সফল মানুষের প্রতিদিনের ১০টি অভ্যাস!

কিছু সহজ ও সুন্দর অভ্যাস আপনার জীবন কে আমূল পরিবর্তন করে দিতে পারে। পৃথিবীর প্রায় সকল সফল মানুষই কিছু সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস চর্চা করেছেন যা তাদের সফলতার অন্যতম মূল চাবিকাঠি। জেনে নিই সেই অভ্যাসগুলি এবং আমদের জীবনে প্রয়োগ করতে চেষ্টা করি।

সু-স্বাস্থ্য ই সফলতার পূর্ব শর্ত। যে যত স্বাস্থ্য সচেতন, সেই তত স্বাস্থ্যবান। জীবনে সুস্থ্যতার সাথেই সফলতার সম্পর্ক। অনেকে সুস্থ্যতাকে সফলতার মূলমন্ত্র ভাবে আবার অনেকে সুস্থ্যতাকেই সফলতা ভাবে। সুস্থ্যতাই মানুষের জীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করে তুলতে পারে।

 

সুস্থ্য জীবন বলতে আমরা যা বুঝি

সুস্থ্য জীবন বলতে এমন একটা শারীরিক অবস্থা বুঝায় যা আপাত দৃষ্টিতে নীরোগ। শারীরিক কোন অসুস্থ্যতা না থাকা এবং চনমনে শরীরে দৈনন্দিন কাজ কর্ম চালিয়ে যাওয়াই সুস্থ্য জীবনের নমুনা।

 

সুস্থ্য জীবন কেন প্রয়োজন

সুস্থ্য জীবনের প্রয়োজীয়তা একজন অসুস্থ্য এবং অসফল মানুষ ভালো বুঝতে পারে। অসুস্থ্য জীবন কারও কাম্য নয়। অসুস্থ্য জীবনে কেউ কখনো সফল হয় না। আমাদের সামনে যে সব সফল মানুষের উদাহরন রয়েছে, তাদের জীবনাচরণ এ সুস্থ্য জীবন ব্যবস্থার প্রমান পাওয়া যায়।

শীর্ষ সফল ব্যক্তিদের জীবনে ব্যতিক্রমী এবং সহজ ও সুন্দর কিছু অভ্যাস আছে। কিছু নিয়মানুবর্তিতা আছে, কিছু মানবীয় গুনাবলী আছে। আর এই সব এর কারনেই তারা শীর্ষ সফল।

যে সকল জীবনাচরন মানুষের জীবন পরিবর্তন করেছে বা যে সকল জীবনাচরন পালন করে যুগে যুগে মানুষ সফল হয়েছে, সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়েছে সে সকল জীবনাচরন কে দুই ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এক ধরনের কাজ আছে যা তারা সারা জীবন নিয়মিত করেছেন এবং সেই ভাবে জীবন ধারন করেছেন। আর এক ধরনের কাজ আছে যা তারা নিয়মিত প্রতিদিন পালন করেছেন।

 

সফল মানুষের প্রতিদিনের ১০টি অভ্যাস

আমাদের চারপাশে কিছু মানুষ আছে যারা সারা দিন একটি ফুরফুরে মেজাজে একটানা কাজ করে যান, তারা সফলতার সাথে কাজগুলো করে থাকেন আবার আমাদের মত ক্লান্ত হন না, অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখেন না, কাজে ব্যর্থ হন না। তারা কি এমন করেন, কি তাদের প্রতিদিনের অভ্যাস, তারা বিশেষ কি এমন করেন যে এমন উদ্দামী কর্মশক্তি তারা পান আজ তাই আমরা জানব। তারা যে বিষয় গুলো নিয়মিত অভ্যাস করেন তা হল,

১. রাতে গোসল করাঃ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার এক বা দুই ঘন্টা আগে তারা গোসল করেন। সারা দিনের কর্মময় সময়গুলো শেষ করে বাসায় আমরা সবাই ই ক্লান্ত হয়ে ফিরি। এ অবস্থায় ঘুমাতে না গিয়ে ঘুমানোর আগে গোসল করে নিলে  যেমন ক্লান্তি দূর হবে,শরীরে জমে থাকা ধুলো বালি ময়লা দূর হবে। শরীর ও মন হালকা লাগবে। এতে  রাতে ঘুম ভালো হবে এবং পরবর্তী দিন কাজে মনোযোগ আসবে ভালো। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের মতে যাদের ইনসমনিয়ার সমস্যা আছে তাদের রাতে গোসল করা উত্তম।

২. একটি চমৎকার রুটিন মেনে চলাঃ তারা সর্বদা একটি সুন্দর রুটিন মেনে চলেন। একটি চমৎকার রুটিন আপনার সারা দিনের কর্মপরিকল্পনাকে সফল করতে পারে। বাসার কাজ, অফিসের কাজ, শরীর চর্চা, বিশ্রাম সহ সব কাজের একটি সুন্দর রুটিন করে নিয়ে সে ভাবে গুছিয়ে কাজ করলে সফলতা পাওয়া যায়। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কিছু  শরীর চর্চা করে , কিছু পড়াশুনা করে কাজ শূরু করে দিলে একটি বাড়তি উদ্দামে সারা দিন কাজ করা যাবে।

৩. পর্যাপ্ত সময় ঘুমানোঃ রাতের বেলা অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে। রাতে কমপক্ষে ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানো। তাছাড়া দিনে কাজের ফাকে বা দুপুরের খাবারের পর  সুযোগ করে ২০ মিনিট বা ৩০ মিনিটের একটি ভাত ঘুম দিতে পারলে ভালো। এতে স্মৃতি শক্তি উন্নত হয় এবং শরীর ও মেজাজে চনমনে ভাব আসে। সারা দিন নতুন উদ্দামে কাজ করার শক্তি পাওয়া যায়।

৪. মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকাঃ মোবাইল ফোনের সাথে আমাদের সখ্যতা অনেক। সারা দিন আমরা ফোনের সংস্পর্শে থাকি। এতে করে আমাদের মনোযোগ মোবাইল নির্ভর হয়ে পড়ে। তাই দিনে কিছু সময় মোবাইল থেকে দূরে থাকলে আমাদের মস্তিষ্ক নতুন নতুন কাজে মনোযোগ দিতে প্রস্তুত হবে।

৫. মেডিটেশন করাঃ প্রতিদিন সকালে ২০ মিনিটের জন্য মেডিটেশন করলে সারা দিন দেহ ও মনে প্রশান্তি বিরাজ করে। এতে করে সারা দিন উদ্দামের সাথে কাজ করা যায়।

৬. ঘুমাতে যাওয়ার আগে কর্মপরিকল্পনা করাঃ প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পরের দিনের জন্য কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে ঘুমাতে যাওয়া। যাতে করে সকাল বেলাঘুম থেকে উঠে পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু করা যায়। এতে করে সারা দিনের কাজে এগিয়ে যাওয়া যায়।

৭. আবেগ প্রবন না হওয়াঃ আমরা অনেকেই আছি খুব বেশি আবেগপ্রবণ। কাজের পরিধি না অনুধাবন করেই আবেগের বশে কাজে নেমে পড়ি। এতে করে কোনো কাজের সঠিক পরিকল্পনা হয় না, পুরো কাজ টাই শেষে ভন্ডুল হয়। তাই বেশি আবেগ তারিত না হয়ে শান্ত ভাবে কাজের পরিকল্পনা করে কাজে নামতে হবে।

৮. বাইরে ঘুরতে যাওয়াঃ আমরা কাজ করতে করতে প্রায়ই একঘেয়ে হয়ে যাই। তাই এক ঘেয়ে ভাব কাটানোর জন্য সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন কিছু সময়ের জন্য হলেও বাইরে কোথাও থেকে ঘুরে আসা উচিত। এতে করে নতুন করে কাজের উদ্দাম ফিরে আসবে।

৯. সঠিক খাবার খাওয়াঃ খাবারের সাথেই স্বাস্থ্যের সম্পর্ক। খাবার সঠিক হলে স্বাস্থ্যও সঠিক। আপনার সু-স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক খাবারটি আপনাকেই বাছাই করতে হবে, আপনাকেই খুজে নিতে হবে। সঠিক খাবার বলতে অতিরিক্ত তেল-ঝাল,ফাস্ট ফুড বা দামি দামি খাবার নয়। সঠিক খাবার বলতে সঠিক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। প্রয়োজনে ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ নিতে হবে।

বেশি বেশি ফল ও সবুজ শাক সবজি খেতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে। খাবার এর একটি নির্দিষ্ট সময় তালিকা করে সময় মত খাবার খেতে হবে।

১০. সঠিক খাবার রান্না করা ও বাসি খাবার না খাওয়াঃ খাবার সঠিক উপায়ে রান্না করাও একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। শুধু সঠিক খাবার নির্বচন করলেই হয় না,খাবার কে সঠিক উপায়ে প্রস্তুত করে খাওয়াও জরুরী। আর বাসি পচা খাবার তো খাওয়াই যাবে না।

 

সফল মানুষরা সারা জীবন যে ৮টি অভ্যাস নিয়মিত পালন করেন

১. সূর্যোদয়ের পূর্বে ঘুম থেকে উঠাঃ পৃথিবীর সকল সফল ও সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তিদের অবশ্য পালনীয় আচরন। অন্তঃত আমরা যাদেরকে সফল ও স্বাস্থ্যবান হিসেবে চিনি তারা সকলেই আর্লি রাইজার। টিম কুক থেকে শুরু করে বিল গেস্টস, ওয়ারেন বাফেট, জেফ বেজোস, বারাক ওবামা, স্টীভ জবস, রিচার্ড ব্রানসন বা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, এরা সবাই ভোরের পাখি নামে পরিচিত। এরা সবাই ভোর ৩.৪৫ থেকে ৪.৩০ এর মধ্যে ঘুম থেকে উঠেন।

২.  রুটিন মাফিক কাজ করাঃ আমরা যাদেরকে স্বাস্থ্যবান বা সফল হিসেবে জানি তারা সবাই নির্দিষ্ট রুটিন মাফিক জীবন-যাপন করেন।

৩.  শরীরচর্চাঃ আমাদের শরীর একটি যন্ত্রের মত। নিয়মিত ব্যবহার না করলে এটি যন্ত্রের মত নষ্ট হয়ে যায়। তাই শরীর চর্চার প্রয়োজনীয়তা অনেক। সারা দিনের কাজ কর্মের জন্য শক্তি যোগার করতে সকাল বেলা একটু খানি জগিং বা শরীর চর্চার কোন বিকল্প নেই। সফল ও সুখী মানুষেরা তাই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে শরীর চর্চা করে থাকেন।

৪. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য তৈরি করা এবং লক্ষ্যে অবিচল থাকাঃ মানুষ যখন তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছায় বলায় যায় তখন সে সফল। লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে মানুষকে আগে তার লক্ষ্য নির্ধারন করে নিতে হয়। যারা সফল ও সুখী তারা তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্বচন এ পটু হয়ে থাকেন এবং নির্দিষ্ট  লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত অবচল থাকেন।

৫. সময়ানুবর্তিতাঃ সফল মানুষের সফলতার গল্প জুড়ে থাকে শুধু সময়ের গল্প, সময়ের সদ্ব্যব্যবহারের গল্প। সময়ের মূল্যায়ন করলেই জীবন মূল্যবান হয়ে উঠে। তারা কখনো কোন মিটিং বা কাজে বিলম্ব করেন না, হোক সেটা কম গুরুত্বপূর্ণ। সময়ানুবর্তিতা তাদের কাছে কমিটমেন্ট মত। তাই সব সফল মানুষেরা জীবনে সময়কে খুব মূল্যায়ন করে থাকেন।

৬. বই পড়াঃ এটি সফল মানুষদের আর একটি সুন্দর বৈশিষ্ট্য বা অভ্যাস। সফল মানুষেরা প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়েন এবং লেখেন। এবং তারা এই কাজটি সকাল বেলা করে থাকেন। বিল গেটস কে আমরা সবাই চিনি। বিল গেটস প্রতিদিন বই পড়েন এবং প্রচুর বই পড়েন।

৭. ধৈর্য্যের সাথে কাজ করাঃ সফল ও সুখী মানুষের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তারা সর্বদা শান্ত থেকে সব প্রতিকূলতাকে সামলে ধৈর্য্যের সাথে কাজ করেন। সঠিক কর্মপরিকল্পনা আর তার বাস্তবায়ন এর মাধ্যমে সব সামলে যায়।

৮. কাজে নেমে পড়া ও নাছোড়বান্দার মত লেগে থাকাঃ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারন করার পর তারা আর থেমে থাকেন না, তারা কাজে নেমে পড়েন। শত বাধা বিপত্তি স্বত্ত্বেও তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে এক সময় সফল হন।

 

স্বাস্থ্যই সম্পদ। সকল সুখের মুল হল স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্য ভালো না হলে সম্পদের কোনো মূল্য নাই। আবার অনেকের কাছে তো সু-স্বাস্থ্যই সম্পদ। শুধু পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারই না বা শুধু শরীরচর্চাই না। খেয়াল রাখতে হবে সব দিকে,মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। এমন সব ভালো কিছু করতে হবে যাতে দিন শেষে ডায়েরি তে লিখার মত কিছু থাকে।

Default user image

খন্দকার মোঃ শওকত হোসেন, লেখক, আস্থা লাইফ

বরিশাল এর নিভৃত ও মনোরম একটি গ্রামে জন্ম। সাহিত্য অনুরাগী মা-বাবার কাছেই লেখালেখির হাতেখড়ি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করলেও লেখালেখির দিকেই ঝোঁকটা বেশি। তাই অবসরে লেখালেখির চেষ্টা করি। লেখনীর মাধ্যমে যদি কারো উপকার করা যায় কিংবা কোন পরিবর্তনের সূচনা করা যায়, তাহলে তৃপ্তিটা আসে মন থেকে। এই উদ্দেশেই আস্থা লাইফ পরিবারে যোগ দেয়া। আমার লেখার মাধ্যমে কারো মধ্যে কিঞ্চিৎ সচেনতাও যদি সৃষ্টি করতে পারি, সেইটাই হবে পরম পাওয়া।

Related Articles