সুস্থ থাকতে যে ৫ টি খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলবেন!

নিজেদের সুস্থ রাখতে আমাদের কী করা উচিৎ? আমরা কোন কোন খাবার গ্রহণ করব আর কোন কোন খাবার পরিহার করব? অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে আমাদের কী কী সমস্যা হতে পারে? আমাদের খাদ্যাভ্যাসে স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা কী?

স্বাস্থ্য ও পুষ্টি একটি আরেকটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ মনের জন্য প্রতিদিন পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে হলে একজন ব্যক্তির জন্য সুষম খাদ্য নির্বাচন, খাদ্যের সহজলভ্যতা ও পুষ্টিমূল্য বজায় রেখে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

আসুন, আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সাস্থ্যকর ৫ টি খাদ্যাভ্যাস সম্বন্ধে জেনে নেই।

 

১) শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ান

  • মায়ের গর্ভ হতে ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকে পরবর্তী প্রথম ছয় মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়াবেন। এই সময় শিশুর পুষ্টি বিচারে অন্য যে কোন খাবার ও পানীয় অবশ্যই পরিহার করতে হবে। 

  • শিশুর চাহিদা অনুযায়ী রাত ও দিনে বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে থাকুন।

  • ৬ মাস বয়সে, বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবার শিশুর খাবারের সাথে যোগ করুন এবং শিশুদের ২ বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াতে থাকুন।

  • শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের খাবারে লবণ বা চিনি যুক্ত করবেন না।

শিশুকে কেন বুকের দুধ খাওয়াবেন? এর সাস্থ্যকর গুনা-বলী কি? 

প্রাকৃতিক ভাবেই, বুকের দুধ সমস্ত পুষ্টি এবং তরল সরবরাহ করে যা শিশুদের তাদের প্রথম ৬ মাসের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজন। বিশেষভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুদের ডায়রিয়া, শ্বাস প্রশ্বাসের সংক্রমণ এবং কানের সংক্রমণের মতো সাধারণ শিশু কালীন অসুস্থতার বিরুদ্ধে আরও ভাল প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। 

যারা শিশু অবস্থায় বুকের দুধ পান করে, পরিণত বয়সে তাদের স্থুলতা অর্থাৎ ওজন বেশি বা মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে, বা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কম থাকে। 

 

২) বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাস তৈরি করুন 

নিয়মিত খাবারে বৈচিত্র্যময় খাদ্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। গম, বার্লি, রাই, ভুট্টা বা ভাত যা মানুষের প্রধান খাবার, এর সাথে শিম জাতীয় (যেমন মসুর, শিম) বা শিকড় জাতীয় (যেমন আলু, মিস্টি আলু, কাসাভা) , শাকসবজি সহ বিভিন্ন খাবারের সংমিশ্রণ খাওয়ার অভ্যাস করুন, এছাড়াও প্রাণীর উৎস থেকে খাবার (যেমন মাংস, মাছ, ডিম এবং দুধ) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

কেন খাবারে বৈচিত্র্যতা প্রয়োজন?

প্রতিদিন বিভিন্ন ধরণের তাজা খাবার (অর্থাৎ প্রক্রিয়াজাত নয় এমন), শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের সঠিক পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে সহায়তা করে। অপরদিকে, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে চিনি, চর্বি এবং লবণের আধিক্য থাকে যা অস্বাস্থ্যকর, ওজন বাড়ায় এবং রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একটি স্বাস্থ্যকর, সুষম ডায়েট খাওয়া বিশেষত ছোট বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ; এটি বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যকর এবং আরও প্রানবন্ত জীবনযাপন করতে সহায়তা করে।

 

৩) প্রচুর শাকসবজি এবং ফলমূল খাবেন 

  • বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি এবং ফল খাবেন

  • স্ন্যাকস বা হালকা নাস্তার জন্য কাঁচা শাকসবজি এবং তাজা ফল বেছে নিন এবং অতিরিক্ত চিনি, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন 

  • শাকসবজি এবং ফলগুলি বেশি ভাজা করে রান্না এড়িয়ে চলুন কারণ এতে খাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনগুলি নস্ট হয়ে যায়

  • টিনজাত বা শুকনো শাকসবজি ব্যাবহারে অতিরিক্ত চিনি এবং লবণ পরিহার করুন 

শাকসবজি এবং ফলমূলের প্রয়োজনীয়তা কেন? 

শাকসবজি এবং ফলমূলে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, ডায়েটারি ফাইবার, উদ্ভিদ প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে। যাদের ডায়েটে বা খাদ্যতালিকায় শাকসবজি এবং ফল সমৃদ্ধ থাকে তাদের স্থূলত্ব, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

 

৪) পরিমিত পরিমাণে চর্বি এবং তেল খাবেন

  • আমরা খাবারে সচারাচর প্রাণীজ চর্বি বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ তেল (যেমন মাখন, ঘি, চর্বি) ব্যবহার হয়ে থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বিশেষ করে খাদ্যে এগুলোর অপরিমিত ব্যবহার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, এর পরিবর্তে সাস্থ্যকর উদ্ভিজ্জ তেল (যেমন: জলপাই, সয়া, সূর্যমুখী বা কর্ন অয়েল) ব্যবহার সাস্থ্য ঝুঁকি কমায়

  • খাদ্য তালিকায় রেড মিট (যেমন গরুর বা খাসির মাংস) এর পরিবর্তে মুরগির মাংস এবং মাছ রাখুন, যাতে সাধারণত চর্বি কম থাকে

  • প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া সীমিত করুন কারণ এতে চর্বি এবং লবণের পরিমাণ বেশি

  • দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের খাদ্যাভ্যাস করুন 

  • প্রক্রিয়াজাত, বেকড এবং ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন কারণ এতে শিল্প উৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট থাকে

অতিরিক্ত তেল বা চর্বি কেন নয়? 

তেল এবং চর্বির শক্তির উৎস ও গুণাগুণ প্রায়শই এক, এবং অতিরিক্ত চর্বি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। আমরা আগেই জেনেছি, যারা বেশি পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা প্রাণীজ চর্বি এবং ট্রান্স ফ্যাট খেয়ে থাকেন তাদের হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে। 

প্রাকৃতিকভাবে মাংস এবং দুধজাত পণ্যগুলিতে ট্রান্স ফ্যাট থাকতে পারে তবে ট্রান্স ফ্যাট এর প্রধান উৎস প্রক্রিয়াজাত শিল্পজাত খাবার। যেমন আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেল।

 

৫) লবণ ও চিনি এড়িয়ে চলুন 

  • খাবার রান্না এবং প্রস্তুত করার সময়, লবণ এবং উচ্চ-সোডিয়াম যুক্ত দ্রব্য যেমন সয়া সস এবং ফিশ সস এইগুলোর ব্যাবহার সীমিত করুন

  • লবণ এবং শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে এমন খাবার (যেমন স্ন্যাকস) এড়িয়ে চলুন

  • কোমল পানীয় বা সোডা এবং অন্যান্য পানীয়গুলি খাওয়ার পরিমাণ সীমিত রাখুন (যেমন ফলের রস, কর্ডিয়াল এবং সিরাপ, স্বাদযুক্ত দুধ, লাবাং ইত্যাদি)

  • কুকি, কেক এবং চকোলেট এর মতো মিষ্টি স্ন্যাকসের পরিবর্তে তাজা ফল বেছে নিন

কেন খাদ্যে চিনি ও লবণের আধিক্য পরিহার করবেন? 

যাদের ডায়েটে সোডিয়াম (লবণ) বেশি থাকে তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি থাকে, যা তাদের হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। একইভাবে, যাদের ডায়েটে চিনির পরিমাণ বেশি, তাদের ওজন বেশি হওয়া বা স্থূলকায় হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে এবং দাঁতের ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অথচ কেবলমাত্র খাদ্যে চিনির ব্যবহার কমিয়ে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো জটিল রোগের ঝুঁকিও হ্রাস করতে পারেন।

 

পুষ্টির সমস্যার জন্য অজ্ঞতা ও অসেচতনতাও দায়ী। বাজারের টিন ও প্যাকেটজাত খাবার থেকে বাড়িতে তৈরি খাবার অনেক বেশি পুষ্টিকর। আর সুষম পুষ্টিকর খাবারই সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারে। তাই একথা বলা যেতেই পারে যে, স্বাস্থ্যরক্ষায় পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব অপরিহার্য।

Default user image

মোহাম্মদ রায়হান ইসলাম, লেখক, আস্থা লাইফ

পেশায় সফটওয়্যার ডেভেলপার, আমার লেখার অনুপ্রেরণা এই আস্থা লাইফ, বলাবাহুল্য লেখায় যা কিছু উপকারী তার সমস্ত প্রসংশা আল্লাহর আর ব্লগের প্রুফ রিডারদের জাযাকাল্লাহ খাইরান! ভালো লাগে বই পড়তে আর পাশাপাশি ঘুরতে।

Related Articles