টিনএজ মেয়েদের ৭টি সমস্যা এবং তাদের সমাধান

আপনার টিনএজ বা কিশোরী মেয়ে কি হীনম্মন্যতা, বুলিং, হতাশা কিংবা খারাপ বন্ধুত্বের মত সমস্যাগুলির সাথে লড়াই করছে? এমন সময়ে পিতা-মাতা হিসেবে আপনার করণীয় কী? আপনার কিশোরী মেয়ের বিভিন্ন সমস্যা এবং তাদের সমাধানের সঠিক পরামর্শ জানতে এই প্রবন্ধটির শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

বয়সন্ধিকালের সময়টা একজন টিনেজারের জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই সময় অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যে কিশোরীরা কিছু অপ্রতিরোধ্য শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। যার ফলে তারা উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার সঙ্গে বেড়ে উঠতে থাকে।  আর এই সময়টাতেই অভিভাবকদের অনেক বেশি সচেতন হয়ে সন্তানদের সামাল দিতে হয়। কেননা এই বেপরোয়া ও ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে কিশোরীরা নানা ভাবে বিভ্রান্ত হয়ে ভুল পথে চলে যেতে পারে। আসুন আজকের আর্টিকেলে টিনএজ মেয়েদের ৭টি সমস্যা এবং তার সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই। 

 

টিনএজ মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা এবং এর সমাধান

 

১. চেহারা নিয়ে হীনম্মন্যতা তৈরি হওয়া 

সমস্যা

টিনএজ বয়সে অনেক মেয়েই চেহারা ও শারীরিক সৌন্দর্য্য নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে। এইসময় কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকাল এবং মাসিকের জন্য শরীরবৃত্তীয় অনেকটা পরিবর্তন ঘটে। যার ফলে বয়ঃসন্ধিকালের সময় মুখে ব্রণ উঠে এবং এতে তারা অস্বস্তিতে ভোগে।  

সমাধান

এই সময় আপনার সন্তানের বিশেষ যত্ন নিন। তাকে দেহের বাইরের সৌন্দর্য্যের চেয়ে ভেতরের সৌন্দর্য্যই বেশি মুল্যবান, তা বুঝিয়ে বলুন। এখন তাকে তার শরীরের যত্ন নিতে, স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে, নিয়মিত ঘুমাতে এবং হালকা ব্যায়াম করতে বলুন। মূলত বয়সন্ধিকালের সময়ে হওয়া ব্রণ যে অস্থায়ী এবং যা একসময় দূর হয়ে যাবে তা জানান। এছাড়াও আপনার সন্তান যদি ব্রণ নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করে এবং তা যদি সমস্যা হয়ে দাড়ায়, তবে তাকে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। 

 

২. পিরিয়ড নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়া 

সমস্যা

টিনএজ বয়সে মেয়েদের প্রথম মাসিক শুরু হয়। এতে তাদের মধ্যে শারীরিক এবং আবেগীয় পরিবর্তন আসে। মূলত তখন একজন কিশোরী শারীরিক এবং মানসিক ভাবে পরিপক্ব হয় না। এর ফলে দেখা যায় যে তখন ঋতুস্রাব নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।

সমাধান

এইসময়ে আপনি আপনার কন্যা সন্তানকে প্রথম পিরিয়ডের জন্য প্রস্তুত করুন। এখন তাকে বুঝিয়ে বলুন যে, ঋতুস্রাব একটি স্বাভাবিক এবং  প্রাকৃতিক ব্যাপার। প্রত্যেক নারীর জীবনেই এটা হয়ে থাকে এবং এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মূলত আপনার কিশোরী মেয়ের সাথে মাসিকের বিষয় নিয়ে সঠিক ধারণা, প্রস্তুতি এবং খোলাখুলি আলোচনাই এই সমস্যার প্রধান সমাধান।   

 

আপনার মেয়েকে প্রথম পিরিয়ডের জন্য যেভাবে প্রস্তুত করবেন

 

৩. বুলিংয়ের শিকার হওয়া 

সমস্যা

অনেকসময় আপনার সন্তান টিনএজ বয়সের আগে অথবা পরে বুলিংয়ের শিকার হতে পারে। স্কুল বুলিং থেকে শুরু করে অনলাইন বুলিং কিংবা যেকোন ধরণের বুলিংয়ের মুখোমুখি সে হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সে দেহের গঠন, গায়ের রঙ, শারীরিক সমস্যা, পড়ালেখার বাজে ফলাফল ইত্যাদি নিয়ে বুলিংয়ের শিকার হতে পারে। মূলত এতে তার  মাঝে হতাশা, বিষণ্ণতা, হীনম্মন্যতা প্রভৃতি সৃষ্টি হতে পারে।  

সমাধান

আপনার সন্তান যদি বুলিংয়ের শিকার হয়, তবে পুরো বিষয়টা বিস্তারিত জেনে-শুনে তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিতে এবং সমস্যাটা সমাধানের চেষ্টা করুন। আর যদি আপনার সন্তানের দ্বারা কেউ বুলিংয়ের শিকার হয়, তবে তখন তাকে বুঝিয়ে বলুন যে বুলিং করা ব্যাড ম্যানার। এছাড়াও আপনার সন্তানকে বুলিংয়ের ক্ষতিকর দিক এবং তা একজন মানুষকে কতটা কষ্টের মাঝে ফেলে, তাও ভালো করে বুঝিয়ে বলুন।  

 

৪. অতিরিক্ত আবেগ কাজ করা 

সমস্যা

টিনএজ বয়সে কিশোরীদের শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটার কারণে তখন তারা প্রেমের সম্পর্ক, শারীরিক অন্তরঙ্গতা, দৈহিক ব্যাপার ইত্যাদি বিষয়ে বেশ কৌতূহলী হয়ে উঠে। ফলে এই বয়সে তাদের মধ্যে অতিরিক্ত আবেগ কাজ করে। সেজন্য তারা আবেগের বশে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিংবা কোন অনৈতিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়তে পারে। 

সমাধান

এই সময় আপনার কন্যা সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টা করুন। সে যাতে তার সব ধরণের কৌতূহলের কথা আপনাকে খুলে বলতে পারে তা নিশ্চিত করুন। মূলত আপনার কন্যার  টিনএজ  বয়সকাল থেকেই তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক, শারীরিক অন্তরঙ্গতা, দৈহিক সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারেন। এছাড়াও এখন আপনার সন্তানকে রাগ না করে বরং তার ভুলটা বুঝিয়ে বলুন। 

 

"মুড সুইং" - যেন নিজের সাথেই নিজের এক অঘোষিত লড়াই

 

৫. নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা

সমস্যা

এই সময় অনেক কিশোরীই তাদের সমবয়সী কিংবা অন্যদের সাথে নিজের তুলনা করে থাকে। সেক্ষেত্রে কেউ যদি তার থেকে বেশি সুন্দর হয় কিংবা রেজাল্ট ভালো করে, তবে সে জেলাস হয়ে পড়ে। এমনকি  টিনএজ বয়সে কিশোরীরা বিভিন্ন মডেলরা কেমন ড্রেস পরে, কি করে এবং কি ট্রেন্ড চলে সে অনুযায়ী চলার চেষ্টা করে।  আর এর কারণে অনেক মেয়েই নিজের শারীরিক সৌন্দর্য্য, দেহের গঠন, সর্বোপরি  চুল, ত্বক, চেহারা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে। 

সমাধান

আপনার সন্তান যদি অন্য কারো সাথে নিজেকে তুলনা করে কষ্ট পায় কিংবা হিংসা করে, তবে তাকে রাগ না করে বুঝিয়ে বলুন।  আপনি তাকে এই বলে বুঝাতে পারেন যে, সবাই সমান হয় না, কেউ তোমার থেকে কোন দিয়ে এগিয়ে আছে, আবার তুমি হয়তো তার থেকে কোন দিক দিয়ে এগিয়ে আছো। সুতরাং তুলনা না করে বরং তোমার যা আছে তাই নিয়েই ভালো থাকতে চেষ্টা করো। এছাড়াও এইসময় সে যেন কোন মডেলকে আদর্শ ভেবে তাকে অনুসরণ কিংবা অনুকরণ করে অন্ধ ভক্ত হয়ে না বসে তা খেয়াল করুন। কেননা কারো শারীরিক সৌন্দর্য, ড্রেসআপ, চলাফেরা ইতাদিকে আদর্শ না ধরে চলাই যে ভালো, তা তাকে বুঝিয়ে বলুন।

 

৬. হতাশা কিংবা বিষণ্ণতায় ভোগা 

সমস্যা

বয়সন্ধিকালের সময়ে মেয়েদের শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন আসে। এই সময় তারা আবেগীয় ভাবে নাজুক অবস্থায় থাকে। আর তখন যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে বা সমস্যার সৃষ্টি হয়, তবে তারা বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। এছাড়াও এই সময় চেহারা, দৈহিক আকৃতি, পড়ালেখা ইত্যাদি নিয়েও অনেকেই হতাশায় ভুগে থাকে। 

সমাধান

এইসময় আপনি সবক্ষেত্রে আপনার কন্যা সন্তানের পাশে থাকুন। তার তখনকার বিষণ্ণতা কাটাতে তাকে নিয়ে ঘুরতে যান, তার সাথে মনখুলে গল্প করুন, গিফট দিন। সর্বোপরি তার হতাশা এবং অস্থির আচরণের কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধানের চেষ্টা করুন। এছাড়াও আপনার সন্তান যদি সবকিছু নিয়ে অনেক বেশি ডিপ্রেশনে ভোগে, তবে দেরি না করে, একজন মনোরোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।   

 

আপনি কি ডিপ্রেশনে ভুগছেন? বুঝার উপায় কি?

 

৭. ব্যাড সার্কেল বা খারাপ বন্ধুত্ব

সমস্যা

সাধারণত টিনএজ বয়সে স্কুল এবং আশেপাশের অনেকের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে সব বন্ধুই কিন্তু ভালো হয় না। মূলত তখন কিছু বন্ধু থাকে, যাদের অনেকেরই খারাপ অভ্যাস থাকে। আর তাদের সাথে মিশে আপনার সন্তানও বিপথে যেতে পারে। কেননা এই টিনএজ বয়সে নতুন এবং নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি হয়। 

সমাধান

আপনার কন্যা সন্তানকে খারাপ সঙ্গ সম্পর্কে বুঝিয়ে বলে, তাদের থেকে দূরে থাকতে বলুন।  এছাড়াও তাকে পড়াশুনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারেন। কেননা এতে তার প্রতিভার বিকাশ ঘটার পাশাপাশি  সময়টাও ভালো কাটবে। 


 

শেষকথা

বয়সন্ধিকালে অনেকেই মা-বাবার কথা শুনতে চায় না। এমনকি তারা ঠিকমতো পড়ালেখাও করতে চায় না। অনেকসময় কেউ কেউ ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়তে পারে, তাই সেদিকে সর্বোচ্চ খেয়াল রাখুন। মূলত এই সময়টা আপনারাও পার করেছেন,  সেটা মনে রেখে আপনার সন্তানের সমস্যাগুলো সমাধান করতে সচেষ্ট হোন।   


 

আরও পড়ুনঃ

Default user image

সাবরিনা দিলশাদ এলিন, লেখক, আস্থা লাইফ

আমি একজন কন্টেন্ট রাইটার! আমি বই পড়তে, গল্প করতে এবং ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি। মূলত লেখালিখি আমার প্যাশন এবং তা এখন আমার পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে! আশা করি আস্থা লাইফের সাথে আমার এই লেখালিখির জার্নিটা অনেক দূর এগিয়ে যাবে!

Related Articles