হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম কী? কখন আপনার হাত ধোবেন?
আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে বিভিন্ন ভাইরাস এবং রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করার জন্য নিয়মিত হাত ধোয়া অপরিহার্য। আর সুস্থ থাকার জন্য সবাইকেই নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাই সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে হাত ধোয়ার নিয়ম জানতে এই প্রবন্ধটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস (১৫ অক্টোবর) - “আমাদের হাত, আমাদের ভবিষ্যৎ”
মূলত করোনা মহামারির সময় থেকেই বিশ্বজুড়ে হাত ধোয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। তবে শুধুমাত্র করোনা থেকে রক্ষা পেতেই নয় বরং অন্যান্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা পেতে এবং সব সময় সুস্থ থাকার জন্যও হাত ধোয়ার অভ্যাস করা উচিত। আসুন আজকের লেখায় হাত ধোয়ার প্রয়োজন ও গুরত্ব, হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম, কখন হাত ধুতে হবে, হাত ধোয়ার সুফল ইত্যাদি জেনে নিই।
নিয়মিত হাত ধোয়া কেন প্রয়োজন?
-
‘বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে- “যে কোনো অসুখের ক্ষেত্রেই জীবাণুবাহিত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো হাত।”
-
সঠিক ভাবে হাত না ধোয়া হলে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, আমাশয়, জন্ডিস, পেটের পীড়া ইত্যাদি রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ডব্লিউএইচওর মতে, বিশ্বের অধিকাংশ শিশু ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর তাইতো শিশুদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদেরও হাত ধোয়াটা অনেক বেশি জরুরী।
-
সাধারণত আমাদের দেহের বহু রোগ এবং সংক্রমণ হাতের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। কেননা প্রতিদিন নানা ভাবে হাত নোংরা হয়ে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। আর এর ফলে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ সৃষ্টি হয়। মূলত বাথরুম ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত না ধুলে বিভিন্ন ভাইরাস আক্রমণ করে এবং এতে শরীরে অনেক ধরণের রোগ তৈরি হয়।
-
আমাদের ও পশুপাখির বিষ্ঠায় ই-কোলাই, নোরোভাইরাস, সালমোনেলা ভাইরাস থেকে থাকে এবং এই ভাইরাসগুলোর কারণেই ডায়রিয়া রোগ হয়ে থাকে। আবার হাতের মাধ্যমে ছড়ানো ভাইরাসগুলোর ফলে শ্বাসনালীর সংক্রমণ হয়ে থাকে।
-
এছাড়াও অপরিষ্কার ও নোংরা হাতের মাধ্যমে আপনি যেমন ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন, তেমনি আপনার সংস্পর্শে আসা অন্য সবার মাঝেও রোগজীবাণু ছড়িয়ে দিবেন।
তাইতো প্রতিদিন নিয়ম করে হাত ধোয়া প্রয়োজন। আর সেজন্যই আমাদের সবাইকেই হাত ধোয়ার গুরুত্ব ও নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে।
হাত ধোয়ার নিয়ম
করোনাকালীন সময়ে চিকিৎসকরা হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দিয়েছিলেন। তখন হাত পরিষ্কারের জন্য স্যানিটাইজার ব্যবহারের কথা বলা হলেও, সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
তবে হাত পরিষ্কারের কিছু সঠিক নিয়ম আছে। আপনি শুধুমাত্র সাবান অথবা হ্যান্ডওয়াশ হাতে মেখেই সাথে সাথে ধুয়ে ফেললেই, রোগজীবাণু থেকে সুরক্ষা নাও পেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাদের সুবিধার্থে ‘ইউনিসেফে’র দেওয়া ৫টি ধাপ তুলে ধরা হল-
১ম ধাপ
প্রবাহমান পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ভেজানো।
২য় ধাপ
আপনার ভেজা হাতের পুরোটায় ভালোভাবে সাবান মাখানো।
৩য় ধাপ
অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে আপনার হাতের সামনের ও পেছন ভাগ, আঙুলগুলোর মধ্যে এবং নখের নিচের অংশ ভালোভাবে ঘষতে হবে।
৪র্থ ধাপ
পরিষ্কার প্রবাহমান পানি দিয়ে পুরো হাত ভালোভাবে কচলে ধুয়ে নিতে হবে।
৫ম ধাপ
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় অথবা ব্যক্তিগত তোয়ালে দিয়ে হাত ভালো করে মুছে নিতে হবে।
হাত ধোয়ার সঠিক সময়
মূলত ভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে গেলে উপরোক্ত নিয়ম মেনে হাত ধুতে হবে। তবে আপনাকে বারংবার হাত ধুলেই হবে না, কখন হাত ধুতে হবে তা জানতে হবে। আসুন জেনে নিই আপনার কখন হাত ধুতে হবে-
-
রান্নাঘরে খাবার তৈরী করার আগে এবং পরে ভালো করে হাত ধুতে হবে। কেননা এতে ফুড পয়জনিং অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
-
বাজার থেকে আনা কাঁচা মাছ, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি স্পর্শ করার পরে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
-
গৃহপালিত পশু-পাখির মাংস, মুরগির ডিম কিংবা সি ফুড ধরার পরে অবশ্যই হাত ধোয়া উচিত।
-
টেবিলে খাবার পরিবেশনের আগে এবং পরে।
-
আপনার খাবার খাওয়ার আগে এবং পরে।
-
অপরিষ্কার কোন কিছু হাত দিয়ে ধরার পরে।
-
নাক পরিষ্কার এবং কাশি দেয়ার পরে।
-
বাথরুম অথবা টয়লেট ব্যবহারের পরে।
-
আপনার বাচ্চার ডায়াপার পরিবর্তন করার পরে।
-
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং ঘুম থেকে উঠার পরে।
-
বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করার পরে।
-
পরিবারের অসুস্থ কারো সেবা করার এবং সংস্পর্শে আসার আগে ও পরে।
-
সাধারণত ঠাণ্ডা লাগলে কিংবা ফ্লুর সিজনে হাত বার বার ধুতে হবে। কেননা এতে ফ্লু বা সর্দি-জ্বর লাগা এবং ছড়ানো দুটোই প্রতিরোধ করা যায়।
-
পোষাপ্রাণীকে স্পর্শ করলে, খাবার খাওয়ালে, কিংবা প্রাণীজ বর্জ্য পরিষ্কার করলে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।
-
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত কাউকে সেবা করার আগে ও পরে হাত ধুতে হবে।
-
কোন ধরণের আবর্জনা স্পর্শ করার পরে।
-
গণপরিবহন, মার্কেট, কাঁচাবাজার মানে যে কোন জনসমাগম স্থল ঘুরে আসার পর হাতগুলো ভালো করে ধুতে হবে।
হাত ধোয়ার উপকারিতা
আমরা যদি সব কাজের আগে ও পরে নিয়মিত হাত ধুই, তবে অনেক রোগজীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পাবো। সাধারণত জীবাণুযুক্ত হাত দিয়ে কোন কিছু স্পর্শ করলে, হাত থেকে জীবাণু বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে, পরিবারের অন্যদেরকেও সংক্রমিত করে। আর সেকারনেই আমাদের দৈনিক ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে। আসুন নিয়মিত হাত ধোয়ার সুফল-সমূহ জেনে নিই-
১। নিয়মিত হাত ধোয়া হলে পেটের সংক্রমণ প্রায় ৫০% কমে যায়।
২। প্রতিদিন হাত ধুলে ডায়রিয়ার সংক্রমণ প্রায় ৩১% কমে যায়।
৩। দৈনিক নিয়ম মেনে হাত পরিষ্কার করলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও জীবাণু সংক্রান্ত রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
৪। নিয়মিত হাত ধোয়ার সুঅভ্যাস করলে, অনেক রকমের সংক্রামক ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৫। ‘ইউনিসেফে’র পক্ষ থেকে জানা যায় যে, নিয়মিতভাবে দু’হাত ধুয়ে থাকলে, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অন্তত ৩৬% অবধি কমে যাবে।
শেষকথা
দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে গেলে হাতে ময়লা জীবাণু লেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আর এতে আপনার হাতের মাধম্যে তা শরীরেও প্রবেশ করতে পারে। তাইতো বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস থেকে বাঁচতে নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধৌত করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ওয়াশরুম ব্যবহারের পরে, খাওয়ার আগে ও পরে, হাঁচি-কাশির পরে, বাইরে থেকে আসার পরে, রান্না-বান্নার আগে এবং কোন কিছু পরিষ্কারের পরে ২০ সেকেন্ড ধরে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।
আরও পড়ুনঃ
-
যেখানে সেখানে থুতু ফেলছেনঃ জেনে নিন কি কি রোগ ছড়াতে পারে?
-
আপনার তোয়ালেটি জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ার আঁতুড়ঘর নাতো?
-
অতিরিক্ত টিভি দেখার ৯ টি ভয়ানক দিক! এখনি জেনে নিন।