যে ১০ কারনে নিয়মিত গোসল করবেন!
গোসল কি প্রতিদিন করা উচিত? গোসলের মাধ্যমে কিভাবে সাস্থ্যকে ভাল রাখা যায়?
অলস ছুটির দিনে, আপনি যখন বিছানা থেকে উঠতে খুব ক্লান্ত বোধ করেন, তখন প্রতিদিনের নিয়ম-কানুন এবং গোসলের বিষয়টি ভাবতেই মন চায় না, তাই না? ঠিক আছে, কিন্তু আপনার জানা উচিত যে গোসল আপনাকে কেবল সতেজ বা সুগন্ধি রাখে না, এর সাথে আপনাকে কর্মক্ষম এবং স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য কাজ করে।
আমাদের প্রতিদিনের রুটিন মাফিক কাজের মধ্যে গোসল অন্যতম। আমরা সবাই পরিষ্কার পরিছন্ন চিন্তা করেই প্রতিদিন গোসল করি। এছাড়া আরো অনেক কারণে প্রতিদিন অনেকে গোসল করে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম হল-
-
শরীরের গন্ধ দূর করতে
-
ক্লান্তি দুর করার জন্য
-
সকালে কাজে যাওয়ার আগে রুটিন কাজ হিসেবে
-
অতিরিক্ত ঘাম হলে
এই সব ছাড়া আরেকটা কারণ মুখ্য তা হলো পারসোনাল হাইজিন বা ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা। আমরা অনেকেই বিভিন্ন সংস্কৃতির তাই আমাদের চিন্তা ভাবনাও আলদা হয়ে থাকে। যেমন আমেরিকার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মানুষ প্রতিদিন গোসল করে থাকে। অন্যদিকে অষ্ট্রেলিয়াতে ৮০% লোক প্রতিদিন গোসল করে থাকে। কিন্তু চায়নাতে প্রায় অর্ধেক মানুষ সপ্তাহে ২ বার গোসল করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিন গোসল একটা সামাজিক রীতি এবং অভ্যাসের বিষয়। আর তাই দেশভেদে এর বিভিন্ন রকমভেদ রয়েছে।
তবে বিভিন্ন দেশে গোসলের যতই রকম থাকুক; এর কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত অনেক উপকারী দিক রয়েছে। আসুন জেনে নেই সেগুলি সম্পর্কে।
গোসলের বিজ্ঞানসম্মত উপকারী দিকসমূহ
১. পেশি টান হ্রাস করে
কুসুম কুসুম গরম পানিতে গোসল আপনাকে ফিজিওথেরাপির এর মত কাজ দিবে। অনেক সময় পেশির বেশি পরিশ্রম হলে বিশেষ্ করে ব্যায়াম করার পর পেশিগুলো প্রসারিত হয়ে যায় এবং আপনি এক ধরণের টান অনুভব করবেন। গোসল করলে সেই পেশিগুলো শিথিল হয়ে যায় এবং আপনাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
২. রক্তচলাচল উন্নত করে
অনেকে ক্লান্তিদুর করার জন্য পানির টবে বা সুইমিংপুলে নিজেকে অনেক্ক্ষন সময় ব্যয় করে কারণ এটি করলে শরীরের একদম প্রান্তিয় কোষেও রক্তচলাচল বৃদ্ধি পায় এবং হাতে বা পায়ের একদম প্রান্তীয় মৃত প্রায় কোষগুলো সতেজতা ফিরে পায়।
৩. রক্তে সুগার এর পরিমাণ কমায়
ম্যাকি মেডিকেল সেন্টার লাভল্যান্ড, কোলোরাডো এর ডাঃ ফিলিপ এল হুপার তার এক সমীক্ষায় বলেন “ কোনো ডায়েবেটিক রোগী যদি নিজেকে প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট ৩ সপ্তাহ হালকা গরম টবে পানিতে নিমজ্জিত করে রাখে তাহলে তাদের ব্লাড সুগার ১৩% এর মত কমে যাবে। আরেকটি সমীক্ষায় দেখা যায় ১০ দিন গরম পানির টব থেরাপি নেয়ার ফলে তার ইনসুলিন নেয়ার ডোজ প্রায় ১৮% কমে গেছে।
৪. রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনাকে তড়ান্বিত করে
শুধুমাত্র গরম পানির গোসল নয় ঠান্ডা পানির গোসল ও আপনাকে অনেক লাভ দিয়ে থাকে। একটি সমীক্ষায় দেখা যায় প্রতিদিন ঠান্ডা পানির গোসলে আপনার রক্তসংবহনতন্ত্র এবং লাসিকাতন্ত্র বেশি পরিমাণে রোগ প্রতিরোধক কোষ তৈরি করে যা পরবর্তীতে আমাদের ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
৫. বিষণ্ণতার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে
একটা গবেষণায় দেখা যায়, ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে বিটা এন্ডোরফিন এবং নর এড্রেনালিন নামক দুটি হরমোনের পরিমান রক্তে বেড়ে যায় ফলে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করে।
৬.পুরুষদের প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে
থ্রোম্বোসিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট কোল্ড এর একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, কেউ যদি প্রতিদিন ঠান্ডা পানিতে গোসল করে তাহলে পুরুষদের টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি পায় ফলে তার প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং শুক্রাণু সংখ্যা বাড়িয়ে তোলে। অন্যদিকে গরম পানি দিয়ে গোসল করলে অনেক সময় তা সবচেয়ে সস্তা কন্ট্রাসেপ্টিভ (গর্ভনিরোধক) হিসেবে কাজ করে। কেননা একটি সমিক্ষায় দেখা যায়, গরম পানি তে প্রতিদিন গোসল করলে শুক্রাণু সংখ্যা কমে যায়। ভয়ের কিছু নাই আপনার শুক্রাণু সংখ্যা আবার পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে আসবে যখন আপনি গরম পানিতে গোসল বন্ধ করে দিবেন।
৭. টক্সিন অপসারণে সাহায্য করে
আপনি আপনার ঘামের গন্ধ বা শরিরের বাজে গন্ধ দূর করার জন্য যতই ডিওড্রেন্ট স্প্রে (সুগন্ধি) ব্যবহার করেন না কেনো গোসল ছাড়া আপনার ভিতরের এই গন্ধ দুর করতে পারবেন না। এছাড়া আপনার যদি অনেক বেশি পরিমাণে ঘাম হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার প্রতিদিন গোসল করা উচিত। কারণ ঘামের মাধ্যমে অনেক টক্সিন (বিষ) শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
৮. ভাল ঘুম হতে সাহায্য করে
আমাদের অনেকেরই রাতের বেলা গোসল করে ঘুমানোর অভ্যাস আছে। গোসল এর কারণে শরিরে একটা সতেজ ভাব আসে ফলে ঘুম ভাল হয়। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তারা অনেকেই রাতে গোসল করে এ থেকে সুফল পেয়েছেন।
৯. ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়
আপনি যখন গোসল করার সময় পানি মাথায় দিবেন তখন আপনার শ্বাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে কতক্ষনের জন্য ধরে রাখেন এবং একটি গভীর নিশ্বাস এর মাধ্যমে তা ছেড়ে দেন। এর কারণে ফুসফুসে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
১০. আপনাকে দেখতে সুন্দর লাগবে
প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এর সবচেয়ে ভাল মাধ্যম হলো গোসল। সেটা হোক গরম পানি বা ঠান্ডা পানির। ইহা আপনার শরির থেকে টক্সিন বের করে আপনার ত্বক কে কোমল এবং নমনীয় করে তুলবে। যার ফলে আপনাকে দেখতেও সুন্দর লাগবে।
সাস্থ্যকে ভাল রাখার জন্য আমাদের অবশ্যই পরিষ্কার পরিছন্ন থাকতে হবে। আর গোসল হচ্ছে পরিষ্কার পরিছন্ন থাকার প্রধান উপায়। তাই আমাদের সকলের উচিৎ নিয়মিত সঠিক ভাবে গোসল করা।