কিটো ডায়েট খাবার তালিকা!
কিটো ডায়েট কী? আপনার কি কিটো ডায়েট চেষ্টা করা উচিত? কিটো ডায়েটে কি খাবো আর কি খাবো না? কেন আপনি কিটো ডায়েট করবেন? কিটো ডায়েট করলে কি ঝুঁকি রয়েছে?
কিটো ডায়েট এখন বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। যে ডায়েটে খু্বই অল্প বা লো কার্ব (কার্বোহাইড্রেট), পরিমাণ মতো প্রোটিন, অধিক চর্বি রয়েছে এবং যা চর্বি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে তা-ই মূলত কিটো বা কিটোজেনিক ডায়েট হিসাবে পরিচিত। পঞ্চাশটির বেশি গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এটি শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং শারীরিক ক্রিয়া সম্পাদনের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে। আর সেজন্যই অসংখ্য ডাক্তার কিটো ডায়েট করার জন্যে উৎসাহ প্রদান করেন।
কিটোজেনিক বা কিটো ডায়েট কি?
অত্যন্ত অল্প কার্ব ডায়েটকে কিটো ডায়েট বলা হয়ে থাকে। তবে সত্যিকারের কিটোজেনিক ডায়েট আলাদা। অন্যান্য লো-কার্ব ডায়েটের বিপরীতে, যা প্রোটিনের উপরে মনোযোগ দেয়, কিটো পরিকল্পনা ফ্যাট বা চর্বিকে কেন্দ্র করে, যা প্রতিদিনের ৯০% ক্যালোরি সরবরাহ করে। এবং এটি পরীক্ষা হিসাবে চেষ্টা করার মতো ডায়েট নয়।
কিটো ডায়েট পদ্ধতিতে সঞ্চিত চর্বি হতে লিভার শরীরে একধরনের কিটোন বডি বা জ্বালানি উৎপন্ন করে। এ জাতীয় ফ্যাট বার্ন বা চর্বি ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে সত্যিকারের ওজন হ্রাস করতে সক্ষম হয়। তবে মনে রাখতে হবে যে, কিটোজেনিক ডায়েট হলো একটি স্বল্প মেয়াদী ডায়েট, যা স্বাস্থ্যগত সুবিধার থেকে ওজন কমানোতে বেশী কার্যকরী।
কিটো ডায়েট শরীরে কীভাবে কাজ করে?
কিটোজেনিক ডায়েটে কিটো শরীরকে খুব সামান্য জ্বালানী উপাদান তৈরি করতে সহায়তা করে, যাকে বলা হয় “কিটোনস”। শরীরে যখন অল্প পরিমাণে ব্লাড সুগার (গ্লুকোজ) সরবরাহ থাকে তখন কিটো বিকল্প জ্বালানির উৎস হিসাবে কাজ করে। আপনি যখন সামান্য কার্ব বা ক্যালরী খান, তখন লিভার ফ্যাট বা চর্বি থেকে কিটোনস তৈরি করে। এসব কিটোনস উপাদান সারা শরীরে বিশেষ করে মস্তিষ্কের জ্বালানি উৎস হিসাবে কাজ করে। মস্তিষ্ক হলো একটি ক্ষুধার্ত অঙ্গ যা প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে শক্তি ক্ষয় করে এবং তা সরাসরি চর্বি দ্বারা পরিচালিত হতে পারে। তবে লিভার হতে এ জাতীয় কিটোন বডি পাওয়া কিছুটা জটিল। এটির জন্য আপনাকে অবশ্যই কার্বোহাইড্রয়েট ত্যাগ করতে হবে অর্থাৎ যা প্রতিদিন ২০ থেকে ৫০ গ্রাম এরও কম পরিমাণে কার্বস গ্রহণ করতে হবে (মনে রাখবেন যে একটি মাঝারি আকারের কলায় প্রায় ২৭ গ্রাম কার্বস রয়েছে)। প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণের ফলে কিটোসিস বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। এমতাবস্থায় কিটোসিসে পৌঁছতে সাধারণত কয়েক দিন সময় লাগে।
আপনি যখন দিনে ৫০ গ্রামেরও কম কার্বস খেয়ে থাকেন, তখন আপনার দেহ অতিদ্রুত জ্বালানী (ব্লাড সুগার) সরবরাহ করে। এই পদ্ধতিতে সাধারণত ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগে। তারপরেই আপনি দৈহিক শক্তির জন্য প্রোটিন এবং ফ্যাটকে ভাঙতে শুরু করবেন, যা আপনাকে ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করবে। এই প্রক্রিয়াকে বলে কিটোসিস। কার্বোহাইড্রোয়েট বা শর্করা (যেমন-শস্য,মটরশুটি, শাক সবজি, ফল) থেকে আসা সুগার (গ্লুকোজ) এর উপর নির্ভর করার পরিবর্তে কিটো ডায়েট আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরণের জ্বালানী ব্যবহার করতে বাধ্য করে।
কারা কিটো ডায়েট করেন?
অধিকাংশ মানুষই কিটোজেনিক ডায়েট করেন মূলত শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য। কিন্তু এটি কতিপয় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে, যেমন- মৃগী রোগের ক্ষেত্রে। এটি হৃদরোগ, কিছু মস্তিষ্কের রোগ এবং এমনকি ব্রণে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও সহায়তা করতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে আরোও গবেষণা হওয়া দরকার। কিটোজেনিক ডায়েট চেষ্টা করা আপনার জন্য নিরাপদ কিনা তা জানতে প্রথমে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন, বিশেষ করে আপনার যদি টাইপ-১ ডায়াবেটিস থাকে।
যাদের কিটোজেনিক ডায়েট করা উচিৎ নয়
কিটো ডায়েট নিয়ে অনেক মানুষের মধ্যেই বিতর্ক এবং ভুল ধারণা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ মানুষের কাছে এটি খুব নিরাপদ বলে স্বীকৃত।
তবে তিন ধরণের মানুষকে প্রায়শই এটিকে গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনা করার প্রয়োজন হয়ঃ
১) আপনি কি ডায়াবেটিসের ঔষধ গ্রহণ করছেন, যেমন। ইনসুলিন?
আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে আর আপনি কম কার্ব খাওয়া শুরু করে দেন তবে আপনাকে সম্ভবত ইনসুলিনের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। ডায়াবেটিসের অন্যান্য ওষুধের পরিমাণও হ্রাস করা লাগতে পারে। এই ডায়েট শুরু করার পর আপনার রক্তে শর্করার ঘন ঘন পরীক্ষা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আপনার ওষুধগুলি সামঞ্জস্য করতে হবে। তাই অবশ্যই আপনাকে ডায়াবেটিস চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
২) আপনি কি উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ খান? এছাড়া আপনি কি শিশুকে বুকের দুধ পান করান?
আপনি যদি রক্তচাপের ওষুধ নিয়ে থাকেন এবং লো-কার্ব ডায়েট শুরু করেন তবে আপনার নিম্ন রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে।
৩) আপনি কি শিশুকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন?
সাধারণ পরিস্থিতিতে আপনি যত ইচ্ছা খেতে পারেন - শরীর এটি পরিচালনা করতে পারে। তবে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আপনি দুধের মাধ্যমে চিনি বা কার্বোহাইড্রেট হারাবেন, সম্ভবত প্রতিদিন প্রায় ৩০ গ্রাম, কখনও কখনও আরও বেশি। তাই আপনার কড়া স্বল্প-কার্ব ডায়েট খাওয়া উচিত নয় কারণ বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় তা বিপজ্জনক হতে পারে। নিরাপদ থাকতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ গ্রাম কার্বস সহ আরও মাঝারি স্বল্প-কার্ব ডায়েট করতে হবে।
কিটো ডায়েটে কি খেতে হয়?
কিটোসিসে পৌছাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি কি তা কি আপনি জানেন? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে প্রচুর কার্বস খাওয়া পরিহার করা। যেহেতু কিটো ডায়েটে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তাই কিটো ডায়েট অনুসারীদের অবশ্যই প্রতিটি খাবারে চর্বি খেতে হবে। প্রতিদিনের ২০০০ ক্যালোরি সমৃদ্ধ ডায়েটে ১৬৫ গ্রাম ফ্যাট, ৪০ গ্রাম কার্বস এবং ৭৫ গ্রাম এর মতো প্রোটিন থাকতে হবে। তবে এর পরিমাণের সঠিক অনুপাত আপনার বিশেষ প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে।
কিছু স্বাস্থ্যকর অপরিপৃক্ত চর্বি (আনস্যাটুরেটেড ফ্যাট) কিটো ডায়েটে খাওয়া যেতে পারে, যেমন - বাদাম (কাজুবাদাম, আখরোট), বীজ, অ্যাভোকাডোস, টফু এবং জলপাই তেল ইত্যাদি। তবে স্যাটুরেটেড ফ্যাট বা পরিপৃক্ত চর্বিসমূহে (পাম, নারকেল), বাটার এবং কোকোয়া বাটারে অনেক বেশি প্রোটিন থাকে।
প্রোটিন কিটো ডায়েটের অংশ বিশেষ কিন্তু এক্ষেত্রে সাধারণত লিন প্রোটিন জাতীয় খাবার এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত প্রোটিনের মধ্যে তেমন কোন তারতম্য পাওয়া যায়না। এসব প্রোটিনে অধিক মাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা পরিপৃক্ত চর্বি থাকে, যেমন- গরুর মাংস।
সমস্ত ফলই উচ্চ কার্বস সমৃদ্ধ। তবে আপনি অল্প কার্বসযুক্ত কয়েকটি ফল খেতে পারেন। শাক-সবজিও কার্বস সমৃদ্ধ তবে নির্দিষ্ট পরিমাণে কার্বস যুক্ত শাক-সবজি (যেমন- পালং শাক) এবং ফুলকপি, ব্রকলি, অ্যাসপারাগাস, বেল মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মাশরুম, শসা খেতে পারেন।
যেসব খাবার পরিহার করার চেষ্টা করবেন?
কিটো ডায়েটের ক্ষেত্রে প্রচুর শর্করাযুক্ত খাবার, যেমন- চিনিযুক্ত এবং স্টার্চি জাতীয় খাবার আপনার এড়িয়ে যেতে হবে। যে খাবারগুলো সাধারণ স্টার্চি জাতীয় খাবার হিসাবে পরিচিত সেগুলো হল রুটি, পাস্তা, ভাত এবং আলু।
এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে। এছাড়া আল্ট্রা-প্রসেসড খাবারগুলোও পরিহার করুন এবং কিটো ডায়েট সম্পর্কিত সমস্ত পরামর্শ অনুসরণ করুন। কম চর্বিযুক্ত খাদ্যও এড়িয়ে চলুন। একটি কিটো ডায়েটে মাঝারি পরিমাণের উচ্চতর প্রোটিন থাকা উচিৎ এবং যতটা সম্ভব ফ্যাট থাকা প্রয়োজন। কারণ চর্বি এমন শক্তি সরবরাহ করে যে, আপনি আর কার্বোহাইড্রেট পাবেন না। কম চর্বিযুক্ত পণ্যগুলো সাধারণত প্রচুর কার্বস সরবরাহ করে এবং প্রোটিন এবং ফ্যাট থেকে পর্যাপ্ত জ্বালানী সরবরাহ করে না।
কিটো ডায়েটে যা পান করবেন
কিটোজেনিক ডায়েটে আপনার কী পানীয় পান করা উচিত? হ্যা আপনি পানি পান করতে পারেন। কারণ পানি হল সব থেকে আদর্শ। এছাড়া কফি বা চা ও পান করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আদর্শ হবে, কোন প্রকার মিষ্টি ব্যবহার না করা, বিশেষ করে চিনি ব্যবহার না করা। কফি বা চায়ে দুধ বা ক্রিমের ছিটা ব্যবহার করলেই যথেষ্ট হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে আপনার চা কিংবা কফি পানের পরিমাণ যেনো একাধিকবার না হয়, কারণ বহুবার পান করলে এতে কার্বস যুক্ত হতে পারে। মদ পরিহার করা উত্তম।
কিটো ডায়েটের উপকারিতাঃ কেন আপনি কিটো ডায়েট করবেন?
কিটোজেনিক ডায়েটের উপকারিতা অনেকাংশে অন্যান্য লো-কার্ব এবং উচ্চ-চর্বিযুক্ত ডায়েটের মতোই। তবে এটি সাধারণ লো-কার্ব ডায়েটের চেয়ে বেশি শক্তিশালী বলে মনে করা হয় । কিটো ডায়েটকে সুপার-চার্জড, কম-কার্ব ডায়েট হিসাবে সর্বাধিক উপকারী বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার ঝুঁকিও কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারে। নিম্নে কিটো ডায়েটের বিশেষ কিছু সুবিধা সম্পর্কে জানবোঃ
১) ওজন কমানো
আপনার শরীরকে ফ্যাট-বার্নিং যন্ত্রে পরিণত করার মধ্য দিয়ে আপনার ওজন কমাতে পারেন। যখন ফ্যাট বার্নিং উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, তখন ইনসুলিন (ফ্যাট-স্টোরেজ হরমোন) এর মাত্রা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। এটি ক্ষুধা ছাড়াই শরীরের চর্বি কমানোর জন্য আরও সহজ করে তোলে। কিটো ডায়েটের ফলে কার্যকরভাবে ওজন হ্রাস হয় তা প্রমাণিত।
২) ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ
কিটো ডায়েটে আপনি নিজের ক্ষুধার উপর একটি নতুন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। ক্ষুধার অনুভূতি লক্ষ্যণীয়ভাবে হ্রাস পেতে এটি একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা এবং তা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। সাধারণত এটি কম খাওয়া সহজতর করে এবং অতিরিক্ত ওজন হ্রাস করতে পারে। এটি মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকাকে সহজ করে তোলে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং ওজন কমানোর মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনি সবসময় হালকা নাস্তা না খেয়ে এর মাধ্যমে আপনার সময় ও অর্থ সাশ্রয় উভয় ক্ষেত্রে উপকার পেতে পারেন।
কিটো ডায়েট করে অনেকেই মাত্র দিনে দুইবার খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং কেউ কেউ কেবল দিনে একবার খেয়েও থাকতে পারেন। ক্ষুধার অনুভূতির সাথে লড়াই করতে না পারার ফলে চিনি বা খাবারের আসক্তির মতো সমস্যাগুলো যথা সম্ভব কমে যায়। খাদ্য আপনার শত্রু না হয়ে বন্ধুতে পরিণত হয়।
৩) রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ এবং টাইপ-টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, কিটোজেনিক ডায়েট টাইপ-টু ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত সহায়ক। এমনকি কখনও কখনও রোগের সম্পূর্ণ বিপর্যয় ঘটিয়ে রোগ নির্মূল করতে পারে। কারণ কিটো রক্তে চিনির মাত্রা হ্রাস করে, ওষুধের প্রয়োজনীয়তা কমায় এবং উচ্চ মাত্রার ইনসুলিনের ক্ষতিকর প্রভাবকে হ্রাস করে। যেহেতু কিটো ডায়েট টাইপ-২ ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাই এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যখন আপনি কিটো ডায়েট করবেন, তখন আপনার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে। যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস ছিলো তারা কিটো ডায়েটের মধ্য দিয়ে তাদের জীবনযাত্রায় উন্নতি করতে পেরেছে।
৪) উন্নত স্বাস্থ্য চিহ্নিতকরণ
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, লো-কার্ব ডায়েট করার ফলে হৃদরোগের ক্ষেত্রে বিশেষ করে কোলেস্টেরল, উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল) কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে উন্নতি সাধন করে। কিটো ডায়েট রক্তে গ্লুকুজের মাত্রা, ইনসুলিনের মাত্রা এবং রক্তচাপ উন্নতি চিহ্নিত করতে পারে। এসব উন্নতি চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়াকে “মেটাবলিক সিনড্রোম বা বিপাকীয় সিনড্রোম” নামে পরিচিত যা কার্যকরভাবে ইনসুলিন প্রতিরোধ করে এবং লো-কার্ব ডায়েট কে কার্যকর করে।
৫) শক্তি যোগায় এবং মানসিক দক্ষতা বাড়ায়
কিছু মানুষ বিশেষত তাদের মানসিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য কিটোজেনিক ডায়েট করে। এছাড়া কিটোসিসে থাকার মধ্য দিয়ে শক্তি বর্ধনের অভিজ্ঞতা পেতে পারেন। কিটো ডায়েটে থাকলে মস্তিষ্কের কার্বস ডায়েটের প্রয়োজন হয়না। এটি আপনাকে ২৪ ঘন্টা সাত দিন শক্তি যোগাবে কিটোনসের মাধ্যমে এবং সাথে অল্প পরিমাণে গ্লুকোজ যা লিভার থেকে সংশ্লেষিত হয়। এর জন্য অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটের কোনও প্রয়োজন নেই।
৬) পাকস্থলী শান্ত থাকে
কিটো ডায়েটের ফলে পাকস্থলী শান্ত থাকে, গ্যাস কম হয়, ব্যথাকে বাধাগ্রস্থ করে এবং ধীরে ধীরে ব্যথা উপশম করে। যার ফলে প্রায়শ ইরিট্যাবল বাউয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) এর উন্নতিসাধন হয়। কেউ কেউ দিনে একবার অথবা দুইবার কিটো ডায়েট করেই অনেক উপকার পেয়ে থাকেন।
৭) শারীরিক সহনশীলতা বৃদ্ধি করে
কিটোজেনিক ডায়েট প্রক্রিয়ায় আপনার ফ্যাট স্টোরগুলোতে প্রচুর পরিমাণে শক্তির যোগান দিয়ে শারীরিক সহনশীলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। শরীরে কার্বোহাইড্রয়েট এর সরবরাহ কেবল কয়েক ঘন্টার জন্য টেকশই করতে পারে। তবে আপনার ফ্যাট স্টোর পর্যাপ্ত পরিমাণে সম্ভাব্য শক্তি বহন করতে পারে।
৮) মৃগীরোগ
কিটোজেনিক ডায়েট মৃগী রোগের জন্য একটি প্রমাণিত এবং প্রায়শই কার্যকর চিকিৎসা থেরাপি হিসাবে বিবেচিত। যা ১৯২০ এর দশক থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঐতিহ্যগতভাবে শিশুদের মৃগীরোগের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিককালে প্রাপ্তবয়স্করাও এটি ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে। এটি গ্রহণের ফলে ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করে এবং মানসিক কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে।
৯) আরও সম্ভাব্য কিছু উপকারিতা
কিটো ডায়েট উচ্চ রক্তচাপের চিকিত্সায় সহায়তা করতে পারে, এর ফলে ব্রণ কম হতে পারে এবং মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এটি চিনির আকাঙ্ক্ষা হ্রাস করে। এছাড়া এটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির সমাধানে সহায়তা করতে পারে।
কিটো ডায়েটে কীভাবে কিটোসিসে পৌছাতে পারেন?
এখানে কিটোসিসের সর্বনিম্ন স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করতে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি জিনিস এর কথা উল্লেখ করা হলো,
কার্বোহাইড্রয়েট এর সীমাবদ্ধতা
প্রতিদিনের ডায়েটে ২০ গ্রাম বা তার চেয়েও কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রয়েট গ্রহণ করবেন না। তবে ফাইবার কিটোসিসের ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে, তাই এটি সীমাবদ্ধ করা ঠিক হবে না।
পর্যাপ্ত ফ্যাট গ্রহণ
সুস্থ্য থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাট গ্রহণ করুন। একটি কিটো লো-কার্ব ডায়েট সাধারণত উচ্চ ফ্যাটযুক্ত ডায়েট হয়, কারণ চর্বি এমন শক্তি সরবরাহ করে যা আপনি কার্বস থেকে পাচ্ছেন না। কিটো ডায়েট করে আপনি টিকে থাকতে পারবেন কিন্তু একেবারে খাবার না খেয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তবে কিটো ডায়েটে আপনি ক্ষুধা অনুভব করবেন না। এই হলো কিটো ডায়েট ও না খেয়ে থাকার মধ্যে বড় পার্থক্য।
মাঝারি মানের প্রোটিন গ্রহণ
কিটো ডায়েট বলতে খুব বেশি প্রোটিনযুক্ত খাদ্যকে বোঝানো হয় না। শারীরিক ওজনের উপর ভিত্তি করে প্রতিদিনের ডায়েটে প্রতি কেজিতে ১.২ থেকে ১.৭ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
স্ন্যাকস এড়িয়ে চলা
আপনি ক্ষুধার্ত না হলে স্ন্যাকস এড়িয়ে চলুন। শুধু মুখরোচক খাবার খেয়ে আপনার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়ার অভ্যাস আপনার ডায়েটে কিটোসিস কমিয়ে দেয় এবং ওজন হ্রাস প্রক্রিয়াকে স্থবির করে দেয়। যদিও কিটো স্ন্যাকস ব্যবহার করে সেই ক্ষতি আংশিকভাবে কমাতে পারেন, তবুও অপ্রয়োজনীয় মুখরোচক খাবার পরিহার করার চেষ্টা করুন।
মাঝে মাঝে উপবাস থাকা
প্রয়োজনে মাঝে মাঝে উপবাস থাকুন। উদাহরণস্বরূপ, প্রাতঃরাশ এড়িয়ে যান এবং কেবলমাত্র দিনের ৮ ঘন্টা সময়কালে খাবেন এবং ১৬ ঘন্টা উপবাস করুন (অর্থাৎ, ১৬: ৮ উপবাস)। এটি কিটোন স্তরকে বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি ওজন হ্রাসকে ত্বরান্বিতকরণ এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের উন্নতি করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কিটোতে সাধারণত এটি করা সহজ।
অনুশীলন করা
শারীরিক অনুশীলন যোগ করুন। কম কার্বে থাকাকালীন যে কোনও ধরণের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ মাঝারিভাবে আপনার কিটোন স্তরের বৃদ্ধি করতে পারে। এটি ওজন হ্রাসের গতিকে বাড়িয়ে তুলতে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস উন্নত করতেও সহায়তা করতে পারে। কিটোসিসে প্রবেশের জন্য অনুশীলন করা প্রয়োজন নয়, তবে এটি সহায়ক হতে পারে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম ও চাপ মুক্ত থাকা
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো ও চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। বেশিরভাগ মানুষ প্রতিরাতে গড়ে কমপক্ষে সাত ঘন্টা ঘুমিয়ে উপকৃত হতে পারেন এবং চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। ঘুম বাধাবিঘ্নতা ও দুঃচিন্তার কারণে স্ট্রেস হরমোনগুলো শরীরে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, কেটোসিসকে ধীরস্থির করে তুলে এবং ওজন হ্রাস এ বাধা দেয়। তাই নিয়মিত কিটো ডায়েট করে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কিটো সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন নেই
কিটো ডায়েটে কোন সাপ্লিমেন্ট দরকার হয় না। আপনার এক্সোজেনাস কিটোনস বা এমসিটি তেলের (মাঝারি-চেইন ট্রাইগ্লিসারাইডস) মতো ব্যয়বহুল সাপ্লিমেন্টের দরকার নেই। এই সাপ্লিমেন্টগুলি সম্ভবত আপনাকে ওজন হারাতে বা কোন রোগে সহায়তা করবে এমন কোনও প্রমাণ নেই।
আপনি কিটোসিসে রয়েছেন তা কীভাবে জানবেন?
এটি পরিমাপ করা সম্ভব আপনার প্রস্রাব, রক্ত বা শ্বাস-প্রশ্বাস এর নমুনা পরীক্ষা করার মাধ্যমে । তবে এমন কিছু টেলটেইল সিম্পটম (বলার লক্ষণ) থাকতে পারে, যেগুলোর উপস্থিতি থাকলে কোন পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। সেসব নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো,
মুখ শুকনো থাকা ও ঘন ঘন তৃষ্ণার্ত হওয়া
যদি আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করেন এবং লবণের মতো পর্যাপ্ত ইলেক্ট্রোলাইট না গ্রহণ করেন, তবে আপনার মুখ শুকনো থাকতে পারে। তাই দিনে অন্তত এক কাপ করে দুইবার পাতলা ঝোল বা স্যুপ গ্রহণের চেষ্টা করুন। পাশাপাশি আপনার প্রয়োজন মতো পানি পান করতে পারেন। এভাবে আপনার মুখে একধরনের মেটালিক স্বাদ (ধাতব স্বাদ) অনুভব করবেন। যার ফলে বুঝতে পারেন আপনি কিটোসিস এ রয়েছেন।
ঘন ঘন প্রস্রাব
অ্যাসিটোএসিটেট নামক একটি কিটোন বডি প্রসাবের সাথে নির্গত হতে পারে। ইউরিন স্ট্রিপ দ্বারা কিটোসিসের এই পরীক্ষা করা সম্ভব। কিটো ডায়েট শুরু করার পর প্রায়শই বাথরুমে যেতে হয়। এটি ঘন ঘন তৃষ্ণার মূল কারণ হতে পারে (উপরে)।
কিটো শ্বাস-প্রশ্বাস
কিটো ডায়েটে অ্যাসিটোন নামক একটি কিটোন আমাদের শ্বাসের মধ্য দিয়ে বের হয়ে যায়। এর ফলে শ্বাসের মধ্যে ফলের মতো ঘ্রাণ তৈরি করে। এই গন্ধটি মাঝে মাঝে কাজ করার সময় ঘাম থেকেও আসতে পারে। তবে ঘ্রাণ অস্থায়ী হয়।
অন্যান্য, কম নির্দিষ্ট তবে আরও ইতিবাচক লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
ক্ষুধা কমে যাওয়া
অনেকেই কিটো ডায়েট করে ক্ষুধাকে হ্রাস করতে পেরেছে। প্রকৃতপক্ষে, অনেকে যখন দিনে একবার বা দু'বার খেয়ে থাকেন, তখন তারা খুব ভালো অনুভব করেন এবং খুব সহজে তারা না খেয়ে থাকতে পারেন। যখন আপনি সহজেই না খেয়ে ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন, তখন ধরে নিতে পারেন আপনি কিটোসিস এ রয়েছেন।
শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া
কিছুদিন ক্লান্ত বোধ হওয়ার পরে ("কিটো ফ্লু") অনেক লোক শক্তির মাত্রায় সুস্পষ্ট বৃদ্ধি অনুভব করে। এটি আপনার চিন্তাভাবনাকে সুস্পষ্ট করে।
কিটো ডায়েটের সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
আপনি যখন হঠাৎ করে আপনার দেহের বিপাক প্রক্রিয়ায় কার্বস (গ্লুকোজ) এর পরিবর্তে চর্বি এবং কিটোনস এর ব্যবহার করবেন তখন আপনার শরীর নতুন জ্বালানীতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে আপনার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে, বিশেষত দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে।
কিটো ডায়েটের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ গুলো হলো
মাথা ব্যথা, ক্লান্তি, পেশীর ক্লান্তি বা সংকোচন, বুক ধড়ফড়ানি ইত্যাদি।। বেশিরভাগ মানুষের জন্য এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো স্বল্প-মেয়াদী এবং এসব সমস্যা নিরাময় করার উপায় রয়েছে।
সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে, আপনি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ধীরে ধীরে আপনার কার্বসের ব্যবহার হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে ধীর গতির সাথে আপনি সম্ভবত ফলাফলগুলি দ্রুত দেখতে পাবেন না। স্বল্প-মেয়াদী ফলাফলগুলি পৃথক হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল একই থাকবে।
কিটো ফ্লু
কিটোজেনিক ডায়েট শুরু করা বেশিরভাগ লোকেরা "কিটো ফ্লু" এর কিছু লক্ষণ অনুভব করতে পারেন। এটি সত্যই কোন ফ্লু রোগ নয় এবং এটি সংক্রামক বা বিপজ্জনক নয়, তবে এটি অবশ্যই খুব অপ্রীতিকর হতে পারে। কিটো ডায়েট শুরু করার কয়েকদিন পরেই কমবেশি আপনি কিছু পার্শ-প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারেনঃ
-
মাথা ব্যাথা
-
অবসাদ
-
মাথা ঘোরা
-
হালকা বমি বমি ভাব
-
মনোযোগে বাধা (“ব্রেইন ফগ”)।
-
প্রণোদনার অভাব
-
খিটখিটেভাব
কেটো ফ্লুয়ের প্রধান কারণ হ'ল কার্ব সমৃদ্ধ খাবারের ফলে শরীরে তরল ধরে রাখা । আপনি যখন কম-কার্ব ডায়েট শুরু করেন তখন অতিরিক্ত পরিমাণে তরল নিঃশেষ হয়ে যায়। আপনি তখন ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা লক্ষ্য করতে পারেন এবং এর সাথে কিছু অতিরিক্ত লবণও নষ্ট হয়ে যায়।
কিটো ডায়েটের ঝুঁকিসমূহ
কিটোজেনিক ডায়েটে অসংখ্য ঝুঁকি থাকে। আপনার প্রতিদিনের ক্যালোরির ৭% এর চেয়ে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট রাখবেন না। প্রকৃতপক্ষে, কিটো ডায়েট "খারাপ" এলডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত, যা হৃদরোগের সাথেও সম্পৃক্ত।
সম্ভাব্য কিটো ঝুঁকির মধ্যে যেসব ঝুঁকি রয়েছে,
পুষ্টির ঘাটতি
আপনি যদি বিভিন্ন ধরণের শাকসব্জী, ফল এবং শস্য না খান তবে সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি এবং সি সহ ক্ষুদ্র পুষ্টিগুলির ঘাটতির ঝুঁকির ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন।
লিভারের সমস্যা
কিটো ডায়েটে অধিক পরিমাণে চর্বি বিপাক হলে লিভারের অবস্থাকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
কিডনির সমস্যা
কিডনি প্রোটিন বিপাক করতে সহায়তা করে যার ফলে শরীরে প্রোটিনের আধিক্য দেখা দিতে পারে। (মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ৪৬ গ্রাম এবং পুরুষদের জন্য ৫৬ গ্রাম প্রোটিনের দোরকার)।
কোষ্ঠকাঠিন্য
কিটো ডায়েটে শস্য এবং আঁশযুক্ত খাবার কম থাকে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
অপর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট
অস্পষ্ট চিন্তাভাবনা এবং মেজাজ পরিবর্তন মস্তিষ্কের সুস্থভাবে কাজ করার জন্য কার্বোহাইড্রেট থেকে চিনির প্রয়োজন। কিন্তু কিটো ডায়েটে মস্তিষ্কের এই চাইদা পূরণ হয় না।
কিটো ডায়েট নিয়ে বিতর্ক
কিটো ডায়েটের সর্বাধিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াই অতি সামান্য এবং অস্থায়ী। তবে এই নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক বিতর্ক, ভয় ও ভুল ধারণা রয়েছে।
আপনি কি শুনেছেন যে আপনি প্রচুর কার্বস না খেলে আপনার মস্তিষ্কের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে? কিটোসিসে শরীর কীভাবে কাজ করে (মস্তিষ্কের জ্বালানী সরবরাহকে কিটোনে রূপান্তর করে) তা বোঝার অভাবের উপর ভিত্তি করে অনেকের মধ্যেই নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আর একটি সাধারণ ভুল ধারণা হলো সাধারণ কিটোসিস বা কিটো ডায়েটকে বিপজ্জনক মেডিকেল ইমার্জেন্সি কিটোএসিডোসিসের সাথে মিশিয়ে ফেলা। এই দুটি আসলে ভিন্ন জিনিস। কিটোএসিডোসিস কেবল কিটো ডায়েট খাওয়ার মাধ্যমে ঘটে না।
কিটো ডায়েটের বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। কিটো আপনার কিডনি মেরে ফেলবে বা আপনার হাড়কে ধ্বংস করবে? এটি কি আপনার থাইরয়েডকে কাজ করা থেকে বিরত রাখবে? এমন অসংখ্য ভ্রান্ত বিশ্বাস মানুষের মধ্যে বিদ্যমান।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন কিটো কি, কিভাবে ও কেন গ্রহণ করতে হয়। আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই স্বাস্থ্য সচেতন নয়। আমরা জানি শরীর সুস্থ্য থাকলে মন ভাল থাকে। তাই যারা ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত মেদ, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওজন ও শরীরের নানা পরিবর্তন নিয়ে খুব বেশী উদ্বিগ্ন তাদের জন্য কিটো ডায়েট খুবই উপকারী একটি প্রক্রিয়া। সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কিটো ডায়েট করতে পারলে যেকোন ব্যক্তি এর দ্বারা সুফল পেতে পারেন। তবে কেউ কিটো ডায়েট গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শ ও নিয়ম-কানুন জেনে নেওয়া আবশ্যক।
আরও পড়ুন...