কম খরচে পুষ্টিকর খাবার খুঁজছেন?

বাজেট কম? প্র‍য়োজনীয় খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন? আসলে এমন অনেক পুষ্টিকর খাবার আছে যেগুলি বেশ ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। আর বাজেট যখন সীমিত হয় তখন আপনার জন্য ফল এবং শাকসবজি সহ সুষম খাদ্য খাওয়াও কঠিন হয়ে যায়। তবে আনন্দের বিষয় হল, একটু বুদ্ধি খাটিয়ে আপনি অর্থ সঞ্চয় করার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারও খেতে পারেন।

বাজারে গেলে জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দাম দেখে নাভিশ্বাস ওঠে না, এমন মানুষ বোধহয় বর্তমান সময়ে খুব কমই পাওয়া যাবে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, মজুতদারি, এবং বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বাজার এখন বেশ অস্থিতিশীল। এমন সময়ে শুধুমাত্র সমাজের উচ্চবিত্ত ছাড়া আর সকলেরই অবস্থা শোচনীয়। অস্বাভাবিক দামের কারণে নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না পছন্দের কোন মাছ/মাংশ/সবজির। তাই বলে আবার না খেয়ে থাকারও তো উপায় নেই। অগত্যা অল্পস্বল্প কিনে, কখনওবা না কিনে চলছে আমাদের সংসার। কিন্তু এর কারণে যে শরীরের পুষ্টির চাহিদা রয়ে যাচ্ছে অনেকটাই বাকী, সেদিকে খেয়াল দেয়াটাও অত্যন্ত জরুরী। তাই আমরা আজ এমন কিছু খাবার নিয়ে কথা বলবো যেগুলো আপনার শরীরের দৈনিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারবে খুব কম খরচেই। তো চলুন শুরু করা যাক।

শাক

শাকের মধ্যে লালা শাক, পুই শাক, পালং শাক, ঘি-কাঞ্চন শাক, ও লাউ শাক এর চাহিদা বাজারে সবসময় বেশী থাকে। তাই এগুলোর দামও তুলনামূলক বেশী হয়। এগুলোর পরিবর্তে আপনি কচু শাক, কলমি শাক, এলেঞ্চা শাক, মালঞ্চ শাক, থানকুনি শাক এগুলো কিনতে পারেন। এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, এবং বিটা ক্যারোটিন যা আপনাকে হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচাবে এবং আপনার টাকাও সাশ্রয় করবে।

সবজি

দামী সবজি পরিহার করে বরং কাঁচা পেপে, কাঁকরোল, চাল কুমড়া, কচুর মুখী, কচু, কাঁচকলা, বরবটি, পটল, শালগম, ইত্যাদি কেনা যেতে পারে। এই সবজিগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল যা আপনার শরীরকে রাখবে সুস্থ্য। তবে মনে রাখবেন, সিজনের শুরুতে যে সবজিগুলো বাজারে আসে সেগুলোর দাম অহেতুক বেশী থাকে, তাই সেই সময় এগুলো না কিনে বরং যখন সবজিগুলো বাজারে সহজলভ্য হবে তখন কেনা ভালো। 

ফলমূল

আমদানিকৃত ফলের দাম সবসময়ই দেশী ফলের তুলনায় বেশী হয়। আর এখন ডলারের দাম বাড়ার কারণে পরিস্থিতি তো আরও খারাপ। তাই আমদানিনির্ভর ফল যেমন আপেল, আঙ্গুর, কমলালেবু, মাল্টা এগুলোর পরিবর্তে আমাদের দেশীয় ফল যেমন দেশী কলা, আমলকী, নইল, সফেদা, কাউফল, পেয়ারা, আঁশফল ইত্যাদি কেনা যেতে পারে। তাতে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় অপরদিকে তেমনি আপনার মানিব্যাগও থাকে অক্ষত।

মাছ

নদীর মাছ হোক বা সমুদ্রের – এখন যেকোনো মাছেরই দাম অত্যন্ত চড়া। তাই মাছ কেনার ক্ষেত্রে হতে হবে আরও বেশী কৌশলী। স্বল্পমূল্যের মাছের তালিকায় রয়েছে চাষের রুই-কাতলা-মৃগেল-ভাঙ্গন অর্থাৎ কার্প জাতীয় মাছ। এর বাইরে রয়েছে তেলাপিয়া, বাটা, কাচকি, থাই/চায়না পুঁটি ইত্যাদি। কিছু কিছু সামুদ্রিক মাছও বাজারে কমদামে পাওয়া যায়। সামুদ্রিক মাছ ভিটামিন এবং মিনারেলের চমৎকার উৎস।

মাংশ

গরু, খাসী, দেশী মুরগী সবকিছুর দামই নাগালের বাইরে। তাই গরুর পরিবর্তে মহিষ, খাসীর পরিবর্তে ভেড়া, এবং দেশী মুরগির পরিবর্তে কক অথবা ব্রয়লার কিনতে পারেন। তবে মহিষ বা ভেড়ার মাংশের কথা শুনলে শুরুতে একটু নাক কুঁচকে আসতেই পারে। হাজার হোক, এতদিনের পুরনো অভ্যাস; হঠাৎ করে কি আর বাদ দেয়া যায়? তবে সত্যি বলতে স্বাস্থ্যগত বিচারে গরুর মাংশের তুলনায় মহিষের মাংশ হাজারগুণে ভালো। কারণ এই মাংশে কোলেস্টেরল প্রায় থাকেনা বললেই চলে। তাই যাদের হৃদরোগের সমস্যা আছে তারাও নির্ভয়ে মহিষের মাংশ খেতে পারেন। আর জিভের স্বাদ পরিবর্তন করতে পারলে ভেড়ার মাংশ খুবই উপাদেয় খাদ্য হতে পারে আপনার কাছে।

দুধ/ডিম

এই দুটি জিনিসের বিকল্প তেমন পাওয়া যায়না প্রকৃতিতে। তাই ডিম, দুধ, এবং দুগ্ধজাত পণ্য আপনাকে খেতেই হবে। তবে একটু বুদ্ধির প্রয়োগ করতে পারলেই এগুলো কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে কেনা সম্ভব। যেমন ডিম যদি আপনি পাইকারি দোকান থেকে ট্রে ধরে নিতে পারেন তাহলে প্রতি পিস ডিমের দাম কম পড়ে। আর দুধও একটু গ্রাম এলাকা থেকে সংগ্রহ করতে পারলে কম দামে পাওয়া যায়। আপনার যদি গ্রামের সাথে কোন সংযোগ নাও থাকে তবু চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই। ফেসবুক এর কল্যাণে এখন গ্রামের অনেক দুধ বিক্রেতাই শহর এলাকার ক্রেতাদের কাছে কম দামে দুধ পৌঁছে দিচ্ছে।

চাল/ডাল/আটা

বাঙালীর প্রধান খাদ্য ভাত। তাই চাল না কিনে বা কম কিনে কোনভাবেই চলা সম্ভব নয়। তবে মোড়ের দোকান থেকে ২/৫ কেজি চাল না কিনে বরং একবারে পাইকারি বাজার বা সম্ভব হলে চালের মিল থেকে বস্তা হিসাবে কিনলে খরচ অনেক কম পড়বে। ডালের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। আর আমাদের মাঝে বেশীরভাগ মানুষই দোকান থেকে প্যাকেট করা ময়দা কিনে থাকেন যার দাম তুলনামূলক বেশী। তার পরিবর্তে খোলা আটা নিলে প্রতি কেজিতে অন্তত ১২/১৩ টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। তবে এভাবে খোলা আটা নেবার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালোভাবে দেখে নিতে হবে যেন আটার মান খারাপ না হয় অথবা খেয়াল রাখতে হবে যেন দোকানদার অবশ্যই ভরসাযোগ্য হয়।

প্র‍য়োজনীয় কিছু টিপস

সর্বোপরি আমাদের কেনার ধরণে কিছু পরিবর্তন এনেও আমরা সাশ্রয় করতে পারি। যেমন,

  • বাজারে গেলে যে কোন একটা জিনিস এক কেজি বা নিদেনপক্ষে আধা কেজি কিনতেই হবে এমন কোন কথা নেই। আপনার প্রয়োজন যদি সীমিত হয়, তাহলে যে যে পন্যের ক্ষেত্রে সম্ভব ২৫০ গ্রাম, ১০০ গ্রাম, এমনকি ৫০ গ্রামও নিতে পারেন। 

  • এছাড়া আমাদের মাঝে অনেকেই দরদাম করাটাকে খুব লজ্জাজনক মনে করেন। তবে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। আপনার কষ্টার্জিত অর্থ যদি আপনি হিসাব করে খরচ করতে চান এবং আপনি যদি কোন জিনিসের অন্যায্য দাম না দিতে চান তো সেটা করা আপনার অধিকার। 

  • এবং পরিশেষে, বাজারে যেয়ে কিছুর দাম জিজ্ঞেস করলে সেটা কিনতেই হবে এমন চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই মঙ্গল। কোন জিনিসের দাম যদি অত্যন্ত চড়া দেখেন তো সেটি না কিনে বাসায় ফেরার মধ্যে কোন লজ্জা নেই বরং রয়েছে আপনার বিচক্ষণতার পরিচয়।

Default user image

শফিকুল বাশার কাজল, লেখক, আস্থা লাইফ

পিতামহ-পিতামহী অনেক শখ করিয়া নাম রাখিয়াছিলেন শফিকুল বাশার কাজল। ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক সম্পন্ন করিবার পর খানিক এই কাজ, কতক ওই কাজ করিয়া অবশেষে ২০১৩ সালের শেষ হইতে ‘সামাজিক মতে বেকারত্ব’ অর্থাৎ কিনা লেখালেখিকেই জীবিকা অর্জনের একমাত্র উপায় হিসাবে বরণ করিয়া লইয়াছি। অদ্যাবধি অন্ততপক্ষে আট-দশখানা দিশী-বিদিশী কোম্পানি এবং অগণিত ব্যক্তিবিশেষের জন্যে প্রায় চল্লিশ সহস্রাধিক লেখা নামে-বেনামে সম্পন্ন করিবার সুযোগ হইয়াছে। ভালোবাসি নিজের পরিবার, সন্তান, এবং ফুটবল।

Related Articles