শিশুর চোখে ভারী চশমা! পরিত্রান পাওয়ার উপায় কি?

পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দৃশ্য হলো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা, বিস্ময়ে ভরা শিশুর চোখ। তবে উন্নয়ন আর সামনে এগিয়ে চলার হাত ধরে আরো অনেক কিছুর সাথে সাথে প্রভাব পড়ছে শিশুদের এই চোখেও। কাচের আড়ালে লুকিয়ে যাচ্ছে আগ্রহ জড়িয়ে থাকা শিশুর দৃষ্টি। কিন্তু কেনো! এর থেকে শিশুদের মুক্তির উপায় কি?

বর্তমানে জাতীয়ভাবে কোন সঠিক পরিসংখ্যান জানা না গেলেও বেসরকারী সংস্থাগুলোর প্রদানকৃত তথ্যানুসারে চশমা ব্যবহার করছে এমন শিশুর আনুমানিক পরিমাণ মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ। যার আবার বেশিরভাগটাই আমাদের প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকায়। শুধু ঢাকা বা বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী বিশ্বের প্রতি ৪ জন শিশুর একজন পরিষ্কারভাবে দেখতে পায় না। প্রতিনিয়ত এই পরিমাণ আরো বেড়েই চলেছে।

প্রশ্ন হলো, কেন বয়স্কদের চোখে আঁটা চশমা ধীরে ধীরে শিশুদের চোখে জায়গা করে নিচ্ছে? শিশুরা চশমা পরতে বাধ্য হতো আগেও, কিন্তু হঠাৎ করে এর পরিমাণের যে বৃদ্ধি, সেটাই বা কেন? চলুন, শিশুদের চশমা ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে থাকা সম্ভাব্য কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক!

অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম

বর্তমান সময়ের মা-বাবার অভিযোগের অনেকটাই জুড়ে থাকে মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব বা টেলিভিশনের মতো স্ক্রিনের দিকে সন্তানের তাকিয়ে থাকা নিয়ে। এই অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমকেই বরাবরের মতো শিশুদের বাড়তে থাকা চশমার প্রয়োজনীয়তার পেছনে থাকা কারণ বলে মনে করেন অনেকেই। ব্যাপারটা যে একেবারেই সত্যি না তা নয়। চোখে অতিরিক্ত আলো পড়লে সেটা চোখের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তবে একই কথা সূর্যরশ্মির ক্ষেত্রেও বলা যায়। প্রশ্ন ওঠে, অনেকটা সময় বই পড়লে শিশুর চোখে যদি সমস্যা না দেখা দেয়, তাহলে অনেকটা সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে কেন সমস্যা হবে? উত্তরটা খুব সহজ। আমরা সাধারণত বই চোখ থেকে একটু দূরে ধরে রাখি। কিন্তু স্ক্রিনের ক্ষেত্রে আলো দ্বারা আমাদের চোখ অনেকটা সময়ের জন্য প্রভাবিত হয় খুব কাছ থেকে। 

বয়সের সাথে সাথে একজন মানুষের চোখের মণির আয়তন বাড়তে থাকে। এই স্ক্রিন টাইম সেই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং ফলে শিশুদের চোখে মায়োপিয়া দেখা দেয়। 

গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর ওষুধ সেবন

প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে গেলেও এর প্রভাবে নানারকম ওষুধ ও উপাদানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি আমরা। এর ফলে শুধু যে আমরা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হই তা নয়, একইসাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্যকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলি। চিকিৎসকদের মতে, গর্ভাবস্থায় নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ও রাসায়নিক উপাদান মা গ্রহণ করলে এর ফলে শিশুর দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর সেখান থেকেই তৈরি হয় চশমা ব্যবহারের প্রবণতা।

স্থুলতা ও খাদ্যাভ্যাস

পূর্বের তুলনায় বর্তমানে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলা বা শরীরচর্চার পরিমাণ কমে এসেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটানা ক্লাস, কোচিং, বাড়িতে স্কুলের কাজ সেরে মোবাইল বা ভিডিও গেমে ব্যস্ত প্রজন্ম তাই স্থুলতার শিকারও হচ্ছে অনেক বেশি। একটা সময় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যকার চশমা ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করতো খাদ্যাভ্যাস। বড় হওয়ার সাথে সাথে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন চোখের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতো। ঠিক একইভাবে জাংক ফুড গ্রহণের পরিমাণ বর্তমানে শিশু অবস্থাতেই বেড়ে যাওয়ায়, পাশাপাশি খেলাধুলার অভাবে শিশুদের চোখ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দ্রুত। চশমার প্রয়োজনটাও তাই বেড়ে যাচ্ছে।

চোখকে সুস্থ রাখার ও চশমা থেকে পরিত্রাণের উপায়

খুব স্বাভাবিকভাবেই যে ব্যাপারগুলো চোখের ক্ষতির বা চশমা ব্যবহারের কারণ হিসেবে কাজ করে সেগুলো থেকে বিরত থাকাই ছোট্ট ফুটফুটে চোখকে চশমার হাত থেকে দূরে রাখতে পারে। অভিভাবক হিসেবে আপনার শিশুর চোখের সুস্থতায় নিম্নোক্ত কাজগুলো হতে পারে বেশ কার্যকর-

  • শিশুর দৃষ্টিশক্তি নিয়মিত বা হুট করেই পরিবর্তিত হতে পারে। তাই শিশু অভিযোগ করবে সে পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই ওকে নিয়মিত বিরতিতে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান।

  • শিশুর খাদ্যাভ্যাসের দিকে খেয়াল রাখুন। খেতে ভালো লাগছে বলেই হয়তো ও বাইরের জাংক ফুড খাচ্ছে। ঠিক তেমনটা মজাদার স্বাস্থ্যসম্মত খাবারটাও অর জন্য নিশ্চিত করুন। সাথে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পান করা নিশ্চিত করুন। এতে করে শিশুর চোখ থাকবে অনেকটাই সুস্থ।

  • প্রতিদিন ঠিক কতটা সময় ও কিভাবে স্মার্টফোন ব্যবহার করা যাবে সেটা নিয়ে নিয়ম তৈরি করুন। স্মার্টফোন হাতে না রেখে হোল্ডারে রেখে ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

  • শিশু যদি ইতিমধ্যেই চশমা পরিধান করে, তাহলে তাকে চশমা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে উৎসাহ দিন। ভুলভাল চশমা ব্যবহারে অন্যথায় শিশুর চোখে ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে।

 

সবার মতোই আপনার শিশুরও রয়েছে পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করার অধিকার। শিশুর চোখের যথাযথ যত্নে তাই শুরু থেকেই হয়ে উঠুন সচেতন।

Default user image

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি, লেখক, আস্থা লাইফ

জন্ম ২রা মার্চ, ১৯৯৪, নানুবাড়ী ঝিনাইদহে। বাবার বাসা বরিশাল। বাবা জাহিদুল ইসলাম, মা রোজী ইসলাম, ভাই সাকিব সাদমান বাঁধন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে এমএসএস শেষ করে বর্তমানে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। লেখা এবং কাজ করার সুযোগ হয়েছে বহুক্ষেত্রে। বর্তমানে জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লিখছেন। নবীন সাহিত্যিক হিসেবে ২০১৮ সালে ‘আয়েশা ফয়েজ সাহিত্য পুরষ্কার’ পান লেখক।

Related Articles