ডিম থেকে সঠিক ও সর্বোচ্চ পরিমাণ পুষ্টি পাবেন যেভাবে

ডিম একটি সহজলভ্য, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য। কিন্তু ডিম থেকে কি আমরা সঠিক ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান পাচ্ছি কি? দিনে কয়টা ডিম খেতে হবে, কখন খেতে হিবে, কিভাবে রান্না করতে হবে ও কিভাবে সংরক্ষণ করলে ডিম থেক আমরা ডিমের কার্যকারিতার পুঙ্খানুপুঙ্খ আদায় করতে পারব তা জানব আজকের লেখা থেকে।

দিনে কতগুলো ডিম খাওয়া যাবে

খাদ্যের পুষ্টি উপাদান প্রাকৃতিক ভাবে যেসব খাবার গুলোতে বেশি পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে ডিম অন্যতম। তাই বেশিরভাগ ডাক্তারই নিত্যকার খাবারে ডিম রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

২০০৭ সালে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন এই তথ্য প্রকাশ করে যে-সপ্তাহে ৩-১২ টি এমনকি এর থেকে বেশি পরিমাণ ডিম ও শরীরের জন্য ক্ষতিকারক নয়।

ডিমের কুসুম উচ্চ কোলেস্টেরল সম্পন্ন হয়।সাধারণত একটি ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল এর মাত্রা থাকে ১৮৬ মিলিগ্রাম, যা আমাদের প্রতিদিনের কোলেস্টেরল গ্রহনের ৬২ শতাংশ পূর্ণ করে দেয়।

ইউনাইটেড ষ্টেইটের গবেষকদের মতে ১০০% মানুষের মধ্যে ৭০% মানুষ প্রতিদিন ২-৩ টি ডিম খেয়ে কোনো রকম ক্ষতির সম্মুখীন হয় না কিন্তু বাকি ৩০% মানুষ যারা হাই ব্লাডপ্রেশার,সুগার,কিডনি সমিস্যায় আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হতে দেখা যায়।

ডিম উচ্চ প্রোটিন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার, তাই সুস্থ মানুষের ডিম বেশি খেলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। তবে আমরা যেহেতু দৈনন্দিন অনান্য খাবার থেকেও প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন পাই-যা অনেকসময় শরীরের প্রয়োজন এর তুলনায় অমেক বেশি হয়ে যায়। অতিরিক্ত প্রোটিন আমাদের কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আবার ডিমের সাথে আমরা যেই চর্বি(স্যাচুরেটেড ফ্যাট)গ্রহণ করি তা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে পারে। তাই ডাক্তাররা সুস্বাস্থের জন্য দিনে একটা বা দুটো ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

কখন খেতে হবে

ডিম এমন একটি খাবার যা পুষ্টিতে ভরপুর সুস্বাদু। এটি বিভিন্ন ভাবে মুখো রোচক উপায়ে রান্না করা যায়।তবে ডিম সঠিক সময় ও নিয়ম অনুযায়ী খাওয়া হলে এর উপকারিতা বহুগুণ বাড়তে পারে।

সকালের নাস্তায়

সকালের নাস্তায় ডিম হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ সুষম একটি খাবার। কম সময়ে তৈরি করা যায় এমন হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার নাস্তায় জন্য উপযোগী। সকালের হাই প্রোটিন যুক্ত খাবার আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিপূর্ণ রাখবে,যা সারাদিনের কাজে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করবে।

ব্যায়াম বা ওয়ার্কাউট এর পর

উচ্চ প্রোটিনযুক্ত ও ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ায় শারীরিক কসরতের পরবর্তী ক্ষুধার জন্য আদর্শ একটি খাবার হলো ডিম, যা তৃপ্তি দেয় এবং পেশী গঠনে সহায়তা করে। এবং, তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি সরবরাহ করতে পারে।

ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকে সেদ্ধ ডিমে কাচা লবন ছিটিয়ে খান, এটি করা থেকে বিরত থাকলে হৃদরোগ এর ঝুকি অনেক কমে যায়।

কিভাবে রান্না করবেন

ডিম রান্নার ব্যাপারে সবচেয়ে সহজ, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত হল ডিম সিদ্ধ করা বা পানিতে ডিম পোচ করা। পছন্দভেদে পোচ,সেদ্ধ,অমলেট একেকজন একেকভাবে খেয়ে থাকি কিন্তু রান্না পদ্ধতির ওপর এর গুনাগুন কম এবং বেশি হয়ে থাকে।

ডিম সেদ্ধ

ডিমের সাদা অংশ হচ্ছে প্রোটিন যা সেদ্ধ বা পোচ হলে সহজপাচ্য হয়। অত্যধিক সময় সিদ্ধ ডিমের কুসুমের 'ভিটামিন এ' ও এন্টিঅক্সিডেন্ট ১৫ থেকে ২০ ভাগ কমে যায়। তাই আংশিক সিদ্ধ বা ফুটন্ত পানিতে পোচ করা ডিম খাওয়া সবচেয়ে উত্তম।

যারা ওজন ধরে রাখতে চায় এবং ওজন কমাতে চায় তাদের সেদ্ধ ডিম খাওয়া উচিত। যাদের ব্লাডপ্রেশারের সমস্যা আছে, তারাও সেদ্ধ ডিম খেতে পারেন।

ডিম পোচ

তেলে ভাজার কারণে সেদ্ধ ডিমের চেয়ে ডিম পোচে ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে। যারা ওজন ঠিক রাখতে চায় তাদের ডিম পোচ না খাওয়া ভালো। ব্লাডপ্রেশারের রোগীদের এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বাচ্চাদের জন্য পোচ ডিম সবচেয়ে উপকারি। কারণ সেদ্ধ ডিমের চেয়ে ডিম পোচের কুসুমে গুণাগুণ বেশি থাকে।

ডিম রান্নার পাচঁটি সাস্থ্যসম্মত উপায়

  • লো-ক্যালোরি সম্পন্ন রান্নার উপায় বাছাই করুন।পানি পোচ অথবা কোনোরকম স্যাচুরেটেড ফ্যাট ছাড়া ডিম পোচ করে রান্না করুন।

  • কয়েকপ্রকার সবজির সাথে মিশিয়ে রান্না করুন। এতে করে সবজির গুনাগুন ও বৃদ্ধি পাবে,পাশাপাশি ডিমের গুনাগুন সম্পূর্ণভাবে বজায় থাকবে।

  • ডিম রান্না করুন কম কোলেস্টেরল সম্পন্ন চর্বিতে। যেমন সানফ্লাওয়ার অয়েল/এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল/এভোক্যাডো অয়েল দিয়ে।

  • সবচেয়ে ভালো হয় ৪১০° ফারেনহাইট (২১০° সেলসিয়াস) থেকে ৩৫০° ফারেনহাইট (১৭৭°সেলসিয়াস) এর মধ্যে রান্না করতে পারলে।এভাবে রান্না করলে ডিমের সম্পুর্ণ গুনাগুন বজায় থাকে।

  • কখনোই ডিম বেশি তাপমাত্রায় রান্না করবেন না। সঠিক তাপমাত্রায় এবং আলাদা স্যাচুরেটেড ফ্যাট ছাড়া ডিম রান্নার চেষ্টা করুন।

আপনি যদি উচ্চ তাপমাত্রায় ডিম রান্না করেন, বিশেষ করে বর্ধিত সময়ের জন্য,তবে পুষ্টি হারাতে পারেন এবং ডিমের কিছু স্বাস্থ্যকর বৈশিষ্ট্য  নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কারণ অধিক তাপ কোলেস্টেরলকে অক্সিডাইজ করতে পারে।

ডিমের ক্ষতিকারক দিক 

বিশেষজ্ঞরা বলেন ডিম বেশি খেলে ক্ষতির ভয় নেই। তবে ডিম থেকে সম্পুর্ন উপকার পেতে হলে এবং ক্ষতিকর দিক এড়িয়ে চলতে চাইলে সাস্থ্য সম্মত উপায়ে এটি খেতে হবে।

  • ডিমে স্যালমোনেলাঃ ব্রিটেনের গবেষক দের মতে ডিম স্যালমোনেলা জীবাণুর উৎস। আশির দশকে ডিমে স্যালমোনেলা জীবাণু আবিস্কার করার পর ব্রিটেনে ডিম খাওয়া নিয়ে অনেক ভীতি তৈরি হয়েছিলো,এমনকি ডিম খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর এমন তথ্য ছড়িয়ে পরেছিলো। এর পর নব্বই দশকে গবেষণার পর দেখা যায় যে,কাঁচা ডিমে এই জীবানু থাকলেও ডিম সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করার পর তা সক্রিয় থাকে না। তাই কাঁচা ডিম শরীরের জনু ক্ষতিকর কিন্তু সঠিকভাবে খাওয়া হলে এটি কোনো ক্ষতির কারণ নয়।

  • সপ্তাহে ৩-১২ টি ডিম খাওয়া উত্তম এর থেকে বেশি না খাওয়ার পরামর্শ দেন গবেষকরা। এর বেশী খেলেই তা দেহের জন্য ক্ষতিকর।

  • অনেকে মনে করেন কাঁচা ডিম শরীরের জন্য উপকারী,এটি সম্পুর্ন ভুল-কাঁচা ডিম মানব দেহের জন্য অতন্ত্য ক্ষতিকারক। স্যালমোনাল ও টাইফয়েড এর জীবানু থাকে কাঁচা ডিমে। ডিম সেদ্ধ বা রান্না করলে এই জীবানু নিষ্ক্রিয় হয়।

  • রক্তে চর্বির আধিক্য ও হাই ব্লাডপ্রেশার এর রোগিদের ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে,তাদের জন্য কুসুম ছাড়া এবং সেদ্ধ ডিম উপকারি।

  • অনেক গবেষণায় দেখা গেছে রাতে ডিম খাওয়া নিদ্রাহীনতার কারণ হতে পারে।

  • যাদের গ্যাস্ট্রোসোফিজিয়াল রিফ্ল্যাক্স ডিজিজ আছে তাদের রাতে ডিম খাওয়া হতে বিরত থাকতে হবে।

কিভাবে সংরক্ষণ করবেন

  • ডিম সংরক্ষণের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ফ্রিজে রাখা। ডিম রাখার বক্সে করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা। বক্সের মাধ্যমে সংরক্ষণ করলে ডিমের সাদা অংশ তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। আবার বরফ করে রাখলে এটি তিন মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।

  • ডিম কেনার সময় ফাটা ও ভাঙা ডিম কেনা থেকে বিরত থাকুন,সামান্য ফাটা দিয়েও জীবানু সংক্রামক হতে পারে।

  • ডিম ভালো আছে কিনা তা পরিক্ষা করার সহজ একটি উপায় হল পানিতে ফেলে পরিক্ষা করা। পানিতে রাখার পর যদি পাত্রের নিতে চলে যায় তাহলে ডিম ভালো আছে আর পরে ভেসে উঠলে সেটি ব্যাবহার উপযোগী নয়।

  • বেশিরভাগ সময় এই ডিমের বক্সের গায়ে লেখা থাকে কোন তারিখের মধ্যে ডিম ব্যবহার করে ফেলতে হবে-তা দেখে ডিম ব্যবহার করা ভালো। তবে সাধারণত ডিম পাড়ার ২৮ দিন পর্যন্ত এটি ভালো থাকে।

Default user image

সাইমা মাহমুদ, লেখক, আস্থা লাইফ

আমি সাইমা মাহমুদ।বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করছি।ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা,লেখালেখির প্রতি ঝোক ছিলো।তাই শখের বশেই কিছু কিছু লেখার চেষ্টা করি।আমার মতে লেখা একজন মানুষের অন্তরাত্মার প্রতিচ্ছবি। তাই অবসর সময়ে লেখার মাধ্যমে নিজের মনের কথাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করি।

Related Articles