অতিরিক্ত টিভি দেখার ৯ টি ভয়ানক দিক! এখনি জেনে নিন।

করোনার এই সময় অনেকেই হয়ত টিভি দেখে কাটিয়ে দিচ্ছে দিনের বেশির ভাগ সময়। কিন্তু আপনি জানেন কি দিনে দুই ঘন্টার বেশি টিভি দেখা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকারক?

বিশ্বজুড়ে এখন চলছে করোনা মহামারী। করোনার ভয়াবহ ছোবলে ইতিমধ্যে বিশ্বে লাখ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে। যদিও করোনার টিকা আমাদের মাঝে চলে এসেছে, কিন্তু ঠিক কবে বা কিভাবে এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তা এখনো অনিশ্চিত। 

এই অবস্থায় অনেকেই ঘরে বন্দী জীবন যাপন করছে। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় আমার মত অনেকেই হয়ত টিভি দেখে কিংবা মোবাইল নিয়েই কাটিয়ে দিচ্ছে দিনের বেশির ভাগ সময়। কিন্তু আপনি জানেন কি দিনে দুই ঘন্টার বেশি টিভি দেখা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকারক? অতিরিক্ত টিভি দেখা আপনার শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করে, ক্ষুধাবোধ কমে যায়, স্থূলতা দেখা দেয়। 

আসুন জেনে নেই অতিরিক্ত টিভি দেখার ফলে আপনার কি কি সমস্যা হতে পারে - 

হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়

বসে বসে একটানা টিভি দেখার কারণে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বেড়ে যায়। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, দিনে ২-৪ ঘন্টার বেশি টিভি দেখলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৮০ শতাংশ বেড়ে যায়। 

 

হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর ১৫টি কার্যকরী উপায়।

 

টাইপ টু ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায় 

গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে দুই ঘন্টার বেশি টিভি দেখলে টাইপ টু ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা ১৪ শতাংশ বেড়ে যায়।

 

ডায়াবেটিসে ভয় নয়, সচেতন হোন ও জীবনকে উপভোগ করুন।

 

ঘুমে ব্যাঘাত হয়

অতিরিক্ত টিভি দেখার ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এছাড়াও মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি, ছাড়া ছাড়া ঘুম হবার মত লক্ষণও দেখা যেতে পারে। 

চোখের সমস্যা হয়

একটানা টিভি দেখার ফলে চোখের সমস্যা হতে পারে। বর্তমান প্রজন্মের অতিরিক্ত টিভি দেখা, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার, সারাদিন গেইম খেলার মত বদ অভ্যাসের কারণে প্রায় প্রত্যেকের চোখেই চশমা দেখা যায়।

সামাজিক মেলামেশা কমে যায়

বাচ্চারা সারাদিন টিভি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তাদের খেলা ধুলা করা কিংবা অন্য বাচ্চাদের সাথে মেশার সুযোগ কমে যায়। ফলে বাচ্চার সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। জীবন যাপনের প্রাথমিক শিক্ষা বাচ্চারা খেলতে খেলতে পায়। অতিরিক্ত টিভি, গ্যাজেট, ইলেকট্রনিক্স এর ব্যবহার তাদের সেই সুযোগ দিচ্ছে না বললেই চলে।  

ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট ব্যাহত হয়

শিশুর মানসিক বিকাশের শতকরা ৮০ শতাংশ তার আট বছর বয়সের মধ্যে হয়ে থাকে। টিভি অনেকাংশে একটা শিক্ষামূলক মাধ্যম হলেও দিনে দুই থেকে তিন ঘন্টার বেশি টিভি দেখলে তা ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট ব্যাহত করে। বিভিন্ন কগনিটিভ দক্ষতা যেমন শর্ট টার্ম মেমোরি, ভাষাগত দক্ষতা, গাণিতিক সামর্থ্য ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি আচরণগত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বর্তমানে বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী, বাচ্চাকে স্কুলে দেবার আগ পর্যন্ত টিভি না দেখানোই ভালো। 

স্থূলতা বেড়ে যায়

স্থূলকায় মানুষের মধ্যে একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল তাদের সেডেনটারি লাইফ স্টাইল। সারাক্ষণ টেবিল চেয়ার কিংবা বিছানায় বসে থাকা, শুয়ে থাকা, কায়িক পরিশ্রম না করা, সারাদিন ফাস্টফুড খাওয়া এসব কারণে স্থূলতা বা ওবেসিটি হতে পারে। অতিরিক্ত টিভি দেখার কারণে ফিজিক্যাল ইনএক্টিভিটি বেড়ে যায় ফলে ওবেসিটি হতে পারে।

আচরণগত প্রভাব পড়ে

টিভির নানা রকম অনুষ্ঠান আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আচার আচরণ জীবন বিধির উপর প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত টিভি দেখার ফলে টিভির উপর একটা ডিপেন্ডেন্স তৈরি হয়। মানুষ টিভির বিভিন্ন চরিত্র, বিভিন্ন তারকার আচরণ অনুসরণ করা শুরু করে। 

কনজ্যুমারিজম

টিভিতে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। আমরা টিভিতে যাই দেখি, তাই আমাদের কাছে লোভনীয় বলে মনে হয়। এর ফলাফল আমাদের অস্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থা। এসব বিজ্ঞাপনের প্রচার প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে মানুষ অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে প্রবৃত্ত হয়। বিশেষ করে বাচ্চারা নানা রকম ফাস্ট ফুড ও কার্বোনেটেড ড্রিংকসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। 

তাহলে উপায়? 

টিভি দেখার পরিমাণ কমিয়ে আনুন- দিনে দুই থেকে তিন ঘন্টার বেশি কোনোভাবেই টিভি দেখা যাবে না। এর মানে এই না যে টিভি না দেখে বরং মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে সময় কাটানো যাবে। যেকোন ধরনের ডিজিটাল স্ক্রিনের সংস্পর্শে দিনে দুই ঘন্টার বেশি থাকা যাবে না।

সতর্কতার সাথে টিভির চ্যানেল বেছে নিতে হবে- অপ্রীতিকর কিংবা আক্রমণাত্মক প্রোগ্রাম হয় এমন চ্যানেল শিশুদের দেখাবেন না। বয়সের সাথে যেন টিভির প্রোগ্রামের সামঞ্জস্য থাকে। 

খাবার সময়ে টিভি দেখার অভ্যাস বাদ দিন- অনেকে বাচ্চাকে খাওয়াতে না পেরে টিভিতে এটা ওটা দেখিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এটা একেবারেই করবেন না। 

টিভি বেডরুমে না রেখে বরং লিভিং রুম কিংবা ড্রয়িং রুমে রাখুন। 

টিভি কোনো খেলনা নয়- বাচ্চাকে ভোলানোর জন্য, খাওয়ানোর জন্য কিংবা কান্না থামানোর জন্য টিভি দেখানোর অভ্যাস বাদ দিতে হবে। 

পরিবারের সবাই মিলে একসাথে বসে টিভি দেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন- একা একা সময় কাটানোর জন্য নয় বরং সবাই মিলে সুন্দর সময় উপভোগ করার জন্য টিভি দেখুন। 

নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন- টিভি দেখার বদলে আউটডোর এক্টিভিটিতে বেশি বেশি অংশ নিন। বিকেল বেলা কার্টুন দেখানোর পরিবর্তে বাচ্চাকে মাঠে খেলতে নিয়ে যান। স্মার্টফোনের পরিবর্তে বাচ্চার হাতে গল্পের বই ধরিয়ে দিন। এতে করে যেমন বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে, তেমনি টিভির প্রতি আসক্তিও ধীরে ধীরে কমে আসবে। 

আজকাল টিভির বিকল্প হিসেবে আমরা স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকি। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম সহ বেশ কিছু স্ট্রিমিং সাইটের কল্যাণে স্মার্টফোন এখন টিভির অলটারনেটিভ হিসেবে কাজ করছে। সেক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। দুই থেকে তিন ঘন্টার বেশি স্ক্রিন টাইম আমাদের শরীর স্বাস্থ্য মন সব কিছুর জন্যই ক্ষতিকর।  

 

করোনাকালীন এই দুর্যোগে অন্যান্য যেকোনো সময়ের চাইতে আমরা কঠিন সময় পার করছি। দীর্ঘদিন ঘরে বন্দী থাকার ফলে সবাই হাপিয়ে উঠেছে, একঘেয়েমি চলে এসেছে সবার জীবনে। এই একঘেয়েমি কাটানোর জন্য কেউ কেউ টিভির প্রতি, কেউ কেউ ফোনের প্রতি, কেউ আবার সিনেমা সিরিজ গেমস এসবের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। ফলে শারীরিক সক্ষমতা কমে যাচ্ছে, আমরা রোগ জীবাণুর সহজ টার্গেটে পরিণত হচ্ছি, পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত টিভি দেখার অভ্যাস আমাদের শারীরিক মানসিক সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই কোনো অবস্থাতেই দিনে দুই থেকে তিন ঘন্টার বেশি টিভি দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন, অন্যকেও অতিরিক্ত টিভি দেখায় নিরুৎসাহিত করুন।

Default user image

ডাঃ ঐশ্বি তৃষা সৃষ্টি ঢালী, লেখক, আস্থা লাইফ

আমি ঐশ্বি তৃষা সৃষ্টি ঢালী। বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে অল্প স্বল্প লেখালেখি করতে ভালো লাগে। আস্থা লাইফের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্লগগুলি মানুষের মধ্যে একটু হলেও সচেতনতা তৈরি করবে বলে আমার বিশ্বাস। ভালো লাগে ঘুমাতে, গান শুনতে, নানা রকম খাবার খেতে আর সবচেয়ে ভালো লাগে কথা বলতে।

Related Articles