রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সেরা ১০ টি খাবার। [পর্ব - ১]

প্রতিনিয়তই আমাদের শরীর বিভিন্ন ভাইরাস, জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের শিকার হয়ে থাকে। আমাদের শরীরও নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে এইসব রোগ জীবাণুকে প্রতিহত করে যাচ্ছে। আর ঠিক যখনই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই সকল জীবাণুর কাছে হেরে যায় তখনই আমরা বিভিন্ন ধরণের অসুখে আক্রান্ত হয়ে পরি। আর তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা এমনই কিছু খাবার সম্পর্কে আপনাদের জানাব যে খাবারগুলো আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।

বর্তমান সময়ে এমন একটি মহামারী চলাকালীন সময় আমাদের উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে যে সবসময় ওষুধ এর মাধ্যমেও সুস্থ হওয়া বা কোন রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এর জন্য প্রকৃতিগত আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে যত বেশি সম্ভব শক্তিশালী করে তৈরি করা প্রয়োজন। কেননা করোনা ভাইরাসের মত ভয়াবহ মরনঘাতি ভাইরাসকেও আমাদের শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে রুখে দেয়া সম্ভব। এমন হাজারো ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিজের শরীরকে প্রস্তুত রাখার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই জরুরী।

আসুন তাহলে দেখে নেই এমনই কিছু খাবার সম্পর্কে, যে সুপারফুডগুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যে কোন ধরণের রোগের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরকে প্রস্তুত করে তোলে।

১) লেবু ও লেবু জাতীয় ফল

লেবু এবং লেবু জাতীয় বিভিন্ন ফলগুলো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। আর এই ভিটামিন সি এমন একটি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। ভিটামিন সি আমাদের ত্বক, দাঁত এবং চুল ভালো রাখার পাশাপাশি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বৃদ্ধি করে থাকে। এমনকি হৃদরোগ এবং ক্যানসারের মত ভয়াবহ মরনঘাতি রোগের বিরুদ্ধেও লড়ার জন্য ভিটামিন সি আমাদের শরীরকে সাহায্য করে থাকে।

এই লেবু জাতীয় আরো খাবারগুলো হল- মালটা, কমলা, আমলকী, জাম্বুরা ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, করোনা ভাইরাসের মত মহামারী চলাকালীন সময়ে ডাক্তাররা বেশি করে লেবু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

২) ব্রকলি, ফুলকপি এবং বাঁধাকপি

বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ এই খাবারগুলো আমাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় থাকা বাঞ্ছনীয়। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই সহ অন্যান্য আরো অনেক এন্টিঅক্সাইড সমৃদ্ধ অন্যতম একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হচ্ছে ব্রকলি । এর পাশাপাশি ফুলকপি এবং বাঁধাকপির মধ্যেও অনেক ধরণের এন্টিঅক্সাইড রয়েছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়াও আমাদের ধমনী এবং শিরাগুলোতে যাতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে তার জন্যও এই পুষ্টিকর খাবারগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৩) আপেল

আপেল সম্পর্কে একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হল “an apple a day keeps the doctor away” অর্থাৎ প্রতিদিন একটি আপেল খেলে আপনাকে আর ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। যদিও এই প্রবাদটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। তবে, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ এই খাবারটির অনেক গুণাগুণ রয়েছে। এই সুস্বাদু ফলটি যদি আপনি নিয়মিত খান তাহলে আপনার কেবল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বৃদ্ধি পাবে না বরং হৃদরোগ জনিত অনেক সমস্যা থেকে আপনি মুক্ত থাকতে পারবেন। এছাড়াও দীর্ঘায়ু লাভের জন্যও আপেলকে একটি সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। 

৪) বিট

বাজার করার সময় অন্যান্য সবজি ক্রয়ের সময় এই সবজিটি প্রতিনিয়তই অবহেলার শিকার হয়। বিশেষ করে শুধুমাত্র সালাদ করার জন্য শসা বা গাজরের সাথে দুই এক পিস বিট আমরা হয়ত ক্রয় করে থাকি, তবে এই সুপারফুডের গুণাগুণ জানা থাকলে আমরা হয়ত এই সবজি আরো অনেক বেশি করে খেত। এমনকি জানা যায় যে প্রাচীন গ্রীক এবং রোমানরাও বিভিন্ন ধরণের রোগ জীবাণু থেকে বেঁচে থাকা এবং সুস্থ থাকার জন্য বিট খেতেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, আয়রন, ক্লোরিন, সোডিয়াম সহ নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই খাবারটি ডায়াবেটিস, এনিমিয়া, উচ্চ রক্তচাপ এবং থায়রডের মত নানান জটিল রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

 

আঁশযুক্ত খাবার কি কি? কেন আশযুক্ত খাবার খাবেন?


৫) বেগুন

“যে সবজির কোন গুন নেই সেটা হল বেগুন” মজার ছলে এমন একটি কথা প্রচলিত থাকলেও আদতে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন এ, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন সহ নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই সবজিটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নানা জটিল রোগ নিরাময়ে আমাদের অজান্তেই ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও আমাদের চোখের যাবতীয় রোগ বালাই এর বিরুদ্ধে বেগুন নিয়মিত যুদ্ধ করে থাকে এবং চোখের বিভিন্ন পুষ্টির জোগান দেয়।

এছাড়াও ছোট শিশুদের শরীরে জিংকের ঘাটতি পূরণে বেগুন খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে হ্যাঁ! অনেকেরই বেগুনে এলার্জি রয়েছে, তাই যারা বিভিন্ন রকম এলার্জিতে ভুগছেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বেগুন না খাওয়াই ভালো।

৬) মুরগীর মাংস

প্রোটিনের একটি অন্যতম উৎস হিসেবে আমাদের দেশে মুরগী মাংস বহুল প্রসিদ্ধ। এর পাশাপাশি মুরগীর মাংসে আরো রয়েছে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন এ, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম সহ অন্যান্য আরো প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ। আর এই ধরণের প্রাকৃতিক খনিজের কারণে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় বলেও জানা গিয়েছে। যদিও বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকারক এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে ফার্মের মুরগীর মাংসের প্রতি অনেকের এক ধরণের ভীতি কাজ করে। তবে দেশীও মুরগীর মাংসের ক্ষেত্রে আপনি আবার এই বিষয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।

৭) মরিচ

প্রতিনিয়তই আমাদের কাঁচা মরিচ খাওয়া হয়ে থাকে। আমরা অনেকেই হয়ত এর স্বাস্থ্যগত উপকারগুলো সম্পর্কে জানিই না। কাঁচা মরিচ, লাল মরিচ অথবা মিষ্টি মরিচ (ক্যাপসিকাম) এই খাবারগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি,ভিটামিন  বি-৬, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন। এই চমৎকার খাবারটি বিশেষ করে আপনার হৃদযন্ত্র ভালো রাখার ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং কোলেস্টোরেল কমানোর জন্য এই খাবারের জুড়ি মেলা ভার।

৮) আদা

সাধারণত আমাদের দেশে আদা মশলা বিশেষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকলেও এই চমৎকার খাবারটি অনেক ধরণের গুণাবলির কারণেই একে সুপারফুড হিসেবেও বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬, ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য আরো অনেক প্রাকৃতিক খনিজে ভরপুর এই খাবারটির উপকারিতা সম্পর্কে রীতিমত বলে শেষ করা যাবে না।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আপনার বিভিন্ন ধরণের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে আদা। এছাড়াও আমাদের দেশে প্রায় আদি কাল থেকেই ঠাণ্ডা কাশির জন্য আদা চা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও আপনার পাকযন্ত্রের সুস্থতার পেছনেও আদা বেশ উপকারী ভূমিকা রাখে।

 

যে ১১ টি খাবারে শর্করার পরিমান বেশি থাকে!

 

৯) গাজর

ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে, বায়োটিন, পটাশিয়ামের পাশাপাশি গাজরে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন। আর এই বিটা ক্যারোটিন আপনার চোখের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এমনকি আপনার চোখের স্নায়ুকে শক্তিশালী করতে এর জুড়ি মেলা ভার। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে গাজর রাখেন তাদেরকে চোখের অসুখে ভুগতে তুলনামূলক কম দেখা যায়। এছাড়াও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে গাজরের রয়েছে কার্যকরী প্রভাব।

বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন সমৃদ্ধ গাজর আপনার শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে হাজারো ভাইরাসের আক্রমণ থেকে আপনাকে সুস্থ রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দুরকরনের ক্ষেত্রেও গাজর বেশ উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে।

১০) গ্রিন টি

বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা এবং বিভিন্ন কোম্পানির ব্র্যান্ডিং এর কারণে শরীরের মেদ কমানোর জন্য এই খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে এবং এর জনপ্রিয়তাও বেড়ে চলছে প্রতিনিয়ত। আদতে এই গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল, পটাসিয়াম, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা আপনার শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সাইড থাকার কারণে গ্রিন টি পরিপাকতন্ত্রকে সচল করে হজম প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।

 

আমাদের এই আর্টিকেলের আগামী পর্বে আমাদের চারপাশে পাওয়া যায় এমনই সব চমৎকার সুপারফুড সম্পর্কে জানাব। যে খাবারগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমাদেরকে বিভিন্ন ভাইরাস ও রোগ জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে।
 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সেরা ৮ টি খাবার। [পর্ব - ২]

Default user image

ইকবাল মাহমুদ ইকু, লেখক, আস্থা লাইফ

দীর্ঘদিন ধরেই লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ততার সুবাদে বেশ কিছু স্বনামধন্য অনলাইন পোর্টালে লেখালেখি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই লেখার প্রতি রয়েছে অদম্য অনুরাগ। এই লেখালেখিকেই নেশা এবং পেশা হিসেবে নেয়া আমার ইতোমধ্যেই চারটি উপন্যাস এবং একটি ছোট গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। জন্ম থেকেই ঢাকায় বসবাসরত আমি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেও পথ শিশুদের জীবন যাপনের মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে আসছি প্রায় ১২ বছর ধরে। বর্তমানে আস্থা লাইফের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে জন সাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়ার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছি। বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি এবং অবসর সময়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর মুভি নিয়েই কাটে।

Related Articles