 

আমাদের দেশীয় প্রায় সব ধরণের তরকারির মধ্যেই মশলা হিসেবে ব্যবহার করা একটি পরিচিত নাম হল হলুদ। যে কোন ব্যথা উপশমের জন্য আমাদের এই অঞ্চলে সেই আদি কাল থেকেই হলুদ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাতরোগ, হাড় এবং জয়েন্টের বিভিন্ন ব্যথা সহ পেশীর ব্যথা উপশমের জন্য হলুদ বেশ কার্যকরী একটি ওষুধ। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আপনার হৃদরোগ, যকৃৎ, শ্বাস প্রশ্বাস  জনিত বিভিন্ন সমস্যা ও হজম শক্তিকে প্রাণবন্ত করে তোলে এই হলুদ। 

৩। দই 

পছন্দের অন্যতম খাবারের তালিকায় দই থাকলেও অনেকেরই হয়ত দইয়ের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে তেমন একটা জানা নেই। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে দই খেলে আপনার হাড় হবে মজবুত। এছাড়া অনেকের হজম জনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে দুধ খাওয়া হয়ে উঠে না, তারা দুধের যাবতীয় পুষ্টি এই দই থেকেই গ্রহণ করতে পারবেন। এতে আপনার হজমে সমস্যা তো হবেই না বরং খাবার হজম হতে দই বেশ উপকারী। 

এছাড়া আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আপনি যদি নিত্য খাবারের তালিকায় দই রাখেন তাহলে সেটা শরীরের জন্য বেশ উপকারী প্রভাব বিস্তার করবে। এমনকি ওজন কমানোর জন্যও দই বেশ উপকারী একটি খাবার। 

৪। তরমুজ 

আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে তরমুজ বেশ জনপ্রিয় ফল। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে একটু খানি শান্তির পরশ পেতে অনেকেই তরমুজ পছন্দ করেন। গ্রীষ্মকালে আমাদের প্রিয় ফল অথবা ফলের জুসের তালিকায় এই ফলটি থাকলেও আমরা অনেকেই জানিনা যে এই ফল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খুবই কার্যকরী।  

ভিটামিন এ, সি, বি১, বি২,  লৌহ সহ অন্যান্য পুষ্টিগুণে ভরা এই তরমুজ। তরমুজের ৯৫% জলীয় অংশ বলেই গরমের আমাদের শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করার জন্যও আমরা তরমুজ খেয়ে থাকি। এছাড়া তরমুজ হৃদরোগ, হাঁপানি, স্ট্রোক ও ক্যান্সার প্রতিরোধে আমাদের শরীরকে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে থাকে। 

৫। পেঁপে 

প্রচুর মিষ্টি এবং সুস্বাদু একটি ফল হিসেবে পেঁপে পছন্দ করেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ভিটামিন সি, এ এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এই ফলটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অসুবিধা দুরভিত করে থাকে। এছাড়া চোখের জন্য ভিটামিন এ খুবই প্রয়োজনীয় আর পেঁপের মধ্যে ভিটামিন এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।  

ওজন কমানোর জন্যও অনেকেই খাবারের অলটারনেটিভ হিসেবে পেঁপে খেয়ে থাকেন, কেননা পেঁপের মধ্যে ক্যালোরির পরিমাণ রয়েছে বেশ কম। আবার প্রাকৃতিক ফাইবার সমৃদ্ধ থাকার কারণে হজম শক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে পেঁপে। 

৬। চা  

চা এর একটি চমৎকার বিষয় হল এর মধ্যে অনেক গুনাগুণ তো রয়েছেই এছাড়াও অন্যান্য খাবার থেকে সঠিক পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও চা আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে। কেননা চা পাতার মধ্যে রয়েছে পলিফেনল যা কি না আপনার শরীরের ফ্যাট অক্সিডেশন প্রক্রিয়াকে সাবলীল রেখে বিভিন্ন খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করার ক্ষেত্রে শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী ভূমিকা রাখে। 

এমনকি একটি গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে বিশেষ ধরণের কয়েক প্রকার চা আপনার ফ্যাট বার্ন করতে সহায়তা করে এবং এমনকি এক কাপ গ্রিন টি প্রায় ৭০ ক্যালোরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ন করে বলে জানা গিয়েছে। আবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অবসাদ বা ক্লান্তি এড়িয়ে সতেজ থাকতে চা এর কোন বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি আমাদের দেশে আদা, লেবু দিয়ে রঙ চা খাওয়া হয় প্রচুর আর ডাক্তারদের মতে এই ধরণের আদা লেবু চা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।  

৭। মিষ্টি আলু 

মিষ্টি আলুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ব্যাটা ক্যারোটিন, এই পুষ্টি উপাদান আদতে একটি শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। এছাড়া মিষ্টি আলুতে সাধারণ আলুর তুলনায় কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ অনেক কম থাকে এবং এর পাশাপাশি এই আলু ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। ব্যাটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন এ উভয় পুষ্টি উপাদানই এন্টি অক্সাইড হিসেব কাজ করে। এন্টি অক্সাইড সাধারণত আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং একই সাথে ত্বক সুস্থ রাখে এবং দৃষ্টি শক্তি রাখে জোরাল। 

এছাড়াও মিষ্টি আলুতে আরো রয়েছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি৬। ভিটামিন সি এর উপকারিতা আর নতুন করে বলাই বাহুল্য এবং অপরদিকে ভিটামিন বি৬ এর সাথে ভিটামিন সি মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুর জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি মিষ্টি আলু উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আপনাকে সুস্থ রাখবে। টাইপ ২ ডায়াবেটিকস এর জন্যও মিষ্টি আলু একটি উপকারী সবজি। 

৮। টমেটো 

টমেটোর মধ্যে রয়েছে লাইকোপেন, যা এক ধরণের ক্যারোটিন। আর এই পুষ্টি উপাদান এন্টি অক্সাইড হিসেবে কাজ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। এমনকি টমেটো মরনঘাতি রোগ ক্যান্সার এর ঝুঁকিও কমিয়ে থাকে। 

এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি সবজি হল টমেটো। এছাড়া পুষ্টিতে ভরপুর এই টমেটোর মধ্যে আরো রয়েছে ভিটামিন এ, ফলেট, কে এবং পটাশিয়াম। আবার ত্বকে যদি কোন ধরণের সমস্যা দেখা যায় সেটা প্রতিকার স্বরূপ আপনি সেখানে টমেটো ব্যবহার করতে পারবেন। কেননা মুখ ও ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য টমেটো বেশ চমৎকার ভাবে কার্যকর। 

 

উপরোক্ত খাবারগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সমৃদ্ধ বলে আপনাকে রাখতে সুস্থ এবং সুন্দর। প্রতিনিয়ত খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে যদি এই খাবারগুলো যোগ করা সম্ভব হয় তাহলে নানা শারীরিক জটিলতা থেকে আপনি মুক্ত থাকতে পারবেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে আপনি বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু এমনকি প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকেও নিজেকে সুস্থ রাখতে পারবেন।

 

হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার!

সুস্বাস্থ্যে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর সম্পর্ক কী?

Default user image

ইকবাল মাহমুদ ইকু, লেখক, আস্থা লাইফ

দীর্ঘদিন ধরেই লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ততার সুবাদে বেশ কিছু স্বনামধন্য অনলাইন পোর্টালে লেখালেখি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই লেখার প্রতি রয়েছে অদম্য অনুরাগ। এই লেখালেখিকেই নেশা এবং পেশা হিসেবে নেয়া আমার ইতোমধ্যেই চারটি উপন্যাস এবং একটি ছোট গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। জন্ম থেকেই ঢাকায় বসবাসরত আমি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেও পথ শিশুদের জীবন যাপনের মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে আসছি প্রায় ১২ বছর ধরে। বর্তমানে আস্থা লাইফের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে জন সাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়ার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছি। বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি এবং অবসর সময়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর মুভি নিয়েই কাটে।

Related Articles