শীতে চুলের যত্নে জেনে রাখুন ১০টি ঘরোয়া টিপস!
শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় চুল হয়ে যায় রুক্ষ ও নিঃষ্প্রাণ। তাই শীতে চুলের বাড়তি যত্ন দরকার। কিন্তু অনেকেই চুলের যত্ন নিতে গিয়ে উল্টো বিপত্তি বাধিয়ে দেয়। আসুন জেনে নেই কিভাবে শীতকালে চুলের সঠিক ও ঘরোয়া যত্ন নিতে হয়?
মিষ্টি মেয়ে হেনা। সুদীর্ঘ, ঝরঝরে ও ঘন কালো চুলের জন্য বন্ধু মহলে খুবই পরিচিত। কিন্তু হেনার শীতকালটা খুবই অপ্রিয়। কারণ শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের সাথে চুলেও রুক্ষতা দেখা দেয়। নিঃষ্প্রাণ হয়ে যায় চুল। তাই প্রয়োজন হয় বাড়তি যত্নের। কারণ শীতকালেই আমাদের বিভিন্ন প্রোগ্রাম যেমন - বিয়ে, বেড়াতে যাওয়া, পিকনিক, বিভিন্ন রকম গেট টু গেদার ইত্যাদি অনুষ্ঠান থাকে। তাই এই সময় নিজেকে সাছ্যন্দ ও ফুরফুরে রাখতে চুলের যত্নের সঠিক নিয়ম কানুন জানা দরকার।
তবে তার আগে আমরা জেনে নেই শীতকালে সাধারণত চুলের কী কী সমস্যা হতে পারে-
ভেজা চুলের শুকানো সমস্যা
শীতকালে চুল ভেজালে ভালো করে মাথা মুছে নেয়া প্রয়োজন। কারণ চুল ভেজা থাকলে সর্দি কাশি হবার সম্ভাবনা থাকে। আবার ভেজা চুলে বাহিরে বের হওয়াও ঠিক না। কারণ শীতকালে ঠান্ডা বাতাস চুলের ‘কিউটিকলের’ কার্যকারিতাকে ব্যহত করে। এর ফলে চুলের ক্ষতিসাধন হয়।
রুক্ষ হয়ে চুল ফুলে থাকা
শীতে শুষ্ক আবহাওয়ায় চুলের ‘স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটির’ পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে চুল হয় রুক্ষ এবং কেমন যেন ফুলে থাকে। তাই শ্যাম্পু করার পর ‘হেয়ার সিরাম’ ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া ঘরোয়া উপাদান যেমন, একটি স্প্রের বোতলে পানি ও অলিভয়েল সম পরিমাণ নিয়ে শ্যাম্পু করার পর চুলে স্প্রে করলে চুল নেতিয়েও থাকবে না আবার রুক্ষও দেখাবে না। মোট কথায় চুলের ময়েশ্চারাইজার বজায় থাকবে।
চুল নেতিয়ে যাওয়া
শীতকালের আরেকটি সমস্যা হল শ্যাম্পু করার পরের দিনই মাথা কেমন যেন তেলতেলে হয়ে যায়। ফলে ঝরঝরে ভাবটা থাকে না এবং চুল নেতিয়ে যায়। তাই এক দিন পর পর মাথায় শ্যাম্পু করা প্রয়োজন।
চুলের আগা ফেটে যাওয়া
চুলের আগা ফেটে গেলে চুল রুক্ষ হয়ে যায়। তাই আগা ফেটে যাওয়া অংশ কেটে ফেলে দেয়াই উত্তম। এতে চুলের বৃদ্ধিও হয় তাড়াতাড়ি।
খুশকির সমস্যা বেড়ে যাওয়া
শীতকালে খুশকি খুবই সাধারণ সমস্যা। শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে মাথার তালু শুষ্ক হয়ে যায়। এতে করে খুশকির সমস্যা বাড়ে। তাই খুশকি কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে নারিকেল তেল। কম বেশি প্রায় সবার ঘরেই নারিকেল তেল থাকে। সপ্তাহে ১/২ বার গরম নারিকেল তেলের সাথে লেবু মিশিয়ে ২/৩ ঘন্টা মাথায় রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এতে খুশকির সমস্যা কমে যাবে। খুশকি কমাতে টক দধিও খুব উপকারী।
এছাড়াও জবা পাতা ও মেহেদী পাতা পেস্ট করে এক টেবিল চামচ পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে মাথার তালুতে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে চুলে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
ময়েশ্চারাইজারের অভাব
শীতকালে আবহাওয়ায় আদ্রতা কম থাকে। ফলে শুধুমাত্র ত্বকেই নয় চুলেও দেখা যায় ময়েশ্চারাইজারের অভাব। এছাড়া ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য উল জাতীয় কাপড় দিয়ে মাথা ঢাকি। কিন্তু উলের কাপড়ের সাথে ঘষা লেগে চুলের ময়েশ্চারাইজার কমে যায়, ফলে চুল ঝরতে থাকে। তাই এমন টুপিই ব্যবহার করা উচিত যে টুপির ভিতরে পাতলা কাপড় লাগানো থাকে। এছাড়া চুলে ভালো ময়েশ্চারাইজার তেল ব্যবহার করতে হবে।
হেয়ার ড্রায়ারের ব্যবহার
শীতকালে চুল ভেজালে সহজে শুকাতে চায় না। তাই ভেজা চুল থেকে ঠান্ডা লেগে যাবার ভয়ে অনেকে চুল শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেন। এতে মাথার ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যায় এবং খুশকির সমস্যাও বাড়ে। এতে চুল পারার প্রবণতাও অনেক বেড়ে যায়।
চুল কালারে সাবধানতা
শীতকালে চুলে কালার করা থেকে বিরত থাকাই ভালো। কারণ হেয়ার কালারে রয়েছে বিভিন্ন ক্যামিকেল যা চুলকে করে তুলে রুক্ষ। এই সময় চুলে মেহেদী ব্যবহার করাও ঠিক না। মেহেদি চুলের আদ্রতা টেনে নিয়ে চুলকে করে রুক্ষ। এতে চুল হয়ে যায় নিষ্প্রাণ।
আসুন এখন জেনে নেই চুলের যত্নে আমরা কি কি পদক্ষেপ নিতে পারি -
ভালো করে চুল আঁচড়াতে হবে
কথাটা একটু হাস্যকর শুনালেও চুল সব সময়ই ভালো মত আচঁড়াতে হবে। এতে করে মস্তিস্কের রক্ত চলাচল ভাল হয়। আর মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল ভালো হলে চুল এবং চুলের গোড়া মজবুত হবে।
চুলে তেলের ব্যবহার
চুলের যত্নে তেলের ব্যবহার অতি প্রাচীন কাল থেকেই হয়ে আসছে। প্রবাদই আছে "তেলে চুল তাজা"। তাই সপ্তাহে ৩/৪ চারদিন নিয়ম করে চুলে তেল লাগানো উচিত। এতে চুলের রুক্ষতা দূর হয়, চুল হয় উজ্জ্বল। তবে তেল দিয়ে ১/২ দিন রেখে দেয়া ঠিক নয়। রাতে ঘুমানোর আগে হট অয়েল ম্যাসাজ করে সকালে বাহিরে বের হবার আগে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। তবে হট অয়েল ম্যাসাজ করে গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মাথায় জরিয়ে রাখলে স্কালভের ভিতরে তেল যায়। এতে চুলের গোড়া হয় শক্ত ও মজবুত।
ভিনেগার দিয়ে চুল ধোয়া
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বা যে কেন ভিনেগার রুক্ষ ও খসখসে চুলে বেশ ভালো কন্ডিশনারের কাজ করে। এক মগ পানির সাথে ২ চামচ ভিনেগার মিশিয়ে রেখে শ্যাম্পু করার পর এই ভিনেগার মিশানো পানি মাথা ঢালতে হবে। এতে করে চুল হয় মসৃন ও উজ্জ্বল।
অ্যালোভেরা জেলের ম্যাসেজ
অ্যালোভেরা ভেষজগুণ সমৃদ্ধ একটা উদ্ভিদ। চুলের যত্নে অ্যালোভেরা ব্যবহারও খুবই কার্যকর। তাই শ্যাম্পু করার আগে অ্যালোভেরার জেল দিয়ে মাথা ম্যাসেজ করে কিছুক্ষণ রেখে নিলে চুলের রুক্ষতা কমে। চুল হয় নরম ও উজ্জ্বল।
রুক্ষতা দূর করতে মধু
মধু ঘরোয়া টোটকায় খুবই উপকারী একটি উপাদান। চুল নিঃষ্প্রাণ হয়ে গেলে চুলের গোড়ায় মধু লাগিয়ে, একটি তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে পানি ভালো করে নিংড়ে নিয়ে মাথায় জরিয়ে কিছুক্ষণ রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। এতে চুলের রুক্ষতা দুর হবে এবং চুল হবে সফট।
চুলের যত্নে মাস্ক
চুলের যত্নে যেসকল মাস্ক ব্যবহার করলে চুল হবে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত এবং খুব সহজেই ঘরোয়া উপাদান দিয়ে তৈরি করা যায় সেগুলো হল-
-
চুল পরা রোধে নারিকেল তেল ও ক্যাস্টর অয়েলেের সাথে ভিটামিন সি ক্যাপসুল ও ডিমের কুসুম মিশিয়ে মাথায় লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
-
শীতকালে চুলকে সিল্কি ও প্রাণবন্ত করতে এক চামচ মধু, এক চামচ তেল (নারিকেল বা অলিভ অয়েল) ও আধা কাপ পালং শাক বাটা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে গালিয়ে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
-
শীতে চুল পরা বন্ধে একটি ডিম, ২ চামচ নারিকেল/অলিভ অয়েলে, ১ চামচ ভিনেগার ও ২ চামচ টক দই মিশিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ঘণ্টা খানেক রেখে ভালো করে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এই মাস্ক ব্যবহার করলে চুল হবে শক্ত ও মজবুত।
-
একটি পাকা কলা ভালো করে চটকে তার সাথে এক চামচ মধু, এক চামচ নারিকেল মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করলে চুল হবে মসৃণ।
-
এক মগ জলে আধা কাপ মধু ভালো করে মিশিয়ে শ্যাম্পু করার পর আস্তে আস্তে চুলে ঢেলে ম্যাসেজ করতে হবে। পরে পরিস্কার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। এতে চুল হবে নরম ও উজ্জ্বল।
উপরে উল্লেখিত যত্নগুলো করার সাথে সাথে প্রতিদিন চুলে সূর্যের আলো লাগানো খুব প্রয়োজনীয়। কারণ সূর্যের আলোতে রয়েছে ভিটামিন ডি। আর ভিটামিন ডি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং মাথায় রক্ত চলাচলেও সহায়তা করে। এছাড়া স্বাস্থ্য উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত চুলের জন্য পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খুবই প্রয়োজন। ত্বকের চেয়ে চুলের ভিন্নতা যাচাই করা খুবই কষ্টকর। তাই চুলের যত্নে নেওয়া প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা।
সপ্তাহে অন্তত একদিন ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক বা কোনও ময়েশ্চারাইজ়িং হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা উচিত। তবে অবশ্যই চুলের ধরন বুঝে মাস্ক, শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত।