একাকী সময় উপভোগ করার সেরা ৮ টি উপায়!

ক্ষণস্থায়ী এই জীবনে এমন অনেক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে যে আমাদের একাকী সময় কাটাতে হতে পারে। তবে একাকীত্ব মানেই কি মন খারাপ করে বসে থাকে? মোটেও তা নয়, আজ আমরা কথা বলব এমন কিছু কাজ সম্পর্কে যেগুলো আপনি একাকী সময়ে করতে পারেন। আর এই কাজগুলোর মাধ্যমে আপনি কিন্তু একটু চাইলেই নিজের একাকীত্বকে আরো অনেক সুন্দর করে তুলতে পারেন।

একাকী সময় মানে ব্যস্ততা থেকে একটু অবসর। একটু নিজেকে খুঁজে পাওয়া। নিজের চাওয়া পাওয়াগুলো নিয়ে একটু হিসেব করতে বসা। তবে এই বোঝাপড়ার ফাঁকে আপনি অনেক কিছুই করতে পারবেন যাতে হারিয়ে যেতে না হয় অবসাদ আর হতাশায়। কেননা আমরা বেলাশেষে যতই একটু একাকীত্ব চাই, তবুও এই সময়টা আমাদের জন্য অবসাদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। আর বিশেষ করে বর্তমান করোনা কালীন সময়ে আমাদের এমনিতেও অনেকটা সময় বাসায় কাটাতে হচ্ছে। 

তবে মানুষ আসলে কোন জিনিসে খুশি হয় এটা বলাটা খুব মুশকিল। একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে আদতে মানুষ তিনটি ভাবে খুশি যাপন করতে পারে।

১) অন্যদের সাথে খুব অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তৈরি করার মাধ্যমে

২) একটি অর্থবহ চাকরি অথবা শখ থাকলে 

৩) মানুষকে সাহায্য করার মাধ্যমে 

সাধারণত নিয়মিত অফিসে যাওয়া অথবা বাইরে বন্ধুদের সাথে গল্প করার মাধ্যমে এমনিতেই দারুণ সময় কেটে যায়। তবে লকডাউন এবং করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দীর্ঘ সময় বাসায় কাটানোর পর আমরা অনেকেই কিছুটা হতাশার মধ্যে আছি। আর তাই আসুন জেনে নেই এমন কিছু উপায় যেগুলোর মাধ্যমে আপনি একাকীত্বের মাঝেও চমৎকার সময় অতিবাহিত করতে পারবেন। 

নিজের সুখ অথবা খুশির কারণ খুঁজে বের করুন 

নিজেকে জানুন, নিজেকে বুঝুন—একটু সময় নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করুন যে আদতে আপনি সাধারণত কিসে খুশি হয়ে থাকেন। একাকী সময়টাতে নিজেকে নিয়ে ভাবুন আদতে কি ধরণের কাজ করতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। অনেকেই মনে করে থাকেন যে নিজের সম্পর্কে তো আমি সবকিছুই জানি, তাহলে কি চিন্তা করব? সেক্ষেত্রে বলা যেতে পারে নিজের চাকরি, ক্যারিয়ার সম্পর্কে ভাবুন যে, আপনি কি পুরানো কাজে সন্তুষ্ট আছেন নাকি নতুন কোন কিছু করার চেষ্টা করবেন—এগুলো নিয়ে ভাবতে পারেন।  

একই সাথে আরেকটু ভেবে নিন যে এখনকার আপনার যে অর্থনৈতিক অবস্থা, এটাতে কি আপনি সন্তুষ্ট কি না? যদি সন্তুষ্ট না হন তাহলে কি করলে আপনার জন্য ভালো হবে কীভাবে আপনি নিজের টার্গেট পূরণ করতে পারবেন সেগুলো নিয়েও ভাবুন। 

নতুন ও আকর্ষণীয় কিছু শিখে নিতে পারেন

ধরুন আপনাকে বেশ কিছুটা সময় একাকী পার করতে হবে। আর এই সময়টাতে আপনি হয়ত অনেক একঘেয়েমি হয়ে যাবেন অথবা হতাশ হয়ে যাবেন। বিশেষ করে করোনা কালীন এই অবস্থায় আপনি যদি নতুন এমন কোন কিছু শিখতে পারেন যা আপনার জীবনে অবদান রাখবে তাহলে সেটা নিয়ে পড়াশুনা করুন। 

বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে কোন কিছু শিখতে অথবা জানতে আপনাকে কেউ কখনো দমিয়ে রাখতে পারবে না। বর্তমানে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করছেন, আপনি যদি সেদিকে আকর্ষণ বোধ করেন তাহলে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই আপনি চমৎকার সব ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শিখে নিতে পারবেন। 

ফ্লোরিডায় অবস্থিত একজন সাইকোথেরাপিস্ট এমি মরিন এই সম্পর্কে বলেন, “এই সময়ে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি হল আপনি নতুন কিছু শেখার সময়ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছেন।”  

এছাড়া আপনি একটি লিস্ট তৈরি করতে পারেন যে আপনি এখন পর্যন্ত কি কি কাজ করতে চাচ্ছিলেন যা সময়ের অভাবে করে শেষ করতে পারেন নি। এখন যেহেতু আপনার হাতে একটু সময় রয়েছে তাই নিজের সেই অপূর্ণ ইচ্ছেগুলোকেও পূর্ণতা দিতে পারেন। 

নিজের উপর অতিরিক্ত চাপ দেয়া থেকে বিরত থাকুন

আপনি যদি দীর্ঘদিন অনেক বেশি প্রেশারের মধ্য দিয়ে কোন কাজ করে থাকেন এবং মনে করেন যে আপনার কিছুটা বিশ্রামের প্রয়োজন। তাহলে এই একাকী সময়টাকেই সম্পূর্ণ ভাবে কাজে লাগিয়ে নিন। নিজেকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দিন, বই পড়ুন অর্থাৎ আপনার যা যা ভালো লাগে তাই করুন এই সময়ে। 

এছাড়া এই সময়ে মেডিটেশন অথবা ইয়োগা ধরণের কোন কাজ করলে শরীর ও মনকে বেশ চাঙ্গা রাখা যেতে পারে। এই ধরণের কাজগুলো নিজের প্রতি যত্ন নেয়ার পাশাপাশি আপনাকে নিজের প্রতি মনোযোগী করে তোলে। এছাড়া এটা এখন পরীক্ষিত যে মানসিক চাপ কমাকে মেডিটেশন আপনাকে অনেক ধরণের সাহায্য করতে পারে। 

সম্প্রতি, রচেস্টার ইউনিভার্সিটির সামাজিক মনোবিজ্ঞান গবেষক থাই নুগেইন আবিষ্কার করেছেন যে একা সময় কাটানো বেশ উত্তেজনাপূর্ণ একটি বিষয়। তিনি বলেন, “এই সময়ে আপনি নিজের মানসিক চাপগুলোকে বিভিন্ন ধরণের কাজের মাধ্যমে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবেন।” 

নিজের একাকী সময়কে আপন করে নিন

অনেকেই আছেন যে একাকী সময় কাটাতে ভয় পান এবং মনে করে থাকেন যে এটা আপনাকে মানসিক চাপে রাখবে এবং হতাশাগ্রস্ত করে তুলবে। আদতে আপনি যদি এটাকে ভয় পান এবং দূরে দূরে থাকতে চান তাহলে এই ধরণের সময় আপনার উপর এমনিতেই প্রেশার তৈরি করবে। 

এই সময়টাকে আলিঙ্গন করে নিন, প্রতিটি মুহূর্ত নিজের জন্য কিছু না কিছু করুন। নিজের যত্ন নিন, নিত্য নতুন ধরণের খাবার খেতে পারেন এই সময়ে। জমে থাকা যে কাজগুলো সময়ের অভাবে করা হয়ে উঠছিল না সেগুলো শেষ করে ফেলুন। নিজের ক্যারিয়ার, মানসিক অবস্থা, স্বাস্থ্য সবকিছু নিয়েই আলাদা একটু ভাবুন। কীভাবে স্বাস্থ্যগত ও মানসিক ভাবে আপনি আরো ভালো থাকতে পারেন সেগুলো নিয়ে আলাদা সময় অতিবাহিত করতে পারেন। 

পরিবারকে সময় দিন ও নিজেকে ব্যস্ত রাখুন

জীবনের ব্যস্ততার কারণে পরিবারের সাথে কোয়ালিটি টাইম অতিবাহিত করা আমাদের তেমন একটা হয়ে উঠে না। আর তাই ব্যস্ততার ফাঁকে এই একাকী সময়টাতে যদি আপনার পরিবার সাথে থাকে তাহলে পরিবারকে সম দিন।  

এছাড়া একটি কথা তো আমরা প্রায় সবাই কখনো না কখনো শুনেছি, আর সেটা হল “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” আদতেই আপনি যখন একদম অলস সময় অতিবাহিত করবেন তখনই আপনার মধ্যে বিভিন্ন ধরণের মানসিক চাপ চলে আসবে। আর তাই নিজেকে দৈনন্দিন ঘরের কাজে ব্যস্ত রাখুন, নতুন কাজ শিখে নিন, পরিবারকে সময় দিন। একদমই চুপচাপ অলস বসে থাকবেন না।

একাকী সময় পার করার সময় মানুষ নিজেকে একাকী মনে করতে থাকে। এই সম্পর্কে একাধারে অটোয়ার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং দ্য হ্যান্ডবুক অন সলিউডির সহ-সম্পাদক রবার্ট কোপলান বলেছেন, “সবসময় এটা আপনার বিশ্বাস করতে হবে যে, আপনি এখন একাকী সময় পার করছেন ঠিক। তবে তার মানে কিন্তু এই নয় যে আপনি আদতে একজন একাকী মানুষ।” 

একাকী সময় পার করার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য নিন 

এমনটা হতে পারে যে একাকী সময় আপনাকে মানসিক ভাবে কোন ধরণের চাপে ফেলে দিচ্ছে অথবা আপনি হতাশ হয়ে যাচ্ছেন। আর তাই এই সময়ে চাইলেই আপনি একজন সাইকোলোজিস্টের সাথে আলাপ করে রাখতে পারেন। মনে রাখবেন একজন প্রফেশনাল কারো কাছে সাহায্য চাইলে আপনার কোন ক্ষতি হবে না বরং আপনি এটা থেকে উপকৃতই হবেন। 

নিজের যা আছে তাই নিয়েই খুশি থাকার চেষ্টা করুন

না পাওয়াকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মানুষের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই, এই অদম্য ইচ্ছেকে উপেক্ষা করা এতটা সমজ নয়। তবে সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার কাছে যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকার। এর মানে কিন্তু এই নয় যে আপনি আরো ভালো অথবা উন্নত কোন অবস্থায় যাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা বন্ধ করে দিবেন। আদতে মানুষ বেশীরভাগ সময় না পাওয়ার কষ্টেই বেশি ভুগতে থাকে, তাই এই অবস্থা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। 

প্রযুক্তির সাহায্যে প্রিয় মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করুন

একটু আগেই আমরা বলছিলাম যে, হয়ত কোন কারণে এখন কিছুটা একাকী সময় কাটাতে হতে পারে আপনার। তবে তার মানে এই নয় যে আপনি অনেক বেশি একাকী একজন মানুষ। আর তাই প্রযুক্তির সাহায্যে নিয়মিত বন্ধু এবং পরিবারের সকলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করুন। 

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আপনি চাইলেই বন্ধু এবং প্রিয় মানুষদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যেতে পারেন। প্রয়োজনে তাদের অডিও-ভিডিও কল দিন। সবার সাথে আলাপ করুন গল্প করে সময় অতিবাহিত করুন। দেখবেন আপনার সবকিছু বেশ ভালো লাগছে। 

সময়ের অভাবে যে বন্ধুদের সাথেও এতদিন যোগাযোগ করতে পারেন নি, এখনই সঠিক সময় তাদের সবার সাথে আবার নতুন করে যোগাযোগ প্রতিস্থাপন করার। 

 

পরিশেষে এটা বলা যায় যে, নিজের জন্য আমাদের আলাদা সময় বের করা হয়ে উঠে না ব্যস্ততার মাঝে। আর একটি গবেষণায় এসেছে যে আমাদের প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট হলেও নিজের জন্য সময় ব্যয় করা উচিৎ। অন্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করেন দেখুন যে, আরো অনেকে হয়ত এর থেকেও বেশি খারাপ অবস্থায় আছেন। আর তাদের থেকে যেহেতু আপনি অনেক ভালো আছেন তাই নিজের জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন। দেখবেন আপনার একাকী সময়টাও দারুণ চমৎকার আর ভালো লাগায় ভরে উঠেছে।

 

যে ৯ টি পদক্ষেপ আপনার স্ট্রেসকে চিরতরে বিদায় জানাতে পারে!

২০ টি ইতিবাচক বাণী মেনে চলুন - শরীর এবং মনকে প্রফুল্ল রাখুন।

Default user image

ইকবাল মাহমুদ ইকু, লেখক, আস্থা লাইফ

দীর্ঘদিন ধরেই লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ততার সুবাদে বেশ কিছু স্বনামধন্য অনলাইন পোর্টালে লেখালেখি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই লেখার প্রতি রয়েছে অদম্য অনুরাগ। এই লেখালেখিকেই নেশা এবং পেশা হিসেবে নেয়া আমার ইতোমধ্যেই চারটি উপন্যাস এবং একটি ছোট গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। জন্ম থেকেই ঢাকায় বসবাসরত আমি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেও পথ শিশুদের জীবন যাপনের মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে আসছি প্রায় ১২ বছর ধরে। বর্তমানে আস্থা লাইফের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে জন সাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়ার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছি। বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি এবং অবসর সময়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর মুভি নিয়েই কাটে।

Related Articles